আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরানো সেই দিনের কথা



পুরানো সেই দিনের কথা আজ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল । দুদিন আগে যখন সংবাদপত্রে এ সম্পর্কে সংবাদ বেরুলো , তখনই কয়েকটি ওয়েবসাইটের নাম দিয়েছিলো যেখানে ফল জানা যাবে । বিগত কয়েকবছর যাবৎ এভাবেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরীক্ষার ফল জানা যাচ্ছে। মহানগর থেকে দূরে ; মফস্বলে- গ্রামীন জগতে, যেখানে ইন্টারনেটের কোনো সম্পর্ক নেই তার দৈনন্দিনতায়, সেখানেও “নেট” ঢুকেছে অমোঘ নিয়মে। তুলসীমঞ্চের উঠোনে দাঁড়ানো এম-৮০ নিয়ে এইমাত্র বেরুলো যে উদ্বিগ্ন ছাত্রীটির দাদা, সে যাবে ছয় কিলোমিটার দূরের মফস্বল শহরে , সেখানে কম্পিউটার থেকে সে জেনে আসবে বোনের “রেজাল্ট”।

তাঁর নিজের “ রেজাল্টও” সে এভাবেই জ়েনেছে দু’বছর আগে। একটা ছোট্ট দোকানে কম্পিউটার নিয়ে বসে ছিলো দুজন, বাইরে প্রচুর ভীড় , প্রায় আধঘন্টা পর একটি ছেলের কাছে পৌছেছিলো, তারপর নিজের নম্বর বলতেই কম্পিউটারের সামনে টাইপরাইটারের মত যে কালো রঙের লম্বা জিনিষটার ওপর আঙুল দিয়ে টোকা মারলো, আর কি করলো মনে নেই, মুখ তুলে বলেছিলো, “পি”। তাতেই বুঝে গিয়েছিলো সে, “পি” মানে “পাস”। ফার্স্ট ডিভিশন,সেকেন্ড ডিভিশন নয় “পাস”। হোকগে, পাশ তো! কুড়িটা টাকা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলো।

ওঃ কী ভীড় ! এবার সে আর ওই দোকানে যাবেনা । এ দুবছরে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। এই মফস্বল শহরে আরো কয়েকটি “ইন্টারনেটের” দোকান হয়েছে। একটি তো তার বন্ধুর দাদার। সেখানে কম্পিউটার শেখানো হয়, প্র্যাকটিশ হয়, ডি,টি,পি, হয়।

দু’চারদিন সে ওই দোকানে গিয়েছে। বন্ধুর কাছে আড্ডা দিতে । অনেকগুলি কম্পিউটার। ছেলে-মেয়েরা বসে কম্পিউটার শিখছে । তারও খুব শিখতে ইচ্ছে করে।

কিন্তু ভয়ও করে খুব। কম্পিউটার দেখলেই তার একটা ভয় মিশ্রিত বিস্ময় তোলপাড় করে বুকের ভেতর। বন্ধুর কাছে শুনেছে ইন্টারনেট নাকি আরো বিস্ময়ের। দুনিয়ার সব কিছু নাকি জানা যায় ঐ “ইন্টারনেটে”। তা তো বটেই, তার নিজের পরীক্ষার রেজাল্টও তো সে জ়েনেছে এই “ইন্টারনেটে” ই।

এভাবেই ইন্টারনেট জড়িয়ে পড়ছে জীবনে। আজ থেকে কয়েকবছর আগে যা ভাবাই যেত না। আমি পাশ করেছি ১৯৭৫ সালে। তখন ১১ক্লাশ পর স্কুলের পরীক্ষা হত। এখনকার মত মাধ্যমিক নয়।

ছিল হায়ার সেকেন্ডারী। পরীক্ষার ফল যেদিন বেরুতো সেদিন মোটা দিস্তা খাতার মত একটা বই বেরুতো। তার নাম গেজেট। হয়তো সকাল এগারোটায় কলকাতায় গেজেট বেরিয়েছে, আমাদের মফস্বলে সেই গেজেট এসে পৌছোতো বিকেল পাঁচটায়। কী উদ্বেগ ! কয়েকটি বেকার ছেলে কলকাতা থেকে গেজেট কিনে আনতো।

তারপর শহরের বিভিন্ন মোড়ে পরীক্ষার্থীর রোল নম্বরদেখে পাশ-ফেল, ডিভিশন বলা, বিনিময়ে ১০/২০/৩০/৪০ টাকা নেওয়া। আমার স্ত্রীর বাড়ী দূর্গাপুরে। তাদের তো ফল জানতে জানতে হয়তো পরদিন হয়ে যেত। এখন ? দিল্লিতে ট্যুরে থাকা বাবা সাড়ে দশটায় কলকাতার কাছাকাছি এক মফস্বল শহরের ছাত্রকে ফোন করে পাশের খবর জানাচ্ছে। ছেলে তখন সাইবার কাফেতে যাবার কথা ভাবছিলো।

বাবা জানালো তার আগে। ইন্টারনেট পৃথিবীটাকে ছোট করে এনেছে। মহানগরের জীবন ইন্টারনেট ছাড়া অচল। কিন্তু গ্রামীণ জীবন ? মেঠো আলপথে শ্যালো ঘরের দিকে যেতে যেতে চেঁচিয়ে উঠছে ঐ ছেলেটি, “ ও রমজান ভাই ! আরতি পাশ করিছে, আমি ইন্টারনেটে দেইখে আইছি। “ - এও কম কী ! ভালো কথা, ছেলেটি কথা বলে এসেছে, সামনের জুন মাস থেকে বোনকে কম্পিউটার শিখতে পাঠাবে, ঐ বন্ধুর দাদার কাছে।

শিখুক। নিজের তো পড়া হোলো না। বাবা মারা গেলেন। চাষবাস , সংসার সব তার ঘাড়ে। বোনটাকে সে শেখাবে।

( আমার প্রথম পোস্ট। আমি ভারতীয়। সবে নিজে ঘাটাঘটি করে এই পঞ্চাশ বছর বয়সে কম্পিউটার শিখছি। ইন্টারনেট নিয়েছি মাস দুয়েক। উপরের লেখাটি লিখেছি ২০শে মে।

)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।