আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানব বিভেদ উস্কে দিচ্ছে জিন গবেষণা



অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথাগত গবেষণার নামে বিজ্ঞানকে আবারও বিকৃত পথে হাঁটানো প্রচেষ্টা চলছে। ডি এন এ, ক্রোমোজম, জিন গবেষনার নামে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে এক শ্রেণীর মানুষের ভবিষ্যতকে নিরাপদ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মানুষের সার্বিক বৈশিষ্ট্যকে নানাভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বেছে নেওয়া হচ্ছে জরা মুক্তির সব বৈশিষ্ট্য। সামাজিক ক্ষেত্রকে শিঁকেয় রেখে শুধুই বানিজ্যিক শ্রীবৃদ্ধির জন্য চলছে জিন গবেষণা। এমনটাই প্রচার হচ্ছে যে, কোষের পরিচালক শক্তি জিন খোঁজ একেবারেই আধুনিক তথ্য।

বিজ্ঞানের ইতিহাসে জিন একটি নতুন বিষয়। জিনের গঠন বৈচিত্র্য সম্বন্ধে না হোক, জিনের সামাজিকীকরণ নিয়ে ভাবনা চিন্তা কিন্তু অনেক দিনের। জিন মানুষের গুণাবলী নিয়ন্ত্রণ করে — এই চিন্তা একদিন কী কী সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল তা একটু জানা দরকার। বর্তমানে জিন প্রযুক্তির নামে যে আগ্রাসন শুরু হয়েছে তা একদা ইউরোপীয় সমাজে গরিব-বড়লোক বিভেদের প্রক্রিয়াকে শক্ত করছে। আবার ‘ইউজেনিক্স’ বা ক্ষণজন্মা জগত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে।

গরিব, বস্তিবাসী, অশিক্ষিত মানুষ যাঁরা রাষ্ট্রের ‘কল্যাণে’ বেঁচে আছে শুধু তাঁদের ত্রুটি নিয়েই অনুসন্ধান চলে আসছে। বিজ্ঞানের এই বিকৃতকরণ নতুন নয়। চলে আসছে বহুকাল থেকেই। ডারউইন-মেন্ডেলের তত্ত্বকে সামনে রেখে তথাকথিত অশিক্ষিতদের (নিরক্ষরের প্রচলিত কথা) আক্রমণ করা শুরু হয়েছিল। বলা হয়েছিল তাদের কুশিক্ষা, অশিক্ষার কারণ তাদের ‘খারাপ জিন’।

আর উলটোদিকে নীতিবান উপরতলার লোকজনের ‘ভাল জিন’ তাদের ভাল করে। কিন্তু সন্তানদের মধ্যে যেহেতু পিতা মাতার জিন আছে, তাই সমাজের নিচুতলায় বেশি করে সন্তান উৎপাদন হলে সমগ্র সমাজ আস্তে আস্তে ‘খারাপ জিন’ মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলবে। এভাবে চললে সমাজের অবনতি অনিবার্য। মেন্ডেল-ডারউইনের নীতির এই সামাজিক প্রয়োগের নাম ‘সোসাল ডারউইনিসম’ বা সামাজিক ডারউইনবাদ। এই ধারণাটা যিনি প্রথম প্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি হার্বার্ট স্পেন্সার।

স্পেন্সারের গবেষণার বিষয় ছিল বিবর্তনগত প্রগতি (Evolutionary Progressivism)। উনি বলেন যে প্রতি ব্যক্তিই প্রগতির একটি একক, আর এই প্রগতি আসে সমাজের মধ্যে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে। এই সোসাল ডারউইনিজমের ধারণাকে আরো একধাপ আগে নিয়ে যান যিনি তিনি ছিলেন স্বয়ং ডারউইনের নিকটাত্মীয়, নাম ফ্রান্সিস গাল্টন। উনিও সামাজিক প্রগতির সাথে সোসাল ডারউইনিজমের সম্পর্ক বিশ্বাস করতেন। ১৮৬৯ সালে প্রকাশিত ‘হেরিডিটারি জিনিয়াস’ বইতে তিনি লেখেন যে প্রতিভা বা ট্যালেন্ট হল উত্তরাধিকার সূত্রে পিতামাতার থেকে প্রাপ্ত একটি বৈশিষ্ট্য।

