আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খলিল ও তার ম্যাজিক আপেল (খলিল সিরিজ-২)

কিছু মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে। কিছু মানুষ স্বপ্নটা সত্যি করার জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠে। জীবন আপনার কাছে সেভাবেই ধরা দিবে আপনি যেরকম থাকবেন।

All characters including Khalil appearing in this work are fictitious. Any resemblance to real persons or Khalil, living or dead, is purely coincidental. গল্প পরার আগে একটা জিনিস জানবেন। Magic Apple কখনো পঁচেনা- ছিলেন, কাঁটেন যাই করেন।

বখাটে ছেলে নিধন কমিটি এর আহবায়ক ও সাধারন সম্পাদক খলিলুর রহমান নিজেই যে এভাবে ধরা খেয়ে যাবে সেটা সে নিজেও ভাবতে পারেনি। দিনটা ছিল এক বিশেষ দিন। এর আগে খলিল নোভাকে কখনো দেখেনি। বখাটে ছেলে নিধন কমিটির কাজ করতে গিয়েই প্রথম দেখা। ব্যাপারটা ছিল অনেকটা এরকম............ নোভা থাকে ৫ তালা বিল্ডিং-এর ৫ তালায়।

নোভার কারনে এলাকার ছেলেপেলে তাদের আসা যাওয়ার টাইম পালটায় ফেলেছিল। এলাকায় ক্রিকেট খেলার সময় চেস্টা করা হত যেন বলটা ৫ তালায় যায়। নোভাদের বাসায় কোনো কুরিয়ার আসলে কুরিয়ারওয়ালাদের এত কষ্ট হত না। বাসার লিফট বন্ধ থাকলেও না। তবে নোভার মা ছিলেন অনেকটা সুন্দরবনের দীর্ঘদিনের উপবাসীনী ক্ষুদার্থ বাঘিনীর মত।

সুন্দরীদের মাদের অবশ্য এরকম হওয়া লাগে। সুন্দরী কন্যা মানেই সেখানে আমাদের মত আউলফাউল পোলাপাইনের বন্যা। তবে খলিল তখন জিএফ খোঁজা নিয়ে এত ব্যস্ত ছিলনা। সে তার নিজের অন্য কাজেই ব্যস্ত ছিল। কিন্তু পাড়ার ছেলেরা আবার কার কথা শুনে।

নোভার অবশ্য মোবাইল ছিলনা। কিন্তু টিএনটি নম্বর এমন একটা জিনিস যেটা জোগাড় করা আমাদের মত ফটকা পোলাপাইনদের জন্য এত কঠিন কিছু ছিল না। দিনরাত ২৪ ঘন্টা নোভাদের টিএনটি ফোন বাজতেই থাকত। নোভার বুদ্ধিমতি মা তখন পাড়ার সব ছেলেদের গার্জিয়ান নিয়ে সালিষ বসাইল। ছেলেরা যাতে খেপে না যায় এবং পাড়ার ছেলেদের কিভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখা লাগে সে ব্যাপারটা তিনি ভালই বুঝতেন।

নোভা-যে আমাদেরি সবার বোন , একি পাড়ায় বসবাসরত সকল মুসলমান ভাই-বোন এমন কিছু একটা তিনি বুঝাতেন, যা মানতে আমরা কেউই রাজি ছিলাম না। এরপরের কথা। পাড়ায় ঠিক করা হল থার্টি ফার্স্ট নাইট খুব ধুম ধাম ধমাস করে পালন করা হবে। সব বাসায় বাসায় গিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে। নোভাদের বাসা খুবি সেনসিটিভ, কাজেই সেখানে ফটকা পোলাপাইনদের দেইয়া যাবেনা, তাই আমি বাদ পরলাম।

আমার অবশ্য বেশ মন খারাপ হল। নোভার বাসায় নোভার বাঘিনী মা খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিলেন কিভাবে নোভা আমাদের আপন বোনের মত হয়। একই পাড়াই বসবাসরত সকল মুসলিম ছেলে-মেয়ে ভাইবোন। বাঘিনীর কথা শুনে খলিলও উত্তেজিত। খলিল বলতে লাগল, আন্টি খালি বলেন কোন শালার ভাই নোভাকে উত্তক্ত করে, নাম বলেন খালি, আমি খলিল যদি ঐ শালার সলিল সমাধি না করসি তাইলে আমার নাম আর খলিল না, আমার নাম হইয়া যাবে জলিল।

