আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতে আদিবাসী মাওবাদ বিরোধী অপারেশন গ্রীনহান্ট



ভারতে মাওবাদ বিরোধী অপারেশন গ্রীনহান্ট নেপথ্যে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানীর মুনাফ ভারত পৃথিবীর সর্ব বৃহত গণতান্ত্রিক দেশ। দেশটির উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অবাক করার মত হলেও দেশটিতে পৃথিবীর সব থেকে বেশি মানুষ ক্ষুদা আর দারিদ্রের কারণে আত্মহত্যা করে। ভারতে বড়লোক যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরিব মানুষের সংখ্যা। এরকম প্রেক্ষিতে দেশটিতে সশস্ত্র ধারার কমিউনিস্ট আন্দোলন (মাওবাদী নামে) জোরে সোরে শুরু হয়েছে। মাওবাদী অধ্যাষিত ছয়টি আদিবাসী রাজ্যে মাওবাদীদের দমানোর জন্য ভারত সরকার ‘অপারেশন গ্রীন হান্ট’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভারত সরকার নিজের জনগণের বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছে যুদ্ধ। কিন্তু কেন? মাওবাদীদেরই বা উত্থানের কারণ কি? মাওবাদের প্রেক্ষাপট দুনিয়া কাপানো রুশ বিপ্লবের পরে কমিউনিস্টদের রাষ্ট্র মতা দখলের বড় অর্জন চীন বিপ্লব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান কর্নধর স্টালিনের নেতৃত্বে মিত্র বাহিনী অসম প্রতিরোধ গড়ে তোলে হিটলারের অ শক্তির বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্টালিনের নেতৃত্বের দতার কারণে বিশ্ববাসী হিটলারের ফ্যাসিবাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু স্টালিনের মৃত্যুর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি স্টালিন প্রশ্নে ভিন্ন অবস্থান নেয়।

এ সময় মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রশ্নে সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিস্ট পার্টি ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান’ ও ‘শান্তিপূর্ণ উত্তরণ’ তত্ব হাজির করে। শান্তিপূর্ণ তত্বের মূল বক্তব্য ছিলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের অবস্থান হবে শান্তিপূর্ণ। সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবও হবে শান্তিপূর্ণ উপায়। এই বির্তক ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলনের মধ্যে। যা ‘মহাবিতর্ক’ (great debate) নামে পরিচিত।

রাশিয়ার এই অবস্থানের তিব্র বিরোধীতা করে মাও সেতুং-এর নেতৃত্বে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি। দেশে দেশে কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যায় চীন ও রুশ ধারায় যা চীনপন্থি ও রুশপন্থী নামে পরিচিত। নকশালদের গোড়ার কথা ১৯৬২ সালে আন্তর্জাতিক মহাবিতর্কের মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন ভাঙনের মধ্যে পড়ে, ভারতেও তার ধাক্কা লাগে। ১৯৬৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার নকশাল বাড়িতে জোতদারদের সশস্ত্র প্রতিরোধ করে কৃষকেরা। কানু স্যান্নাল, চারু মজুমদার ও সরোজ দত্তের মত কমিউনিস্ট নেতারা নকশাল বাড়ির কৃষকদের সশস্ত্র এই ধারাকে ভারতের কমিউনিস্ট বিপ্লবের পথ হিসেবে গ্রহণ করে।

যা পরবর্তিতে নকশাল নামে পরিচিতি পায়। নকশাল আন্দোলন ভারতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। চারু মজুমদারের নেতৃত্বে গড়ে তোলে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি [মার্কসবাদী-লেনিনবাদী]। ১৯৭২ সালে পুলিশ হেফাজতে চারু মজুমদারের মৃত্যু হলে ভারতের মাওবাদী আন্দোলনের প্রথম পর্ব শেষ হয়। চারু মজুমদারের পার্টি ভেঙ্গে খান খান হয়ে যায়।

তৈরি হয় একাধিক নকশাল গ্রুপ উপগ্রুপ। নব্বইতে এসে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে সমাজতন্ত্রীদের অনেকে হতাশ হয়ে রণে ভঙ্গ দেয়। তবে মাওপন্থীরা মাওবাদী নামে ক্রমে ক্রমে জোরদার হতে থাকে। মাও সেতুং চিন্তা ধারা মাওবাদে উন্নিত হয় আশির দশকে। এই তত্বায়নে প্রধান ভূমিকা রাখে পেরুর কমিউনিস্ট পার্টির চেয়ারম্যান ড. রুবেন আবিমিয়েল গুজমান বা গনজালো।

