আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্ল্যান বি

জরুরী তলব কেন? ভেতরে যা। বুঝতে পারবি। তোকেও ডেকেছিল? হ্যাঁ। একটা মিশন দিল। এক রড ব্যাবসায়ীকে ফেলতে হবে।

গুড। আজকাল বস তোকে সব দামী কাজ দিচ্ছে। তোর জন্যও একটা কাজ দেখলাম। তুই কি এখনই বেরোবি? হ্যাঁ রে। কাজ আছে।

পরে কথা হবে। কি কাজ পেলি জানাস। ওকে। কতদূর কি হল জানাস। ফোন দিস।

আর উত্তর দিতে পারলাম না। ভেতর থেকে ডাক আসলো। কেমন যেন একটা খুশী খুশী ভাব কাজ করছে। লাস্ট মিশনটা খুব ভালো হয়েছে। একজন রাজনৈতিক নেতাকে শেষ করার কাজ ছিল।

বস এ ধরনের কাজ সাধারণতঃ কাছের লোক ছাড়া কাউকে দেয় না। গতবার যখন দিল, বেশ চমকে উঠেছিলাম। আমার ওপর বিশ্বাস জন্মাচ্ছে বসের। আবার হতে পারে আমার কাজের প্যাটার্ন পছন্দ হয়েছে। খুব ঠাণ্ডা মাথায়, প্ল্যান করে সব কাজ করি আমি।

খোঁজ খবর নিয়ে, দুর্বল পয়েন্ট খুঁজে তারপর অ্যাকশানে নামি। গতবারে আরও একটা কাজ করেছিলাম, মার্ডার টাকে অ্যাকসিডেন্ট বানিয়েছিলাম। কেউ ধরতে পারে নি। ফলে এ নিয়ে তেমন কোন পুলিশ কেস ও হয় নি। একারনেও বস হয়তো খুশী।

বস। থ্যাংকস। নতুন একটা মিশন আছে। আপনি যা ভালো মনে করেন। কাজটা আজকে রাতেই করতে হবে।

মনের ফুরফুরে ভাবটা উড়ে গেল। প্ল্যান করার তো কোন চান্স ই পাবো না। এসব কথা তো আর বস্ কে বলা যাবে না। ‘যদি’ ‘কিন্তু’ এসব কথা বললেই রেপুটেশান শেষ। নিজের অজান্তেই মাথা কাত করে ফেললাম।

বস একটা খাম এগিয়ে দিলেন। ভেতরে সব ডিটেলস আছে। কাজটা নেয়ার পরে কিন্তু না বলতে পারবা না। বললে এখনই বলে ফেল। বুঝলাম।

বস পরীক্ষা করছে। নিজের ওপর কতটা কনফিডেন্স আছে আমার। কেমন যেন চ্যালেঞ্জ ফিল করছি। কাজটা নিব ঠিক করে ফেললাম। কোন প্রশ্ন আছে? আজ রাত মানে কি ঠিক কয়টা পর্যন্ত? রাত বারোটা থেকে একটা র মধ্যে।

মেয়েটার আজকে বার্থ ডে। বারোটা এক মিনিটে বাড়ীর সব লাইট বন্ধ হবে, ক্যান্ডল জ্বালানোর জন্য। সেই ফাঁকে কাজ সারতে হবে। আর হ্যাঁ কাজটা সাইলেন্সার লাগানো পিস্তল দিয়ে করো। আছে না? ২ কাজটা অনেক দিক দিয়েই নতুন।

প্রথমতঃ এতো অল্প সময়ের নোটিশে এর আগে বস আমাকে কাজ দেয় নি। আমার কাজের প্যাটার্ন বস জানে। তাই বেছে বেছে দামী আর প্রেস্টিজিয়াস কাজগুলো দিত। বাকীরা আমাকে একটু হিংসেও করে বোধ হয়। বসের ভয়ে কিছু বলে না।