তিনি এজন্য অনেক পরিবারের ঐতিহাসিক তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন। দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন এক পরিবারের লোকজন একই পেশায় ক্রমাগত সফল হচ্ছে। ১৮৭৪ সালে তার পরবর্তী বই ‘ইংলিশ মেন অব সায়েন্স - নেচার ভার্সাস নার্চার’-এ উনি ব্যবহারিক জিনতত্ত্বের সূচনা করেন। আচমকা সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন যে যমজ বাচ্চাদের নিয়ে গবেষণা করেই জানা সম্ভব যে, মানুষের বেড়ে ওঠার ওপর পরিবেশ আর জিনের প্রভাব কতটা। সবশেষে, ১৮৮৩ সালে ডারউইনের মৃত্যুর পরে গাল্টন সামাজিক ডারউইনবিদ্যাকে হাতিয়ার করে এক সামাজিক বিপ্লবের ডাক দেন।

একটা নতুন শব্দ ব্যবহার করেন তিনি। ইউজেনিক্স (Eugenics)। যার অর্থ ‘ক্ষণজন্মা’ (Good in birth)। গাল্টন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। জীববিদ্যার সাথে সাথে সংখ্যাতত্ত্বেও তাঁর সবিশেষ দখল ছিল।

তাই তাঁর পক্ষে সংগৃহীত তথ্যকে পরিসংখ্যানে রূপ দিতে অসুবিধা হয়নি। এই হাতষশের জন্য সমসাময়িক বিজ্ঞানীদের মধ্যে গাল্টনের গ্রহণযোগ্যতা খুব বেশি ছিল। তাই ইউজেনিক্স খুব দ্রুতই বিজ্ঞানীমহলের সমর্থন আদায় করে নেয়। ইউজেনিক্স ছিল এক অর্থে গাল্টনের গবেষণার অনুসিদ্ধান্ত। প্রতিভা, ভাল বা খারাপ গুণ যদি পরিবার বা জিন নির্ভর হয় তাহলে সমাজের প্রগতির একমাত্র উপায় হল প্রতিভাবানদের বেশি সন্তান উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করা।

আর ‘খারাপ’-দের নিরুৎসাহিত করা। এভাবেই সমাজ থেকে খারাপ জিন দূর করা সম্ভব — প্রগতিও আনা সম্ভব। খুব সহজেই এই ধারণা নিয়ে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে পড়েছিলেন। স্বয়ং জর্জ বার্নার্ড বলেছিলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে একমাত্র কোনো ইউজেনিক ধর্মই আমাদের সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। ইউরোপে যে সময়ে গাল্টনের মত মেনে সবাই প্রতিভাবান বা উঁচুতলার মানুষদের বেশি সন্তান নেওয়ার কথা বলছে, সেই সময় আমেরিকায় প্রায় একই বিপ্লব উলটোপথে হেঁটে সমাজের নিচুতলার মানুষদের সন্তান উৎপাদন কমানোর দিকে উদ্যোগী হয়ে উঠেছিল।

১৮৭৫ সালে রিচার্ড দুগডাল নিউইয়র্কের একটি গোষ্ঠী নিয়ে আলোচনা করে জানান যে, এই গোষ্ঠী প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এই একই ভাবে জোচ্চুরি, ছিনতাই আর রাহাজানি করে আসছে। কিন্তু এই ধারণাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যান চার্লস ড্যাভেনপোর্ট । ১৯১০ সালে আইল্যান্ডে বিখ্যাত কোল্ড স্প্রিং হার্বার ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর হিসাবে শুরু করেন প্রথম ইউজেনিক রেকর্ড অফিস। এই অফিসের কাজ ছিল জিন-নির্ভর বৈশিষ্ট্য (কুষ্ঠরোগ থেকে অপরাধপ্রবণতা) সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা এবং তার নথি লিখে রাখা। ড্যাভেনপোর্ট নিজেও একরকম ইউজেনিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন।

উনি বিশ্বাস করতেন মেয়েদের পর্যবেক্ষণ আর সামাজিকবিদ্যায় দখল ছেলেদের চেয়ে ভাল। তাই উনি এই কাজে শুধু মেয়েদেরই নিযুক্ত করতেন। ১৯১১ সালে প্রকাশিত ‘হেরিডিটি ইন রিলেশন টু ইউজেনিক্স’ বইতে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেন যে সমস্ত দক্ষতাই পরিবারকেন্দ্রিক। সেটা গানবাজনা থেকে শুরু করে নৌকা বানানোর মতো যেকোনো দক্ষতার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। উনি এমনকি আরো একধাপ এগিয়ে পদবীর সাথে চেহারার সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করেন।

