আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সর্বোচ্চ স্বাধীনতার বয়ান ও গণমাধ্যম



যশোর ০৩.০৬.১০ প্রিয় দিবাকর, এই চিঠি যখন লিখছি তখন গোধূলির ম্রিয়মান লাল টকটকে সূর্যের আভাকে বিদ্রুপ করতে এগিয়ে আসছে আবর্জনার স্তুপে জ্বলা আগুন। আরেকটু পরেই সন্ধ্যা নামবে । আত্মগর্বে চিৎকার করে আবর্জনার আগুন দাবি করবে- তার ভয়ে পালিয়েছে সূর্য। অর্থাৎ সেই সময়ের বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে লিখছি তোমাকে যেখানে নিয়ত জ্যান্ত পুঁতে ফেলা হচ্ছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা। ‘স্বাধীন সার্বভৌম’ এই দেশে যে ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ আমাদের শাসন করবে তারা শোষণ নিরঙ্কুশ করতে অন্ধকারকেই বোধ করি অধিপতি ভাবতে শুরু করেছে।

এমনি এক ল্যাংটা সময়ের য়িষ্ণু ভূমিতে দাঁড়িয়ে গতকাল ০২ জুন টেলিভিশনে মহান সংসদের অধিবেশন দেখছিলাম। তথ্যমন্ত্রী বললেন, সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহে বিশ্বাসী। পৃথিবীর কোন দেশের মিডিয়া বাংলাদেশের মত এত স্বাধীনতা ভোগ করছেনা। ধুলো-ময়লামাখা ‘অপবিত্র মানুষের’ নাগালের বাইরে সাফ ছুতোর পবিত্র ভবনে দাঁড়িয়ে মহানদের মুখনিসৃত ‘পবিত্র বাণী’ শুনতে মজা; জাগায় হর্ষ। শাসকদের বিচারে সংসদ ‘মহান ’ হলো বটে; কিন্তু সত্যের বিচারে কি হলো বলতে পারো? মহান সংসদের বক্তব্য আর বাস্তবতার মধ্যে দূরত্ব যে কত যোজন তা মাত্র অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে মিডিয়া সংশ্লিষ্টরা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছেন।

এরপর হয়তো জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে হবে। মন্ত্রী বাহাদুরের এই বাণী যখন শুনছিলাম ঠিক তার আগের দিন দমকা হাওয়ার মত এসে উড়িয়ে দেয়া হলো দেশের প্রথম সারির দৈনিক আমার দেশের ডিকারেশন। পরদিন প্রকাশকের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার করা হলো পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে। শোনা গেল মামলাটি দায়েরের আগে প্রকাশককে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। কয়েক ঘন্টা তিনি ছিলেন অজ্ঞাতবাসে।

সেখান থেকে ফিরেই দায়ের করলেন মামলা। ওই মামলায় আদালত মাহমুদুর রহমানকে জামিন দিলেন। কিন্তু মুক্তি মিললো না। সাথে সাথেই আরেকটি মামলায় ঢুকে গেলেন তিনি। অভিযোগ তাকে গ্রেফতারের সময় পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা দেয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রের যুক্তি অকাট্য বটে। পুরোটাই আইন ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার কথা। আর যাবে কোথায়! মাহমুদুর রহমানের ঠাঁই হলো কারাগারে। কি আর বলব বন্ধু! অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ক্রসফায়ার এখন গণমাধ্যমের উপর চেপে বসতে চাইছে। মুক্ত স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক সমাজে মতপ্রকাশের জন্যতো কোন আইন পাশের প্রয়োজন থাকার কথা না।

এ্টাতো ওই সমাজের ন্যয্যতার ভিত্তির উপর শক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকার কথা। তবে কার স্বার্থে এই কন্ঠরোধের প্রক্রিয়া? ২৯মে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হলো সামাজিক যোগাযোগের সবচেয়ে বড় সাইট ফেইস বুক। ইদানিংকালে যার দেয়াল জুড়ে ছিল শাসক দলের অনুচরদের যারপরনাই অপকর্মের চিত্র, হানাহানীর বিভৎস দৃশ্য, আর এসবের বিরুদ্ধে চিন্তাশীল তরুণদের যৌক্তিক সমালোচোনা। সাথে কিছু বিকৃতির ছোঁয়া যে সেখানে ছিলনা তা বলা যাবে না। তবে তার অনুপাত নগণ্য।