এবার এমন একটা কাজ কেন দিল ঠিক বুঝে পাচ্ছি না। হতে পারে খুব দামী পার্টি কিংবা বস হয়তো কোন রিস্ক নিতে চান নি। কাজটা আরেক কারণে নতুন। এর আগে কখনও কোন মেয়েকে খুন করিনি। খুনের ক্ষেত্রে আমার কোন বাছ বিচার নাই, তারপরেও কেমন যেন লাগছে।

একটা মেয়েকে মেরে ফেলার ভেতর কেন যেন কোন থ্রিল খুঁজে পাচ্ছি না। তারপরেও করতে হবে। কোথায়, কি যেন খট মট লাগছে। ঠিক বুঝতে পারছি না। এতো সহজ কাজ কেন দিল বস।

স্পেশালি আমাকে। খামটা খুললাম। রঙ্গীন ছবি মেয়েটার। দুর্দান্ত সুন্দরী। ছবি বলে দিচ্ছে বেশ স্মার্ট।

সম্ভবতঃ কোন বড়লোকের মেয়ে। কাজটা কে দিল? কেন? এসব চিন্তা করা যদিও বারণ, তারপরও চলে আসছে চিন্তাটা। প্রেম ঘটিত? নাকি সম্পত্তি ঘটিত? নাকি ওর বাবার কোন রাইভাল এর প্ল্যান? মাথা থেকে চিন্তাটা সরিয়ে বাকী ডিটেলস পড়লাম। আহামরি কিছু না। কোটিপতির একমাত্র মেয়ে।

আজকে বার্থ ডে। রাত বারোটা এক মিনিটে কেক কাটবে। তাই সেই সময়টায় পুরো ঘরের আলো বন্ধ করা হবে, মেইন সুইচ অফ করে। তখন ট্রলি তে করে ঘরে আনা হবে জ্বলন্ত মোমবাতি ঘেরা কেক। এখন আমাকে প্ল্যান করতে হবে।

খামের মধ্যে একটা ইনভিটিশান কার্ড ও আছে। অর্থাৎ ঢুকতে কোন সমস্যা হবে না। সিকিউরিটি কেমন থাকবে কে জানে? মেটাল ডিটেকটার থাকলে অন্য ব্যাবস্থা দেখতে হবে। চাকু দিয়েও কাজ সেরে ফেলা যায়। এতো বড় বাড়ীতে একটা চাকু পাওয়া অসম্ভব হবে না।

ঠিক কনসেনট্রেট করতে পারছি না। বার বার ঘুরে ফিরে একটাই প্রশ্ন আসছে, ‘কেন?’ ‘কে?’। পুরো ডিটেলস আবারো খুটিয়ে পড়লাম। পুরো ফ্যামিলি আগে দেশের বাইরে থাকতো। রিসেন্টলি দেশে ফিরে এসেছে।

ধানমন্ডিতে একটা বাড়ী কিনেছে। ধানমন্ডি এলাকায় ডেভেলাপারদের যা দৌরাত্ম্য ওখানে বাড়ী কিনতে পারলো কি করে? আর ফ্ল্যাট না কিনে একেবারে বাড়ী কিনল? খুব বড় পার্টি, সন্দেহ নেই। এমন একটা ফ্যামিলির শত্রু তো থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে তাঁদের নিজস্ব বডি গার্ড থাকাও অসম্ভব না। হয়তো দেখা যাবে বাড়ী টা একটা ছোট খাট দুর্গ।

একারনেই কি বস কাজটা আমাকে দিলেন? নাহ, কিছু একটা গণ্ড গোল আছে। খোঁজ নেয়া দরকার। ৩ রেডি? জ্বী। সিকিউরটি থাকবে কিন্তু। জানি।

সমস্যা হবে না। কিছু জানার আছে? একটা প্রশ্ন, যদি আলাউ করেন। বল। কাজটা কখন পেয়েছেন? আজকেই সকালে। সঙ্গে কোন শর্ত ছিল? আমার বেস্ট লোক কে যেন কাজটা দিই।

