আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিমুর দিনলিপি



মুখবন্ধ হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করা হিমুর কাজ। দিনলিপি লেখা তার কাজ না। প্রতিটি মানুষের মনেই প্রতিদিন নানা কিছু ঘোরাফিরা করে। কেউ এটা লিখে রাখে ডায়রীতে, কেউ কেউ লিখে না। হিমুরা না লেখার দলে।

হিমুর ভিতরে প্রতিদিন খেলা করা নানা কথা নিয়েই এই বই, বই না বলে বরং ‘হিমুর ডায়রী’ বা ‘হিমুর দিনলিপি’ বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত। হিমু দিনলিপি লিখে না, তাই তার কথামালা নিয়ে দিনলিপিটা লিখতে হচ্ছে আমাকে। এই মহা দায়িত্বটা আমাকে কেউ দেয় নি, আমি নিজে থেকেই নিয়েছি। হিমুর দিনলিপি লিখতে ভীষণ মজা। নিজেকে তখন হিমু হিমু মনে হয়, কিন্তু আমি হিমু নই।

হিমু হওয়া খুব কঠিন কাজ না, সহজ। আমি এই সহজ কাজটি করতে পারি নি। -লেখক হিমু নিয়ে কিছু কথামালা হিমু ? এটা আবার কে ? তাকে কি আমি চিনি ? অনেক্ষণ বসে থেকে ভাবলাম। মাথার ভিতর বিভিন্ন কথা ঘোরাফিরা করছে। সঠিক কোনটা সেটা ঠিক মতো বুঝতে পারছি না।

হয়তো তাকে চিনি, আবার হয়তো চিনিও না। চেনা-অচেনার মধ্যবর্তী মানুষ সে। চেনা-অচেনার মধ্যবর্তী মানুষদের চেনা খুব কঠিন ব্যাপার। আমি তাকে খুব করে চেনার চেষ্টা করছি কিন্তু বারবারই তাকে অচেনা মনে হচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে তা বলতে পারছি না।

পরে হয়তো পারবো। আমি সে জন্য অপেক্ষা করছি। বিষয় ঃ কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা তারিখ ঃ ০৪-০২-০৯ কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ দেখার আমার খুব ইচ্ছা। আমার খুব পরিচিত একজন আছেন যিনি আজকে এ অবস্থায় পড়েছিলেন। তার সামনে একজন অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে অসম্ভব রকম রেগে গিয়েছিল।

চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েছিল। চোখ থেকে আগুন ঝরে পড়ছিল। রাগার কারণটা অবশ্য মজাদার। এই মেয়ের নামে কে যেন প্রথম আলোতে খুব সুন্দর সুন্দর লেখা পাঠাচ্ছে। সে লেখাগুলো ছাপানোও হচ্ছে তার নামে।

অথচ, সে এ বিষয়ে কিছুই জানে না। সবাই তাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। আমার পরিচিত এই মানুষটি তাকে সামনাসামনি শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন। গিয়ে পড়েছিলেন মহাবিপদে। মানুষ শুভেচ্ছা পেলে খুশি হয়, কিন্তু এই মেয়েটি শুভেচ্ছা পেলে বোধহয় রেগে যায়।

আর রেগে গেলে তার চোখ থেকে আগুন ঝরে পড়ে। চোখ থেকে যে শুধু অশ্র“ ঝরে- তা নয়, কখনো কখনো আগুনও ঝরে। আমি চোখ থেকে অশ্র“ এবং আগুন দুটোই ঝরতে দেখেছি। দুটোই খুব সিরিয়াস জিনিস, মনের উপর খুব দ্রুত প্রভফেলে। মেয়েটাকে ফেলা হয়েছে খ্যাতির বিড়ম্বনায়।

খ্যাতির বিড়ম্বনা খুবই জটিল ব্যাপার, এর ধারে-কাছে যে পড়ে তার অবস্থা হয়- ফোলা কিংবা চুপসানো বেগুনের মতো। এই মেয়েটির অবস্থা ছিল ফোলা এবং চুপসানো বেগুন অবস্থার ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে। আচ্ছা, সুন্দরী মেয়েরা রেগে গেলে কি তাদের চেহারা খুব খারাপ দেখায় ? আমার ধারণা সুন্দরী মেয়েরা রেগে গেলে তাদেরকে আরো বেশি সুন্দর লাগে। সুন্দরী মেয়েদের প্রকৃতি এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন- এদের চোখ থেকে আগুন কিংবা অশ্র“ যা-ই ঝরুক না কেন এদেরকে তখন আরো বেশি সুন্দর দেখায়। আর এ সৌন্দর্যকে যে প্রত্যক্ষ করে সে হয়ে যায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় ।

এ অবস্থা খুবই ভয়ানক। বিষয় ঃ অতি রাগ এবং আনন্দ তারিখ ঃ ০৫-০২-০৯ আনন্দ খুব ভালো জিনিস, রাগও অত্যন্ত ভালো জিনিস, তবে এই দুটির সাথে ‘অতি’ কথাটা যুক্ত হওয়া খুব খারাপ ব্যাপার। অতিআনন্দ এবং অতিরাগ মানুষকে দিশেহারা করে ফেলে। আর দিশেহারা মানুষ খুব বিপজ্জনক। তবে সবশেষে এর ফলাফল খুব ভালো হয়।

