আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খলিল জিব্রান

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান। রবীন্দ্রনাথ

আজ অবধি তিনজন কবির বই বিক্রি হয়েছে সব চেয়ে বেশি। (১) উইলিয়াম শেক্সপীয়ার। (২) লাওৎ-সে।

এবং (৩) খলিল জিব্রান। কবিতা ছাড়াও জিব্রানের গভীর দখল ছিল গদ্যে। ছিলেন মিসটিক চিত্রকর, পাথর ভাঙ্গার কলাকৌশল শেখার জন্য প্যারিসেও গিয়েছিলেন; লিখেছেন আরব সঙ্গীতের ওপর ডিসকোর্স। তবে “প্রফেট”-এর জন্যই বিশ্বময় জিব্রানের খ্যাতি। আজও।

পথ দেখিয়েছেন আধুনিক আরবি ভাষায় রোমানটিক কবিতা লেখার। সহজ সরল ভাষায় লিখেছেন জিব্রান। ছিলেন খ্রিস্টান কাঠপাদরিদের বিরোধী। যে জন্য লেবানিজ গির্জের বিরাগভাজন হয়েছিলেন জীবদ্দশায়। জিব্রান প্রথমে নিজেকে মনে করতেন একজন সিরিয়-আরব, তারপরে খ্রিস্টান মারোনাইট।

আমূল আধুনিকায়ণ চেয়েছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের- তবে তা অবশ্যই পশ্চিমের একপেষে অন্ধ অনুসরণ করে নয় । ব্যাক্তির মুক্তি, শ্রেণিশোষন এবং শাসনযন্ত্রের রুক্ষতার বিরুদ্ধে আমৃত্যু ছিলেন উচ্চকিত। His experience in the United States led him and other Arab writers and poets to form a literary society, Al-Rabita al-Qalamiyya (Pen's League), which played an important role in the cultural revival in the Middle East in the first two decades of the twentieth century. খলিল জিব্রান কেন আজও জনপ্রিয়? একটি উদাহরণ দিলেই পরিস্কার হবে। প্রফেট গ্রন্থে জিব্রান লিখেছেন- Your children are not your children. They are the sons and daughters of Life's longing for itself. They come through you but not from you, And though they are with you yet they belong not to you. (On Children) কী অসাধারণ কথা। জিব্রান এদেশে মোটেও অপরিচিত নন।

বরং তাঁকে নিয়ে নব্বুয়ের দশকে বিপুল উন্মাদনার সাক্ষী আমি নিজে। প্রফেট বাংলায় অনুদিত হয়েছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রিয় বই ছিল। সব সময় সঙ্গে রাখতেন। বিশ্বেও সমান জনপ্রিয় জিব্রান।

জন লেনন এর লেখা বিটলস এর একটি গানের (জুলিয়া) প্রথম দুটি লাইন জিব্রানের ঢেউ ও ফেনা থেকে নেওয়া- Half of what I say is meaningless But I say it just to reach you ... ২ ভূমধ্যসাগরের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে লেবানন দেশটি ভূমধ্যসাগরের পূর্বপাড়ে। লেবাননের অবস্থান: তুরস্কের দক্ষিণে, সিরিয়ার পশ্চিমে। উনিশ শতকে লেবানন ছিল সিরিয়ার অংশ। সিরিয়া শাসন করত অটোমান তুর্কিরা । যা হোক।

লেবাননের উত্তরে রয়েছে ফাম আল মিলযাব নামে একটা পাহাড়। সেই ফাম আল মিলযাব পাহাড়ের পাদদেশে ছিল বিশারি নামে একটা পাহাড়ি গ্রাম। ওই বিশারি গ্রামেরই তুর্কি অটোমান সরকারের ট্যাক্স কালেকটর ছিল খলিল বে । ভারি জুয়ারি লোক ছিল খলিল বে। মদ খেত খুব।

বিয়ে করেছিল বিশারি গ্রামেরই কামিলা রাহমি নামে এক মেয়েকে। খলিল বে ছিল কামিলার ২য় স্বামী। এর আগেও একবার সংসার করেও সুখি হয়নি কামিলা। এবার মদ্যপ স্বামী জুটল কপালে । তার ওপর আবার জুয়ারি।

মন্দ কপাল আর কাকে বলে!যা হোক। পিটার নামে আগের ঘরে এক ছেলে ছিল কামিলার। ছেলেকে নিয়েই কোনওমতে দিন কাটত। ১৮৮৩ সাল। কামিলার বয়স তিরিশ।