শাসকেরা যৌক্তিক সমালোচনার নৈতিক কোন জবাব খুজে পেলেন না। রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পন্থায় এটি মোকাবেলার সব উপাদান ততণে দলীয় সন্ত্রাসীদের উন্মত্ত থাবার নিচে চাপা পড়ে গেছে। তাই ২৯মে ফেইস বুকেও বসালেন আরেক থাবা। ২৭ এপ্রিল আকষ্মিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হলো আরেকটি মিডিয়া চ্যানেল ওয়ান। বিশেষ করে চ্যানেল ওয়ান ও আমার দেশ বন্ধের েেত্র সরকার বারবারই বলে চলেছে এতে সরকারের কোন হাত নেই।

তারা নিজের দোষেই নাকি বন্ধ হয়েছে। দু’টি েেত্রই সেই বহুল আলোচিত ক্রসফায়ারের মত একই গল্প। পরিকল্পিতভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর একটি আইনী ভিত্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা। জনগণের চোখে দেখা সত্য হচ্ছে ধরে নিয়ে মেরে ফেলা, আর আইনীভাবে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ইচ্ছেমাফিক দাঁড় করানো গল্প। জনগনের কণ্ঠস্বর কে শুনছে? জনগনের স্বাধীনতা রা করতে গিয়ে তো আর দলীয় সরকারের এজেন্ডা নষ্ট করা যায়না।

দিবাকর তোমাকে আমি কোনদিন চিঠি লিখিনি। আজ অনেক যন্ত্রণা অনুভব করছি তাই এ লেখা। একজন সামান্য সংবাদ কর্মী হিসেবে মিডিয়া নিয়ে সরকারের পর সরকারের আচরণ দেখেছি আর প্রত্যাশা করেছি সুদিন আসবে। অবাধ তথ্য প্রবাহ, বাক স্বাধীনতা এই সব শব্দগুলো আমার কাছে বড্ড আটপৌরে ঠেকে। যে শাসকদের বিবেকের স্বাধীনতা নেই তাদের কাছেই আমরা বারবার অবাধ তথ্য প্রবাহ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে এসেছি।

দেশের কোন শাসকই বলেননি তারা মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না। এ বিষয়ে বক্তব্য সবারই উদার। কিন্তু নিজের সমালোচনা সইতে সবাই একদমই নারাজ। মতায় যাওয়া ও টিকে থাকার প্রশ্নে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আর্শীবাদপুষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার দৃশ্যমান খেয়োখেয়ি চূড়ান্তভাবে কখনোই জনগনের পে যায় না। এক এবং অভিন্ন শ্রেণীচরিত্র নিয়ে তারা ঘুরে ফিরে মতায় আসে লগ্নিপুঁজির কাছে দস্তখত দিয়ে।

মতার ভাগাভাগির প্রশ্নে একে অপরের বিরুদ্ধে ঘোষিত কর্মসূচিতে কিছু সত্য মানুষের সামনে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। বর্তমান শাসকরা চাইছেন না এই সত্যটুকুও মানুষের মধ্যে প্রকাশিত হোক। আর তাইতো আইনের মারপ্যাচে কণ্ঠরোধের এই প্রক্রিয়া। আরো একটা বিষয় সরকারি বাহিনী খুব স্পষ্টভাবেই মতার প্রথম দিকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, সরকার নিজের বিরুদ্ধে ছোটখাট কিছু সমালোচনা সহ্য করলেও সাম্রাজ্যবাদ বিশেষত আমেরিকা সাম্রাজ্যবাদ ও তার বিশ্বস্ত মিত্রদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের সমালোচনা ও কর্মসূচি বরদাস্ত করবে না। জাতীয় সম্পদ রা কমিটির কর্মসূচিতে জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক অর্থনীতিবিদ আনু মুহম্মদের ঠ্যাং ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে সরকার বিষয়টি পরিস্কার করেছে।