একটি বিশেষ পদবীধারী লোকজন যে ‘বলিষ্ঠ, চওড়া কাঁধ, মোটা ভুরু আর সঙ্গীতপ্রেম’-এর অধিকারী হয়, ওনার গবেষণার ফল তাই প্রমাণ করার চেষ্টা করে। এদিকে ইউজেনিক্স কিন্তু আমেরিকায় ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। স্থানীয় ইউজেনিক সোসাইটি তৈরি হয় যারা ‘উন্নত পরিবার’দের পুরস্কৃত করতো। উৎসাহ দিতো আরো বেশি করে সন্তান উৎপাদনে। অপর পাশে ছিল ‘অনুন্নত’দের জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণ।

১৯০৭ সালে ইন্ডিয়ানা স্টেটে প্রথম পাশ করা হয় বন্ধ্যাত্বকরণ আইন, যার ফলে অপরাধী, জড়বুদ্ধি, ধর্ষক বা চূড়ান্ত বোকাদের সমাজের স্বার্থে বন্ধ্যাত্বকরণ করানো বাধ্যতামূলক করা হল। এই আইনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও হয় এইসময়। কিন্তু ১৯২৭ সালে সে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ব্যাপারটা আরো পাকা হয়। বলা হয় ‘সমাজের যারা বোঝা, তাদের বাচ্চারাও সমাজের বোঝাই হবে। সুতরাং তাদের পৃথিবীতে না আসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য’।

১৯৪১ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় এরকম ৬০হাজার বন্ধ্যাত্বকরণ করানো হয়েছিল। এই ঢেউ গিয়ে লাগে নাৎসী জার্মানী ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতেও। সেখানেও চলে আইন করে নিচুতলার ওপর অত্যাচার — বলপূর্বক বন্ধ্যাত্বকরণ। এরপরে ইউজেনিক্সের সাথে জুড়ে যায় বিজ্ঞানসম্মত বর্ণবিদ্বেষ। আসলে, ইউজেনিক্সের মধ্যে বর্ণবিদ্বেষের সব উপাদানই ছিল আগে থেকেই।

শুধু দরকার ছিল অগ্নিতে ঘৃতাহুতি। সেই কাজটাই করলেন আইনজীবি ম্যাডিসন গ্রান্ট। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত ‘দ্য পাসিং অব গ্রেট রেস’ বইতে তিনি দাবি জানালেন নর্ডিকরা (উত্তর-ইউরোপিয়ান) জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ, নিগ্রো, এশিয়ান, এমনকি বাকি ইউরোপিয়ানদের চেয়েও তারা উন্নত। মানচিত্রে দেখবেন এখনও উত্তর ইউরোপকে নির্দেশ করতে লাল রঙ ব্যবহার করা হয়। ম্যাডিসন দাবি করেন যারা নর্ডিক নয় তাদের আমেরিকায় অভিবাসনের (ইমিগ্রেশন) বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করলেন।

এ জন্য উনি একটি সংস্থায় যোগ দেন আমেরিকান ইমিগ্রেশন রেস্ট্রিকশন লিগ নামে। এর আগে উনি গাল্টন এবং ড্যাভেনপোর্টের সাথে মিলে সোসাইটি তৈরি করেন। এই সময়েই বুদ্ধিবৃত্তি পরীক্ষা (আই কিউ টেস্ট) প্রমাণ করে দিল যে আমেরিকায় অভিবাসীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই সাধারণ আমেরিকানদের তুলনায় বুদ্ধিবিদ্যায় নিচুমানের। মজার কথা, এই আই কিউ টেস্টগুলোতে অধিকাংশ প্রশ্নই হত জ্ঞানভিত্তিক। প্রশ্ন করা হতো ইংরেজিতে।