জানুয়ারি মাসের ৬ তারিখ। এক ছেলে হল কামিলার। বড় অতিন্দ্রীয় অনুভূতি নিয়ে জন্মেছিল সে ছেলে। যে ছেলে বড় হয়ে হে য়ছিল আরবি ভাষায় লেখা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। লিখেছিলেন “মিছিল” ও “বিদ্রোহী আত্মার” মতন অসাধারন সব আরবি কবিতা।

শিশুটির আত্মার অতীন্দ্রিয়তা গভীর করে ছিল বিশারি গ্রামের মুসলিম- দ্রুজ রহস্যময়তা। বাইবেলের গল্প। কামিলারা ছিল মারোনাইট খ্রিস্টান। ছেলের নাম রাখা হল জিব্রান। কামিলার বাবা জিব্রান খলিল জিব্রান ছিলেন মারোনাইট পাদরি।

তো; রহস্যময় দ্রুজ-মুসলিম আবহে বড় হতে লাগল অতীন্দ্রিয় বালক জিব্রান । বিশারি গ্রামের খুব কাছেই কাদিসা উপত্যকা। তারপরেই সেই পবিত্র সিডার গাছের বন। এ বনের গাছ দিয়েই জেরুজালেমে সলোমনের উপাসনালয়টি তৈরি হয়েছিল। বালক ঘোরে; একা একা।

সেই বনে; সেই পবিত্র সিডার বনে। কাঁপা কাঁপ হাতে ছোঁয় সিডারের গুঁড়ি ও বাকল। মনে মনে বলে: মনে রেখেছি। যা ছিল সত্য সুন্দর ও পবিত্র। বালক জিব্রান কখনও পাহাড়ের ঢালে মেষপালকের পাশে বসে দেখে দূ রের প্রান্তরময় ঈশ্বরের সাজানো বাগানটি।

তার নির্জনতা। নীলাভ ধূসর আকাশ। কখনও ঘোরে প্রাচীন ফিনিশিয়দের কবেকার পরিত্যক্ত প্রতœপ্রান্তরে। কাদিসা উপত্যকা কি যা তা জায়গা? এখানেই তো এককালে ছিল ফিনিশীয়দের বর্ণাঢ্য নগর। কাদিসা উপত্যকায় এককালে পালিয়ে এসেছিল মারোনাইট খ্রিস্টানরা।

সেই ৭ম শতকে। কাদিসা উপত্যকার পাহাড়ের নিচে বিশারি গ্রামেই হয়ে উঠেছিল মারোনাইট গির্জের কেন্দ্র । বালক সে সব ঘুরে ঘুরে দেখে। মার সারকিস চ্যাপলটা বিশারি গ্রামের কাজেই। জলপাই গাছে ঘেরা শান্ত নিভৃত সাদা রঙের একটি চ্যাপেল।

সে চ্যাপেলের এক সাধু ছিলেন ভারি সঙ্গীতভক্ত। তিনি বালক জিব্রানকে সঙ্গীতের হাতেখড়ি দিলেন। অর্গানের অক্ষর চেনালের। কত কথা যে বললেন সঙ্গীত নিয়ে। বিশেষ করে আরব সঙ্গীত নিয়ে।

পরবর্তীকালে সেসব নিয়ে একটা আস্ত বই লিখেছিলেন জিব্রান। জিব্রানের জীবনের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। একটি প্রাচীন কিথারা উপহার দিয়েছিলেন জিব্রানকে সাধুটি। বালক কৃতজ্ঞ বোধ করে। বালক ঘুরে ঘুরে দেখে কাদিসা উপত্যার মাটি-পাথর-গাছ।

রংশূন্য আকাশ। মেঘ। বালির উপর উড়ন্ত পাখির ছায়া। বালক সে দৃশ্যকে ধরে রাখতে পারে বিস্ময়কর এক প্রতিভায়। পারে কাঠকয়লা দিয়ে ফোটা তে বালির উপর উড়ন্ত পাখির ছায়া।

মেঘ। রংশূন্য আকাশ। গাছ। পাথর। মাটি।

এভাবে সময় কাটে বালকের। বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে না। বাড়ি ফিরলে মার কালো মুখ। বাবার সঙ্গে দুবেলা ঝগড়া। বাবাকে মা বলত- তুমি মদ খেলে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাব।

