আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিএনপির নেতৃত্বের সংকট ও ‘আমার দেশ’

আর কি..........লেখা থেকেই পরিচয় মিলবে।

‘সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের জীবনেও টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে তার বন্দিত্ব। বিএনপি নেতাদের অনুরোধে না হলেও, বিএনপি কর্মীদের দাবিতে মাহমুদুর রহমানকে সরাসরি বিএনপি রাজনীতিতে সম্মুখ সারিতে যোগ দিতে হতে পারে’ শফিক রহমানের আগাম এ মন্তব্যটি সত্যে পরিণত হলে বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ঘরানার লোকদের জন্য নিশ্চয় এটি হবে বিরাট খবর, বিশেষ করে যখন সরকারের চতুর্মুখী আক্রমনে গোষ্ঠিটি পর্যদুস্ত । ১/১১ পরে মইনদের পরিকল্পনা ছিলো ‘মাইনাস খালেদা’ জাতীয়তাবাদী সরকার। কিন্তু বেগম জিয়া রাজি না হওয়ায় সে পরিকল্পনা বদলাতে হয় ঘন ঘন।

২০০২ সালে বি চৌধুরীকে প্রশ্নবিদ্ধ তরিকায় রাষ্ট্রপতি থেকে অপসারনের পরে ২০০৪ সালে ছড়িয়ে দেয়া হয়, পরাশক্তির সহায়তায় ‘থার্ড ফোর্স’ ক্ষমতা নেবে। আর সে গুঞ্জনটা ফলতে লেগেছে দু’বছর। তেমনি জাতীয়তাবাদি ফ্রন্টকে ঘিরে গত ছ’বছর ধরে চলমান খেলা শেষ হয়ে যায়নি- যখন মহিউদ্দিন খান আলমগীরের ভাষায় ‘মসজিদের ইমামদের’ কথা লোকজন বেশ শোনে। তাই এ বিশাল গোষ্ঠির নেতৃত্ব কে না নিতে চায়? ২০০৭ সালে ফালু-মামুন-বাবরদের পরিস্কার ধারনা ছিল ‘ওয়ান ইলেভেনে’ আর যাই হোক, তাদের কিছু হবে না। সে কারনেই তারা বুক ফুলিয়ে চলছিলো দেশে।

যেখানে ১৯৮১ সালের অভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী হয়েও দেশ ছাড়ার জন্য ভারত সীমান্তে পৌছে গিয়েছিলেন সেখানে এ সকল ব্যক্তিরা ১/১১-র আগমনের সতর্কবানী পেয়েও দেশে বহাল তবিয়তে ছিলেন কোন সাহসে? টাকা বানানোতে সিদ্ধহস্ত এসব ব্যক্তিরা এমন আহাম্মক না যে তারা কিছুই টের পায়নি। বিষয়টি একটু তলিয়ে দেখা দরকার। আসলে ওয়ান ইলেভেন যারা ঘটিয়েছে তাদের সাথে এসব করিৎকর্মা এবং মালপানিওয়ালাদের ছিল খুবই দহরম মহরম- একবারে হরিহর আত্মা। তাই এরা নির্ভয়ে থেকে যান দেশে। কিন্তু সময় গড়িয়ে যায়- মইনের মসনদ লাভের সম্ভাবনা ক্রমশঃ ক্ষীণ হতে থাকে, সাথে যুক্ত হয় উচ্চ দ্রব্যমূল্যে নাগরিকদের নাভিশ্বাস।

বার বার পরিবর্তন করতে হয় পরিকল্পনার। আর ধরা পড়েন একে একে পুটি থেকে বোয়াল। সর্বশেষে সেইফ এক্জিট নিতে হয় মইন গংদের। ‘ওয়ান ইলেভেনের’ পরে ফালুর আরটিভি নিয়ে নেয়া হলো। ‘যায় যায় দিন’ থেকে শফিক রেহমান হলেন উৎখাত।