আমেরিকা সংক্রান্ত জ্ঞান আমেরিকানদের বেশি থাকাই যে স্বাভাবিক এটাকে সরিয়ে রেখে অন্যদিকে প্রচার চললো। এই কাজে গ্রান্টের সহযোগী ছিলেন হ্যারি লাফলিন নামক আরেক বর্ণবিদ্বেষী বৈজ্ঞানিক। গ্রান্ট নিজে রুজভেল্টের খুব নিকট বন্ধু ছিলেন। সে যাই হোক গ্রান্টের বই পাঠকমহলে খ্যাতি পেতে সময় নেয় নি। ১৯৩৭ সালের মধ্যে বইটির ১লক্ষ ৩৭হাজার কপি বিক্রি হয়েছিল যা তৎকালীন হিসাবে অকল্পনীয়।

খ্যাতির সাথে সাথে বইয়ের জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে। বই অন্য ভাষাতেও অনুদিত হতে থাকে। ১৯২৫ সালে জার্মান ভাষায় অনুদিত বইটি প্রভাবিত করে আর এক রাষ্ট্রনায়ককে। নাম অ্যাডলফ হিটলার। হিটলার নিজে গ্রান্টকে ব্যক্তিগত চিঠিতে অকপটে স্বীকার করে বসেন — ‘এই বই-ই আমার বাইবেল’।

গাল্টন যে কাজ শুরু করে গিয়েছিলেন সেই কাজকেই অন্য মাত্রা এনে দিলেন গ্রান্ট। আর প্রথমবারের জন্য এই বর্ণবিদ্বেষী তত্ত্ব স্থান করে নিল এক একনায়কের মস্তিষ্কে। আর সাথে ছিল হিটলারের সহযোগী কিছু ভণ্ড বিজ্ঞানীও। শুরু হল ইউজেনিক্সের নাৎসি ভার্সান। ১৯৩৩ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই হিটলার আমেরিকানদের অনুকরণে আইন প্রবর্তন করলেন ‘জিনগত ত্রুটি নির্মূল’ করার জন্য।

মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ২লক্ষ ২৫হাজার মানুষের বন্ধ্যাত্বকরণ করানো হয়। এই বিষয়ে শুরু হল এক বিশেষ ধরণের আদালত। নাম দেওয়া হয় হেরিডিটি কোর্ট। এর সাথে ছিল সমাজের ‘ভাল’দের আরো বেশি করে সন্তান নিতে উৎসাহী করে তোলা। ১৯৩৬ সালে আইন করে তাদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীদের জন্য ভাল থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল।

ইহুদিরা নর্ডিক ছিল না, তাই তাদের সাথে মূল জার্মানদের বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হল। যাতে জার্মান জিন ইহুদিদের সাথে মিশে অনুন্নত সন্তানের জন্ম না দিতে পারে। নাৎসিদের রাজত্বের শেষদিকে দেখা গেল মোট ৪ লক্ষ মানুষের বন্ধ্যাত্বকরণ করতে ততদিনে তৈরি হয়েছে ২০০ হেরিডিটি কোর্ট। ইউজেনিক্স ছিল মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিজ্ঞানের একটি কলঙ্কময় অধ্যায়। যদিও আজ অবধি ইউজেনিক্সের মূল দায় বিজ্ঞানীদের ঘাড়েই চাপানো হয়ে আসছে।

বাস্তবে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রযন্ত্রের স্বার্থ রক্ষার্থে ইউজেনিক্স’কে সুচতুর ভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। যতজন না বিজ্ঞানী ইউজেনিক্সে সামিল হয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি ছিল সমাজবিজ্ঞানী আর রাজনীতিজ্ঞরা। যারা নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগিয়েছিলেন ইউজেনিক্সকে। রাষ্ট্রের ধারণা ছিল এই বিজ্ঞানের অজুহাতে যদি নিচুতলার মানুষগুলোক সরিয়ে ফেলা যায়। সাথে ছিল কিছু বর্ণবিদ্বেষী বিজ্ঞানী যারা অবৈজ্ঞানিক প্রথায় সমীক্ষা চালিয়ে সব অদ্ভুত ফলাফল হাজির করতেন।

লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ইউজেনিক্সে যাদের মূল অবদান, সেই বিজ্ঞানীদের কেউই নোবেল পুরষ্কার পাননি। মূলস্রোতের বিজ্ঞানীদের কাছেও এই তত্ত্ব ছিল বিতর্কিত। অথচ তাদের গবেষণার ওপর ভিত্তি করেই একসময় রাষ্ট্র আইন প্রবর্তন করেছিল। বিজ্ঞানকে সামনে রেখে এমন স্বার্থন্বেষী প্রয়োগ ইতিহাসে বিরল। যাই হোক, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মারণলীলা শেষ হতেই ইউজেনিক্সের দাপট শেষ হয়েছিল।

