আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের সামনে আর কি কি আছে?

থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি।

আমাদের সামনে আর কি কি আছে? আমাদের দেশে জনসাধারনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যাঁরা সংসদে যান, তাদের খায়েশ মেটাবার জন্যে উচ্চপর্যায়ে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে তারা একাট্টা হয়ে ভোট দেন করমুক্ত গাড়ি আমাদানীর বিলে, নিজেদের বেতনভাতা বাড়াবার বিলে, উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হবার বিলে, পৌরসভার উপদেষ্টা হবার জন্যে। বলা যায় না, সে দিন হয়তো সমাগত যে মেয়রদের উপদেষ্টাও তাঁরা হতে চাইবেন। ক্ষমতা এটাই।

তাই তো একজন ইয়াজউদ্দিন আফসোস করে বলতে পারেন যে "আগে যেমন ছিলাম, এখন কেমন যেন খালি খালি লাগে। " মাত্র কয়েকদিনের সর্বময়ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তি যদি অল্প কয়েকদিনের ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে বলেন যে ক্ষমতাবিহীন অবস্থায় 'কেমন খালি খালি লাগে', তা হলে যাঁরা ক্ষমতা ব্যবহার করে অভ্যস্থ, তাদের কাছে পাঁচ বছরের অপেক্ষা কেমন কঠিন, তা সহজেই অনুমেয়। আর তাই কোন বিরোধীদলই আমাদের নির্বাচিত সরকারগুলোকে শান্তিমত মেয়াদ শেষ করতে দেয় না। কেউ কেউ বলে বসেন যে 'সরকারকে এক মূহুর্তও শান্তিতে থাকতে দেয়া হবে না। ' আবার কেউ কেউ নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করার মানসিকতায় বলেন হয় 'ভোটচুরি হয়েছে,' কিংবা 'ভোট ডাকাতি হয়েছে', অথবা 'সূক্ষ কারচুপি' বা 'স্থূল কারচুপি'-র নির্বাচন এবং অতি সা¤প্রতিক কালে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে 'ডিজিটাল কারচুপি'।

আগামীতে আমাদের জন্যে কি কি অপেক্ষা করে আছে? আমাদের ভাগ্যাকাশে আর কি কি দুর্ভোগ আছে? আমরা জানি না ঠিক মত কোন কিছুই। তাই তো ভয় লাগে। আমাদের দেশে যেভাবে ভোটাভুটি হয়, তাতে 'জোর যার মূলুক তার' জাতীয় একটা ঘটনা ঘটে। যার জন্যে কোন কোন নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায় যে দুটি পাশাপাশি উপজেলা নিয়ে যে নির্বাচনী জনপদ, তাতে একটি উপজেলার বাসিন্দারাই জিতে যান কেবল তার এলাকার জনসংখ্যা বেশি হবার কারনে। ফলে নির্বাচিত হয়ে তারা ভাবতেই পারেন তাঁকে তাঁর এলাকার লেকাজনই ভোট দিয়েছে।

তাই অন্য এলাকার প্রতি খেয়াল না করলেও চলবে। অনেক সময়ে অপর এলাকা থেকে যিনি ভোটে দাঁড়ান, খালি এলাকার দোষে দুষ্ট হয়ে তিনি ভোটে হেরে যান। বিস্তারিত উদাহরন না দিলেও যারা নির্বাচন এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহগুলোর দিকে নজর রেখেছেন, তারা ভাল করেই তা জানেন। আমাদের নির্বাচন কমিশন কোন কালেই আমাদের নেতাদের মনোমত কোন কাজ করতে পারে না। নির্বাচন কমিশনকে সবসময়ে প্রশ্নবিদ্ধ করাটাই রাজনীতিকদের কাজ।

আমরা তাই নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথাই খালি শুনি, কিন্তু নিরপেক্ষ নির্বাচন আমাদের দেশে কোনদিন হয় নি, আর বর্তমান পদ্ধতি চালু থাকলে কোনদিন হবেও না। সা¤প্রতিককালের উপজেলা নির্বাচনই এটার একটা উদাহরন। এটা ঠিক যে বিগত কয়েক বছরের জাতীয় নির্বাচনগুলো অবাধ হয়েছে। নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের আরো সচেতন হবার সময় এসেছে। এর পাশাপাশি আমাদের সামনে আরেক পরীক্ষা উপস্থিত হয়েছে।