তারেক রহমানের হাড্ডি গুড়া করা হলো। কিন্তু ‘আমার দেশ’ দিয়ে দেয়া হলো করিৎকর্মা (জাতীয়তাবাদী?) মাহমুদুর রহমানকে। কেমন যেনো মেলে না! তখনকার যে অবস্থা ছিলো একথা সবাই স্বীকার করবেন, ১/১১ জান্তার সঙ্গে আঁতাত ব্যতিরেকে শক্তিশালী এ গণমাধ্যমটিকে কব্জা করা একেবারেই অসম্ভব। শুধু তাই নয় নিজ এবং জামাতি কাগজে মিলে ১/১১র নিয়ামকদের বিরুদ্ধে ৩৪টি লেখায় কলমবাজিও করলেন, কিন্তু মাহমুদুর অক্ষত। কি তাজ্জবের কারবার! কেনো তার টুটি চেপে ধরা হয় নি- প্রশ্নটি খুবই ভাইটাল।

যেখানে অনেক রথি-মহারথিরাই আটক হয়েছেন তুচ্ছ কারনে, এমনকি অকারনেও। তবে গ্রেফতার তালিকাটা মূলত ছিলো রাজনৈতিক, যতটা না ছিলো সুনীতির। তখন দু’শ্রেণীর লোক তখন গ্রেফতার এড়াতে পেরেছেন। এক. যারা ১/১১র সহায়ক শক্তি ছিলেন, দুই. যারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর ছিলেন না ‘ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের’ ক্ষমতা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার। পাঠক নিশ্চয়ই ভুলে যাননি, জেনারেল মইন নেপথ্য থেকে রাষ্ট্র চালালেও তার সকল কর্মকান্ডের একটাই লক্ষ ছিলো কিভাবে প্রকাশ্য ক্ষমতায় আসা যায় প্রলম্বিতকালের জন্য।

তার কর্মকান্ডের বিরুদ্ধ শক্তিকে তিনি দমন করেছেন নির্মমভাবে। আর চাইলে মাহমুদুরকে বিনিয়োগ বোর্ডের অনিয়ম বা বেক্সিমকো থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়া বা যে কোনো কারনে ধরে ফেলতে পারতেন। কিন্ত তা করেন নি। তাহলে হয় মইনরা তাকে ভয় পেতো অথবা নিশ্চয়ই মাহমুদুরের অন্য কোন যোগ্যতা ছিলো। আসলে এটা ছিলো মাহমুদুরের উত্থান পর্ব।

ধীরে ধীরে দু’বছরব্যাপী তার অবস্থান তৈরী করা হয়েছে বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে। এখন চলছে তাকে হিরো বানানোর অধ্যায়। কে এই মাহমুদুর রহমান? বেগম জিয়া তাকে না চিনলেও চিনেছেন তার শ্বশুড় হারুনুর রশিদ খান মুন্নু। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার মাহমুদুর মুন্নু সিরামিকের ফর্মুলা মেরে দিয়ে আওয়ালীগ উপদেষ্টা সালমান রহমানের সাইনপুকুর সিরামিক গড়লেন, পরে নিজের আর্টিজান সিরামিক। আর হঠাৎ করেই অ্যাব নেতা মাহমুদুর হয়ে গেলেন বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান, পরে উপমন্ত্রী মাপের জ্বালানী উপদেষ্টা।

‘আমার দেশ’ হাওলা করে তিন’শ সাংবাদিকের রুটি রুজি জিম্মি করে এ ‘প্রকৌশলী-সাংবাদিক’ হয়ে গেলেন ‘অতিবিপ্লবী’। কুয়েতের হুসেইনের ভাষায় বেগম জিয়ার দেশ পরিচালনার যোগ্যতা নাই। কেননা তিনি লোক চিনতে পারেন না। যেমন তিনি বুঝতে পারেননি- এনটিভি আর ‘আমার দেশ’ ছিলো শুধুই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং ফালুর সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখার প্রধান অস্ত্র। তিনি মইনুদ্দিনকে কেবল নোয়াখালী ইজমের কারনে ১০জনকে ডিঙ্গিয়ে সেনাপতি বানিয়েছিলেন, বুঝতেই পারলেননা সে কি কম্মটি করবে।