তবে এতশত বিকৃতি ব্যবহারিক প্রয়োগের পরেও ধাক্কা খায়নি জিন বিজ্ঞান। মরগ্যান সমাধান করে দিয়ে গেছেন যে ক্রোমোজমের মধ্যেই থাকে বংশগতির চাবিকাঠি। সেই চাবিকাঠি এবার হাতে তুলতে মানুষ মরিয়া হল। কিন্তু তার জন্য জানা চাই বংশগতির রাসায়নিক তত্ত্ব। যা রাসায়নিক আকার বলে দেবে বংশগতি ঠিক কীভাবে প্রবাহিত হয়।

এই সময় ডারউইনের বিবর্তনবাদ যখন প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খাচ্ছে। সেই সময়ে ফ্রেডেরিক মিশার নামে এক সুইস জীববিজ্ঞানী পুঁজ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়েই নিউক্লিক অ্যাসিডের খোঁজ দিলেন। পরে তিনটি শ্বেতকণিকার ক্রোমোজোমকে নিউক্লিক অ্যাসিডের উৎস হিসাবে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে দেন মিশার। উনি এর নাম দেন ‘নিউক্লেইন’। মিশার সঠিকভাবে ধারণা করতে পেরেছিলেন যে বংশগতি কোনো রাসায়নিকের মাধ্যমেই প্রবাহিত হয়।

উনি নোবেল পুরষ্কার পাওয়া অবধি বেঁচে থাকতে না পারলেও আরেক বিজ্ঞানী এরপরে নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে কাজ করে নোবেল পুরষ্কার পান। তিনি হলেন অ্যালব্রেখট কোসেল। ১৯১০ সালে প্রোটিন আর নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে কাজ করার জন্য তাঁকে এই সম্মান দেওয়া হয়। শুরু হয় নিউক্লিক অ্যাসিড নিয়ে বিস্তর গবেষণা। নিউক্লিক অ্যাসিডের গঠন নিয়ে এরপরে কাজ শুরু করেন নিউ ইয়র্কে রকফেলার ইন্সটিটিউটের গবেষক ফিবাস লেভেন।

নিউক্লিক অ্যাসিডের রাসায়নিক উপাদানগুলোকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। নিউক্লিক অ্যাসিডের চার উপাদান – অ্যাডেনিন (A), থিয়ামিন (T), সাইটোসিন(C) আর গুয়ামিন(G)। কিন্তু উনি ক্রোমোজমের নিউক্লিক অ্যাসিডের সঠিক কাঠামো বলতে পারেননি। ১৯২৯ সালে ডি এন এ বা ডি-অক্সিরাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড আবিষ্কার করার পরে উনি দাবি করেন যে এটি মাত্র চারটি নিউক্লিওটাইড নিয়ে গঠিত। লেভেনের এই আবিষ্কারটি ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।

একটা ব্যাপার তখন বিজ্ঞানীদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে বংশগতির বাহক যেহেতু খুবই জটিল বার্তা বহন করে। তাই তার রাসায়নিক কাঠামোও জটিল হবে। লেভেনের আবিষ্কারের পরে বোঝা গেল ডি এন এ’র কাঠামো এই জটিল বার্তা ধারণের পক্ষে উপযোগী হবে না। এই ভুল ধারণা আরো অনেক দিন রয়ে যেত যদি না আরেক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী পরীক্ষাগারে একটি অঘটন না ঘটিয়ে ফেলতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে নিউমোনিয়ার প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টায় ফ্রেডেরিক গ্রিফিথ গবেষণা করছিলেন নিউমোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে।

তিনি দেখেন নিউমোকক্কাস ব্যাকটেরিয়া দু’ধরণের হয়। একটা মারাত্মক ধরণের অন্যটি নির্বিষ। প্রথম ধরণের ব্যাকটেরিয়াকে বলা হত S(Smooth), আর দ্বিতীয়টিকে R(Rough)। এই S ব্যাকটেরিয়া ইঁদুরের শরীরে প্রবেশ করালে তার দ্রুত মৃত্যু হত। কিন্তু R ব্যাকটেরিয়া কোনো ক্ষতিই করতে পারে না।

