আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার প্রীয় মানুষেরা, আমায় ক্ষমা কর....

আশা নাই তাই মশারির ভেতর মশা ও নাই।

রক্ত টগবগ করে একসময়। এবং তা একবারের জন্যই। স্বপ্ন গুলো মিশে থাকে সেই টগবগে রক্তে। চোখের গভিরে জয় ছিনিয়ে আনার আগুন জ্বলে দাউ দাউ করে।

জ্বল গড়িয়ে পড়লে তা লাভা হয়। নাম না জানা কত নেশা আচ্ছন্ন করে রাখে তাজা মস্তিষ্ক। বানের জ্বলের মত ছুটে চলা মোহনায়। যেন ধংস করে দেব সব। আবার সেই স্রোত থেকে সৃষ্ঠি হবে অলিক... আমার এলাকায় ঘুরে এলাম কিছুদিন আগে।

আমার বাবা যেখানে বড় হয়েছেন সেই শহরতলি এলাকা। দেখা হয়ে গেল অনেক পুরোনো মানুষের সাথে। মসজিদে এক চাচার জানাজার নামাজের পর একে একে বেরিয়ে আসলেন তারা। কুশল জিগ্গাসা.... হঠাৎ বুক টা আঁতকে উঠলো। বড্ড বুড়ো হয়ে গেছেন সবাই।

এদের অনেক কে আমি চাচা অথবা দাদু বলে ডাকতাম। বলিষ্ঠ ভাবে একসময় ঘুরে বেরিয়েছেন এলাকা। সন্ধায় চা এর দোকানে আড্ডা দিতে দেখেছি অনেক। জোরাল কন্ঠস্বরে গর্জে উঠতেন প্রায়ই। যার পা এর গুছো ছিল পেয়ারা গাছের কান্ডের মত শক্ত।

আজ তার হাতে লাঠি দেখে ভালো লাগে না একটুও। আমার মন টা যেন কেমন করে উঠলো। একে একে দেখতে থাকলাম, সবার একই অবস্থা। এক দাদু বেরিয়ে আসলেন। যিনি বেশ রসিক এবং স্মার্ট ছিলেন সব সময়।

তার কথায় না হেসে পারত না কেউ। ধীরে ধীরে তিনি আমার দিকে এগিয়ে এলেন। তার চোখে রাজ্ঝের শুন্যতা। এমন তাকে দেখিনি কখনও, শুন্যতা কে সমর্থন করে বেরিয়ে এল কয়েক ফোটা চোখের জ্বল। "কেমন আছিস দাদু।

আমাকে ক্ষমা করে দিস"....তার গলা কেঁপে উঠল। যে মানুষ টি তার রস দিয়ে স্বর যন্ত্রের মাধ্যমে মাতিয়ে রাখত সবাই কে, সে এখন অনেক নিচু স্বরে কথা বলে। জোরে কথা বলতে তার কষ্ট হয়। একবার ব্রেইন স্ট্রোক করেছে। তার ধারণা বেশিদিন বাঁচবেন না।

কাঁদছেন আর ক্ষমা চেয়ে বেড়াচ্ছেন সবার কাছ থেকে। এত নিস্ঠুর হয় সময়? নতুন করেই যেন খেয়াল হল আমার বাবার দিকে। আশ্চর্য। এই মানুষটাও চোখের সামনে বুড়িয়ে গেল। আগের সেই গর্বে ভরা বুকের পেশি কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে।

এই বুকের উপর উঠে ছোট বেলা কত খেলেছি। আমার বাবা বেশিদুর এখন একা একা হাটতে পারেন না। অথচ এই মানুষটি এক সময় হেটে বেরিয়েছেন মাইল এর পর মাইল। বাবার পা দুটো কেমন শুকিয়ে গেছে। আর একে একে তার তার ভাই, চাচা দের হারিয়ে যাওয়া দেখে তিনি কেমন জানি মুসড়ে পড়েছেন।

আমার মনে এক ঘন্টাধ্বনী শুনতে পাই আজকাল। পুরো একটা প্রজন্ম যেন বিদায় জানাতে চাচ্ছে। আমাদের এই প্রীয় মানুষ গুলো, যারা জীবন কে এক সময় নাচিয়েছে আংগুলের ডগায়, এখন জীবন যেন তাদের কে করুণার কোরিডোরে রেখেছে। টগবগে রক্ত শান্ত হয়ে যায় একসময়। সময় কালে দেখা স্বপ্নগুলো ঝাপসা হতে হতে বিকেলের রোদে হারিয়ে যায়।

চোখের ভিতরের সেই আগুন একসময় নিজেকেই পোড়াতে থাকে,। বিষন্ন বিকেলে হিসেব মেলানো যায় না। বড় অস্থির লাগে তখন। সময় আসলেই বড় নিষ্ঠুর। আমার প্রীয় মানুষেরা- আমি যানি আমার হাতে লাঠি আসতে খুব একটা দেরি নেই।

কি হবে এই সব বিষাক্ততায় গা ভাসিয়ে? এই ত সেদিন তোমরা ছিলে আমারই মত। টগবগে রক্তের পুরুষ। আজ বলি, আমাকে তোমরা ক্ষমা কর। আমি যেন তোমাদের মধ্যে আমারই ছায়া দেখতে পাই।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।