গনজালো ১৯৯২ সালের দিকে পেরুর মার্কিনপন্থি সরকারের কাছে গ্রেফতার হন এবং অদ্যবদি পেরুর গোপন কোনে এক জেলে রয়েছেন। নব্বই পরবর্তীতে ভারতের একাধিক নকশাল কমিউনিস্ট পার্টি যারা একে অপরকে শত্রু মনে করত তারা নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করে। এই ধারার মধ্যে প্রধানভাবে দুটি গ্রুপ কাজ করে একটি হলো Maoist communist Center (MCC) আর অন্যটি peoples group (PW)। ২০০৪ সালে এই দুটি পার্টি ঐক্যবদ্ধ পার্টির ঘোষণা দেয় যা communist party of India (Maoist) নামে পরিচিত। এর পর থেকেই পাল্টে যায় ভারতের রাজনীতির হিসাব নিকাশ।

ভারতের মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টি বা নকশাল আন্দোলন আরো গভীরভাবে ছড়িয়ে পড়ে ভারতের একের পর এক রাজ্যে। ভারত সরকার মাওবাদীদের দমানোর জন্য একের পর এক বিশেষ বাহিনীর জন্ম দিয়ে আরো বিতর্কের জন্ম দেয়। শুরু হয় এনকাউন্টার নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। যা ভারতে ‘ভুয়া হত্যা’ নামে পরিচিত। সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতের পার্লামেন্ট মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করে।

দেশটির প্রায় ৫০০টি জেলায় মাওবাদীদের রয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমান রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির মতে,` ভারত সরকার প্রতিক্রিয়াশীল ধনীকশ্রেণী, বিদেশিদের দালাল এবং সামন্তপ্রভুদের সরকার। এই সরকারকে ‘গণতান্ত্রিক বিপ্লবের’ মাধ্যমে উৎখাত করে ‘জনগণের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করাটাই তাদের ল্য। এই লক্ষো তারা ‘জনযুদ্ধ’ পরিচালনা করছেন। দেশটির অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই মাওবাদীদের বিকাশকে ত্বরান্বিত করেছে ৭০-এর দশকের বিপর্যয় কাটিয়ে মাওবাদীরা আজ যে কোনো সময়ের বিচারে অনেক বেশি রাজনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে।

যার ফলে ভারতের মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত তারা সংবাদের যোগানের উৎস হয়েছেন। সাহিত্যিক ও মানবধিকার কর্মী অরুন্ধতি রায়ের মতে, রাষ্ট্রের উপরিকাঠামোতে যে গণতন্ত্রের চর্চা হয় তার সঙ্গে ভারতের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের কোনো বাস্তব সম্পর্ক নেই। তার মতে, মূলত বিশাল বিশাল কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রা ছাড়া ভারতীয় গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অন্য কোনো কর্তব্য নেই। ’ ভারতের প্রবীণ সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন আরও খোলামেলাভাবে, বিগত ৬২ বছরে ভারতের জাতীয় অর্থনীতির আকার আয়তন বিশাল হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, এর ফলে ভারতের দারিদ্র্য পরিস্থিতির কোনো উন্নতি ঘটেনি।

গত ৭-৮ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭-৯ শতাংশে পৌঁছলেও নিচের দিকের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবনমানের কোনো প্রভাব পড়ছে না। ’ তিনি তার নিবন্ধে আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, গত ৫৮ বছরে ভারতের জিডিপি ৮.৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৯.১ শতাংশে পৌঁছলেও দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষের সংখ্যা একই আছে। মাথাপিছু আয় ৫,৭০৮ রূপী থেকে বেড়ে ২৫৮,৪৯৪ রূপী হলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে না। প্রায় ৪০ কোটি মানুষের ভাগ্য বলতে গেলে আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভারতের অর্ধেক গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি।

