আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান

ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হাজার বিশেক ক্রিকেটপ্রেমীর মন আনচান। উসখুস সবাই। পাকিস্তানের বিপক্ষে কি করবে প্রিয় দল? দেখবে কি ভারত, আফগানিস্তান ম্যাচের অসহায় আত্মসমর্পণ, না বর্নিল নতুন কোনো অধ্যায়ের সূচনা করবেন মুশফিকরা? কিন্তু এ কি! একাদশ দেখে পিলে চমকে উঠার উপক্রম। পাঁচ পাঁচটি পরিবর্তন। তাহলে টাইগাররা বোধহয় ফিরেই যাচ্ছেন সেই সাদাকালোর যুগে।

না, মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসের পর্দায় চার-ছক্কার মারকাটারিতে বিকেলটাকে বর্নিল করে তুললেন এনামুল হক বিজয়, ইমরুল কায়েশ, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানরা। সময়ের দাবি মিটিয়ে রুদ্রমূর্তিতে আবির্ভূত টাইগাররা। হঠাৎই তাদের ব্যাটে প্রলয়নাচন। আর তাতে নেচে-গেয়ে দুলে উঠল স্টেডিয়ামের কংক্রিটের গ্যালারি। এশিয়া কাপের খাঁদে পড়া বাংলাদেশ তখন স্বপ্নে বিভোর অবিশ্বাস্য এক অর্জনের।

১৯৯৯ সালের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়টা যে আর অসম্ভব মনে হচ্ছিল না নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩২৬ রান তুলে ফেলার পর। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল এর আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে, ৮ উইকেটে ৩২০। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০৮ সালে, লাহোরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে, ৮ উইকেটে ৩০০। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ছিল লাহোরে, ২০০৮ সালে ৭ উইকেটে ২৮৫।

আফগানিস্তান ম্যাচ হারের পর একেবারে গহিন জলে পড়েছিলেন মুশফিকরা।

খুঁজে পাচ্ছিলেন না কোনো কুল কিনারা। সমস্যার অথৈ জলের বৃত্তে অসহায় মনে হচ্ছিল ক্রিকেটারদের। এমন কঠিন সমস্যার বৈতরণী পার হতে ক্রিকেটারদের সাহায্য করতে পাশে দাঁড়ান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। সমস্যা খুঁজে বের করতে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন ক্রিকেটের কর্তা ব্যক্তিরা। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে কাল অবিশ্বাস্য এক জুয়া খেললেন টিম ম্যানেজমেন্ট।

একাদশে পরিবর্তন আনলেন পাঁচটি। তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা শেষে অটোমেটিক চয়েজে ফিরেন সাকিব।

পাঁচ পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নামে তেজোদ্বীপ্ত বাংলাদেশ। অবশ্য প্রথম ওভারেই পাল্টে যেতে পারত চিত্র। পঞ্চম বলে স্লিপে ইমরুল কায়েশের দেওয়া ক্যাচটি যদি ধরতেন আহমেদ শেহজাদ, তাহলে হয়তো এই আলোর নাচন থাকত না।

ওই মুহূর্তটি ছাড়া ৫০ ওভারের আর কোনো সময়ই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি পাকিস্তান। কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে দেননি টাইগাররা। এর মধ্যেই দুই ওপেনার এনামুল ও ইমরুল ১৫০ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন পাকিস্তানের বিপক্ষে। এশিয়া কাপে উদ্বোধনী জুটিতেও যা সর্বোচ্চ। অবশ্য উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড ১৭০ রান, ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত ও মেহরাব হোসেন অপি।

সব মিলিয়ে উদ্বোধনী জুটিতে টাইগারদের শতরানের জুটি সাতটি। যে কোনো জুটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ১৭৫*। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে করেছিলেন রাজিন সালেহ ও হাবিবুল বাশার।

রেকর্ড জুটি গড়ার পথে ইমরুল ক্যারিয়ারের ৪৯ নম্বর ওয়ানেডেতে তুলে নেন ১০ম হাফসেঞ্চুরি। দলীয় ২৮.৪ ওভারে মোহাম্মদ তালহার স্লোয়ার ঠিকমতো খেলতে না পেরে উইকেটরক্ষক উমর আকমলের গ্লাভসবন্দী হন।

রেকর্ড জুটি গড়ার পথে দুজনে ইনিংসের ১৬ নম্বর এবং মোহাম্মদ তালহার সপ্তম ওভারে নেন ২১ রান। আউট হওয়ার আগে ইমরুল খেলেন ৭৫ বলে ৫৯ রানের ইনিংস। ইমরুলের বিদায়ের পর এনামুল জুটি বাঁধেন মুমিনুলের সঙ্গে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ১০.৩ ওভারে ৫৪ রান যোগ করেন দুজনে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তোলার পর খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি এনামুল।

১৩২ বলে ১০০ রান করে সাঈদ আজমলকে বেরিয়ে মারতে যেয়ে শেহজাদের ক্যাচ হন। ইনিংসটিতে ৬টি চার ছাড়াও ছিল ৪টি বিশাল ছক্কা। এনামুলের বিদায়ের কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন মুমিনুল। ব্যক্তিগত ৫১ রানের ইনিংসটি তার ১৮ ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুমিনুল।

২৪৯ রানে মুমিনুল সাজঘরে ফেরার পর অধিনায়ক মুশফিক ও সাকিব ৫৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন মাত্র ৩৪ বলে। এরমধ্যে অতিমাত্রায় আগ্রাসী ছিলেন তিন ম্যাচ ফেরা সাকিব। ১৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪৪ রান করেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার পাকিস্তানিদের উপর এতটাই চড়াও হয়েছিলেন যে, শেষ ৫ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৬৮ রান।

এছাড়া শেষ ১০ ওভারে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১২১ রান। টাইগার ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে পাকিস্তানি বোলাররা এতটাই অসহায় ছিলেন যে, বাঁ হাতি আব্দুর রেহমান কোনো বল না করেই দেন ৮ রান! নিষিদ্ধ হয়ে যান। কিভাবে? ১১ নম্বর ওভার বোলিংয়ে এসে প্রথম বলটি করেন নো। ফ্রি হিটে ইমরুল নেন এক রান। সব মিলিয়ে আসে দুই রান।

ওই বলটিও ছিল নো। এরপর ফ্রি হিটে বাউন্ডারি মারেন এনামুল। সব মিলিয়ে রান আসে ৮। টানা তিন নো বল করায় নিয়ম অনুযায়ী আম্পায়ার নিষিদ্ধ করেন রেহমানকে। ফল যাই হউক, খাঁদের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা টাইগাররা ফিরে পেয়েছেন আত্মবিশ্বাস, এটা আসরে মুশফিকদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।

 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.