আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিলখানা হত্যাযজ্ঞের এক বছর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অগ্রযাত্রা



পিলখানা হত্যাযজ্ঞের এক বছর ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অগ্রযাত্রা ফকির ইলিয়াস ===================================== পিলখানার নির্মম হত্যাযজ্ঞের এক বছর পূর্ণ হলো গেলো। বাংলাদেশ যে বীর সৈনিকদেরকে হারিয়েছিল, সেই শোকে জাতি এখনো মুহ্যমান। এই হত্যাযজ্ঞের বিচারের আংশিক কাজ শুরু হয়েছে। সেনা আইনে শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিচার এবং বিশেষ আইনে হত্যাকারী-লুটপাটকারীদের বিচার সম্পন্ন করতে রাষ্ট্র সম্মত হয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের প্রথম বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে, তদন্ত কর্মকর্তা, সিআইডি অফিসার আব্দুল কাহহার আকন্দ বলেছেন, সৈনিকদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভই এই হত্যাযজ্ঞের মদদ দেয়।

একজন বিএনপি নেতা এবং একজন আওয়ামী লীগ সমর্থক ওয়ার্ড কমিশনারের সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পিলখানার নিষ্ঠুরতম বর্বরতা কেন সংঘটিত হয়েছিল এর সঠিক কারণ এখনো উদঘাটিত হয়নি। হয়তো একদিন না একদিন হবে। কারণ যে নারী তার স্বামী হারিয়েছেন, সে সন্তান তার পিতা হারিয়েছে, তারা এর উৎস এবং উপাত্ত আজীবনই খুঁজে যাবে। তাদেরকে খুঁজতেই হবে।

কারণ কোনো ঐতিহাসিক নির্মমতাই সভ্যতাকে থামিয়ে দিতে পারে না। বাংলাদেশে পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এইসব শহীদ সৈনিকদের পরিবার ও সন্তানদেরকে নিশ্চিত জীবন দিতে হবে রাষ্ট্রপক্ষকেই। যারা একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীর নিয়ম ভঙ্গ করে এমন বর্বরতা ঘটিয়েছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এর ওপর নির্ভর করছে রাষ্ট্রের আগামীর পথচলা।

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার মাত্র দেড় মাসের মধ্যেই এই পাষণ্ডতম ঘটনাটি রাষ্ট্রের যে ক্ষতি করেছে, তা থেকে শিক্ষা নেয়া প্রয়োজন সবাইকেই। সাধারণ সৈনিকরা যে ন্যায্য দাবি-দাওয়া করে আসছিল, তারও একটি সঙ্গত সমাধানকল্পে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ প্রতিটি সৈনিকই রাষ্ট্রের এবং জনগণের অতন্দ্র প্রহরী। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী মহাজোট সরকার কি হিসেব করে তাদের পা ফেলতে পারছে? এই প্রশ্নটি বারবার উত্থাপিত হচ্ছে জনমনে। এই সরকারকে খুব বেশি সমালোচনার মুখোমুখি করেছে তাদের অঙ্গ সংগঠন এবং দলীয় নেতাকর্মীরাই।

বিশেষ করে ছাত্রলীগের নাম ধরে একটি পাতি দখলদার গ্র“প যত্রতত্র মাস্তানি করে বেড়াচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। এদের বিভিন্ন গ্র“প কর্তৃক টেন্ডার, চাঁদাবাজি, পেশিশক্তি প্রদর্শন সরকারকেই শুধু লজ্জিত করছে না, জনগণকেও শঙ্কিত করে তুলছে। অতি সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের চারজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়েছে, মারাত্মক অভিযোগের প্রেক্ষিতে। এসব সুবিধাবাদী চক্রের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের সাবধান বাণী উচ্চারণ করার পরও তারা থামছে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গরিব পিতার মেধাবী পুত্র আবু বকর সিদ্দিক হত্যাকাণ্ড জাতির বিবেককে অত্যন্ত বেদনাদায়কভাবে লজ্জিত করেছে। তারপরও অপরাধীরা থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সামাজিক, রাজনৈতিক অপরাধীদেরকে মদদ দিলে, এর পরিণাম কি হয় তা বিগত প্রতিটি সরকারই কমবেশি দেখেছে। তাই তা বর্তমান সরকারকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার খুব বেশি প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। বর্তমান মহাজোট সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চয়ই সব অপরাধীদের পদচারণাকে বৈধ করে দেয়নি।

