আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নেশার নির্মমতা : কী শিখব আমরা

মাদকাসক্তির কারণে বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা, বাড়ছে নারী নির্যাতন ও বিয়ে বিচ্ছেদ, বাড়ছে আত্মহননও। আর সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঐশীকাহিনী তো বিস্ময়ে হতবাক করেছে পুরো জাতিকে। কিশোরী ঐশীর হাতে তার পিতা পুলিশ ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান ও মাতা স্বপ্না রহমানের হত্যাকাণ্ডের খবর প্রকাশের পর দেশব্যাপী নাড়া খেয়েছে মানুষের বিবেক। সন্তান পিতা-মাতাকে হত্যা করতে পারে_ এ কথা বিশ্বাস করতে পারছে না অনেকে। প্রশ্ন উঠেছে সন্তান কি খুন করতে পারে পিতা-মাতাকে? ঐশী কি তার পিতা-মাতাকে খুন করেছে? নাকি একটি মাদকাসক্ত কিশোরী খুন করেছে এক দম্পতিকে, যে দম্পতি তার মা-বাবা।

নাকি 'ইয়াবা' নামক ভয়াবহ মাদকই খুন করেছে ঐশীর পিতা-মাতাকে, ওই দম্পতিকে? নাকি কোনো গভীর ষড়যন্ত্র।

ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে জানতে হবে ইয়াবা কী? কী শিক্ষা জাতি গ্রহণ করতে পারে এ ঘটনা থেকে? এর আগেও কয়েক বছর ধরে মরণ নেশার উপকরণ 'ইয়াবা' নিয়ে এঙ্ক্লুসিভ সংবাদ প্রকাশ পেয়ে আসছে দেশের অধিকাংশ পত্রিকায়। প্রকাশিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হেডলাইনের দিকে ফিরে তাকানো যেতে পারে : ১. ইয়াবাসহ ছয় ধনীর দুলাল গ্রেফতার, র্যাবের অভিযানে বিএমডবি্লউ ও পারশে গাড়ি আটক। ২. ইয়াবার মরণ ছোবলে অভিজাত ছেলেমেয়ে, ৪০ ডিলারের খোঁজে র্যাব গোয়েন্দা দল। ৩. ইয়াবাসহ গ্রেফতার ছয় যুবক কারাগারে, পাইকারি বিক্রেতাদের সন্ধান পেয়েছে র্যাব।

অল্প কথায় বলা যায়, ইয়াবা খেলে মনোত্তেজনা আসে। আবেগের জোয়ার আসে। তৈরি হয় উৎফুল্ল ভাব। 'মুড হাই' হয়ে যায়। 'ইউফোরিয়া' জাগে মনে।

এ সময়ে দেহে নানা ধরনের পুলকও বাড়তে পারে সাময়িকভাবে। প্রাথমিক উদ্দীপনার প্রভাব কেটে গেলে অবসাদ জাগে দেহ-মনে, কর্মক্ষমতা কমে যায়, দেহ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়, শিথিল হয়ে পড়ে যৌনচেতনা। 'সুপার এঙ্াইটেশন' সময়ে বেপরোয়া হয়ে যেতে পারে ইয়াবা গ্রহণ করা যেকোনো তরুণ। অসৎ যৌনাচারে ডুবে যেতে পারে। সেঁটে যেতে পারে অপরাধের সঙ্গে।

আর তরুণী হারাতে পারে তার শ্রেষ্ঠ সম্পদ, যথেচ্ছভাবে ব্যবহৃত হয়ে যেতে পারে। ঐশীর ক্ষেত্রেও কী ঘটেছিল এমন অনিয়ন্ত্রিত নির্মম, নিষ্ঠুর, বিবেকহীন ভয়াবহতা?

উত্তর জানতে হলে বুঝতে হবে, কেন মাদক নেয়? কেন নিতে বাধ্য হয়? বুঝতে হবে কোথায় বিন্যস্ত রয়েছে ইয়াবার ফাঁদ। মাদক চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা পেশাগত ফিল্ডে লক্ষ্য করছেন Peer Pressoure গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে, মাদক নিতে তরুণ প্রজন্মকে প্রভাবিত করছে। পত্রিকার সংবাদে সেই সত্যতা দেখা যাচ্ছে। বন্ধুরা মাদক নিচ্ছে।

বন্ধুরা মাদক বিক্রি করছে। বন্ধু সেজে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর ব্যাগে 'ইয়াবা' ট্যাবলেট ঢুকিয়ে দিচ্ছে।

একটু মন খারাপ হলে তরুণ-মন প্রভাবিত হয়ে যাচ্ছে। তাই শিশুকাল থেকে সন্তানের মধ্যে ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যের বীজ রোপণ করতে হবে। মা-বাবার উচিত শিশুর ব্যক্তিত্ব এমনভাবে গড়ে উঠতে সহায়তা করা, যেন সে আত্দপ্রত্যয়ী-আত্দবিশ্বাসী হতে পারে।

এ জন্য শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে, শ্লেষাত্দক বাক্য ব্যবহার না করে যৌক্তিক বিষয়ে 'হ্যাঁ' বলার অভ্যাস করতে হবে। শিশুর ভালো কাজে প্রশংসা করে উৎসাহ দেওয়া, অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে যথাসম্ভব মনোযোগ না দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের শিশুরা অশুভ আহ্বানকারীকে ভবিষ্যতে 'না' বলতে পারবে। নিজেকে মাদকমুক্ত রাখতে পারবে। পরিবারই হোক সুন্দর ব্যক্তিত্বের কাঠামো গড়ে তোলা ও পরিচর্যার কেন্দ্রস্থল।

লেখক : মনোরোগ বিশেষজ্ঞ,

জাতীয় মানষিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, ঢাকা।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।