বাবা মদ খেত। মা চলে যেত। দুদিন পরে ঠিকই ফিরে আসত মা। এসব অশান্তি ভালো লাগে না বালকের। ও ছবি আঁকা নিয়ে ডুবে থাকে।

ভারি সুন্দর ছবি আঁকে এ বয়েসেই। তারপর একটা ঘটনা ঘটল। একটা বোন হল জিব্রানের। বোনের নাম রাখা হল: মারিয়ানা। শিশু মারিয়ানার সঙ্গে ভারি ভাব হল জিব্রানের।

এই বোনই তো শেষ বয়েসে নিউ ইয়র্কের এক হাসপাতালে দেখেছিল জিব্রানকে। সৎ ভাই পিটারের সঙ্গেও খুব ভাব বালকের। সৎ ভাই পিটারে সঙ্গে গ্রামের স্কুলে যেত জিব্রান। স্কুলে শিখতে লাগল আরবি/সিরিয় ভাষা ও অঙ্ক । শিখবে কী।

বালক জানলা দিয়ে দেখত কাদিসা উপত্যকা। তারপরেই পবিত্র সিডার গাছের বন। মাউন্ট লেবানন। দিন কাটে বাইবেলের গল্প। কী ভাবে পবিত্র সিডার বনের গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল সোলোমনে উপাসনালয়।

দিন কাটের কাদিসা উপত্যকার নির্জনতার গান শুনে। সাধুর দেওয়া কিথারা বাজিয়ে। মুসলিম-দ্রুজ রহস্যময় কুয়াশায় অদৃশ্য হতে হতে । বালক জিব্রান সিডার বনে ঘোরে। একা।

পাহাড়ে বসে দেখে দূরের প্রান্তরে ঈশ্বরের সাজানো বাগান। আরেক বোন হল জিব্রানের। নাম রাখল সুলতানা। কী ফুটফুটে সুন্দর দেখতে ছিল সুলতানা। ৩ জিব্রানের বাবা খলিল বে জুয়ায় হেরে বোধহয় সরকারী অর্থ নয়-ছয় করেছিল।

অে টামানদের কঠোর সিয়াসত আইনে ফেঁসে গেল জেলে। সহায় সম্পদ যা ছিল -সবই কনফিসকেট করল তুর্কিরা। কামিলা ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে উঠল। মুখ কালো। কী ভুল করলাম এই লোকটাকে বিয়ে করে।

১৮৯৪ সালে খলিল বে মুক্তি পেল। থাকার বাড়িটিও নেই। অগত্য ভাইয়ের বাড়ি উঠল । ভাইয়ের ছিল বাদামের ব্যবসা। বাদাম গাছের বন ছিল ভাইয়ের।

সে বন দেখাশোনা করতে লাগল খলিল বে। কামিলা আর স্বামীর ঘর করবে না। জেলে যাওয়ার পর বিশারি গ্রামে সবাই ছিঃ ছিঃ করছে। কামিলারএক ভাই যাবে (স্বপ্নের দেশ) আমেরিকায়। কামিলা ভাইকে ধরল।

ভাই কী ভেবে বলল, যাবি? চল তা হলে। ১৮৯৫। ২৫ জুন সবাই মিলে রওনা হল জুবেই বন্দর। সেখান থেকে আমেরিকাগামী জাহাজে উঠবে সবাই। জিব্রান তখন ১২ বছরের বালক।

মদ্যপ খলিল বে বাদাম বাগানে পড়ে রইল। বিশারি গ্রামের পুবে ভূমধ্যসাগর। ওখানে জুবেই বন্দর। ঘোড়া গাড়ি চলছে। বালক জিব্রান বিষন্ন।

সব ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে। মনে মনে বলছে, আমি আবার ফিরে আসব গাছ। আমি আবার ফিরে আসব মাটি। আমি আবার ফিরে আসব পাহাড়। পাখি ও পবিত্র সিডার বন।

জিব্রান ফিরে এসেছিল ঠিকই। ১৯৩১ সালে ৪৮ বছর বয়সে বুকে তীব্র ব্যথা নিয়ে নিউইয়র্কের একটা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর। আজও বিশারিতেই আছেন জিব্রান। ৪ আটলান্টিক সমুদ্রের পশ্চিম পাড়ে বোস্টন শহর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের রাজধানী বোস্টন।

