আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাহাড় বিতর্ক ও " সিঙ্গেল স্টোরী" বলার/ শোনার বিপদ

পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি

পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ব্লগে বেশ উত্তপ্ত বিতর্ক হয়ে গেলো , কোন কোন পোস্টে এখনো চলছে । প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে তর্ক চালিয়ে যাচ্ছেন । কেউ বলছেন যা হচ্ছে ঠিকই হচ্ছে । কেউ আগ বাড়িয়ে বলছেন ১০০০টা লাশ পড়ুক, তাও নিরাপদ , অখন্ড বাংলাদেশ চাই। কেউ বলছেন পাকিস্তানী হানাদার আগ্রাসী সেনাবাহিনীর মত আমাদের সেনাবাহিনী পাহাড়ের বেলায় আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছে ।

কেউ বলছেন, পুশ ইন করা সমতলীদের বিতাড়ন প্রয়োজন। কেউ বলছেন সায়ত্ব শাসন। কেউ বলছেন, স্বাধীনতা চাইলে স্বাধীনতা । কেউ বাংলাদেশ, কেউ জুম্ম ল্যান্ড। কেউ দেখছেন ভূমিদস্যুদের হাতে পাহড়িদের উদবাস্তু হওয়ার অমানবিক চিত্র , কেউ দেখছেন ভারতের সাথে হাত মিলিয়ে শান্তি বাহিনীর ষড়যন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি।

প্রত্যেকেই তাদের নিজের অবস্থান থেকে ঠিকই আছেন । কেউ কিন্তু ভুল বা মিথ্যা তেমন একটা বলছেন না । কিন্তু , তাহলে এত বিতর্ক কেন? কারণ প্রত্যেকেই তাদের নিজ নিজ মাপের আকাশ দেখছেন । নিজের চশমায় পাহাড় দেখছেন । নিজের আয়নায় পাহাড়ের মানুষ গুলোর চাওয়া , পাওয়া , বিপদ ও উদ্ধার এর পথ বাতলে দিচ্ছেন।

এর ভিতরে আমি পি মুন্সীকে একটি মন্তব্য পাহাড়ে সমতলীর বসবাসের অধিকার ও CHT কমিশনের মতলব পোস্ট আকারে দিতে বলি। সেখানেও যে পাহাড় সমস্যার সব কয়টি দিক আলোচিত হয়েছে তা নয় কিন্তু একটু হলেও দেশের অভ্যন্তরে পাহাড় যে কেবল দুইটি বিপরীত মুখী গোষ্ঠীর বাদানুবাদে সরকারের স্বজনপ্রীতি ধরনের কোন নিম্ন শ্রেনীর লড়াই নয় , এর বাইরে একটি আন্তর্জাতিক " বিগার পিকচার " আছে - তার সামান্য ব্যাখ্যা বর্ননা আছে । সে পোস্টে , আমি যা বুঝি , পি মুন্সী কোন পক্ষ সজ্ঞানে অবলম্বন করেন নাই । কিন্তু আমরা যারা প্রতি নিয়ত পক্ষ অবলম্বন না করলে জাত, মান, কুল , দেশ , দেশপ্রেম , অস্তিত্ব সব " গেল গেল" রবে ঝাপিয়ে পড়ছি আর কাউকে না কাউকে বিপক্ষের দল, শত্রু দল চিহ্নিত করে তাকে বাঁশ মেরে দিচ্ছি , তাদেরকে এই তথাকথিত বিপক্ষ বা শত্রুপক্ষ কিংবা নিদেন পক্ষে নিরপেক্ষ " মানবতাবাদী পক্ষ" কি বলতে চাইছে, কেন বলতে চাইছে , সেইটা একটু ভেবে দেখবার অনুরোধ ছিলো । মন্তব্য যখন পোস্ট হয়ে ওঠে , তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো অগোছালো লেখা আর অসম্পূর্ণ গল্প।

পি মুন্সী তার থেকে মুক্ত নন। আমার এই পোস্টও একটি মন্তব্য থেকে , তাই আমিও মুক্ত নই। আমার নিজের কিছু এই ধরনের খন্ডিত ( পড়ুন মিস লিডিং) মন্তব্য পাহাড় তর্কের বিভিন্ন পোস্টে আছে । হঠাৎ একটা মন্তব্য দেখলে মনে হতে পারে আমি দা বটি নিয়ে পাহাড়ি নিধনে ব্যস্ত হতে চাই। যেই ভুলটা ব্লগার কুঙ্গ থান করেছেন ।