দেখা গেল, S ব্যাকটেরিয়ার কোষের বাইরের দিকে উপস্থিত একটি বিশেষ পদার্থের আচ্ছাদন কোষকে রক্ষা করত। R ব্যাকটেরিয়ার কোষে এরকম কিছু ছিল না। এবার উনি কিছু মৃত S ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দেখলেন ইঁদুর মরে না। সবশেষে মৃত S ব্যাকটেরিয়ার সাথে সাথে R ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দিয়ে দেখা হল। কিন্তু গ্রিফিথকে অবাক করে দিয়ে ইঁদুরটা মরে গেল।

কীভাবে মৃত ব্যাকটিরিয়াগুলো বেঁচে উঠে ইঁদুরটাকে মেরে দিল ? দুই ভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া কীভাবে ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলল ইঁদুরটাকে ? মৃত ইঁদুরের শরীর থেকে সংগৃহীত ব্যাকটেরিয়াগুলো দেখা গেল সব S ব্যাকটেরিয়া। এর মানে জিনগতভাবে বদলে গেছে ব্যাকটেরিয়ারা। কিন্তু কীভাবে এরকম হল? মানবসভ্যতার ইতিহাসে, চোখের সামনে প্রজাতির রূপ পরিবর্তন করা আগে দেখা যায় নি। গ্রিফিথই প্রথম সেই সৌভাগ্য অর্জন করলেন। কিন্তু প্রশ্ন হল কীভাবে এটা ঘটে ? মৃত ব্যাকটেরিয়া থেকে কি এমন উপাদান সংগ্রহ করে জীবন্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো যাতে তারা রূপ পরিবর্তন করতে পারে ? সেই সূত্র উদ্ঘাটন করলেন অসয়াল্ড আভেরি।

অনেক পরে। ১৯৪৪ সালে সেই রকফেলার ইন্সটিটিউটে। উনি বিজ্ঞানী ম্যাকলয়েড আর ম্যাককার্টির সাথে মিলে প্রমাণ করে দিলেন যে উপাদান সংগ্রহ করে এই রূপান্তর ঘটে তা হল ডি এন এ। গ্রিফিথ যে কাজটা মৃত S ব্যাকটেরিয়া দিয়ে করেই বিস্মিত হয়েছিলেন সেটাকেই এই বিজ্ঞানীরা কয়েক ভাগে ভেঙে নিলেন। প্রথমে মৃত S ব্যাকটেরিয়াগুলোর বাইরের আচ্ছাদন সরানো হল আর তারপরে আগের প্রক্রিয়া চালানো হল।

তাতেও রূপান্তর ঘটলো। তার মানে বাইরের আচ্ছাদনের কোনো ভূমিকা নেই রূপান্তরে। একই ভাবে উনি এর পরে একে একে মৃত S ব্যাকটেরিয়াগুলো থেকে প্রোটিন এবং আর এন এ সরিয়ে দিয়ে দেখলেন রূপান্তর হচ্ছে। সবশেষে ডি এন এ কোষ থেকে সরিয়ে দিতেই দেখা গেল আর কোনো রূপান্তর হচ্ছে না। তার মানে বিষয়টা এমনটা দাঁড়ালো মৃত S ব্যাকটেরিয়াগুলোর ডি এন এ জীবিত R ব্যাকটেরিয়াগুলো গ্রহণ করে পরিবর্তিত হচ্ছে , নতুন রূপ ধারণ করছে।

তার মানে ডি এন এ’ই হলো জীবের বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক। উলটো দিক থেকে ডি এন এ জিনের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় আভেরি’র মত সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আভেরি, ম্যাকলয়েড আর ম্যাককার্টি কেউই কোনোদিনও নোবেল পুরষ্কার পেলেন না। ততদিনে প্রোটিন নিয়ে বংশগতির ধারণা বিজ্ঞানীদের মধ্যে এতটাই গেঁথে গেছে যে অনেক বিজ্ঞানীই তাঁদের বক্তব্যে পাত্তাই দিলেন না।

