আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিলখানা বর্বরতার বিচার হতে হবে



পিলখানা বর্বরতার বিচার হতে হবে চেইন অব কমান্ড ভঙ্গকারী উচ্ছৃল বিডিআর জওয়ানরা তাদের ৩৩ ঘণ্টার নজিরবিহীন বর্বরতায় হত্যা করেছে সেনা কর্মকর্তা, কিছু বিডিআর জওয়ান এবং কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তিকে। এই সংখ্যা একশ'র বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বুধবার বিডিআর সদর দপ্তরে অস্ত্রের মুখে দরবার হল থেকে মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন সব সামরিক কর্মকর্তাকে বের করে ব্রাশ ফায়ারে নির্বিচারে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বর্বরতার সূচনা করে কিছুসংখ্যক বিডিআর জওয়ান। এই বর্বরতা ও নারকীয় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যে খবরাখবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সেসব খবর থেকে এক ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র ফুটে উঠেছে দেশবাসীর সামনে। পিলখানায় একের পর এক আবিষ্কৃত হচ্ছে গণকবর।

বিডিআর মহাপরিচালকসহ প্রায় সব সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে ছোট্ট পরিসরের গর্ত করে মাটিচাপা দেয়া হয়। কয়েকজনকে ফেলে দেয়া হয় ম্যানহোলে। গত শুক্রবার নিখোঁজ সেনা কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করার জন্য সারা পিলখানায় তল্লাশি চালানো হলে এই গণকবরগুলো বেরিয়ে পড়ে। দেশবাসীর সামনে হত্যা, রক্ত আর আতঙ্কের এক ভয়াবহ চিত্র। ভয়ে আর শোকে স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে দেশবাসী।

সভ্য ও স্বাধীন দেশে এভাবে গণহত্যা করতে পারে কোন বাহিনীর সদস্য এটা অবর্ণনীয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষলগ্নে পরাজয়ের পূর্ব মুহুর্তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং জামায়াতে ইসলামীর আলবদর-আলশামস নামের কিলার-সংগঠন দুটি একইভাবে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের হত্যা করে গণকবরে চাপা দিয়েছিল। পিলখানায় গণকবরের দৃশ্যগুলো দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধ সময়কালের পাকিস্তানি-জামায়াতের বর্বরতার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। শুক্রবারের পর শনিবার আরও দুটি গণকবর আবিষ্কৃত হয়। গণকবরে পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের মৃতদেহ দেখে বোঝা যায় যে হত্যাকারী বিডিআর জওয়ানরা শুধু গুলি করে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়েছে সেনা কর্মকর্তাদের।

ঠিক পাকিস্তানি আর জামায়াতের আলবদর-আলশামসের মতো। বিদ্রোহের চারদিন পেরিয়ে গেছে, এখনও নিখোঁজ রয়েছে অনেক সেনা কর্মকর্তা, তাদের স্বজনদের আহাজারিতে বিডিআর গেটের বাতাস ভারি হচ্ছে। বিদ্রোহের প্রথমদিন আত্মসমর্পণের আগে বিডিআর বিদ্রোহীরা দাবি করে দুর্নীতি, আর্থিক বৈষম্য, দুর্বøবহারসহ অন্যান্য কারণে সৃষ্ট ক্ষোভ থেকেই এই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছে। কিন্তু বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের পর ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা দু'একজন সেনা কর্মকর্তার বিবরণ থেকে প্রকৃত ঘটনা জানা যায়। যেভাবে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং প্রায় সব সেনা কর্মকর্তাকে একসঙ্গে গুলি করে হত্যা করে গণকবরে মাটিচাপা অথবা স্যুয়ারেজ পাইপে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে, তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় এটা একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যা।

যারা এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করেছে তাদের উদ্দেশে নিছক বিদ্রোহ করা ছিল না, আরও গভীর কোন লক্ষ্য থেকে তারা বিডিআরে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। এটা কোন আকস্মিক বা তাৎক্ষণিক ঘটনা নয়। এই বাস্তবতায় আমাদের কথা অত্যন্ত পরিষ্কার। সরকারকে শুধু বিডিআর বিদ্রোহের তদন্ত করলে চলবে না, সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করে আরও বড় কোন রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জন করতে চেয়েছিল নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীরা, সেই ষড়যন্ত্র উদঘাটন করতে হবে। একইসঙ্গে যারা প্রত্যক্ষভাবে হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে দ্রুত তাদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বিডিআর-এ চেইন অফ কমান্ড ফিরিয়ে আনতে হবে। অপরাধীরা যেন কোন অবস্থাতেই সাধারণ ক্ষমার আওতায় আসতে না পারে সরকারকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এর সঙ্গে সঙ্গে ষড়যন্ত্র ও হত্যা পরিকল্পনার তদন্ত রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ ও জাতীয় সংসদে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন আর কোন নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটতে না পারে সেটাও নিশ্চিত করতে হবে সরকারকেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।