গ্রামে শিক-চিকিৎসক পাওয়া যায় না । পানির কষ্ট দূর হয়নি, জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ বাস করে দারিদ্র্যসীমার নিচে। এদের দৈনিক আয় গড়ে ৯০ রূপীরও কম। ধনীকশ্রেণীর মধ্যে তৈরি হচ্ছে বিশাল বিভাজন। লোকসভার অবস্থা আরও খারাপ।

গত লোকসভায় কোটিপতি ছিলেন ১৫০ জন। এবারের লোকসভায় আছেন ৩০০ জন। গত লোকসভায় দাগি আসামি ও দুষ্কৃতকারীদের সংখ্যা ছিল ১২৮ জন, এবারের লোকসভায় এই সংখ্যা বেড়ে ১৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অপরাধী রয়েছেন অনেকেই। বিহার থেকে নির্বাচিত শাসকদল কংগ্রেসের একজন এমপির নামে মামলা রয়েছে প্রায় ১৬টি।

এর মধ্যে খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের মতো অভিযোগ রয়েছে। ওপরের চিত্র দেখেই তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় সমাজের আকাশ পাতাল শ্রেণী ভেদই মাওবাদীদের জনগণের মধ্যে শক্ত ভীত করে দিয়েছে। মাওবাদীদের শক্ত হাতে দমন করার ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদাম্বরাম গণমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘এই দেশে সশস্ত্র বিপ্লবের তত্ত্বের কোনো জায়গা নেই, আমরা মাওবাদীদের এই গণমুক্তির তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করছি। ’ তিনি আরও জানান, ‘প্রায় বিশটি রাজ্য মাওবাদী সমস্যায় আক্রান্ত’।

এই অভিযান আক্রান্ত সবগুলো রাজ্যেই চালানো হবে। বিমান বাহিনী ও বিএসএফের সহযোগিতাও প্রয়োজনবশত নেয়া হতে পারে। তবে তাদেরকে আক্রমণভাগে রাখা হবে না। পুলিশকে রাজ্য সীমান্ত অতিক্রমের মতা দেয়া হবে বলেও তিনি জানান। মাওবাদী বিরোধী অভিযানের সরকারি এই পরিকল্পনা পূর্বের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে মাওবাদী কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুপাল্লা লণ রাও গণপতি সরকারের গ্রীনহান্ট অপারেশনে প্রতিরোধের ঘোষান দিয়ে বলেছেন ‘ভারত সরকার দেশজুড়ে অভিযানে নামলে তার পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য মাওবাদীরাও প্রস্তুত আছে। ’ তিনি দাবি করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার তোড়জোড় শুরু করেছে মনমোহন সরকার। কারণ মাওবাদীদের দখলে থাকা পশ্চিমবঙ্গের জলমহাল থেকে অন্ধ্রের উত্তর পর্যন্ত বিশাল এলাকার প্রাকৃতিক, বনজ ও খনিজ সম্পদের নাগাল পেতে চাইছে মার্কিন বুর্জোয়ারা। এ জন্যই পুলিশের আধুনিকীকরণের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে কেন্দ্র। ’ অপারেশন গ্রীনহান্ট নেপথ্যে কোটি কোটি টাকার খনিজ সম্পদ খনি আবিষ্কৃত হওয়ায় ব্যাপকভাবে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে রাষ্ট্রকর্তৃক আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন।

যারা সাধারণত খুবই মানবেতরভাবে জীবনযাপন করেন। ভারতে এ ধরনের প্রায় ৫০টি জেলার ৪১ শতাংশ মানুষ মাওবাদীদের সমর্থন করেন। ভারতের আদিবাসীদের অন্যতম একটি অঞ্চল হলো ছত্রিশগড়ের দান্তেওয়াড়া। অঞ্চলটি প্রকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। বিশেষত লোহার খনি পাওয়া যাওয়াতে বহুজাতিক কোম্পানীর চোখ পড়েছে এলাকাটির ওপর।