কোন ফেইলিওর মেনে নেয়া হবে না। সময় আর প্ল্যান ও কি ওদের? হ্যাঁ। কোন সমস্যা? না। তেমন কিছু না। একটা শুধু রিকোয়েস্ট, এরপরে আর কোন মেয়ে কেস আমাকে দিয়েন না।

ওকে। বস সাধারণতঃ এমন করে না। মিশন দিয়ে আর খোঁজ খবর করে না। বেশীর ভাগ সময় দরকার লাগে না। এবার মনে হল বস নিজেই একটু নার্ভাস ফিল করছে।

কিন্তু কেন? আর পার্টিই বা কেন টাইম বেঁধে দিল। খুব বড় পার্টি? কোথাও কিছু অঘটন ঘটছে। কিন্তু সেটা কি? ৪ এধরনের কেস এর জন্য আমার খুব ভালো কিছু স্যুট বানানো আছে। তারই একটা পড়লাম। খুব পরিপাটি ড্রেস খুব জরুরী।

গেস্ট দের ভেতর মিশে থাকতে হবে। এই রাতে পার্টি করার শখ হল কেন? বার্থ ডে তো কালকে। কালকে বিকেলে করলেই তো হয়। সবাই আরাম করে আসতে পারে। এখন এই রাত এগারোটা থেকে শুরু হবে গেস্ট আসা।

তারপর বারোটা এক বাজার জন্য অপেক্ষা করা। মেটাল ডিটেকটার টাইপ কিছু নাই। আসলে সম্ভব না। এতো বড় বড় লোক আসছে, তাঁদেরকে সার্চ করতে চাইলে বিচ্ছিরী দেখাবে। তবে মনে হল বেশ কিছু টিকটিকি ঘোরাফেরা করছে।

দারুণ স্যুটেড বুটেড হয়ে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সামনের লনে অনেকেই আছে। ভেতরও অনেকে আছে বোধহয়। বাইরেই থাকবো? না ভেতরটাও দেখে আসবো? ভেতরে দরজার কাছেই একজন দাঁড়িয়ে। খুব ভদ্রভাবে কার্ড টা চাইছে।

‘স্যার র‍্যাফেল ড্র আছে, কার্ড টা এখানে একটু ফেলে দেন। ‘ বুদ্ধি খারাপ না। সরাসরি কার্ড চাওয়া সম্ভব না। তবে কেউ কার্ড না আনলেও কিছু বলছে না। ‘নো প্রবলেম স্যার’ বলে ভেতরে যেতে বলছে।

আমি কার্ড এগিয়ে দিলাম। গদগদ ভাব দেখিয়ে কার্ডটা নিল। পাশে রাখা বাক্সে ফেলল। আমি সোজা মেইন হল রুমে ঢুকলাম। অনেকেই এসেছেন।

তবে হল এখনও অনেকটাই ফাঁকা। সময় আরও কিছুক্ষণ আছে। এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছি। বার্থ ডে গার্ল কে খুঁজছি। এমন সময় দেখতে পেলাম।

বেশ কয়েকজন বান্ধবী পরিবেষ্টিত হয়ে আছে। মাঝে মাঝে দু একজন এসে ‘হাই’ ‘হ্যালো’ করে যাচ্ছে। ওদিকে আরও একজন রাশভারী লোক বেশ কিছু সভাসদ দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে আছেন। উনি সম্ভবতঃ গৃহকর্তা। গৃহকর্ত্রীর দেখা এখনও পাই নি।

সাজগোজ শেষ হয় নি? নাকি উনি পৃথিবীতে নেই? আসলে সব খোঁজ নেয়ার সময়ই তো পাই নি। এই প্রথম কোন কাজ করতে এসে অস্বস্তি বোধ করছি। কেন যেন সমীকরণ মিলছে না। কি যেন ফাঁক। ধরতে পারছি না।

