আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হরতাল দিলে সফল করতে পারবেন তো?



সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আগামী ১৯ মে ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে, আপনারা প্রস্তুতি নেন। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজশাহীর মাদ্রাসা মাঠে বিএনপির মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সোয়া এক ঘণ্টার বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারের ব্যর্থতার নানা দিক তুলে ধরে বলেন, এই সরকারের হাতে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। তাই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।

তিনি বলেন, খুলনা ও চট্টগ্রামের সমাবেশে মানুষ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কথা বলেছে। বিএনপি নেত্রী গতকালের সমাবেশে সমবেত জনতার কাছে জানতে চান, তারা আন্দোলন চায় কি না। মাঠ থেকে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব এলে তিনি আবার প্রশ্ন করেন, ‘কী ধরনের কর্মসূচি চান?’ জবাব আসে ‘হরতাল’ ‘হরতাল’। তখন খালেদা জিয়া জানতে চান, ‘হরতাল দিলে সফল করতে পারবেন তো? হরতাল দিলে সরকার অত্যাচার-নির্যাতন চালাবে, তা সহ্য করতে পারবেন?’ বিএনপির বিভাগীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল এ মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান। এর আগে চট্টগ্রাম ও খুলনায় সমাবেশ হয়।

১২ মে বরিশাল, ১৫ মে সিলেটে এবং ১৯ মে ঢাকার পল্টন ময়দানে সর্বশেষ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহীতে খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে শহর ও এর আশপাশের এলাকা ব্যানার, তোরণ ও পোস্টারে ছেয়ে যায়। গতকাল সকাল থেকেই রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। অনেকে মিছিল নিয়ে, নেচে-গেয়ে সমাবেশে যোগ দেন। দুপুরের মধ্যেই মাদ্রাসা মাঠ ও আশপাশের এলাকা ভরে যায়।

সমাবেশস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সাতটি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরা বসানো হয়। দেড় শ মাইকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশের বক্তব্য প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়। বৃষ্টির কারণে সমাবেশ নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে শুরু হয়। খালেদা জিয়া সমাবেশস্থলে পৌঁছান বিকেল চারটায়।

এর ১০ মিনিট পর তিনি বক্তব্য শুরু করেন। শেষ করেন বিকেল পাঁচটা ২২ মিনিটে। খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, ‘আজ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আরও কত ধরনের লীগ সারা দেশে টেন্ডারবাজি-দখলবাজি করছে। যারা দলের লোকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তারা দেশ চালাবে কীভাবে?’ তিনি বলেন, এরা দেশকে একটি তাঁবেদার ও অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে চায়। কিন্তু দেশের মানুষ পরাধীনতা মেনে নেবে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান সরকারি দলের হাতে নিরাপদ নয়। সাংবাদিকেরাও নিরাপদে নেই। আওয়ামী লীগের অপকর্মের খবর ও ছবি কাগজে ছাপতে তারা মানা করে দেয়। কেউ সাহস করে ছাপলেই তারা তাদের পেছনে লেগে যায়। হয়রানিমূলক মামলা করা হয়।

ইতিমধ্যেই পাঁচজন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বিএনপির সংবাদ না ছাপার জন্য মিডিয়াকে বলে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে, খুলনার সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছে। সেখানে বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে তারা ভয় পেয়ে গেছে। এ জন্য রাজশাহীর সমাবেশ সরাসরি সম্প্রচার করতে বারণ করে দিয়েছে।

তারা টেলিভিশনের টক শোগুলো বন্ধ করে, এখন তাদের মনমতো লোক দিয়ে নিজেদের গুণগান করায়। ’ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপির তৃণমূলের শক্তিকে বিভক্ত করতে পারেনি। তাই বিএনপিকে ভাঙতে সফল হয়নি। রাজশাহীর নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ধানের শীষের শক্তি হচ্ছে রাজশাহীর জনগণ। বিগত নির্বাচনে এই এলাকার আসনগুলো কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

তিনি বর্তমান সরকারকে ‘ফখরুদ্দীন ও মইন উ আহমদের মনোনীত সরকার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগের চুক্তির পর পদ্মা নদী শুকিয়ে গেছে। আবার তারা ভারতের স্বার্থে টিপাইমুখে বাঁধ দেওয়ার কথা বলছে।

ভারত ষড়যন্ত্র করছে আর সরকার নীরব থাকছে। ভারতের কাছে সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ নিয়ে চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে বাজেটই ছিল ১৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তার মধ্যে নয় হাজার কোটি টাকা বেতন ও অন্যান্য খাতের। ওই সময় উৎপাদন হয়েছে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি।

তাহলে লুটপাট কোথায় হলো। ’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকারে বিদ্যুতের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে নিজের লোকদের কাজ দেওয়ার জন্য টেন্ডার ছাড়াই বিদ্যুৎকেন্দ্র করছে। এতে তিন বছরে সাত হাজার কোটি টাকা লোকসান দিতে হবে। ’ খালেদা জিয়া বলেন, ভোলার উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। মালিবাগের একটি হত্যা মামলার আসামিকে নিয়ে গিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছে।

সে ঢাকা থেকে সন্ত্রাসীদের নিয়ে যায়। সেখানে কোনো নির্বাচন হয়নি। কেউ ভোট দিতে পারেনি। অথচ নির্বাচন কমিশন নির্লজ্জের মতো বলছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.