ফখরুদ্দিনকে বাইরে থেকে এনে গভর্নর বানালেন যে হলো শিখন্ডি। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনকে সুপ্রীম কোর্ট বারের সভাপতি নমিনেশন দিলেন, আর তারই তৈরী করা আইনে মিসেস জিয়া থাকেন জেলে। হাসান আরিফ স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে খালেদা সরকারের এটর্নী জেনারেলের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন কিন্তু বছর খানেকের মধ্যেই ফখরুদ্দিনের আইন উপদেষ্টা হওয়ার সময় শরীর ঠিক হয়ে গেল! আনোয়ারুল ইকবাল RAB মহাপরিচালক আর আইজিপি হয়েও ১/১১ সরকারের উপদেষ্টা, ডঃ ইফতেখার ৩ বার চুক্তি নিয়েও মইনের অন্যতম সহযোগী, মাসুদ আত্মীয় হয়েও ট্যাংক নিয়ে খালেদার পক্ষে আসেননি এসেছিলেন মইনের পক্ষে, এমএসপি আমিনুল করিম মুসলিম লীগ এমএনএ-র পুত্র হয়েও ইয়াজউদ্দিনের পক্ষে থাকেননি, ফাতেমী রুমী বিএনপি এমপির পুত্র ও ভাই হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়ার স্বার্থের বিপরীতে গেছেন। যেমন বুঝতে পারেন নি ডাঃ বদরুদ্দেজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির বানানোর ৬ মাসের মধ্যেই তিনি জিয়াকে অস্বীকার করে নিরপেক্ষতা দেখাবেন আর ষ্টান্ডিং কমিটির মেম্বার শেখ রাজ্জাক আলী ৫ বছর স্পীকার থাকার পরও দলবল নিয়ে কর্নেল অলির সাথে চলে যাবেন। ১১ বছর ধরে মন্ত্রী ও মহাসচিব রেখেও মিসেস জিয়া কখনই বুঝতে পারেননি মান্নান ভূইয়া ছিলেন নাস্তিক।

তিনি যখন এসব কিছুই বুঝতে পারেন না তখন শফিক রেহমানের ভাষায় ‘সুশিক্ষিত ও সুবক্তা, যুক্তি এবং ভক্তি উভয়বাদী, সৎ ও কর্মঠ, সাহসী ও সত্যবাদী’ মাহমুদুর রহমানই পারেন দূর করতে বিএনপি নেতৃত্বের দুর্বলতা। এজেন্সির লোক মারুফ কামালের মুসাবিদায় বেগম জিয়া পল্টনের বক্তৃতায় মাহমুদুর রহমানের জন্য যে সব বিশেষন ব্যবহার করেছেন এর পরে কারো বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না মাহমুদুর কত বড় ‘বীর’! মাহমুদুরকে আটক করার জন্য আরো অনেক বিকল্প থাকলেও লীগ সরকারের গোয়েন্দারা ‘ওয়ান ইলেভেনীয়’ পদ্ধতি ব্যবহার করে তার ইমেজ আকাশে উঠিয়েছেন পরিকল্পনা মাফিক। আর এখন দেশী বিদেশী সকল শক্তি এক হয়েছে মাহমুদুরের পক্ষে, যতটা না ‘আমার দেশ’ ও সাংবাদিকদের স্বার্থে। তাহলে একথা সহজেই অনুমেয়, শফিক রেহমান ফর্মুলার ‘বিএনপি কর্মীদের দাবিতে’ মাহমুদুরকে বিএনপির নেতৃত্বে আনার অবস্থা সৃষ্টি করা হবে! যদিও ‘আমার দেশ’ সময়ে সময়ে কিছু সংখ্যক বিএনপি নেতাদের চরিত্র হননেও পিছপা ছিলো না। অর্থাৎ তারা নিজ পছন্দের বিএনপি চান যা মইনের চাহিদার সাথে মিলে যায়।

আর এখানেই মূল সূরটি নিহিত। মাহমুদুর জাতীয়তাবাদী দলে যোগ না দিয়েই এতটা পেয়েছেন, যোগ দিলে না জানি কি হবে? কুয়েতের হুসেইন তো শফিক রহমানকে এক কথা দিয়েই ডিঙ্গিয়েছেন, এ মহূর্তে শহীদ জিয়ার দলের দায়িত্ব নেয়ার একমাত্র ব্যক্তি মাহমুদুর রহমান। সেটা সততা, বুদ্ধি, সাহস আর ভারত বিরোধিতা- সব বিবেচনাতেই। জুন ৬, ২০১০।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.