খুবই সাংঘাতিক অবস্থা। তবে বেশি দায়িত্বজ্ঞান দেখানোর মধ্যেও ঝামেলা আছে। কারন খলিল এর শেষ কথাটা ছিল, ইয়ে আন্টি, ফোন কি এখনো কেউ করে? শেষ কথটা খলিল বলেছিল বেশি রেসপনসিবলিটি দেখানোর জন্য, কিন্তু ঐযে একটা কথা আছেনা, কথা বেশি বললে মানুষ ভুল ও একটু বেশি বুঝে। আন্টি এর সব সন্দেহ তখন খলিল এর দিকে। আমাদের আর কি!! বাঁচা গেল।

ঐদিকে খলিলের কিন্তু নোভাকে মনে ধরে গেল। মানে মুখে মুখে নোভা আমাদের বোন কিন্তু মনে মনে নোভা আমি ছাড়া বাকি সবার বোন। যে যার মত তখনো নোভার পিছনে। কিন্তু খলিলের যে একটু সমস্যা হয়ে গেল। একদিকে সে হছে বখাটে ছেলে নিধন কমিটির সাধারন সম্পাদক, আবার নোভাকেও ভুলে থাকা সম্ভব না।

এর মাঝে দেখা গেল বাঘিনী খালিলকে ঘরের ছেলে বানায় ফেলসে। বাজার করা থেকে শুরু করে ঘর ঝারু দেওয়া সব খলিল দিয়ে করানো হইতেসে। আমরা জানি বাঘিনী মহা ধুরন্ধর। কোনোভাবে সে বুঝে গেসে খলিল আর যাই হোক, আসল তীরটা মারতে পারবেনা কাজেই যত পার বেকার খাটাও। তারপরেও খলিলের ভাগ্য আমাদের সহ্য হইল না।

কি করমু। বখাটে পোলাপাইনদের এমন-ই হওয়া লাগে। ঐদিন রাতে কে জানি নোভাদের বাসায় ফোন দিল! সুন্দরবনের দীর্ঘদিনের উপবাসিনী রয়েল বেংগল টাইগ্রেস গর্জন করল, "কে"?...... জ্বি আমি খলিল। নোভা আছে? এরপর কি হল জানিনা খালি জানলাম খলিল ঐ বাসার ত্রি-সিমানায় ঢুকতে পারবেনা। নোভাদের কলার আইডি ছিল কিনা জানিনা।

তাই ফোনটা বাইরে থেকে করেছিলাম। খলিলের বেশ মন খারাপ হল। কয়দিন পর রাতে খলিল যখন একা একা মন খারাপ করে বিছানায় বসে কান্নাকাটি করছিল তখন কিভাবে সব কিছু ঠিক হবে তা বুঝে বের করতে পারছিল না। মন খারাপ করে বাসার বাইরে এসেই মনে হল সে যেন অন্য জগতে চলে আসছে। চারিদিকে শুধু সাদা আর সাদা কিন্তু আকাশ নিলিমা।

এর মধ্যে মাঝখানে একটা গাছ। গাছের নিচে একজন একজন মানুষ বসা। খলিল গাছটা চিনলনা কিন্তু গাছের ফল গুলা কেমন চেনা চেনা লাগছিল। অনেকটা আপেল এর মত। হটাৎ করে টুপ করে একটা আপেল বুড়া মানুষটার মাথায় পরল।

বুড়া লোকটা আপেলটা তুলে সামনে তাকায় খলিলকে দেখল। আর জিজ্ঞেশ করল, আপেলটা নিচে পরল কেন? খলিল বেশ উত্তেজিত হয়ে গেল, একসাইটমেন্ট অবস্থা, স্যার আপনি নিউটন। হাইজ্যাক নিউটন। আপেলটা নিচে পরসে গ্র্যাভিটেশন এর জন্য। বুড়া লোকটা বেশ বিরক্ত হইল।

খলিলকে জিজ্ঞেশ করল, তুমি কিসের ছাত্র? খলিল বলল, বাংলা। বুড়া লোক বলল, তাইলে তোমার স্বপ্নে নিউটন আসবে কেন!! আমি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, আমাকে চিননাই!! খলিল তখন বলল আপনি শেক্সপিয়ার হইলে বাংলায় কথা বলতেসেন কিভাবে? !! শেক্সপিয়ার এই নাবালকের মত প্রশ্ন করাতে খুব বিরক্ত হইল। বললেন স্বপ্নের মধ্যে নাকি ইথারে ইথারে ভাষা পরিবর্তন হয়। উনি নাকি ইংলিশে বলতেসেন সেটা কনভার্ট হয়ে বাংলায় যাইতেসে। আর খলিলের সাথে ব্যাপারটা উলটা হইতেসে।