আমাদের বর্তমান সংবিধানের এক জটিল প্রশ্ন এখন হাইকোর্ট - সুপ্রিম কোর্টেও আঙ্গিনায় পড়ে আছে। এটা নিয়ে একটা বাড়াবাড়ি হবে তা বলাই বাহুল্য। বর্তমান সংসদে ক্ষমতাসীনদের সংবিধান সংশোধনের নিরংকুশ ক্ষমতা আছে। সেটা ব্যবহার করে তারা অতি সহজেই মূল সংবিধানে, অর্থাৎ ১৯৭২-এর সংবিধানে, ফেরৎ যেতে পারেন। তা হলে কেন সরকার হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল আর সরকারী উকিলদের দিয়ে বাঁদর নাচ নাচাচ্ছে? এটা এ জন্যে কি যাতে নিজেদের ঘাড়ে কোন দায়দেনা না আসে, এবং কোন প্রশ্ন উঠলে যেন কোর্টকে "নিঃশংক চিত্তে" দেখিয়ে দেয়া যায়।

আর যদি তাই হয়, তাহলে ব্যারিস্টার শফিক হবেন তার পূর্বসূরি ব্যারিস্টারের চেয়েও বেশি মাত্রার জ্ঞানপাপী, এবং তার থেকেও বেশি মাত্রার 'সংবিধান নষ্ট করার দোষে' দুষ্ট। ইতোমধ্যে সংবিধানের শুরুতে যে 'বিসমিল্লাহ-হির রাহমানির রাহিম' আছে, তা পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়ে গেলে উঠে যাবে না জাতীয় ভুল ব্যাখা দিয়ে, এবং পরবর্তী দায়-দোষ সবটাই কোর্টের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে, সরকার পার পাবার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন। তার মানে তো সরকার ইসলামপন্থীদের এখন ভয় পাচ্ছে। হাইকোর্ট তো বলেই দিয়েছে পঞ্চম সংশোধনীর মাত্র কয়েকটা ধারা এবং অন্যান্য কিছু প্রয়োজনীয় ধারা যা দেশের শাসনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্যে দরকার ছিল, সেগুলো ছাড়া বাদবাকি সবই বাতিল হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবেই দেশে চতুর্থ সংশোধনী বহাল হবে।

আর তার ইমিডিয়েট ইফেক্টে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাহীন হয়ে যাবেন। অর্থাৎ দ্বাদশ সংশোধনীর পাশাপাশি চতুর্থ সংশোধনীও চালু হয়ে যাবে। ভাগ্য ভাল যে জিল্লুর রহমান ক্ষমতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করবেন না, এবং এক সময়ে তার নাম ছিল তৈলুর রহমান, তাই হয়তো বর্তমান প্রেসিডেন্ট চতুর্থ সংশোধনীর নিয়ম মানতে খুব একটা আগ্রহী হবেন না। উপরন্তু তাঁর শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না ইদানিং। এত ভার সইবার অবস্থায় তিনি নেই।

তারপরও মানুষ তো তিনি, বলা তো যায় না কখন কি হয়ে যায়! কিন্তু চিকিৎসক বি. চৌধুরীর মত ত্যাঁদোর প্রেসিডেন্ট থাকলে তো তিনি হাইকোর্টের রায় দেশের অনুগত নাগরিক হিসাবে কোন প্রশ্ন না তুলে প্রফুল্লচিত্তে মেনে নিতেন। তা হলে কি হতো? দুই একটা উদাহরন দেয়া যেতে পারে। সংসদ প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করতো, আর প্রেসিডেন্ট সংসদ ভেঙ্গে দিতেন। একদিকে সর্বময় ক্ষমতার প্রেসিডেন্ট যার ক্ষমতার উৎস চতুর্থ সংশোধনী, আর অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী এবং সব সংসদ সদস্যগণ যাদের ক্ষমতার উৎস দ্বাদশ সংশোধনী। বাঁদর নাচ আর কাহাকে বলিব? সেনাবাহিনী তখন কোন দিকে যাবে? দেশের আভ্যন্তরিন শৃংখলা এবং শান্তি বজায় রাখতে প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রাইমমিনিস্টার [যার পক্ষে তখন সেনাবাহিনী থাকবে না] যদি ভারতকে সাহায্য করতে বলেন, তা হলে তো ভারতীয় সামরিক বাহিনী আমাদের দেশে ঢুকে পড়বে।