এই পাত্তা না দেবার দলে ছিলেন সুইডিশ রসায়নবিদ এইনার হ্যামারস্টেনও। কিন্তু হ্যামারস্টেন আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে বসলেন। নোবেল কমিটিতে আভেরি’র র নমিনেশনের বিরোধিতা করলেন। পঞ্চাশ বছর পরে নোবেল আর্কাইভ থেকে জানা যায় এই নির্মম সত্য। মজার কথা, হ্যামারস্টেন নিজেও কিন্তু ডি এন এ নিয়েই কাজ করতেন।

অথচ তিনি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি এর কি মহিমা হতে পারে! উনি আর বেশিরভাগ বিজ্ঞানীর মতো মনে করলেন প্রোটিনই হবে বোধহয় বংশগতির বাহক। আর এর ফলে নোবেল পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হল একটি মৌলিক গবেষণা এবং গবেষক। ডি এন এ’র প্রকৃত কাঠামো জানার কয়েক বছরের মধ্যেই উনি মারা যান। জেমস ওয়াটসন তার বইতে লিখেছেন — হয়ত আর কয়েক বছর বাঁচলে উনি (হ্যামারস্টেন) নোবেল পুরষ্কার পেয়েই যেতেন। আরেক নোবেলজয়ী জীববিজ্ঞানী আর্নে টিসেলিয়াসের মতে, নোবেল না জেতা বিজ্ঞানীদের মধ্যে আভেরিই ছিলেন সবথেকে যোগ্য বিজ্ঞানী।

অনেকসময়েই বিজ্ঞানের একাধিক শাখা একে অপরের সাথে জ্ঞান বিনিময়ের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু আজকের স্পেশালাইজেশনের যুগে দেখা যায় ‘ক্রস-ডিসিপ্লিন’ নলেজ বা একাধিক শাখায় দক্ষ লোকের সংখ্যা কমেই চলেছে। তবে যে সময়কার কথা বলা হচ্ছে সেই সময়ে সমস্যাটা এত গভীর ছিল না। জ্ঞান বিনিময়ের জন্য বিজ্ঞানীদের অভাব হত না। তাও কিছু কিছু বিজ্ঞানী এদের মধ্যে আলাদা করে জায়গা করে নিতে পারেন।

আর কেউ কেউ পারেন এক শাখার বিজ্ঞানীদের অন্য শাখায় উৎসাহিত করে তুলতে। শেষোক্ত কাজটিই করেছিলেন অস্ট্রিয়ান নোবেলজয়ী পদার্থবিদ এরুইন শ্রোডিংগার। শ্রোডিংগার কিন্তু সম্পূর্ণরূপে একজন নিবেদিতপ্রাণ পদার্থবিদই ছিলেন। ১৯৪৩ সালে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজে উনি বক্তৃতা দিতে গিয়ে জানালেন যে বিষয়বস্তু পদার্থবিদদের অতি পরিচিত গাণিতিক সমীকরণের খুব একটা ধার ধারে না। এই বক্তৃতাটিতেই উনি প্রথম জীবন ও তার অর্থ বোঝার জন্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার কথা বলেন।

এরপর ১৯৪৪ সালে প্রকাশিত ‘হোয়াট ইস লাইফ’ নামক তাঁর বইতে তিনি লিখেছিলেন — জীবনের উদ্দেশ্য হল কিছু তথ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ আর প্রবাহ। এভাবে ক্রোমোজম হল এই তথ্যের ধারক। বংশানুক্রমিকভাবে আসা এই তথ্য ক্রোমোজমের জটিল অণুদের বিন্যাসের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। তাই জীবন কী তা বুঝতে গেলে আগে ঐ বিন্যাসকে আগে বুঝতে হবে। এটাই ছিল তাঁর মূল বক্তব্য।

এদিকে একই সময়ে পদার্থবিদেরা কোয়ান্টাম তত্ত্বের মত জটিল তত্ত্ব দিয়ে পরমাণুর গঠন ও তাদের আচার আচরণ নিয়ে গবেষণা করছেন। অথচ যা পরমাণুর চেয়েও অনেক বেশি জরুরী তা হল আমাদের জীবনকে বোঝা। তা নিয়ে গবেষকের আকাল। প্রথাগত জীববিজ্ঞানীদের অধিকাংশই পর্যবেক্ষণ নিয়েই মগ্ন থাকেন। গাণিতিক হিসাবনিকেশ করে দেখা বা পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণা করতেও তারা ততটা দক্ষ নন।