তবে ব্যাপারটা কিভাবে ঘটতেসে সেটা উইলিয়াম শেক্সপিয়ার বলতে পারবেননা। সেটা বলার জন্য নিউটনকে লাগবে কিন্তু নেড়া যেমন দুইবার বেলতলায় যায়না, নিউটন তেমনই এখন আর আপেল গাছের নিচে আসেননা। খলিল তার দুঃখ ভরা কাহিনী শেক্সপিয়ারকে বললেন । শেক্সপিয়ার তাকে বেশ একটা ধমক দিলেন । তিনি বললেন Romeo and Juliet পড়নাই ? খলিল ভয় পেয়ে গেল ।

বলল স্যার মরতে পারবনা । শেক্সপিয়ার বললেন আরে গাধা মরতে হবেনা । তারা একই ওষুধ খেয়ে মরসিলো । তোমার একই ওষুধ খেয়ে প্রেম হবে । খলিল ও এক্সসাইটেড হয়ে গেল ।

স্যার দেন দেন, ওষুধ দেন । শেক্সপিয়ার আবার রেগে গেলেন । বললেন আমি তো সেইজন্যই আসছি এখানে নাকি? আমি শুরুতেই বললাম আপেল মাটিতে পড়ল ক্যান !!! খালি কি নিউটন গাছের নিচে থাকলেই আপেল পরবে নাকি !! এইটা স্পেশাল ম্যাজিক আপেল । এই আপেল অর্ধেক যদি তুমি খাও - আর অর্ধেক জুলিয়েটকে দাও তাহলে জুলিয়েট তোমার । খলিল বলল স্যার জুলিয়েট না , নোভা ।

শেক্সপিয়ার এবার খলিল কে চড় মেরে দিলেন । নোভা কোনো নাম হলো !! এইসব মেয়েদের পিছনে কেউ ঘুরে । মেয়ে ছিল আমাদের সময় , জুলিয়েট , মোনালিসা , কাপুলেট…. সকালে খলিল ঘুম থেকে উঠলো । রাতের কথা তার কিসুই মনে নাই । ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়ে সে নাস্তা খেতে গেল ।

নাস্তা খেয়ে চা খেতে যাবে তখন খলিলের আব্বা একটা আপেল খেতে খেতে বের হলো । খলিল আপেলটার দিকে তাকালো কিন্তু তারপরেও তার কিসু মনে পড়লনা । কিন্তু কেমন কেমন জানি লাগলো । হঠাৎ খলিলের আম্মা কিচেন থেকে আসতে আসতে বললেন , তোমার আব্বার কোনো হুশ জ্ঞান হবেনা আর । ১ কেজি আপেল আনসে সব আপেল ছোট ছোট একটা তার মধ্যে আবার বড় ।

এমন লাল আপেল ও আগে কোনদিন দেখিনাই । পুরা লাল । খলিল তিড়িং করে লাফ দিল । দৌড়ায় কিচেন এ গিয়ে আপেল-টা নিল । এইটা ম্যাজিক আপেল।

এই আপেল অর্ধেক সে খাবে অর্ধেক নোভা । তাইলেই কাজ হবে । খলিল নোভাদের বাসায় গেল । গল্প আর সত্যি কাহিনী এর মধ্যে পার্থক্য আসে । গল্পে লাক ফেভার করে সত্যি কাহিনীতে করেনা ।

তবে খলিলের লাক গল্পেও ফেভার করেনা। কারণ খলিল তো খলিল ই । কিন্তু আজকে করলো । দরজা খুলল নোভা একা । কাজের লোক আছে বাট তার সাথে খালি নোভা ।

অন্য সময় আন্টি থাকেন । নোভা এর আগে কখোনো খলিলের সাথে ঠিক মত কথা বলেনি । আজকে বলল । খলিল কে নাস্তায় আপেল খাইতে দিল যদিও খলিল এর পকেট এ আপেল । নোভা খলিল কে বলল সে একজন কে পছন্দ করে ।

