আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জুয়েল যেভাবে 'ব্ল্যাক'



পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে 'ট্যালেন্টপুল বৃত্তি', এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে 'স্টারমার্ক' নিয়ে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর অর্জন। এর পর দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে গ্রেপ্তার, ছয় মাস পর জামিনে মুক্তি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই দফায় বহিষ্কার, ছাত্রত্ব বাতিল এবং সর্বশেষ খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাবাস। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছিনতাই ও চাঁদাবাজির ব্যাপারে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। এই হলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ক্যাডার জাহেদুল ইসলাম জুয়েল ওরফে ব্ল্যাক জুয়েলের (২৮) শিক্ষা জীবনের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত। গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ধারালো অস্ত্রসহ জুয়েলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কালের কণ্ঠের কাছে জুয়েল স্বীকার করেছে, সে কিংবা তার পরিবার এই জীবন চায়নি। দলীয় নেতারা তাকে 'ইচ্ছামতো ব্যবহার' করায় আজ তার এই করুণ পরিণতি। হাটহাজারী থানার একটি অস্ত্র মামলায় রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে আরো চার সহযোগীসহ ব্ল্যাক জুয়েলকে গতকাল দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। পাঁচজনেরই হাতে ছিল হ্যান্ডকাফ এবং পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি। এ সময় ব্ল্যাক জুয়েল কালের কণ্ঠকে জানিয়েছে মেধাবী ছাত্র থেকে সে কিভাবে সন্ত্রাসী হয়েছে।

তবে এ জন্য সে যেমন ছাত্রলীগ নেতাদের দায়ী করেছে তেমনি অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি। ব্ল্যাক জুয়েল অভিযোগ করে কালের কণ্ঠকে বলে, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য ইউসুফ স্যার ও প্রক্টর ড. জসিম স্যারই আমাকে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত করেছে। তাঁদের অন্যায় ও অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমি সন্ত্রাসী হতে বাধ্য হয়েছি। ' জুয়েলের এই অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রক্টর ড. জসিম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সাত বছরেও দ্বিতীয় বর্ষ অতিক্রম করতে না পারায় অনেক আগেই তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছিল।

এখন ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। ' খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলা এলাকার গণপূর্ত বিভাগের কর্মচারী জাফর আহম্মদের তিন ছেলের মধ্যে জুয়েল সবার বড়। ছোট থেকেই বাবার ইচ্ছা ছিল বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে ছেলে একজন বড় সরকারি কর্মকর্তা হবে। আর জুয়েলের ভাবনায় ছিল 'সৎ মানুষ' হয়ে জীবিকা নির্বাহের। জুয়েল তার এই পরিণতি সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল।

কিন্তু তার কিছুই হলো না। মানুষ এখন আমাকে সন্ত্রাসী বলছে। আর এটাই এখন আমার পরিচয় হয়ে গেল! সবার চোখে আমি বড় সন্ত্রাসী। ' জুয়েল জানায়, ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে। সাহসী ভূমিকার কারণে অল্প সময়ে নেতাদের নজরে পড়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির ও ছাত্রদলের আধিপত্যের মধ্যেই তার নেতৃত্বেই মিছিলসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করত ছাত্রলীগ। কাউকে হুমকি দেওয়া কিংবা কাউকে মারধর করতে হলে নেতারা জুয়েলকেই পাঠাত। আর এভাবে জুয়েল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক সন্ত্রাসীদের একজন। জুয়েল নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এরশাদ হোসেনের অনুসারী বলে দাবি করে। দাঙ্গা-হাঙ্গামার অভিযোগে গ্রেপ্তার, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই দফা বহিষ্কার এবং ছাত্রত্ব বাতিল প্রসঙ্গে জুয়েল জানায়, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সংগঠনের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে এসব শাস্তি পেতে হয়েছে তাকে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তারের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নেতৃত্বে ছাত্রলীগ মিছিল করে। আর মিছিল করার দায়ে জরুরি আইনে তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। ছয় মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হলে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে মিছিলের আয়োজন করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রথম দফায় এক বছরের জন্য তাকে বহিষ্কার করে। ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টার পঞ্চমবার্ষিকী উপলক্ষে মিছিল করার দায়ে তাকে দ্বিতীয় দফা বহিষ্কার করা হয়। এর পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার ছাত্রত্ব বাতিল করে।

জাহেদুল ইসলাম জুয়েলের নাম কিভাবে 'ব্ল্যাক জুয়েল' হিসেবে পরিচিত পেল_এই প্রশ্নের জবাবে জুয়েল কালের কণ্ঠকে বলে, 'আমার গায়ের রং কালো বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বিভিন্ন স্থানে আমাকে ব্ল্যাক জুয়েল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রক্টরের মুখে এই নাম শোনার পর আমার নাম 'ব্ল্যাক জুয়েল' হিসেবে রটে যায়। এই প্রসঙ্গে প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, 'আমি প্রক্টরের দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই তো সে ব্ল্যাক জুয়েল হিসেবে পরিচিত ছিল। আমার আগের প্রক্টররাই আমাকে তার নাম উল্লেখ করে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। ' বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে মারামারি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা বিশৃঙ্খলা সেখানে 'ব্ল্যাক জুয়েল' এই অভিযোগ প্রসঙ্গে জুয়েল বলে, 'এই অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি না।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনিয়মের কারণে যেসব দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলোতেই আমি সম্পৃক্ত ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলো দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। ' সহপাঠীদের কেউ কেউ জুয়েলের এসব কর্মকাণ্ডের জন্য অসুস্থ মানসিকতাকেই দায়ী করে। কিন্তু সেসব অভিযোগ মানতে নারাজ জুয়েল। আদালত প্রাঙ্গণে ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় জুয়েল হাঁটতে হাঁটতে কালের কণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলে, 'আমি সুস্থ।

কিন্তু আমি অসুস্থ রাজনীতির শিকার। '


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।