তাই বলে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী শক্তির প্রতিভূ বলে উল্লেখ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তার পত্রিকা আমার দেশ সম্পূর্ণরূপে দেশ ও জনগণের মুখপত্র তাও দাবি করছিনা। অবশ্যই তিনি বিদ্যমান বৈষম্য মূলক আর্থসামাজিক কাঠামোর পরে একজন বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষ। অপরাপর সংবাদপত্রের কর্ণধারদের মত তিনিও একটি পরে লোক। মাহমুদুর রহমানদের সমর্থিত শাসকরা যখন মতায় ছিলেন তখনও মিডিয়া বন্ধ হয়েছে।

জনপ্রিয় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভি বন্ধের সে ইতিহাস সংবাদকর্মীদের মাঝে এখনো জ্বলজ্বলে রয়েছে। মিডিয়ার কণ্ঠরোধের ঘটনা বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে সব শাসক করেছেন। কেউ নগ্নভাবে প্রকাশণা বন্ধ করেছেন, কেউ আইনের দোহাই পেড়ে রাষ্ট্রের অস্ত্র তাক করে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালের মত এখনো টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে রয়েছে যথেষ্ট বাধ্যবাধকতা। টকশো নিয়ন্ত্রিত, আতিথি আলোচকও নিয়ন্ত্রিত।

ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে কম্পিউটারের সহজলভ্যতা, চেয়ে আনা বিদেশী যন্ত্রপাতির সমন্বয় ও ইন্টারনেটের উন্নয়নের মধ্যদিয়ে দেশের এক ধরনের উন্নয়ন ঘটবে অবশ্যই। সে উন্নয়নের চিত্র ফেইস বুক বন্ধের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। মান সম্মত যন্ত্রপাতি ও উন্নত যোগাযেগের একটি দেশ হবে এটি। যে যোগাযোগের পথ ধরে কর্পোরেট পুজির শোষণ নিমেষেই পৌছে যেতে পারে তৃণমূল থেকে তৃণমুলে। তখন প্রযুক্তি বলতে যন্ত্রপাতিকেই বুঝানো হবে স্বচ্ছতাকে নয়।

সে সব আলোচনায় আজ যাব না। সংবাদ কর্মী হিসেবে নিজেকে এখন অনেক অসহায় মনে হয়। আজো সংবাদ মাধ্যমকে শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলা না। এখানে মালিক কর্তৃপ চাকরির নিশ্চয়তা দেয়না, সরকার ঘোষিত বেতনবোর্ড বাস্তবায়ন হয় না। আবার এখন জোরালো হয়ে দেখা দিয়েছে প্রচার প্রকাশণা বন্ধের শংকা।

যেন কচুর পাতার পানি। এত বড় অনিশ্চিত পেশা বাংলাদেশে আর কিছু আছে বলে মনে হয়না। এরপরও আশার আলো দেখা যেত যদি রুটি রুজি নিয়ে দরকষাকষির সংগঠন থাকতো। জীবন জীবিকার আন্দোলনের নামে যা হয় তা দলীয় মতাদর্শের বন্দনা। পেশাগত ঐক্য সুদূর পরাহত।

আছে ভাগের দেয়াল। শাসকদলের বিপে যায় এমন কথা বলতে নারাজ একপ। আরেক প সেই কথাই বলতে আগ্রহী যা বিরোধী নেত্রীর পে যাবে। দলবাজী করতে করতে আমরা অনেকটা আদর্শ নিরপে হয়ে পড়ছি। কিন্ত কথা ছিলো সাংবাদিকতা হবে দল নিরপে; আদর্শ নিরপে নয়।

সাংবাদিকদের মধ্যকার বিভাজন শাসকদের অনেকগুলো সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার একটি। যাতে তারা সফল। এখন আমরা একপ ব্যস্ত আওয়ামী লীগের গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের লড়াইয়ে। অপরপ ব্যস্ত বিএনপির গণতন্ত্রকে ঊর্ধে তুলে ধরতে। মাঝখান দিয়ে উভয় পই মতার পালাবদলের হাওয়ায় মিডিয়ার উপর নামিয়ে আনছে খড়গহস্ত।