তাহলে মাননীয় মন্ত্রী, এমপিরা তাদের পোষ্যদের লাগাম টেনে ধরছেন না কেন? দুই. বর্তমান নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে সংসদীয় কমিটি। যোগাযোগ সচিব ওমর ফারুক এবং যোগাযোগ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য গোলাম মাওলা রনি টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। অপরদিকে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন সচিব ওমর ফারুক এবং এমপি গোলাম মাওলা রনির দখলদারিত্ব, দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হওয়াই তার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হচ্ছে। কোন পক্ষ দুর্নীতি করছে কিংবা দখলদারিত্বের আশ্রয় নিচ্ছে তার বিচারের দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু রাষ্ট্রের জনগণ এটা স্পষ্ট অনুধাবন করতে পারছেন, কোথাও না কোথাও একটা অপশক্তি ছোবল দিচ্ছে।

কারণ একে অপরের বিরুদ্ধে যখন দুর্নীতির অভিযোগ তোলে, তখন উভয়পক্ষকেই দুর্নীতিবাজ বলে প্রতীয়মান হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। সরকারের ভেতরে এই যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়েছে, তা কি প্রমাণ করে না সরকার ক্রমশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে? এর কারণ কি? প্রধানমন্ত্রী বিষয়গুলো কি অনুধাবন করছেন? বর্তমান মহাজোটে এখনো অনেক নেতা আছেন, যারা নীতিবাদ ধারণ করেন। আদর্শে সমুন্নত থাকেন। যেহেতু মন্ত্রিত্ব চিরস্থায়ী কোনো পদ নয়, তাই মেধা ও মননের যোগ্যতায় মন্ত্রিত্বে রদবদল করা যেতেই পারে। এক একজন মন্ত্রীকে বেশি দায়িত্ব এবং চাপের মাঝে না রেখে ১৫ কোটি মানুষের দেশে মন্ত্রিত্বের পরিসর বাড়ানো যেতেই পারে।

মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকারের হাতে আছে চার বছরেরও কম সময়। এই সময়ের মধ্যে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন সবগুলো কাজ এক সঙ্গে করে যেতে হবে সরকারকে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধের প্রতি প্রাধান্য না দিয়ে সরকার যদি বিরোধী দল হটানোর কাজে ব্যস্ত থাকে তবে এর পরিণাম নিজেদের জন্যই অশুভ বার্তা বয়ে আনবে। তার ওপর দেশে একটি হীনশক্তি তাদের মতলব হাসিলে তো ব্যস্ত আছেই। আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, মার্চের মধ্যেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

তা হবে বর্তমান সরকারের জন্য আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ একাত্তরের পরাজিত রাজাকার শক্তি এই বিচারকার্যকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবেই। তাদের পাকিস্তানি প্রভুরা ইতিমধ্যে নানা আন্তর্জাতিক ফোরামে এ বিষয়ে লবিং শুরু করেছে। সে বিষয়ে সরকারকে, জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। অত্যন্ত আশার কথা, বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এই শহীদের রক্তøাত ভূমিতে কোনো অপবাদ, অপকর্মের দায় নিতে রাজি নয়।

ধর্মীয় অনুশাসনের নামে ব্যক্তিগত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষের বিবেক যে জাগ্রত হচ্ছে, তার প্রমাণ একটি ছাত্র সংগঠনের সিংহভাগ নেতার গণপদত্যাগ। নেপথ্য কারণ যাই থাকুক না কেন, এই ঘটনা আল-বদর শক্তির ভিতে আঘাত করেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আগুয়ান প্রজন্ম, সকল অপশক্তিকে রুখে দেবেই এই বাংলাদেশে। ------------------------------------------------------------------ দৈনিক ভোরের কাগজ । ঢাকা ।

৬ মার্চ ২০১০ শনিবার প্রকাশিত ছবি - উত্তম কুমার রায়

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।