আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরানো ঢাকার অগ্নিকান্ড ও দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা



গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার রাতে পুরানো ঢাকার নিমতলীতে একটি বাড়ীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে শতাধিক লোক আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। আজিমপুর কবরস্থানের কর্মীরা বলছে, স্বাধীনতার পর একত্রে এত লাশ আর দেখেনি। ঘটনাটির ভয়াবহতা এতই যে, মুহুর্তের মধ্যেই এতগুলো লোকের জীবন প্রদীপ নিবে গেল। ঘটনার যারা চাক্ষুস সাক্ষী তারাও বলছে, এত দ্রুত ঘটনাটি ঘটেছে কেউ কিছু বুঝতেই পারেনি। ঐদিন রাতে যে বাড়ীতে অগ্নিকান্ড ঘটেছে সে বাড়ীতে একটি বিয়ের বাগদানের কথা ছিল।

উৎসবমূখর পরিবেশে বাড়ীর নীচ তলায় রান্না হচ্ছে এবং বর ও কনের পক্ষের লোকজন আসা যাওয়া করছে । এমন সময় বিকট আওয়াজ হয় এবং মূহুর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো বাড়ী ঘিরে ফেলে। বাড়ীটির নিচতলায় যেখানে রান্না হচ্ছিল সেখানে ছিল প্লাষ্টিক তৈরীর রাসায়নিক পদার্থ। ঘটনার আলামতে বুঝা যাচ্ছে যে, রান্নার আগুনের তাপে কেমিক্যালগুলে তে বিষ্ফোরণ ঘটেছে । তবে তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনাটির বিস্তারিত আমরা জানতে পারবো।

পুরানো ঢাকার বাসা-বাড়ীগুলোর ঘিঞ্জি অবস্থা দেশের সবাই জানে এবং প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে ছোট ছোট অনেক কারখানা যেমন: প্লাষ্টিক, জুতা তৈরী, রাবার ইত্যাদি রয়েছে। এ ব্যাপারটা সবাই জানে । লালবাগ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থেকে জানা যায় যে, শুধু লালবাগেই ছোট বড় ও মাঝারি মানের প্রায় ২৪ হাজার শিল্প কারখানা আছে। অথচ দমকল বিভাগের পরিদর্শক মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন জানান, লালবাগে মাত্র ৬০০ কারখানার লাইসেন্স আছে (তথ্য সূত্র: প্রথম আলো-৫ জুন, ২০১০)। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এগুলো চলছে।

পুরানো ঢাকায় ছোটখাট অগ্নিকান্ড প্রায়ই ঘটে এবং এগুলো ঐ এলাকার বাসিন্দাদের নিকট স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। তবে এবারের অগ্নিকান্ডটি সবাই বলছে ব্যতিক্রম। পুরানো ঢাকায় কিছু কিছু বাড়ী এমনও আছে যে, ঐ বাড়ীর প্রবেশের পথ এতই সরু যে একত্রে দুইজন লোক বের বা ঢুকতে পাওে না। তার ওপর যদি কারখানা থাকে তবে অবস্থা কি হবে তা সহজেই অনুমেয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে লাইসেন্স না নেয়া এসব কারখানার প্লাষ্টিক, জুতাসহ অন্যান্য দ্রব্যগুলো কিন্তু ঠিকই বাজারে চলে।

অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে নি¤œ আয়ের মানুষ এ দ্রব্যগুলো ব্যবহার করে । এ গু্েযলা নেই কোন মান বা কোয়ালিটি, তবুও চলছে। দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এজন্য দায়ী। লাইসেন্স নিতে গেলে শত বিড়ম্বনা এবং লাইসেন্স নিলে তো শর্ত মতে আবাসিক এলাকায় এ জাতীয় কারখানা দেওয়াই যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে দিতে হবে।

দেশের নাগরিকের সাংবিধানিকভাবে কর্ম ও পেশার ব্যবস্থা করে দিতে হবে সরকারকে। এ পর্যায়ে সরকারের উচিৎ হবে এ ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে কারণ খুঁজে বের করা এবং কারখানাগুলোকে অন্যত্র নিয়ে একটা বৈধতার মধ্যে নিয়ে আসা যাতে এ জাতীয় ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।