অতিরাগ পড়ে গেলে মানুষ শূন্যের ঘরে অবস্থান করে, অতিআনন্দের ব্যাপারেও ঐ একই কথা প্রযোজ্য। শূন্য অবস্থানে থাকা মানুষদের একদিন দেখতে হবে। আমার ধারণা এ পর্যায়ে মানুষ অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়ে। একজন মানুষ হুট করে অনুভূতি শূন্য হয়ে গেল- ব্যাপারটা মজাদার। প্রতিটি মজাদার ব্যাপারের পিছনেই থাকে খুব বিপজ্জনক কিছু।

আমরা মজাটাকে খুঁজি, বিপদটাকে খুঁজি না। আমার কাজ বিপদটাকে খুঁজে বের করা। বিষয় ঃ ভালোবাসা তারিখ ঃ ০৬-০২-০৯ খুব কঠিন ব্যাপার। এ সম্পর্কে একটি মন্তব্য মনে পড়ছে। মন্তব্যটা কার তা ঠিক বলতে পারছি না।

তবে মনে হচ্ছে আমার। ‘তুমি তাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসো যাকে তুমি সবচেয়ে বেশি ঘৃণা কর। ’ আচ্ছা, ভালোবাসলে ঘৃণা করা যায় ? মনে হয়। কিন্তু প্রচন্ড ঘৃণা করা মানুষটিকে কি কখনো ভালোবাসা যায় ? এর কী উত্তর হতে পারে ? ‘মনে হয়’ ?। প্রথম প্রশ্নটার উত্তর ‘মনে হয়’ বলা যাবে।

কারণ প্রশ্নটা মাঝামাঝি জটিল, কিন্তু পরের প্রশ্নটা মাঝামাঝি টাইপের না, এটা অত্যধিক জটিল। অত্যধিক জটিল প্রশ্নের উত্তর সহজ হতে পারে। প্রশ্নের জটিলতার কারণে তার উত্তরও আমাদের কাছে জটিল ঠেকে। এ জন্য জটিল প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ হলেও তা আমাদের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ভালোবাসলে যদি ঘৃণা করা যায়, তাহলে ঘৃণা করলে ভালোবাসা যাবে না কেন ? একটা ছোট খাটো অঙ্ক করা যাক।

দেখা যাক কী হয়। ধরি, একটা ঘর এবং তাতে দুটি দরজা আছে। দরজা দুটি পরস্পর সমান্তরাল ভাবে মুখোমুখি অবস্থিত। মনেকরি, প্রথম দরজাটা ভালোবাসার এবং দ্বিতীয় দরজাটা ঘৃণার। দুটি দরজা দিয়েই ঘরে প্রবেশ করা যাবে।

এখন ঘরটিতে প্রবেশ করতে হলে যেকোনো একটি দরজা পেরোতে হবে। ধরলাম, কেউ একজন ভালোবাসার দরজার দিয়ে ঘরটিতে প্রবেশ করলো এবং একসময় ঘৃণার দরজা দিয়ে বের হলো। এখন সে যদি আবার ঘরটিতে প্রবেশ করতে চায় এবং ভালোবাসার দরজার কাছে যেতে চায় তবে তাকে প্রথমে কী করতে হবে ? উত্তরটা সহজ, ঘৃণার দরজাটা পেরোতে হবে প্রথমে। তার মানে, প্রচন্ড ভালোবাসলেই একমাত্র প্রচন্ড ঘৃণা করা যায়। যাকে ভালোই না বাসা গেল তাকে কী করে ঘৃণা করা যাবে ? আবার ব্যাপারটা যদি পুরোপুরি উল্টো করে ধরি তাহলে দেখা যাবে, প্রচন্ড ঘৃণাই একসময় প্রচন্ড ভালোবাসার জন্ম দেবে।

আসলে ভালোবাসা আর ঘৃণা বোধহয় একই মুদ্রার দুই বিপরীত পিঠ। একটি ছাড়া অপরটি সম্পূর্ণ অর্থহীন। প্রথম এবং দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর বের হয়ে গেছে। প্রচন্ড ঘৃণা করা মানুষটিকে আবারো ভালোবাসা যাবে, কাজটা খুবই সহজ। অথচ, এই সহজ কাজটা কেউ করে না কেন ? সাধারণ মানুষরা সাধারণ কাজ সহজে করতে পারে না, অসাধারণরা পারে।

সাধারণ কাজগুলো মানুষের কাছে অসাধারণ হিসেবে ধরা দেয়। আসলে অসাধারণ বলে কোনো কথা নেই, সবই সাধারণ। মানুষ সাধারণের চেয়ে অসাধারণকে বেশি পছন্দ করে। আর তাই হয়তো তারা সাধারণকেই অসাধারণ হিসেবে ধরে নেয়। এটাই হয়তো সাধারণকে গ্রহণ করার অসাধারণ পদ্ধতি।

কে জানে, সাধারণরাই হয়তো আসল অসাধারণ !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।