আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূতুড়ে চিঠি!

আমার খুব কষ্ট হয়, যখন RAJAKAR বানানটা বাংলা বর্ণমালায় লিখা হয়। এটা বর্ণমালার জন্য অপমান।

পঁচা ভূত ভাইয়া, কেমন আছেন? চিনতে পেরেছেন? নাকি ভ্রূ কুঁচকে ভাবছেন, কে না কে? সে যাই হোক, পরিচয় এতো সহজে দিচ্ছিনা। আপনি খুঁজে বের করবেন। আপনাকে একটা গল্প বলব; তার আগে বলুন, চিঠির ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা? পরীক্ষার খাতার বাইরে লেখা এটাই আমাদের প্রথম চিঠি।

কি, 'আমাদের' শব্দটা দেখে আরো ধাঁধাঁয় পড়ে গেলেন? হ্যাঁ, আমরা দু'জন মিলে লিখছি চিঠিটা, এমনকি হাতের লেখাও দুজনের। অবশ্য, আমাদের হাতের লেখায় এত মিল, যে নিজেরাই মাঝে মাঝে বিভ্রান্ত হয়ে যাই, আপনি বুঝবেন কিভাবে? আচ্ছা, এবার গল্পটা শুনুন- এক ভূতুড়ে দেশে দু'টি ছোট্ট ভূত বাস করতো। লালভূত এবং নীলভূত। ওরা ছোট্টবেলা থেকেই খুব দুষ্ট ছিল। সুযোগ পেলেই বায়না ধরতো-ভূতের গল্প শুনবে।

ওরা একটা ভূতুড়ে সংগীত বিদ্যালয়ে যাতায়াত করতো। সেই বিদ্যালয়ে ছিল আরেক পঁচাভূত। সেই পঁচাভূত তাদেরকে অনেক ভূতের গল্প শোনাত। এমন কত সন্ধ্যা গেছে, যে ছোট্ট ভূত দু'টি, গল্প শুনতে শুনতে পঁচাভূতের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে! সব ভালো সময়ের সমাপ্তিটাও যেন খুব দ্রুত হয়। নইলে, এখানে কলেজ থাকতে পঁচাভূতটাকে কেনইবা ঢাকায় যেতে হবে পড়তে, আর কেনইবা ছোট্ট ভূত দুজনের বাবা হঠাৎ বদলি হয়ে যাবেন অন্য এক অচেনা শহরে! পঁচাভূতটাকে জানানোও হলনা কোথায় যাচ্ছি।

আর কি এক অজানা অভিমানে, পঁচাভূতের ঠিকানা থাকা সত্ত্বেও আর চিঠি লিখেনি লালভূত-নীলভূত। কুয়াশার উপর রোদ পড়লে যেমন ধীরে ধীরে কুয়াশা সরে যায়, তেমনি তাদের ভূতুড়ে সম্পর্কটাও যেন নেই হয়ে গেল। সময় কাটতে লাগল। এখনো কাটছে...। ভাইয়া, এতক্ষণে নিশ্চয়ই চিনে ফেলেছেন আমাদের! আপনার সিলেটের ঠিকানা যোগাড় করতে বিরাট হ্যাপা সামলাতে হয়েছে আমাদের।

দু'জনে মিলে, একাই চলে গিয়েছিলাম আপনাদের বাসায়। জানি, মাঝখানে কত বছর গিয়েছে, তা আপনার মনে নেই। এজন্যই আপনার জন্য একটা ধাঁধাঁ- 'বলুনতো, আমরা কে কোন ক্লাসে পড়ি?' কি, বিপদে পড়লেন? নিচে ঠিকানা দেয়া আছে। চাইলে চিঠিতে উত্তর দিতে পারেন, কিংবা নিজেও চলে আসতে পারেন। আজকের পর থেকে আমরা কিন্তু পথ চেয়ে থাকব! সে হোক চিঠি, কিংবা আপনি।

ভালো থাকবেন। আর আমাদের জন্য, নচিকেতার 'যখন সময় থমকে দাঁড়ায়' গানটা লিখে নিয়ে আসবেন। ইতি, লালভূত, নীলভূত। ২৭/০৪/২০০২ চিঠিটা হাতে নিয়ে স্থানুর মত বসে আছি। এক ঠায় তাকিয়ে আছি আমার ৫তলা ঘরের জানালার সামনে দুলতে থাকা সুপারি গাছটার দিকে।

চোখের সামনে ভেসে উঠছে ছোট ছোট দুটি মুখ। ওরা দুই বোন। পিঠাপিঠি। ছোট্ট দুটি মেয়ের, রাজকন্যার দুঃখে দুঃখী দুঃখী মুখ, কিংবা ভূতের ভয়ে চিৎকার করে ওঠা; কখনো বা রাজপুত্রের জয়ে বিজয়ীর হাসি, কখনো বোতলভূতের দুষ্টামিতে হেসে কুটিকুটি...। মাঝখানে কত বছর চলে গেছে, আমি খুঁজে পাচ্ছিনা।

ওদের ধাঁধাঁর উত্তরটা আমার অজানা। আমি ভাবছি...ভাবছি...ভাবছি... হঠাৎ চোখের সামনের সুপারি গাছটাকে আমার মনে হতে লাগল ফুলদানি। আমার ঘরটাকে মনে হল যেন, ছোট্ট দুটি ভূতের সেই শৈশবের ঘরটা। আমার চোখে ঘোর লেগে গেল। দিশেহারা আমি কি করব খুঁজে পাচ্ছিলামনা।

মাথার ভেতর ভাঙ্গা রেকর্ডের মত বাজছিল, একটি প্রশ্নঃ মাঝখানে কত বছর গিয়েছে, তা আপনার মনে নেই। এজন্যই আপনার জন্য একটা ধাঁধাঁ- 'বলুনতো, আমরা কে কোন ক্লাসে পড়ি?' আমি ঘরের ভেতর ছোটাছুটি করতে লাগলাম...। কিছুক্ষণ পরঃ আমার কাঁধে ন্যাপস্যাক বাঁধা। আমি সিলেট রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে আছি ট্রেনের অপেক্ষায়। ট্রেন আসতে ঢের দেরি।

এখনো চার ঘন্টা। তাতে কি? চার ঘন্টা যত বেশি সময়, তারচে' অনেক বেশি সময় নিয়ে অপেক্ষা করে আছে ছোট্ট দুটি মেয়ে। বৃষ্টি হচ্ছে খুব। আমি স্টেশন থেকে কেনা পুরনো পত্রিকা গুলো প্লাটফর্মে বিছিয়ে বসে পড়লাম। আর মাত্র এক ট্রেন বাদেই যে দেখা হচ্ছে আমাদের!


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।