আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যযুগীয় প্রেম

স্বপ্নচারী এক ছাত্র আমি। লেখালেখি হল শখ। অনেক বেশি ভাবি। প্রকাশ করি কম।

১. "যাকে জয় করা যায় না-জয়া।

আসলেই ওকে আমি কোনদিন জয় করতে পারিনি। নিঃস্বার্থ এক ভালবাসা সে দিয়েছে আমায়। তার ভালবাসার গভীরতা মাপতে গেলে আমি হারিয়ে যাই। প্রতিদান চায়নি সে। চায়নি ওর স্বল্পায়ুকে আমার সাথে জড়াতে।

এক অদৃশ্য দেয়াল রেখেছে সবসময়। তবু যেন ভালবাসাটাকে এতটুকু কমতে দেয়নি। আমাকে আগলে রেখেছে সবসময়। সবকিছু থেকে। আশ্চর্য এক মানুষ সে।

পৃথিবীর সব বস্তুগত চাওয়া পাওয়াকে উপেক্ষা করে সে ভালবেসেছে চিত্তের আনন্দের জন্যে নয়, কাউকে দেখাবার জন্য নয়; শুধুমাত্র ভালবাসার জন্যে। ভালবাসতে গিয়ে সে মা-বাবাকে ভুলে যায়নি। শুধু ভুলে গিয়েছিল নিজেকে সাধারণ রাখতে। নিজেকে স্থবির করে গমন করেছিল এক অসাধারণ পথে। কান্না যে পথের নিত্যসঙ্গী।

আজকের এ যুগে এমন মানুষ পাওয়া সত্যি বড় কঠিন। মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভব। তার ভালবাসা যে পেয়েছে তার জীবনও বদলে গেছে নানা আঙ্গিকে। জীবনের সংজ্ঞাকে সে নতুনভাবে উপলব্ধি করেছে । সে সংজ্ঞায় জাগতিক অভিলাষ, অন্যায় ইচ্ছা কিংবা লোক দেখানো কিছু ছিল না।

ছিল শুধুই বিস্ময় ও ভালবাসা- একটি মানুষ কিভাবে এত ভালবাসতে পারে। গায়ে প্রচন্ড জ্বর। ঘোর ঘোর লাগছে। ভোর হবে হবে ভাব। নিজেকে ব্যস্ত রাখি, প্রতিনিয়ত।

জয়াকে ভুলতে। না, না, ভুলে যাওয়া তাকে সম্ভব নয়। সম্ভব নয় তাকে আড়াল করে রাখা। নিজেকে হাতড়ে বেড়াই প্রতিদিন। তাকে খুঁজি।

পাইনা, নিরাশও হইনা। তাকেই যে আমার চাই। অন্য কাউকে দিয়ে যে হবে না। জানালা দিয়ে লুপ্তমান তারাগুলোকে দেখি। সেগুলো নিভু নিভু করে জ্বলছে।

তুমিও কি তারাদের সাথে জয়া? আমাকে নেবে না?নেবে না তোমার সাথে। " ২. মর্গের বাইরে কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে বলতে পারবে না শিবেন । সকাল থেকে বসে আছে। অসংখ্যবার ডাক্তার নার্স সামনে দিয়ে চলে যাচ্ছে তবু কেউ কিছু বলতে পারছে না। খবর পেতে দু'দিন লেগেছে।

পাড়া-পড়শি জেনেছে একদিন পর। ৪ দিনের মাথায় শহরে এসে শিবেন জানতে পারে লাশ এখনো মর্গে। জামার কোণা দিয়ে চোখ মোছে শিবেন। ছেলে হারানোর কান্না নয় তা। ইদানীং প্রায়ই চোখ ঘোলা হয়ে আসে, জানান দেয় বয়স হয়ে গেছে শিবেনের।

ছেলেকে হারিয়েছে বছর তিনেক আগেই, তিন বছর পর দেহখানার খবর মিললো মাত্র। এক নার্স এগিয়ে আসে। শিবেন আশাগ্রস্থ হয়, খবর মিলবে ভেবে। খবর মিলে বটে। খবর শুনে শিবেনের মনটা একটু ভালো হয়ে যায়।

মোটের উপর লাভই হলো। ভেবেছিল টাকা পয়সা গচ্চা যাবে। দুর্মূল্যের এই বাজারে সংসার চালাতেই হিমশিম খায় শিবেন, তার মধ্যে যদি মড়ার পিছে খরচে হয়। আসতেই চায়নি সে, পাড়াশুদ্ধ লোক জোর করে পাঠিয়ে দিল। পৈতা ছিল বিধেয় রক্ষে, দাহ করা হয়েছে।

শিবেন ছাইভস্ম নিয়ে বের হয় হাসপাতাল থেকে, হাঁটা দেয় ঘাটের দিকে। সঙ্গে ছেলের কিছু জিনিসপত্র। বড় বড় যা কিছু ছিল, সকালেই তা বিক্রি করে দিয়েছে শিবেন। বাকী যা আছে বাড়িতে ব্যবহার করা যাবে। ঘাটে এসে দেখে ঘাট খালি।

স্টিমার সব ওপারের গেছে। অপেক্ষা করতে হবে। শিবেন বসে ঘাটের এক কোণায়, নিরিবিলিতে। এখানে পৌঁছে পেটে দানাপানি কিছু পড়েনি। শিবেন ঠিক করে একবারে বাড়িতে গিয়ে স্নান করে খাবে।

হাতের কাপড়ের পুঁটলিটা খোলে শিবেন। বিছানার তোষক, চাদর, কয়েকটা জীর্ণ শার্ট,একখানা গীতা, জল খাবার ঘটি, কয়েকটা আধুলি আর একখানা খাতা। শিবেন ভেবেছিল খাতাটা নরেন্দ্রকে দেওয়া যাবে, কিন্তু না। খাতা ভর্তি হাবিজাবি লেখা, যার কিছুই শিবেন বোঝে না। ফেলে দেয় খাতাটাকে ঘাটের পাশে নদীতে।

ঘোলা পানির মাঝে ভাসতে থাকে খাতাটা। ছড়িয়ে পড়তে থাকে কলমের আঁচড়, অক্ষরগুলো বিলীন হয় আস্তে আস্তে... সময়ের সাথে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.