আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমুর নীল জোছনা: হিমু কথন

Let the wind blow out the candles

হুমায়ুন আহমেদের সব বই আমি পড়তে পারি না, ভালো না লাগাই হয়তো মূল কারণ। সেদিকে যেতে চাচ্ছিনা করাণ হুমায়ুন আহমেদের লেখা হয়তো আমার বোঝার যোগ্যতা হয়নি, আল্লাহর রহমতে তার ভক্তকুলের তো আর অভাব নেই। হুমায়ুন আহমেদ যখন হিমু সিরিজ লেখা শুরু করলেন তখনকার এই একটা বস্তুই আমার মাঝে হুআ-প্রীতি জাগিয়ে তুললো - হিমু চরিত্র। হুমায়ুন আহমেদের অন্য বইগুলোর থেকে বা অন্য সব চরিত্রগুলোর সাথে হিমুর পার্থক্যটাই‌ আকর্ষণের কারণ। এখানে বলে রাখি, ভালো লাগুক আর খারাপ লাগুক হু আহমেদের বেশিরভাগ বই-ই আমার পড়া।

‌‌‌হুমায়ুন আহমেদের বেশিরভাগ বই ই‌ আমারকাছে‌ যেখানে স্বস্তা মানের মনে হয়েছে, মিসির আলী গুলো নেহায়েতই সাদাসিদে পানসে লেগেছে তখন শুধু হিমু'র জন্যই হুমায়ুন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলেছিল। যদ্দূর মনে পড়ে "চলে যায় বসন্তের দিন" ছিলো আমার প্রথম পড়া হিমু, যেটা আমার কাছে অন্যতম চমৎকার একটা উপন্যাস। এরপর একে একে হিমুর বাকিগুলো পড়ে ফেলেছি, সবগুলোই তৃপ্তি দিয়েছে তবে কাটা হয়ে দাড়ালো ইদানীং কালে তার হিমু বিষয়ক বালখিল্য। বাড়াবাড়ি কখনোই ভালো লাগে না। অবাক হয়েই দেখলাম নিজের তৈরি করা হিমু চরিত্রটিকেই বাস্তবে নিয়ে এসে ভেঙে চুড়মাড় করে দিলেন নিজেই! হিমু নিশ্চয়ই থলথলে জলহস্তির মত কোন বস্তুবিশেষ না যাকে নিয়ে বইমেলার মত জায়গায় নাচানাচি করতে হবে! দার্শনিক হিমু পরিণত হল বিটলা হিমুতে।

আগ্রহ কমলো, জন্মালো বিরক্তি। গত কয়েকটা হিমু সিরিজ সেই মনোভাবের পরিবর্তন করতে পারেনি। ‌‌ যে হিমুর কোন বই খুজে পেলে আগে জন্মাতো সেই ক্লাস সিক্স-সেভেনের মাথা খারাপ করা বই এর নেশা, সেই হিমুই চক্ষুশূলে পরিণত হল নিজের দোষেই। তবে এবারের হিমুর বই যেটা - হিমুর নীল জোছনা - সেটা পড়লাম আজকে। প্রথমে ধরে নিয়েছিলাম এটাও ফালতু হবে, পরে দেখলাম কাহিনী অন্যরকম! হিমুর মাঝে আবার আগের ভাবটা ফিরে আসছে কি? এবারের হিমুতে হুমায়ুন আহমেদ গতানুগতিক বস্তাপচা কিছু হিমু-ট্রেডমার্ক এড়িয়ে গেছেন।

এমনকি, বই এর মাঝে গিয়ে লেখার এঙ্গেলও বদলে ফেলেছেন। ফার্স্ট পার্সন থেকে চলে গেছেন থার্ড পার্সনে। এটা অবশ্য ভালো মনে হয়নি, কারণ হিমুর নিজের চিন্তাগুলোই হিমুর কথন হিসেবে থাকে। সেখানে লেখক হিমুর পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সড়ে গিয়ে নিজের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে বলা শুরু করলেন - এটার মানে হয়তো লেখক আর হিমু চরিত্রে ভরসা পাচ্ছেন না বা গল্পে যা বলতে চাচ্ছেন, সেটি বোঝাতে হিমু নিজে সেটি বোঝাতে পারছে না। এটা একই আবার ভালোও হতে পারে, কারণ লেখক হিমুর বৃত্তে বাধা থাকছেন না, নিজের অবস্থান থেকে কাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন।

প্রথমে ভালো না লাগলেও শেষে গিয়ে আর খারাপ লাগে নি। বই এর মূল গল্প/কাহিনী বলতে আসলে তেমন কিছু নেই, এটা হতাশার। বরং যাপিত জীবনের ছবিই ফুটে উঠেছে বেশি, রাজনৈতিক হালচাল, সমস্যাজর্জিত রাজধানী, হাস্যকর কর্পোরেট প্যাকেজ কার্টেসি আর মিডিয়ার স্বেচ্ছাচার। তবে এসবের মাঝেও, সম্পূর্ণ বাস্তব আর সমসাময়িক কুৎসিত জীবনশৃঙ্খলের নিয়ন্ত্রণ হিমু নিজের হাতে নিয়ে নেয়। এখানেই আবার হিমু সার্থক।

মানুষগুলো সার্থক। পরিচিত খারাপ ট্যাগধারী লোকগুলোর ভিড়ে কারো মাঝে জ্বলে ওঠে স্বপ্নপূরণের ঝিলিক। যেটা হয়তো অসম্ভব, হয়তো অবাস্তব কিন্তু হিমুর জন্যই সেগুলো বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। তাই হিমুর নীল জোছনা - হয়তো থেকে যাবে ভালো লাগা বইগুলোর শোকেসে। প্রথম প্রকাশ চতুর্মাতৃকে


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।