সেই বস্টন শহরের দক্ষিণে চায়না টাউন। ঘিঞ্জি এলাকা। গলির ভিতরে দুপাশে লাল ইটের দালান। তিন তলা একটি বাড়ির খুপরি ঘরে ছেলেমেয়ে নিয়ে উঠল কামিলা। সম্পূর্ন ভিন্ন পরিবেশে আরম্ভ হল জীবনসংগ্রাম।

বাড়ি বাড়ি ঘুরে লেস’ বিক্রি করতে লাগলেন কামিলা। ভাই সাহায্য করত। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে দিন কাটতে লাগল। ভাই বলল, হাতে কিছু পয়সা জমলে শুকনা খাবারের দোকান দিস কামি। টাকা জমেছিল কিছু।

শুকনো খাবারের দোকান দিল। পিটার বসল দোকানে। জিব্রানকে ভর্তি করে দেওয়া হল পাড়ার একটি স্কুলে। ওর ছবি আঁকার হাত দেখে শিক্ষকরা স্তম্ভিত। যখনকার কথা বলছি।

সেই সময় ফ্রেড হল্যান্ড ডে ছিলেন বস্টনের বিখ্যাত পন্ডিত, সাহিত্যমোদী ও চিত্রকর। তাঁর কানে গেল বালক জিব্রানের প্রতিভার কথা। উদার মানুষ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিব্রানের কাজ দেখলেন। বললেন, হু ভালো।

জিব্রানের সংসারের অনটনের কথা শুনলেন। বললেন, পয়সা আমি দেব। তবে মাঝে মাঝে মডেল হতে হবে। জিব্রান রাজী হল। স্টুডিওতে ঢুকিয়ে ফ্রেড বললেন, কাপড় খোল।

জিব্রান লজ্জ্বায় কাচুমাচু। ফ্রেড বললেন, আ হাহা, এ হল শিল্প। লজ্জ্বার কিছু নেই। ছেলের শুভাকাঙ্খীর সঙ্গে দেখা করল কামিলা। ফ্রেড সিগারে টান দিয়ে বললেন, আপনি চিন্তা করবেন না।

আপনার ছেলের সব দায়িত্ব আমার। এমন প্রতিভাবান ছেলে। দেখবেন এককালে ওকে সবাই চিনবে। ফ্রেডের স্টুডিও তে তৎকালীন কবিসাহিত্যিকদের ভিড়ভাট্টা লেগে থাকত। তাদের বই বেরুত।

বইয়ের প্রচ্ছদ করত জিব্রান। কখনও কখনও পোর্ট্রেটও করত। সবাই ওর হাতের কাজ দেখে তাক। ওদিকে ফ্রেডের সঙ্গে হয়তো কামিলার ঘনিষ্টতা বাড়ছিল। মডেল হিসেবে কামিলাও দাঁড়াল ফ্রেডের ক্যানভাসের সামনে।

একে একে দাঁড়াল সুলতানা, মারিয়ানা ও পিটার। লেবাননে পাঠিয়ে দেওয়া হল জিব্রানকে। ৫ বৈরুতের “মাদ্রাসা আল হিকমাত” খুবই নামকরা। মারোনাইট বিশপ জোসেফ ডেবস এটির প্রতিষ্ঠাতা। ওখানেই ভরতি হল জিব্রান।

কত কিছু যে জানল। মারোনাইট খ্রিস্টানদের ইতিহাস। Early Christianity in the region focused in and around the city of Antioch(বর্তমান তুরস্ক). The conversion of Antioch was carried out by the disciples of Jesus and the faith of its inhabitants was further strengthened by the work of the apostles Paul and Barnabas. The church of Antioch itself was founded by Saint Peter who was bishop there before moving on to Rome, and it was in this church where the disciples of Jesus were first called Christians... সময় পেলে সেই প্রাচীন কিথারাটি বাজাত। আরব সঙ্গীতের ওপর নোট নিত। ছবি আঁকত।

মাদ্রাসা আল হিকমাত থেকে পাশ করে গাইডের কাজ নিল জিব্রান। ইতিহাস টানছিল। সিরিয়া লেবাননের ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে ঘুরে দেখল। আমেরিকায় ফিরতে ইচ্ছে হল না। মারোনাইট কি যেন? এক মার্কিন ট্যুরিস্ট প্রশ্ন করল।