ভারত তো আসলে তেমন একটা উছিলাই খুঁজছে। এমন ঘটনা আমাদের আশেপাশের দেশগুলোতে ঘটেছে। আমরা তাই সিঁদুরে মেঘ দেখেই বেশ ভয় পাচ্ছি। আমাদের পাসপোর্টে লেখা জাতীয় পরিচয় 'বাংলাদেশি' বদলে তা হতে হবে 'বাঙ্গালী'। একজন বাঙ্গালী এসে এখন যদি বলেন 'আমাকে পাসপোর্ট দাও, আমি বাংলায় কথা বলি', তখন তো সরকারকে পাসপোর্ট দিতে হবে।

তা সে যে দেশ থেকেই আসুক না কেন? তার সবচেয়ে বড় কথা 'আমি তো বাঙ্গালী, আমি বাংলায় কথা বলি। ' আর বাংলাদেশে যে সব উপজাতি এবং ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠির লোকজন আছেন, পঞ্চম সংশোধরী রদ হলে একলহমায় তারা উপজাতি এবং ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিতে পরিনত হবেন। ভেবে দেখা দরকার সরকার কি উপজাতি এবং ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠিদের জন্যে তফশিলী জাতি গোষ্ঠির সেই ঔপনিবেশিক আমলে প্রচলিত তত্ত্বের গর্ভে নিজেকে সঁপে দেবার একটা বিলাসিতা করছে কি না? এই তত্ত্বটি ভারতে চালু আছে, এবং মনে করিয়ে দিতে লজ্জা লাগছে, তারপরও বলি, বৃহত্তম গণতন্ত্রের অধিকারী সে দেশে প্রায়শঃ জাতিগত দাঙ্গা হয়ে থাকে। তফশিলী জাতির লোকজন নিজেদের অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টায় মাঝেমধ্যেই তাদের দেশের পার্লামেন্ট ভবনের সামনে যেয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করে থাকে। আমাদের বর্তমান সদাশয় সরকার মনে হয় এমন কিছুই চালু করতে চাচ্ছেন যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে একজন উপজাতি কিংবা ক্ষুদ্র জাতি জাতিগোষ্ঠির সদস্যরা অধিকার আদায়ের জন্যে গায়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করতে পারে।

এতে করে আমাদের 'এক দেশ, এক জাতি, এক ভাষা' এবং তিলে তিলে গড়ে ওঠা আমাদের শান্তিপ্রিয় সহঅবস্থানের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যকে সরিয়ে ভারতের মত একটা বিচ্ছিরি সা¤প্রদায়িকতাপূর্ণ সিস্টেমকে চালু করতে চাচ্ছেন। সেটা কি ভাল হবে? বর্তমানে একটা বাড়ির বরাদ্দ নিয়ে বেশ মাতামাতি হচ্ছে। পেপারে পড়লাম অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর শুনানীতে দীর্ঘ সময় ধরে অনেক 'প্যাচাল' পেড়েছেন আদালত কক্ষে। আদালত এক পর্যায়ে তাঁকে জিগ্যেশ করেছিলেন যে তাঁর কোন আইনি পয়েন্ট আছে কিনা। তাঁর কোন আইনি পয়েন্ট ছিল না! দেশের অ্যাটর্নি জেনারেল উচ্চ আদালতে কোন আইনি পয়েন্ট ছাড়াই দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা যা বললেন তা তো তাঁর দলের যে কোন দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতা কোন মিটিং গিয়ে বললে পাবলিক আরো বেশি "খেতো"।

আর আইনি পয়েন্ট ছাড়া দীর্ঘক্ষন বকবক করাটা কি তাঁর "প্রফেসনাল ইনএক্সপেরিয়েন্স"-এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে না? তাঁর বিপক্ষে যিনি, সেই ভদ্রলোক মাত্র দুই মিনিটে সব বললেন, এবং সবটাই আইনের কথা। তিনি সেখানে চতুর্থ সংশোধনীর কয়েকটা পয়েন্টের কথা বলেছেন। যাতে আছে রাষ্ট্রপতির সর্বময় ক্ষমতার কথা। বাড়ির জন্যে কি এবারে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হবে? সিনেমা হলের জন্যে যদি পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হতে পারে, তা হলে তো বাড়ির জন্যে চতুর্থ সংশোধনী বাতিল হবার কথা। দেখা যাক না কি হয়! আমরা আসলেই কি জানি আমাদের সামনে কি অপেক্ষা করে আছে? না জানে জনগণ, তার থেকেও ভয়ের কথা সরকার নিজেও জানে না সামনে কি অপেক্ষা করছে! ১/৬/২০০৯


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.