সেই ছেলের সাথে তার বিয়ে হবে সামনে । নোভা ’র বাবা মা ১০ বছর ধরে আলাদা থাকেন । বিয়ের জন্য নোভা ’র বাবা আবার বিদেশ থেকে দেশে আসছেন । ১০ বছর ধরে নোভা ’র বাবা মায়ের ঝগড়া । ১০ বছর পর তার বাবা ’র সাথে মায়ের দেখা হচ্ছে ।

সে খুবই এক্সসাইটেড। খলিল নোভার কথা শুনলো । জিজ্ঞেস করলো আন্টি কই ? আন্টি বিছানায় শুয়ে আছে । তারপর ড্রইং রুম এ এলেন । ততক্ষনে খলিল নাইফে দিয়ে আপেল দুইভাগ করে ফেলসে ।

চোকলা গুলা কেন জানি আলাদা কাটল । নোভার মাকে অর্ধেক টা দিতে গেলে নোভার মা বললেন , ফাজলামি কর ? যাক কি মনে করে জানি তাও আন্টি সেটা খেলেন । খলিল লিফট দিয়ে বাসা থেকে নিচে নামল । তার হাতে নাইফ এবং বাকি অর্ধেক আপেল। নিচে নেমেই নোভার বাবার সাথে দেখা ।

এর ছবি একটু আগেই নোভা দেখাইসে । খলিল তাকে গিয়ে বললেন আঙ্কেল আপেল খান , বলে চোকলা চিলে দিল । উল্টা পালটা জিনিস খাওয়া অজ্ঞান করা অজ্ঞান পার্টি এর সদস্য যে খলিল এ বাপরে আঙ্কেল এর কোনো সন্দেহ থাকলোনা । আঙ্কেল চেঁচা মেচি করে খলিল কে পুলিশ এর কাছে নিয়ে গেল । তখন বাকি অর্ধেক আপেল খলিল এর পকেট এ ।

পুলিশ থেকে ছাড়া পেল খলিল । কিন্তু বাকি অর্ধেক আপেল এর রহস্য আমরা কেউ ই টের পাইলাম না । আপেল প্লাষ্টিক এর প্যাকেট এ খলিল এর পকেট এ । ঐদিকে নোভার গায়ে হলুদ-এ নোভার মায়ের পেটে না জন্মগ্রহণ করা কিন্তু আপন সব ভাই - মানে আমাদের সবাইকে দাওয়াত দাওয়া হইসিলো । সেইখানে একটা বাপার আমরা ঠিকই খেয়াল করলাম ।

নোভা ’র বাবা মা কেউ কারো সাথে কথা বলেনা । খাওয়ার সময় আবার খলিল নোভা ’র বাবার কাছে গিয়ে হাজির । আঙ্কেল এবার আবার খেপে গেলেন । তোর আপেল এর মায়রে আমি ..... বইলা আপেল সামনের টেবিল এ ছুড়লেন । আপেল গিয়ে নোভার শশুরের প্লেট এ গিয়ে পড়ল ।

নাআআআআআআআআআ , নাআআআআআআআআআ বইলা খলিল দৌড়ায় গেল । আমরা কেউ কিসু বুঝলাম না । নোভা ’র শশুর প্রায় আপেল কামড় দিতে গেলে খলিল ছোঁ মেরে আপেল সরাই দিল । এইটা আঙ্কেল এর আপেল এইটা আঙ্কেল এর আপেল বলতে লাগলো । Finally আমরাই গিয়া আঙ্কেল রে বললাম আঙ্কেল পাগল ঠান্ডা করেন ।

আপেলটা খান । আঙ্কেল আপেল খাইলেন । নোভার বিয়েতে নোভার বাবা মায়ের কি হিল ঠিক বুঝা গেলনা । কে বলবে ১০ বছর ধরে তাদের ঝগড়া । মনে হইতেসিলো তাদের বিয়ে ।

খলিল এর পকেট এ কি সব সময় আপেল থাকে !!! অর্ধেক কাটা আপেল এতক্ষন পরেও নতুন কিভাবে থাকে আমরা বুঝলাম না । তবে খলিল বিয়েতে দুই পক্ষের সুন্দর সুন্দর অনেক মেয়েদেরকেই আপেল এর ছোকলা খাইতে রিকোয়েস্ট করতেসিলো। কেন কে জানে !!! তবে খুব বেশি কাজ হয় নাই । আপেলই কেউ খাইতে চায়না আর আপেল এর ছোকলা !!! খলিল তো খলিল ই ।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.