জিব্রান বলে,Maron is said to have died in the year 410 but some date his death later, in 423. It would seem that after his death, possibly to avoid persecution from the Monophysites, the disciples of St. Maroun relocated south, following the Orontes upstream towards Lebanon taking St. Maroun's body with them. A Maronite monastery called Beth-Maroun, was then built near Saint Maroun's tomb and Theodoret described the profound devotion which the monks of the monastery Beth-Maroun had to their departed spiritual father Maroun. The monastery became the nucleus of a community where men and women, under the guidance of the monks, could find material and spiritual happiness. ট্যুরিস্ট দলের সঙ্গে হোটেলেই শুত জিব্রান। একরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়মড় করে জেগে উঠল। মারিয়ানা বলছে, দেখ, পবিত্র সিডর বনের ওপর আকাশ থেকে রক্ত ঝরছে। কাদিসা উপত্যকা ভরে গেছে শ্বেত তরল পারদে। দেখ বাবা কেমন ছটফট করছে।

পরদিনই আমেরিকার উদ্দেশে জাহাজে উঠল জিব্রান। ৬ ১৯০২। আমেরিকায় ফিরে এল জিব্রান। না। সব ঠিকই আছে।

আসলে আমি দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম। সে বছরই একে একে মারা গেল সুলতানা, পিটার ও মা। সুলতানা মারা গেল যক্ষায়। মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। সৎ ভাই পিটারের মৃত্যুও হয়েছিল আকস্মিক।

মারিয়ানা ও জিব্রানের মাথার ওপর আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সেলাইয়ের কাজ করত মারিয়ানা। ওর আয়েই ভাইবোন কোনওমতে টিকে গেল। আরব সঙ্গীত নিয়ে “আল মুসিকা” লেখা শুরু করেছিল। শেষ করতে ইচ্ছে হল না।

৭ ফ্রেড-এর সঙ্গে আবার যোগাযোগ হল। ফ্রেড-এর কাছে কবিসাহিত্যিকরা ভিড় করত। ওখানেই একুশ বছরের জিব্রানকে দেখে চমকে উঠল জোসেফিন । জোসেফিন একজন কবি। নার্ভাস।

জিব্রানকে ফাঁকা অ্যাপার্টমেন্টে নিয়ে যেতে সাহস হয়নি। তালু ঘেমে যেত। দূর থেকে ভালোবাসত। একা একা কামনা করত। পরের বছর, অর্থাৎ ১৯০৩, ভালোবাসাসরুপ জিব্রানের একটি চিত্র প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেয় জোসেফিন ।

বস্টনের ওয়েলেসলি কলেজে হল প্রদর্শনীটি। প্রদর্শনীতে আগত দর্শকবৃন্দ জিব্রানের ক্যানভাসে বিশারি গ্রামের অতীন্দ্রিয়তা দেখে মুগ্ধ । তারা একবার জিব্রানের হাত ছুঁতে চাইল। আপনি অতীন্দ্রিয়কে ছুঁয়েছেন। আপনার মগ্ন চৈতন্যে শিস।

আপনার আত্মা পবিত্র সিডর বনের রহস্যকে ধারন করে আছে। জিব্রানের চোখে জল। তার মায়ের কথা ভাইয়ের কথা সুলতানার কথা মনে পড়ল। জিব্রানের পরের চিত্রপ্রদর্শনীটি হল ১৯০৪ সালে। স্থান: ফ্রেড হল্যান্ড ডের স্টুডিও।

সে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন এলিজাবেথ হাসকেল। জিব্রানকে দেখে চমকে উঠলেন হাসকেল। ৮ না। এলিজাবেথ হাসকেল কবি ছিলেন না। ছিলেন স্কুল টিচার, গরিব শিল্পীদের সাহায্য করতেন।

বয়েসে এলিজাবেথ জিব্রানের চেয়ে ছিল ১০ বছরের বড় । টলটলে লেবানিজ তরুণকে দেখে অকৃষ্ট হলেন এলিজাবেথ। তখনও বিয়ে করেননি এলিজাবেথ। একা থাকতেন একটা অ্যাপার্টমেন্টে। একসঙ্গে ইংরেজি সাহিত্য পড়ার কথা বলে জিব্রানকে ডেকে নিয়ে গেলেন।