গেস্ট দের কেন যেন গেস্ট মনে হচ্ছে না। হয়তো সবাই ব্যাবসায়িক কারণে এসেছেন। বিজনেস পার্টনার কিংবা কোন অফিসের ম্যানেজার। ইনি করেন কি? তাও তো জানি না। বিজনেস নাকি অন্য কিছু? স্মাগ্লিং টাইপ কিছু? এখন আর এসব ভেবে লাগ নাই।

আমাকে আমার পজিশান ঠিক করতে হবে। সম্ভবতঃ হল রুমের ঠিক মাঝখানে কেক কাটা হবে। সো তার আসে পাশেই থাকতে হবে। কাজটাও সারতে হবে অন্ধকারে। একটার বেশী গুলি চালানোর সুযোগ হয়তো পাব, তবে মিস করা যাবে না।

আর মিনিট দশেক আছে। যদি সব কিছু কাঁটায় কাঁটায় ঘটে। কোথায় থাকবো ঠিক করে ফেলেছি। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। লোকজন ও বোধহয় অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে।

বেশ কিছু টিকটিকি কেও দেখা যাচ্ছে। ওরা কেমন এলো মেলো হয়ে ঘুরছে। সবার দিকে নজর দিচ্ছে। একজন আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হতেই চোখ সরিয়ে নিল।

সন্দেহ করছে নাকি? সে দেখা যাবে। আর তো মাত্র পাঁচ মিনিট। কাজ সেরে কেটে পড়তে অসুবিধা হবে না। এখন আবার কে ফোন করল? ফোনটা বের করলাম। বাপী, আমার ইনফরমার।

ওকে একটা কাজ দিয়েছিলাম। সেজন্যই হয়তো ফোন করেছে। এখানে কিছু শোনা যাবে না। ফোনটা ধরে কথা বলতে গেলে এখন হল রুমের কোন এক পাশে নিরিবিলিতে যেতে হবে। তখন আবার এই পজিশান টা পাওয়া যাবে না।

আবার অস্থির ও লাগছে। কি ইনফরমেশান আছে? এখন আর ইনফরমেশান কোন কাজে দিবে না। ফোনটা ধরব না ঠিক করলাম। কেটে দিলাম। খুব লাভ হল না।

একটু পরে আবার করল। ফোনটা কি অফ করে রাখবো? না ধরবো? আবার কেটে দিলাম। আর মাত্র তিন মিনিট। এই সময়ে ডিস্টার্ব কেমন লাগে। আর করছে না।

কিন্তু যদি গুলি চালানোর সময় যদি আবার করে? ফোনটা বরং বন্ধ করে রাখি। বন্ধ করতে যাব, এমন সময় ম্যাসেজ টা আসলো। ৫ গত তিন মাসে বড় তিনটা কন্ট্রাক্ট ওদের হাতে গেছে। ভেরি আলার্মিং। কি করতে চান? যাই করি ভেবে চিন্তে করতে হবে।

কোন ভাবেই গ্যাং ওয়ারে যেতে চাই না। নেগশিয়েশান? সেটা আমাদের জন্য অপমান জনক হয়ে যায়। আমি কিছু বলতে পারি? এবার সবাই ঘুরে নিশি র দিকে তাকাল। একান্ত বিশ্বস্ত কয়েকজনকে নিয়ে আজকের এই সভা। দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ এসব ও বেড়ে গেছে।

বেশ কিছু ছোট ছোট গ্যাং ও তৈরি হচ্ছে। পুরনো কিংবা বড় যেসব গ্যাং আছে তাঁরা এইসব ছোট গ্যাং এর গন্ডি বেধে দিয়েছে। ছোট খাট ছিনতাই কিংবা জমি জমার বিরোধের খুন, এসব নিয়েই এসব ছোট গ্যাং ব্যস্ত। বড় বড় বিজনেসম্যান আর বিল্ডার দের জন্য জমি খালি করার কাজ গুলো হাতে গোনা দুএকজন এর কাছেই আছে। তাঁরাও নিজেরা এলাকা ভাগ করে নিয়েছে।