শ্রোডিংগারের বই অনেক পদার্থবিদ ও রসায়ন-বিজ্ঞানীকেই এই জীবনের তথ্য উদ্ঘাটনের পথে আনতে সক্ষম হল। মজার কথা, ডি এন এ আবিষ্কারের নাটকের কুশীলবদের অধিকাংশই এই বই পড়েই জীবন নিয়ে গবেষণার পথে আসেন। যেমন ধরা যাক মরিস উইল্কিন্সের কথা। এই পদার্থবিদ পরমাণু বোমা তৈরিতে ম্যানহাটান প্রজেক্টের সাথে জড়িত ছিলেন। বোমার আসল রূপ হিরোশিমা-নাগাসাকিতে দেখে তার বোধোদয় হল।

তিনি একরকম পাগল হয়েই প্যারিসে চলে যাবেন ভাবছিলেন। হতে চেয়েছিলেন চিত্রকর। এই সময়েই তার হাতে হ‌ঠাৎ এসে পড়ে শ্রোডিংগারের বইটি। বই পড়ে উনি উৎসাহিত হন জীবন সংক্রান্ত গবেষণায় আসতে। তিনিই সর্বপ্রথম ‘এক্স -রে ডিফ্রাকশন টেকনোলজি’ ব্যবহার করে ডি এন এর গঠন পর্যবেক্ষণ করার কথা বলেন।

একজন পদার্থবিদ ছাড়া এই চিন্তা মাথায় আনাটা যেকোন জীববিজ্ঞানীর কাছেই অসম্ভব ছিল। এদের মধ্যে সবচেয়ে নাম করেছিলেন ফ্রান্সিস ক্রিক। যারা অল্পবিস্তর জিন নিয়ে পড়াশুনা করেছেন তারাই জানেন ক্রিকের নাম। মূলত পদার্থবিদ্যার ছাত্র ক্রিক। কিন্তু তাঁর পদার্থবিদ্যার মতো যুক্তিনির্ভর ও মডেলভিত্তিক গবেষণার অভ্যাসও এই ডি এন এ’র গঠন আবিষ্কারে বড় ভূমিকা রাখেন।

ক্রিকের সময়েই জিন বিজ্ঞানের সবচেয়ে ভালো সময়। তারপরেই স্বাভাবিক নিয়মে জিন গবেষণায় ভাবনার থেকে পরবর্তী সময়ে গঠনগত দিকটাই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। বাজার অর্থনীতি শিকার আজ জিন গবেষণা। বাজার পরিচালিত করছে জিনের জটিল গবেষণাকে। দামি যন্ত্রপাতি, কোটি টাকার ল্যাবরেটরি আজ ব্যবহৃত হচ্ছে জিনঘটিত রোগ নিরাময়ে।

উন্নতশীল দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সেসব বেসরকারী গবেষণা সংস্থারা। জিনের যেকোন কেরামতির জন্য তাদের গুনে দিতে হবে ‘ডলার’। তাহলে জানা যাবে নিগ্রোদের জিনের বৈচিত্র্য কিংবা সাদা মানুষদের কোন জিনের জন্য কোন রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। গ্যাটের কড়ি ফেললেই কোন ব্যাকটেরিয়া বা জীবানুর শরীরকে বদলে তৈরি করা যাবে তাকেই বধ করার প্রতিষেধক (ভ্যাকসিন)। আমেরিকার সেলেরা জেনোমিক্স কিংবা স্কটল্যান্ডের রোজলিন ইনস্টিটিউট সবাই ধীরে ধীরে পৌঁছে যাচ্ছে সেই ইউজেনিক্সের দিকে।

আবারও জাতিগত বিন্যাসকে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠার পথে হাঁটছেন বিজ্ঞানীরা। হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট এবং ক্লোনিং গবেষণা নাম করে ‘নিও ইউজেনিক্স’ প্রতিষ্ঠার দিকে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। জিনের বৈশিষ্ট্য জেনে দুরারোগ্য রোগের মুক্তি নয়, তারা এক শ্রেণীর মানুষের ভালো থাকার পথের সন্ধান দিতেই কাজ করে আসছেন। তাই ইয়ান উইলমুট কিংবা ক্রেইগ ভেন্টার তাই কোন বিচ্ছিন্ন নাম নয়, এরাই গাল্টন, ড্যাভেনপোর্টের উত্তরসূরী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।