এলাকার আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে তবেই লোহা উঠানো সম্ভব। আদিবাসীরা তাদের ভিটে মাটি রার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আদিবাসীদের সঙ্গে মাওবাদীরা মিলে মিশে তৈরী করেছে প্রতিরোধ। মাওবাদীদের না হাটাতে পারলে খনির ওপর নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব নয় কোম্পানীগুলোর। আর এ কারণে সরকারের মদদে সেখানে শুরু হয়েছে সালামাজুডুম নামের মাওবাদী বিরোধী সশস্ত্র সন্ত্রাস।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের বুদ্ধিজীবী সিদ্ধার্থ মিত্র সালামাজুডুম আক্রান্ত গ্রামুগলো ঘুরে এসে সেই ভয়াবহতার কথা জানিয়েছেন ÔAn account of the trip to rehabilitated villages near Dantewada। সিদ্ধার্থের বর্ণনা পাঠকের কল্পনাকেও হার মানাবে। সালামাজুডুমের নেতারা আদিবাসীদের কিভাবে হত্যা করেছে, গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দিয়েছে; ধর্ষন করেছে আদিবাসী নারীদের। তবে যতোই নির্যাতন বেড়েছে ওইসব অঞ্চলে ততোবেশি করে মাওবাদীদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। মাওবাদীদের দমন করতে সরকার এখন মরিয়া হয়ে ওঠেছে।

আর এ জন্য ন্যুন্যতম আইন ও মানবধিকারের মত বিষয়গুলিকে তারা পরোয়া করছে না। এরকম পরিস্থিতি ভারত সরকার মাওবাদীদের পরাস্ত করতে ‘পারেশন গ্রীন হান্ট’ নামের একটি অভিযান শুরু করেছে। যেখানে আদিবাসী অধ্যুষিত ৬টি রাজ্যে আকাশ ও স্থলপথে ব্যপক আক্রমণ করার পরিকল্পনা করেছে দেশটি। আদিবাসী ও মাওবাদীদের ওপর এই হামলাকে অবশ্য ভারতের বুদ্ধিজীবীরা দেখছেন খনি উত্তোলনের জন্য পরিচালিত যুদ্ধ হিসেবে। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় যুদ্ধ বিরোধী মানবতাবাদীরা অপারেশন গ্রীনহান্টের বিুরদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে অরুন্ধতী রায় বলেন, ‘রাষ্ট্র এভাবে চলতে পারে না। রাষ্ট্রের সকল নীতিনির্ধারিত হতে পারে না ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আর লাভ-তির হিসেব মেপে। নাগরিক রাষ্ট্রের চাকরিজীবী নয় যে, রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর তার অস্তিত্ব নির্ভর করবে। সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলগুলো কর্পোরেশনের বোর্ডরুম ও বুলেটিন হতে পারে না। মনসান্টো কিংবা ওয়ালমার্টের মতো কর্পোরেটদের তো ভারতের নীতিনির্ধারণ হবার কথা নয়।

’ তিনি ভারত সরকারের তথাকথিত উন্নয়নকে নাগরিকের সম্পদ কেড়ে নেয়ার নামান্তর হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমি জানি না কেন তারা বুঝতে চায় না যে, দারিদ্র্য নির্মূলে অস্ত্র কোনো কাজে আসবে না। বুলেট, বুলডোজার, কারাগার কোনো সমাধান নয়। অথবা আমিই হয়ত বুঝতে ভুল করছি, আসলে তারা দারিদ্র্য নয়, দরিদ্রদেরই নির্মূল করতে চাইছে। ’ নোয়াম চমস্কি, অরুন্ধতী রায়, ডেভিড হার্ভে, অমিত ভাদুড়ী, প্রশান্ত ভূষণ, জন বেলামি ফস্টারসহ ভারত ও বহির্বিশ্বের প্রায় ৩০০ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব ভারতীয় শিাবিদ ও সামাজিক আন্দোলনের কর্মীদের সংগঠন ‘সংহতি’ কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবাদপত্রে স্বার করেছেন।

প্রতিবাদপত্রটি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহ-এ বরাবর প্রেরণও করা হয়েছে। ভারত সরকার কি নিজের দেশের নিজের জনগণের ওপর পরিচালিত এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। আমরা যারা নৃ-তাত্বিক সংখ্যালঘু জাতি সত্তার উপর যে কোনো ধরণের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বরাবর একটি স্মারক লিপি দিতি পারি। যদিও এই স্মারকলিপির কারণে কোনোভাবেই আদিবাসীদের ওপর দন নির্যাতন কমবে না, তারপরও আমরা যে নৃতাত্বিক সংখ্যালঘু মানুষের সাথে আছি সেই সংহতি আদিবাসীদের শক্তি যোগাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.