আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাত্রলীগে ডোপ টেস্ট



ছাত্রলীগে ডোপ টেস্ট কাজী আদর: অনেক দিন আগে বেইলি রোডে একটি নাটক দেখেছিলাম- ‘বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করে নিন’। ইদানীং চিকিৎসকরা শুনেছি বিবাহ-ইচ্ছুক হবু বর-কনেকে রক্ত পরীক্ষার পরামর্শ দেন। বিদেশে এটা বাধ্যতামূলক। আন্তর্জাতিক খেলাধুলাতেও দেখা যাচ্ছে খেলোয়াড়দের ‘ডোপ’ টেস্ট করা হচ্ছে। রক্ত, মূত্র পরীক্ষা করে দেখা হয় তারা শারীরিক শক্তি সঞ্চয়ের জন্য নিষিদ্ধ কোন ওষুধ সেবন করেছে কিনা।

এসবেরই একটি যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা আছে এবং সেটা গ্রহণযোগ্য। কিন্তু তাই বলে ছাত্রলীগের পদ পেতে রক্ত ও মূত্র পরীক্ষা! এ না হলে কি রঙ্গভরা বঙ্গদেশ। এই অভিনব বিষয়টির আবিষ্কারক আমাদের মান্যবর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আগামী ২৫শে এপ্রিল জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। যারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদে নেতৃত্ব দিতে চান তাদের ৩০ জনের রক্ত ও প্রস্রাব পরীড়্গা হচ্ছে এবং তা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে (সচিত্র প্রতিবেদন কালের কণ্ঠ, ১৯শে এপ্রিল)।

এই পরীড়্গায় উত্তীর্ণ হবে যারা তারাই নেতৃত্বে আসতে পারবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আগামী দিনে যারা নেতৃত্ব দেবেন তারা যেন মাদকাসক্ত না হন। আমরা চাই সুস্থ দেহের অধিকারী। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই অভিনব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়ে গেল দেশের তরম্নণ সমাজ কি ভয়াবহ নেশার ছোবলে বন্দি। কিন্তু সরকার দলীয় নেতৃত্বকে নেশামুক্ত করতে চাইছে কিন্তু বাকিদের কি হবে? প্রতিদিন সংবাদপত্রে নেশাসক্ত তরম্নণদের নিয়ে কত শত পরিবার সর্বস্বানত্ম হয়ে যাচ্ছে সেই প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।

আর অজানেত্ম কত যে পরিবার আছে তাদের সংবাদ তো লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে। এদের রড়্গা করবে কে? ছাত্রলীগের পদ এখন অতি লোভনীয়। তাই পদপ্রার্থীরা অতি ‘সুবোধ’ বালকের মতো ‘রক্ত’ আর ‘মূত্র’ দান করছে। না হলে সময়টা তো ওদের। এই চৌদ্দ মাস তারা তো কিছুই দান করেনি।

সবই ‘গ্রহণ’ করেছে। বিয়ের আগে রক্ত পরীড়্গা, খেলোয়াড়দের ডোপ টেস্টের মধ্যে তেমন হীনম্মন্যতা, আত্মসম্মানের কিছু নেই। কিন্তু ছাত্রদের নেতা হওয়ার জন্য এই পরীড়্গার মধ্যে ছাত্রত্বের আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগা উচিত। পৃথিবীতে কোথাও ছাত্রদের বোধ হয় এমন অমর্যাদার একটি পরীড়্গার মুখোমুখি হতে হয়নি। ছাত্রলীগের নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের জন্য এই ‘মূত্র’ পরীড়্গা হচ্ছে অবমাননাকর।

আর সরকারের জন্য এক লজ্জাকর পরিস্থিতি, সরকারের দলীয় ছাত্র সংগঠন কি ভয়ানকভাবে নেশাগ্রসত্ম। দেশজুড়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের তাণ্ডবে মানুষ অতিষ্ঠ। যেখানে স্বয়ং সরকারই স্বীকার করে নিলো ছাত্রলীগ-যুবলীগ কেবল সন্ত্রাসীই নয়, তারা মাদকাসক্তও। এদের কাছ থেকে দেশ আর কি পাবে? তবে যারা এখন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আছে তাদেরও পরীড়্গা করলে ভাল হয়। ১লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের নিয়ে যে ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দেয়া হলো তা সুস্থভাবে ছাত্রদের করার কথা নয়।

রোগাক্রানত্ম হওয়ার আগেই কি রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে ভাল হয় না? সমপ্রতি একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেল, বাংলাদেশ-ভারত সীমানেত্মর কাছাকাছি গড়ে উঠেছে ৩২টি ফেনসিডিল কারখানা এবং চোরাইপথে এসব নিষিদ্ধ ফেনসিডিল বাংলাদেশে আসছে। খুবই সহজলভ্য এখন এদেশে ফেনসিডিলসহ নানা মাদকদ্রব্য। গত মার্চে দিলিস্নতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমানত্মরড়্গী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে বিডিআর-এর পড়্গ থেকে এই অবৈধ কারখানার একটি তালিকা বিএসএফ-এর হাতে তুলে দেয়া হয় এবং এর বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধও করা হয়। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় নিষিদ্ধ ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত একটি যৌথ ইশতেহার সই করেন। কিন্তু ভারতের পড়্গ থেকে কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি।

মাদকের করাল থাবায় দেশের তরম্নণ সমাজ এক ভয়াবহ পরিণতির  দিকে এগোচ্ছে। তবে কি আগামী প্রজন্মের জন্য এক বিকলাঙ্গ সমাজ রেখে যাবে আজকের নেতৃত্ব? ছাত্রদের হাতে প্রচুর অর্থ, প্রচুর ড়্গমতা এসে যাওয়ায় তারা বেপরোয়া। নেশা করাকে তারা আনন্দ ভাবে। একটু একটু করে তরম্নণরা নেশার শিকার হয়ে পড়ে। খুঁজে দেখতে হবে এদেশের নেশা ব্যবসার সঙ্গে কারা জড়িত।

রাঘব-বোয়ালরা তো  ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। জানি না ছাত্রদের এই অমর্যাদাকর রক্ত-মূত্র পরীড়্গা করে সরকারি দল কতটা তাদের রড়্গা করতে পারবে। কিন্তু সমগ্র দেশের সর্বনাশ সরকার কিভাবে ঠেকাবে? আমরা হবুচন্দ্র রাজার জুতা আবিষ্কারের ঘটনা জানি। হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর কীর্তিও জানি। কেবল বুঝতে পারিনি এ যুগের এ সময়েও গবুচন্দ্রদের অভাব নেই সরকারে।

আগে মাদক আমদানির সুড়ঙ্গগুলো বন্ধ করম্নন, চীন-মালয়েশিয়ার মতো মাদক পাচারকারীদের ফাঁসিতে ঝুলান। শুধু নিজ দলের নেতা পদপ্রার্থী কয়েকজনকে মাদকমুক্ত রাখলে চলবে না। পুরো দেশটাকেই এই ভয়াবহ পরিণতির হাত থেকে রড়্গা করতে হবে। এটা তাদের অবশ্যকরণীয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.