। জন ডান পড়তে পড়তে এলিজাবেথ বললেন, তুমি মারোনাইট। আচ্ছা ওদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী যেন? জিব্রান বলল, Early Christianity in the region focused in and around the city of Antioch(বর্তমান তুরস্ক). The conversion of Antioch was carried out by the disciples of Jesus and the faith of its inhabitants was further strengthened by the work of the apostles Paul and Barnabas. The church of Antioch itself was founded by Saint Peter who was bishop there before moving on to Rome, and it was in this church where the disciples of Jesus were first called Christians. Along with Alexandria in Egypt and Constantinople, Antioch was one of the most important spiritual centers of the east. It outranked the others in biblical scholarship. Two factors, however, led to the gradual decay of the church of Antioch: its political position as a buffer state between the Byzantine Empire and its antagonistic powers; and its ecclesiastical division by schisms and heresies.Branches of the original ethnic branches of the Apostolic Churches. Click to view a large version.One of the most serious divisions of the early church was a result of a conflict over the nature of the divinity and humanity of Christ himself. It was maintained by the Monophysites that in the person of Christ there was but one nature which was primarily divine but had human attributes. A second school of thought held that in Christ there was both a divine nature and a human nature and that these were perfectly united. A certain priest probably wishing not be distracted divisions of the early church retreated to the wilderness of the mountains not far from Antioch where he could completely dedicate himself to God. This hermit's name was Maroun in Syriac and Maron in Greek. Saint Maroun found however, that his true vocation lay in the preaching of the word of God and he began to attract people from far and near who were drawn by his godliness and wisdom and who desired to live under his spiritual guidance. As his disciples increased in number, they began to be called Maronites after their teacher. The earliest known source of 'Maron the monk' who 'planted the garden of ascetic life' in the region was by the powerful patriarch of Constantinople, John Chrysostom who solicited St. Maroun's prayer and news was in an epistle in the year 404. Our principal historical source on the life of Maroun is Theodoret, Bishop of Cyrr, who wrote, some thirty years later the Religious History of Syriac Asceticism. Theodoret tells us that the mountain Maron chose for his retreat had been sacred to pagans and that he converted a pagan temple that he found there into a church which he dedicated to 'the true God'. In his description of the beginning of Maroun's life, Theodoret states that Maroun had 'already increased the number of saints in heaven' and that St. Maroun 'cured not only infirmities of the body, but applied suitable treatment to soul as well, healing this man's greed and that man's anger, to this man supplying teaching in self-control and to that providing lessons in justice, correcting this man's intemperance and shaking up another man's sloth'. If it were not for these references, the only indication of the saint's existence would be the oral tradition of the Maronite community itself.Maron is said to have died in the year 410 but some date his death later, in 423. It would seem that after his death, possibly to avoid persecution from the Monophysites, the disciples of St. Maroun relocated south, following the Orontes upstream towards Lebanon taking St. Maroun's body with them. A Maronite monastery called Beth-Maroun, was then built near Saint Maroun's tomb and Theodoret described the profound devotion which the monks of the monastery Beth-Maroun had to their departed spiritual father Maroun. The monastery became the nucleus of a community where men and women, under the guidance of the monks, could find material and spiritual happiness. ওরে বাবা। এত কিছু বলে এলিজাবেথ ঝুঁকে চুমু খেলেন জিব্রানের কপালে। কবি কেঁপে ওঠে।

১৯০৫ সাল। আরব সঙ্গীত নিয়ে “আল মুসিকা” লিখে শেষ করলেন। পাশে থাকলেন এলিজাবেথ। তার প্রেম। তার নগ্ন শরীর।

৯ হাসকেল ও বস্টনের সাহিত্য জগৎ ধীরে ধীরে জিব্রানের অতীন্দ্রিয় মনের ওপর তৈরি করছিল আধুনিকতার স্তর। ইউরোপের রোমানটিক কবিগন, উইলিয়াম ব্লেক ও নিৎসে কী ভাবতেন-পরম বিস্ময়ে সে সবই জানল জিব্রান। দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায় তার। লেখায় সে পরিবর্তনের চিহ্ণ ফুটল। লেবাননে অটোমান শাসন ও মারোনাইট গীর্জার অপপ্রভাব সমালোচনা করা শুরু করল।

১৯০৮। “বিদ্রোহী আত্মা” প্রকাশ করল। বইটি আরবি ভাষায় লেখা। এর পর পরই আরব বিশ্বে তাকে এক মহত্তম সংস্কারকের সম্মান দিল। Gibran believed that if a sensible way of living and thinking could be found, people would have mastery over their lives. "The human heart cries out for help; the human soul implores us for deliverance; but we do not heed their cries, for we neither hear nor understand. But the man who hears and understands we call mad, and flee from him." ১০ এলিজাবেথ হাসকেল চাইছিল জিব্রান প্যারিস যাক।