আজকের সরকার তথ্য অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যত সংকুচিতই করুন আর যত পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ করুন না কেন সাংবাদিকদের একটি অংশ সরকারের পাশে থাকবেই। ঠিক একই কথা প্রযোজ্য হবে অন্য কোন সরকার মতায় এলেও। এটাই সাংবাদিকদের বিভাজন করার মধ্য দিয়ে শাসকগোষ্ঠির অর্জন। চূড়ান্তভাবে তিগ্রস্ত হচ্ছে পেশাদারিত্ব , ীণ থেকে ীণতর হচ্ছে জনগনের মত প্রকাশের অধিকার। নির্বিঘেœ ল্য অর্জন ও মতা নিরঙ্কুশ করে চলেছে লগ্নি পুঁজি।

বন্ধু, তুমি হয়তো জান আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ ও মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার নিয়ে পে বিপে নানা কথা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি অভিযোগ; পত্রিকাটি একপেশে লিখতো। এখন প্রশ্ন জাগে বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোর মালিক কর্তৃপ কারা? ব্যাপক জনগনের বাইরে ব্যক্তি ও গোষ্ঠিগত স্বার্থ কোন মিডিয়া সংরণ করছে না? এদের শ্রেণী চরিত্র আর জনগনের শ্রেণী চরিত্র কি এক? তা যদি না হয় তাহলে শ্রেণী স্বার্থ এক হবে কেমনে। একথা তো এখন জোরে শোরে উঠতে শুরু করেছে যে কালো টাকার মালিকরা সম্পদ রার ঢাল হিসেবে মিডিয়ার ব্যবসা খুলছেন। শাসক গোষ্ঠির মতার দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতায় মালিকরা স্পষ্টত দু’টি ভাগে বিভক্ত।

এরপরও গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে প্রত্যেকের মধ্যেই ‘নিরপেতার ভান’ বলে একটি প্রবণতা রয়েছে। এই নূন্যতম নিরপেতার খোলসে দেশের মিডিয়া গণমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃত। সেই স্বীকৃত গণমাধ্যমের দু’টি প্রতিষ্ঠানকে যে অযুহাতেই বন্ধ করা হোক না কেন তা একপীয় মতাদর্শ নিরঙ্কুশ করার ইঙ্গিত বলেই প্রতীয়মান হয়। আইন ও ন্যায় বিচারের কথা শুনতে শুনতে সব সরকারের আমলেই কান ঝালাপালা হয়ে যায়। বিনা বিচারে অসংখ্য ক্রসফায়ারে হত্যার ঘটনা সরকারের নির্বাহী তদন্তে বৈধ।

আইনী ভাবে সরকারি বাহিনী সম্পূর্ণ দোষমুক্ত। কিন্তু জনগণের বিচারে প্রত্যেকটি একটি পাতানো গল্প এবং বেআইনী হত্যাকান্ড। চোখের সামনে মানুষ দেখেছে এক আর সরকারের ব্যখ্যা হচ্ছে অন্য এক। হোক সে সন্ত্রাসী তবু তার লাশটি ঘিরে স্বজনদের আহাজারির অধিকার কেন কেড়ে নিতে হবে। মৃত ‘সন্ত্রাসী’কে চোখের জল না ফেলে দ্রুত পুতে ফেলার জন্য বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতির কারণ ছিলো নিশ্চয় কোন।

জোট আর মহাজোট আমল কোন আমলেই এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি। এখন অবশ্য গুপ্ত হত্যার ট্র্যাডিশন চলছে। আজ যারা প্রতিবাদ করছেন আগামীতে তারাও হয়ত এটিকে উত্তম পন্থা হিসেবে গ্রহণ করবেন। কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, দিন দুপুরে ঢাকার রাস্তায় প্রেসকাবের পাশে এক দলীয় টেন্ডারবাজের দ্যেরত্ম্য। র‌্যাব পুলিশের লোক দেখানো সব আয়োজন ব্যর্থ করে দিয়ে টেন্ডার সে ঠিকই দখলে নিয়েছিল।

তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে কোন মামলা হতে শুনিনি। জেল হাজতে প্রেরণ রিমান্ড আবেদন তো অনেক পরের কথা। একটি যায়গায় সরকার নিয়ম মানেনি বলে আর কোন যায়গাতে মানবেনা তা বলতে চাচ্ছি না। বিষয়টি এমন যে, আকষ্মিক ঝড়ের মত এসে বন্ধ করে দেয়া হলো আমার দেশ পত্রিকা। এরপর অফিসে অভিযান চালানো হলো পত্রিকাটির কর্ণধার মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারের জন্য।

প্রকাশনা বন্ধ ঘোষণার মধ্য দিয়েই পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিক কর্মচারীদের জীবিকা হয়ে পড়লো অনিশ্চিত। সেই সংকটের মুহুর্তে তাদের নির্ভরতার জায়গা অবশ্যই মাহমুদুর রহমান। এ েেত্র মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতারে পুলিশকে তারা বাধা দিতেই পারেন। তবে সেই বাধা দেয়ার সময় সাংবাদিকরা অবশ্যই যুদ্ধংদেহী হননি। বরং যুদ্ধংদেহী মনোভাবে পুলিশ সব বাধা অতিক্রম করে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করেই নিয়ে গেলেন।

এখানে পুলিশকে বাধা দেয়ার অভিযোগে মামলা হওয়াটাও স্বাভাবিক আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে ধরা যায়। কিন্তু এই মামলায় মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন এবং রিমান্ড না পেয়ে ফের আবেদনের প্রক্রিয়া স্বাভাবিক কোন ইঙ্গিত বহন করে না। দেশের প্রথম সারির একটি সংবাদপত্র বন্ধ এবং সম্পাদককে গ্রেফতার খুব সহজ বিষয় নয়। এর ফলাফল সুদূরপ্রসারী। চ্যানেল ওয়ান বন্ধের পর মিডিয়ায় এমন কোন ঐক্য সৃষ্টি হয়নি যা দিয়ে চোখে পড়ার মত প্রতিবাদ গড়ে উঠবে।

আমার দেশের েেত্রও হয়ত এখনি এমন কোন প্রতিবাদ গড়ে উঠবে না। একটি প চাইলেও হয়ত আরেকটি প নিস্পৃহ থাকবেন। অবশ্যই যে কেন মিডিয়া বন্ধের মানেই হলো মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা। যে যুক্তিতেই এটি করা হোক তা নিন্দনীয়। যে শাসকরাই এটা করেছেন তারা অন্যায় করেছেন।

পেশাদার সংাবাদিকদের এখনই প্রয়োজন দল নিরপে হয়ে পেশা ও শিল্পের স্বার্থে আদর্শিক ঐক্য গড়ে তোলা। একাংশের মিডিয়া বন্ধ হচ্ছে বলে অন্য অংশের আত্মতৃপ্তির কোন কারণ নেই। নগরে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না- এই সত্যটি উপলব্ধি করা জরুরী। মিডিয়া ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিচ্ছিন্ন এবং বায়বীয় কোন স্বাধীনতা নয়। এটি সমাজের সামগ্রিক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের অংশ মাত্র।

সমগ্রকে বাদ দিয়ে অংশের স্বাধীনতায় ফল পাওয়া যায় না। আমাদের সমাজের সামগ্রীক স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র সঙ্গায়িত হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদের লগ্নিপুঁজির মানদন্ডে, নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কর্পোরেট পুঁজির সুবিধাজনক গতির সাথে। শাসক রাজনৈতিক দলগুলোর সকলেই মতায় যাওয়া আর টিকে থাকার প্রশ্নে স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজেদরকে লগ্নিপুঁিজর সবচেয়ে বিশ্বস্ত পাহারাদার হিসেবে প্রমানের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এই লড়াইয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মদদ জোগানো সাংবাদিকদের কাজ নয়। বরং এসবের বিপরীতে মত প্রকাশের অধিকার এবং মিডিয়ার জন্য মুক্ত স্বাধীন পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় গণতান্ত্রিক শক্তির উদ্বোধন ঘটাতে হবে।

ধান ভানতে শিবেরগীত গাওয়ার মত আবোল তাবোল অনেক কিছুই লিখলাম বন্ধু। আর তোমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটাচ্ছিনে। যেখানেই থাকো হয়তো মিলতে হবে সামনের দিনে সূর্যোদয়ের পথে। আজ বিদায়। ইতি বন্ধু


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.