আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চ্যানেল ওয়ানের বিষয়টিকে মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করা.

''সংবাদপত্র যা ছাপে তার একটা বড় অংশই হলো 'লর্ড জোনস মারা গেছেন' ধরণের তথ্য। অথচ সেটি যাদের জানানো হয় সেই জনগণ খবরই রাখে না যে লর্ড জোনস বেঁচে ছিলেন''

চ্যানেল ওয়ান বন্ধআরো একটি টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ হয়ে গেল। অনিয়মের অভিযোগে গত মঙ্গলবার চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর আগে গত জোট সরকারের আমলে একুশে টেলিভিশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বন্ধ করে দেওয়া হয় ২৪ ঘণ্টার নিউজ চ্যানেল সিএসবি নিউজ।

বর্তমান সরকারের সময়ে এসে বন্ধ হলো চ্যানেল ওয়ান। জোট সরকারের আমলে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি চ্যানেল ওয়ান যাত্রা শুরু করে। যে অভিযোগের ভিত্তিতে চ্যানেল ওয়ান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, সেই অভিযোগটি গুরুতর। অনুমোদিত লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার অভিযোগ তোলা হয়েছে বিটিআরসি ও সরকারের পক্ষ থেকে। চ্যানেল ওয়ান কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ খণ্ডনের চেষ্টা করেছে।

কিন্তু অভিযোগটি যে একেবারে ভিত্তিহীন, তা নয়। সম্প্রচারের আগেই ২০০৫ সালে প্রাইম ব্যাংক থেকে ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকার ঋণ নেয় চ্যানেলটি। এরপর বিভিন্ন সময় তারা মাত্র দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। এর মধ্যে তাদের ঋণখেলাপি ঘোষণা করে ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জরুরি অবস্থার সুযোগে জোর করে তাদের খেলাপি ঘোষণা করা হয়েছিল।

এ বিষয়ে পরে তারা হাইকোর্টেও যায়। ঋণখেলাপি ঘোষণা দেওয়ার পর ২০০৮ সালে চ্যানেল ওয়ানের যন্ত্রপাতি নিলাম করে প্রাইম ব্যাংক। তখন পিপলস এন্টারটেইনমেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই যন্ত্রপাতি কিনে নেয়। এর পরই বিটিআরসি ও ব্যাংকের দফায় দফায় চিঠি চালাচালির এক পর্যায়ে চ্যানেল ওয়ান কর্তৃপক্ষকেও লাইসেন্স কেন বাতিল হবে না, তা জানিয়ে কয়েকবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিটিআরসি। বিটিআরসি জানিয়েছে, একাধিকবার সময় চাওয়ার পাশাপাশি কয়েকবার এলোমেলো কারণ দেখিয়েছে তারা।

চ্যানেল ওয়ান তাদের নিজেদের যন্ত্রপাতি ব্যাংকের মাধ্যমে আরেকজনের কাছে বিক্রি করার মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগ আইনের ৫৫ ধারা অমান্য করেছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ উঠেছে চ্যানেল ওয়ানের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সময়ক্ষেপণের। অভিযোগ আছে, ১/১১-পরবর্তী জরুরি অবস্থার সুযোগে তিনিই ওয়ান এন্টারটেইনমেন্টকে ঋণখেলাপি ঘোষণার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এমনকি পরে যখন নিলাম হয়, তখনো কৌশলে তিনি এ-বিষয়ক নিলাম বিজ্ঞপ্তিটি একটি অখ্যাত সংবাদপত্রে ছাপার ব্যবস্থা করেন, যাতে অন্য কেউ এতে অংশ নিতে না পারে।

অন্যদিকে এসব প্রক্রিয়া যখন প্রায় সম্পন্ন, তখনো তিনি এর বিরুদ্ধে ইচ্ছা করেই আইনি লড়াইয়ে নামেননি বলেও চ্যানেল ওয়ানের কয়েকজন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন। যত দিন ধরে বিটিআরসির সঙ্গে ওয়ানের চিঠি চালাচালি হয়েছে, তাতে আরো আগেই টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টে যেতে পারত বলেও অভিযোগ উঠেছে। গণতান্ত্রিক সরকারের সময়ে এসে একটি গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। সবচেয়ে দুঃখজনক এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের জন্য। চ্যানেল ওয়ান একটি গণমাধ্যম।

এই গণমাধ্যমের সঙ্গে শুধু এখানে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাই নন, আরো অনেকের রুটি-রুজি জড়িত। সেই দিকটি বিবেচনা করে সরকারের পক্ষ থেকে একজন প্রশাসক নিয়োগ করে চ্যানেলটির প্রচার চালিয়ে নেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে। যাঁরা এখানে কাজ করতেন, তাঁরা নিশ্চয়ই অপরাধ করেননি। সেই দিকটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার চ্যানেল ওয়ানের বিষয়টিকে মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.