নিৎসে প্যারিসকে বলতেন, শিল্পীদের একমাত্র ঘর। আর, জিব্রান প্যারিস যাবে না? ১৯০৮; প্যারিস গেলেন জিব্রান। এলিজাবেথ হাসকেলই সব ব্যবস্থা করে দিলেন। ভাস্কর অঁগাস্ত রোদিন কাছে শিখলেন পাথর ভাঙার কলাকৌশল। প্যারিসের অ্যাকাডেমি অভ ফাইন আর্টস-এ ছিলেন দু’বছর।

প্যারিসে মদ ধরলেন জিব্রান। হতাশা ছেঁকে ধরছিল। কী হবে শিল্প করে? পাথর ভেঙ্গে মূর্তি গড়ে? কী লাভ কবিতা লিখে? জীবন অর্থহীন ঠেকত। একে আরব, তার ওপর খ্রিস্টান মারোনাইট। ইউরোপে বড় বেখাপ্পা লাগত।

ফরাসী এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হল। মারি। বড় বন্য মারি। ভাস্কর। ওর অ্যাপার্টমেন্টে বুরো উৎসব হত।

আর মদ গেলা। অন্যান্যও নেশাও। তখন বোঝেনি জিব্রান, এই আবেসাৎ মদ ও নানাবিধ উদ্ভিদ লিভার সিরোসিস ও যক্ষার দিকে তাকে টেনে নিয়ে যাবে। জিব্রানের প্যারিসের অ্যার্পামেন্টে সেই কিথারাটি ছিল। মারি এক ঢোঁক আবেসাৎ গিলে ওটা দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করল, এটা কি গো? জিব্রান বিরবির করে বলল।

বালক ঘুরে ঘুরে দেখে ফাম আল মিলযাব নামে একটা পাহাড়। পবিত্র সিডার গাছের বন। কাদিসা উপত্যকা। মার সারকিস চ্যাপলটা বিশারি গ্রামের কাজেই। জলপাই গাছে ঘেরা।

সে চ্যাপেলের সাধু ছিলেন ভারি সঙ্গীতভক্ত। তিনি বালক জিব্রানকে হাতেখড়ি দিলেন অর্গানে। কত কথা যে বললেন সঙ্গীত নিয়ে। বিশেষ করে আরব সঙ্গীত নিয়ে। মারির এক বন্ধু একদিন মদের ঝোঁকে কিথারাটি তুলে মেঝেতে আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলল।

না। অবাক হয়নি জিব্রান। বরং হেসেছিল। ঈশ্বর তো এরুপ ঝোঁকেই এই অসংলগ্ন জগৎ তৈরি করেছিল। প্যারিসে বসে এলিজাবেথকে চিঠি লিখত জিব্রান ।

কামগন্ধী সব চিঠি। তোমার অর্ন্তবাসের গন্ধ এই প্রবাসে উঁকি দেয় নোনাফলের মতন এলি ... তুমি এক তস্যগলি বড় মাংশল উষ্ণ নোনাফল তোমার অর্ন্তবাসের গন্ধ এই প্রবাসে ঢুকে পড়ে লোভার্ত বিড়ালের মতন ( মৃত্যুর পর জিব্রান তাঁর স্টুডিওটি এলিজাবেথ হাসকেলকে দান করে গিয়েছিলেন। ওটার দায়িত্ব বুঝে নেবার পর স্টুডিওর ভিতর অনেক চিঠি পান এলিজাবেথ। ২৩ বছর ধরে লেখা চিঠি। স্বামীর কথা ভেবে প্রথমে চিঠিগুলি পুড়িয়ে ফেলবেন ভাবলেন।

১৯২৩ সালে জ্যাকব নামে একজনকে বিয়ে করে জর্জিয়া চলে গিসলেন এলিজাবেথ। যাক। চিঠিগুলোর সাহিত্যমূল ও ঐতিহাসিকতা বিবেচনা করে চিঠিগুলি আর পুড়িয়ে ফেলেননি এলিজাবেথ। ১৯৬৪ সালে এলিজাবেথ মারা যান। মৃত্যুর আগে নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে দুপক্ষের চিঠিগুলিই দান করে যান।

