আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমুর বসন্তবেলা

আহ অমরত্ব, তোমার উষ্ণ ঠোঁটে রাখি ঠোঁট, চোখ বন্ধ করে সবটুকু আনন্দ ভোগ করি। তোমার উষ্ণতায় বারেবারে বিলীন হয়ে যাই, দিতে পারিনি কিছুই, শুধু নষ্ট করে যাই।

বাদল মহা ঝামেলায় পরেছে। সে কি ধরণের পান্জাবী পড়ে বের হবে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা।
-হিমু ভাই, তুমি একটা সিদ্ধান্ত দাও।


-হুম, চিন্তার বিষয়, চিন্তা করতে হবে।
-চিন্তা ভাবনা একটু দ্রুত করো।
-যে মেয়েটার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস তার নাম কি?
-নীতু।
-গায়ের রং?
-উজ্জল শ্যামলা।
-হুম।

তাহলে নীল পান্জাবী পড়ে যা। নীতুর সাথে মিল রেখে নীল।
-কিন্তু সবাই তো লাল সাদা পড়ে?
-ব্যাতিক্রমধর্মী হতে হবে। এখন অস্বাভাবিক কাজের যুগ। যে যত বেশী অস্বাভাবিক সে ততো বেশী ক্রিয়েটিভ।


-তুমি যখন বলেছো, তাহলে নীলই পড়বো।

মাজেদা খালার সাথে দেখা করে, বাদলদের বাসা থেকে বের হতে হবে। আমার মধ্যে ইদানীং গৃহী স্বভাব ঢুকে গেছে। মাজেদা খালা আগের চেয়েও মোটা হয়েছেন।
-খালা, বিদায় নিতে এসেছি।


-দুপুরে খেয়ে যা।
-অন্য জায়গায় দাওয়াত আছে। ও খালা, তোমাকে কিন্তু সুন্দর লাগছে। এক কাজ করো বাসন্তী রং শাড়ী পড়ে খালু সাহেবের সাথে ঘুরে আসো।
-কি যে বলিস, তোর মাথাটা দিন দিন আরো বেশী খারাপ হচ্ছে।



মাজেদা খালার বাসা থেকে রাস্তায় নামলাম। দুপুরের তীব্র রোদ বসন্তের জানান দিচ্ছে। রাস্তায় পা রাখা যাচ্ছেনা। লাল হলুদ শাড়ী পড়া মেয়েদের ঢল নেমেছে। তাদের উচ্ছাসে রাস্তাগুলোও যেন জীবন্ত হয়ে গেছে।

মেয়েদের তুলনায় ছেলেগুলোর উচ্ছাস কম। মনে হচ্ছে কোন শোক মিছিলে নেমেছে।
আমাদের উৎসবের অভাব নেই। একটু উপলক্ষ পেলেই আমরা দলবেধে নেমে পড়ি রাস্তায়। আসলে ব্যাস্ততায় মানুষের জীবন একঘেয়ে হয়ে গেছে।

এই একঘেয়েমী থেকে বের হওয়ার জন্য একটা উপলক্ষ্য খুঁজে।

হেটে চলছি, এই বসন্তে। রূপাকে বসন্তের রূপে দেখতে ইচ্ছে করছে, কিংবা বলা যায় বসন্তকে রূপার রূপে দেখতে ইচ্ছে।
সেবা ফার্মেসীর লোকটা দেখমাত্রই ফোন এগিয়ে দিল। আমি এখানে কেন এসেছি, সে এটা অনুমান করতে পেরেছে, সেটা বুঝানোর জন্যই সে কাজটা করেছে।

সবাই ভবিষ্যৎ বলতে পছন্দ করে। সবাই চায়, তার মধ্যে এমন কিছু থাকুক যা অন্যদের মধ্যে নেই।

-রূপা, কেমন আছো?
-ভালো আছি, অনেক ভালো। তুমি?
-ভালো।
-কতদিন পর ফোন করেছো জানো?
-না।

আচ্ছা তুমি কি আজ আমার সাথে একটু বের হতে পারবে।
-কখন?
-এখন থেকে ঠিক দু ঘন্টা পর। তুমি শাড়ী পড়বে। আর অবশ্যই সাজবে। অনেকটা বসন্তের মত।


-হিমু , আমি জানি তুমি আসবেনা। তারপরও আমি সাজবো, শাড়ী পড়বো। আমি অপেক্ষায় থাকবো।
-ঠিক আছে এখন ফোন রাখছি। দুই ঘন্টা পর আমি আসছি।



সেবা ফার্মেসী থেকে বের হয়ে আবার রাস্তায় নামলাম। দু ঘন্টা সময় আছে হাতে। এই সময়টা কিভাবে কাটাবো সেটাই চিন্তা করছি। মা মিষ্টান্ন ভান্ডারে যাওয়া যায়। টক দই খেতে ইচ্ছে করছে।

ইদানীং জাগতিক ব্যাপারে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে। বাবার শিক্ষা কি বিফলে যাচ্ছে। বাবা আমার বর্তমান অবস্থা দেখেননি। দেখলে হয়তো কষ্ট পেতেন।

বসন্তকাল আসলেই আগে কোকিলের ডাক শোনা যেত।

এখন কোকিলেরা অনেক নাগরিক হয়ে গেছে। সরকারের উচিত রাস্তায় মাইক লাগিয়ে একটু পর পর কোকিলের ডাক শোনানো। প্রকৃতি হেরে যাক নাগরিকতার কাছে।
রূপার বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছি। বিকেল তার মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে অকৃপণভাবে।

রূপা বোধহয় অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। এখন হয়তো ছাদে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে। আমিও আকাশের দিকে তাকাই, ঠিক যেখানটাতে রূপা চোখ রেখেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।