শিপলু গ্যাং এতদিন ধরে কন্ট্রোল করছিল পুরো ঢাকা। মাজেদ গ্রুপ এতদিন ছোট খাট কাজই করতো। ইদানীং কিছু বড় বড় কাজ করে হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে। বাজারে নিজেদের অনেকটাই স্টাব্লিশড করে ফেলেছে। বিশেষ করে একজন বড় রাজনৈতিক নেতাকে মারার পরে ওদের স্ট্যাটাস অনেকটাই বেড়ে গেছে।

অল্পে কাজ করে দিচ্ছে দেখে বেশ কিছু বিজনেস ম্যান ফেলে দেয়ার কাজ ও ওরা ইদানীং পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিপলু গ্রুপ আজকে এই মিটিং ডেকেছে। মাজেদ গ্রুপের উত্থান কিভাবে আটকানো যায়। নিশির কিছু বলতে চাওয়ায় সবাই তার দিকে ঘুরে তাকাল। নিশি মেয়ে হলেও দারুণ বুদ্ধি রাখে।

খুব রিসেন্ট লি জয়েন করেছে। খুবই ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যান করে কাজ করে। অলরেডি বেশ কিছু কাজ করে সবার সমীহ আদায় করে নিয়েছে। গ্রুপে ওর প্রস্পেক্ট বেশ ভালো। আর মেয়ে বলে অনেকে ওকে কিলার মনে করে না।

ফলে অনায়াসে অনেক কঠিন মিশন ও সহজেই করে ফেলতে পারে। বল। মাজেদ গ্রুপের এই উত্থানের পেছনে আছে একটা ব্রেন। জানি। রাসেল।

সেই ছেলেটাকে সরিয়ে ফেলতে পারলে, গ্রুপটা আবার আগের অবস্থায় চলে যাবে। কি করতে চাও? দলে আসার অফার? আসবে না। ফেলে দিতে হবে। তখন কিন্তু গ্যাং ওয়ার শুরু হতে পারে। আমাদেরও অনেকে মারা পড়বে।

আমার একটা প্ল্যান আছে। কি করতে চাও? এমন ভাবে সরাতে হবে যেন মনে হয় অন্য কেউ মেরেছে। মানে? মানে মাজেদ গ্রুপ একটা মিশন পাবে। যে মিশনের দ্বায়িত্ব রাসেল পাবে। আর কাজটা করতে যেয়ে রাসেল মারা পড়বে।

এমন ভাবে সাজাতে হবে যেন মনে হয় সিকিউরিটি গার্ডের হাতে মারা পড়েছে। যদি জানতে পারে? তখন জানিয়ে দেবেন এই কাজ আমি করেছি। আমাকে ওদের হাতে তুলে দেবেন। নিশির কথায় আত্মবিশ্বাস ঝরে পড়ছে। পুরো প্ল্যান ও তৈরি করে ফেলেছে।

শুধু অনুমুতি চাইছে। শিপলু ভেবে দেখল। রিস্ক আছে। নিশিকে হারাতেও সে রাজী না। তারপরও নিশিকে বাঁধা দিল না।

বেশ। তোমার পুরো প্ল্যান বল। ৬ ‘বাড়ীটা এক মাসের জন্য ভাড়া নেয়া হয়েছে’ ম্যাসেজটা দেখেই পুরো ব্যাপারটা বুঝে গেল রাসেল। এটা সাবোট্যাজ। কেউ তাঁকে ফেলে দেয়ার জন্য পুরো প্ল্যানটা করেছে।

সব খটকা গুলো এবার সরে গেল। ফাঁদে পড়ে গেছে। বেরোনোর একটাই মাত্র উপায়, প্ল্যান বি। অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজ সারতে না পারলে, প্ল্যান বি রেডি রেখেছিল। এখন মনে হচ্ছে সেটাই একমাত্র রাস্তা।

যদি একটু সময় পাওয়া যায়। এখনও ওরা অ্যাটাক করছে না কেন। রাসেল অবাক হল। তার অবস্থান তো ওরা জানে। তাহলে কি অন্ধকার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে? অন্ধকারে কাজ সারবে? এবার মেয়েটাকে ভালো মত দেখতে পেল।

ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে হল ঠোঁটের কোণে শ্লেষ ভরা হাসি। এবার বুঝতে পারলো মেয়েটা কে। নিশি। শিপলু গ্রুপের নতুন রিক্রুট।

নাম শুনেছিল। দারুণ ট্যালেন্টেড। এখন সব কিলিং মিশনের প্ল্যানিং ও করে। সিলেক্টেড কিছু কাজ ছাড়া করে না। এটা তাহলে ওর প্ল্যান।

রিয়েলি গ্রেট। আর মাত্র এক মিনিট। চারদিকে তাকিয়ে বুঝলো টিকটিকিগুলো এগিয়ে আসছে। হয়তো পজিশান নিয়ে রাখবে। আলো নিভে গেলেই অ্যাকশানে যাবে।

তার আগেই প্ল্যান বি অ্যাক্টিভেট করতে হবে। নিশির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল। এরপর রিমোটের বোতামে চাপ দিল। দারুণ শব্দ করে একটা বিস্ফোরণ হয়ে পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। ৭ খটকা রাসেলের প্রথম থেকেই লাগছিল।

প্রথম খটকা লেগেছিল সময় আর প্ল্যান নিয়ে। কখনই কোন পার্টি প্ল্যান সহ আসে না। একমাত্র চাওয়া থাকে ফেলে দেয়া। এক্সট্রা হিসেবে থাকে যেন অ্যাকসিডেন্ট মনে হয়। এবারের চাওয়াটা যেন কেমন।

দ্বিতীয় খটকা লেগেছিল পার্টিতে আসা গাড়ীগুলো কে দেখে। অনেকগুলোই রেন্ট এ কারের গাড়ী। অন্ধকারে বোঝা না গেলেও কোন কোনটাতে স্টিকার ছিল। গেস্ট গুলোও কেমন যেন আড়ষ্ট। কোন মিশনে যাওয়ার সময় রাসেল সবার আগে এস্কেপ রুট ঠিক করে রাখে।

বাড়ীর একটু দূরে সে গাড়ী তৈরি রেখেছে। স্যুটের নীচে আরেক সেট ড্রেস পড়ে এসেছে। ক্যাটেরিং এর দ্বায়িত্বে যারা আছে তাঁদের ড্রেস। আগেই সেই খোঁজ নিয়ে ড্রেস জোগাড় করে রেখেছিল। প্ল্যান বি হিসেবে বাড়ীর সামনের ট্রান্সফর্মারে আরডিএক্স সেট করে এসেছিল।

একটু লম্বা অন্ধকার দরকার লাগলে কাজে দিবে। এক মিনিট আগেই তাই রিমোট চেপে ট্রান্সফর্মার বাস্ট করে দিল। ঘুটঘুটে অন্ধকার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে ড্রেস খুলে বেড়িয়ে পড়ল। পুরো এলাকা তখন অন্ধকার। বেরোবার পথটা খুব ভালো ভাবে চিনে রেখেছিল।

অন্ধকারেই তাই রাসেল দ্রুত পেছনের দরজার কাছে চলে এলো। দ্রুত বেড়িয়ে নিজের গাড়ীর কাছে পৌঁছে গেল। এখন বাকী শুধু প্ল্যান বি এর বাকী অংশটুকু সেরে ফেলা। খারাপ লাগছে। নিশি মেয়েটাকে বেশ পছন্দ করে ফেলেছে।

দারুণ বুদ্ধি করে ফাঁদে ফেলার জন্য ওকে একটা স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু উপায় নেই। এই পথে শত্রুর শেষ রাখতে নাই। তার ফেলে আসা স্যুটের পকেটে আছে দ্বিতীয় সেট আরডিএক্স। এখন সেটা একটিভেট করতে হবে।

গুড বাই নিশি। রিমোটে চাপ দিল রাসেল। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।