) ১১ ফ্রান্স থেকে আমেরিকায় ফিরলেন জিব্রান। ২ বছর ৪ মাস পর। লিখছেন আর লিখছেন। আরবি ভাষায় “ভাঙ্গা ডানা” প্রকাশিত হল। নিউইয়র্কের সিরিয়ান- লেবানিজ সম্প্রদায়ে উঠল তুমুল আলোরন ।

জিব্রানকে বলা হল “মজহার” মানে অভিবাসী বা কবি । লিখলেন- How can you sing if your mouth be filled with food? How shall your hand be raised in blessing if it is filled with gold? ইংরেজিতে লেখার ইচ্ছে ছিল। লিখলেন। “উন্মাদ”; ১৯১৮ সালে। ইংরেজিতে লেখা।

প্রসঙ্গ: ঈশ্বর মুক্তি ন্যায়বিচার। উন্মাদ বইটার লিঙ্ক। Click This Link উপস্থাপনায় রীতিতে আলোরণ উঠল ইংরেজীভাষী পাঠক সমাজে। জিব্রানের একটি আদৃত কবিতা হল “মিছিল। ” ১৯১৯ সালের লেখা যে কবিতার মাধ্যমে নতুন জীবন দান করলেন আরবি কবিতায়।

আরব কবিতায় ফুটে উঠল রোমানটিসিজম। আরব সাহিত্যজগতে প্রতিষ্ঠিত হল জিবরানবাদ। কবিদের কেউই জিবরানবাদ এড়াতে পারত না। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল, “বালি ও ফেনা। ” বললেন-Faith is an oasis in the heart which will never be reached by the caravan of thinking. ১৯২৩ সালের অক্টোবর মাসে বেরুল প্রোফেট ।

এ বইয়ের আবেদন এখনও অসমান্য। The slim volume of parables, illustrated with Gibran's drawings, is one of America's all-time best selling books; its fame spreads by word of mouth. Critics call it overly sentimental. By 1986, however, almost eight million copies - all hard-bound editions - had been sold in the United States alone. Several of his other works enjoyed substantial sales. Gibran bequeathed his royalties to Besharri; ironically, the gift caused years of feuding among village families. Gibran's views on the brotherhood of man and man's unity with nature appeal primarily to young and old readers. The parables present a refreshing, new way of looking at the world that has universal appeal. By 1931 The Prophet had been translated into 20 languages. In the 1960s it reached new heights of popularity with American college students. প্রফেট বইটার লিঙ্ক- http://www.bookrags.com/The_Prophet_(book)?gclid=CN-G1N7sjJcCFYsh3godpg2nDA প্রফেট লেখার সময় বাহাই ধর্মের পথিকৃৎ বাহাউল্লার জ্যেষ্ট পুত্র আবদুল বাহার কথায় মাথায় রেখেছিলেন জিব্রান। বাহাউল্লার মৃত্যুর পর তিনিই বাহাই স¤প্রদায়ের হাল ধরেছিলেন। ১২ ১৯৩১। বয়স ৪৮।

বুকে তীব্র ব্যথা। নিউইয়র্কের সেন্ট ভিনসেন্ট হাসপাতালে ভাইকে ভরতি করে দিল মারিয়ানা। জর্জিয়া থেকে ছুটে এল এলিজাবেথ। ডাক্তার বললেন, লিভার সিরোসিস। আর একটা লাং-এ যক্ষা।

জিব্রান দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন। মা আর সুলতানা তো ঐ রোগেই মরল। মারিয়ানার মুখ কালো। জিব্রান মারিয়ানাকে বলল, বিশারি গ্রামের মার সারকিস চ্যাপেলের কাছে আমার কবর দিস। সেই যে জলপাই গাছে ঘেরা।

মারিয়ানা ফুঁপিয়ে উঠল। এলিজাবেথ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল। ভোরবেলা মারা গেলেন জিব্রান। ১৩ জলপাই গাছে ঘেরা মার সারকিস চ্যাপেলের কাছে কবরের জায়গা কেনা হয়েছিল এলিজাবেথ ও মারিয়ানার টাকায়।

জিব্রান একবার লিখেছিলেন- "When the souls rise in the light of their joy, my soul ascends glorified by the dark of grief. I am like you, Night! And when my morn comes, then my time will end." তথ্যসূত্র: Click This Link

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.