আবার মনে হতে পারে আমি বাংলাদেশের নাগরিকের পাহাড়ের অধিকার কেড়ে নিতে চাই। সেই থেকেই আমি সিদ্ধান্ত নেই , খন্ডিত মন্তব্য করার চেয়ে সকল ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা চেতনার মানুষ এর বক্তব্যকে একটা জায়গায় আনা যাক। পি মুন্সীর পোস্টে আমার ভূমিকা তাই একজন প্রভাবকের ( পি মুন্সীকে এই পোস্ট দিতে প্রভাবিত করা) এবং পরে একজনের সংগ্রাহকের ( ব্লগে এই একই বিষয়ে যত পোস্ট হচ্ছে সেগুলো এই পোস্টে সংকলিত করা) । উদ্দেশ্য? খন্ডিত এবং অসম্পূর্ণ সত্য বলা ও শোনার বিপদ থেকে মুক্ত হওয়া। একই বিষয়ে যখন আমরা একটি মাত্র দৃষ্টিভঙ্গীর গল্প শুনি, আমাদের দেখার চোখ ভীষণ রকম সংকীর্ণ থেকে যায় বলে আমি বিশ্বাস করি।

আমি আরো বিশ্বাস করি, বিচিত্র মানুষ তার বিচিত্র দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে যখন একটি মাত্র বিষয়, বস্তু কিংবা ঘটনাপ্রবাহকে বর্ননা করে, ঘটনার পেছনের কারণ, দর্শন ও উদ্দেশ্যকে বিশ্লেষণ করে - এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে খন্ডিত বা লিমিটেড সত্যকে দেখার ভয়াবহ বিপদ থেকে আমরা কিছুটা হলেও মুক্ত থাকতে পারি। খন্ডিত দৃষ্টিভঙ্গীর বিপদ তো জানেন , তাই না? সেই অন্ধের হাতি দেখার মত । তাই মনজুরুল হক যখন আমাকে স্তব্ধতা ও পি মুন্সী নামক "একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গী" সম্পন্ন পক্ষে ফেলে দিয়ে আর সব রকম সম্ভাবনাকে নাকচ করে দেন, তখন আমি সত্যি বিপন্ন বোধ করি। কারণ, "A single story creates stereotypes and the problem with stereotypes is not that they aren't true but that they are incomplete. They make one story become the only story. We must realize there is never a single story about a place." Chimamanda Adichie ব্লগারদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে আমাকে এই " খন্ডিত ও অসম্পূর্ণ গল্পে" উৎসাহীদের ও বিশ্বাসীদের দলে স্টেরিওটাইপ না করার । পাহাড়ের সমস্যা নিয়ে এই ব্লগে এক একজন তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা, জ্ঞান , তথ্য, সূত্র ও দর্শন থেকে নিজের নিজের একক গল্প বলে চলেছেন।

তার গল্পের বাইরে অন্য কোন গল্প সত্য হতে পারে। কিংবা একেবারেই বিপরীত অভিজ্ঞতা , বিপরীত জ্ঞান, বিপরীত গল্পটিও যে ঐ পাহাড়েই বসবাসকারী কোন পাহাড়ী, বাঙ্গালী কিংবা সেনা অফিসারের জীবন হতে পারে, সত্য হতে পারে - এইটা কেউই মানতে রাজি নন । অথচ এই বিচিত্রতাই কিন্তু সত্যি । আমরা শুধু " পাহাড়ি " , শুধু " বাঙ্গালী" , শুধু " সেনাবাহিনী" লিখে লিখে স্টেরিওটাইপ করে ফেলছি । কিন্তু এই প্রশ্ন গুলা করছি না , পাহাড়ের সকল পাহাড়ির গল্প কি এক? সেনাবাহিনীতে পাহাড়ি অফিসার নেই? পাহাড়ি শান্তি বাহিনী নেই? পাহাড়ি শান্তিবাহিনীর হাতে অত্যাচারিত পাহাড়ি নেই? পাজেরো হাকানো ধনী পাহাড়ি নেই? প্রচন্ড ক্ষমতা , টাকা ও অস্ত্রের মালিক পাহাড়ি নেই? পাহাড়ি মানেই কি হত দরিদ্র , বাড়ি পোড়ানো , পরিবার হারানো অসহায় পাহাড়ি? এখন পাহাড়ি শব্দটা সরিয়ে সেখানে সমতলী, বাঙ্গালী , গারো , সিলটি, ঢাকাইয়া বসিয়ে নিন।

কেমন লাগছে ছবিটা ? কুঙ্গ থানকে যখন প্রশ্ন করা হলো ৫০ হাজার পাহাড়ি ঢাকা চট্টগ্রামে থাকতে পারলে ৫০ হাজার সমতলী বাঙ্গালী পাহাড়ে কেন থাকতে পারবে না । কুঙ্গ থান স্বীকার করে নিলেন সংখ্যাটা ৫০ হাজার না হলেও ২-৩ হাজার পাহাড়ি আছে যারা সমতলের সব রকমের সুযোগ, সুবিধা , অর্থ , সম্পদ , শিক্ষা ইত্যাদি ভোগ করছেন কিন্তু তাদের সাথে নাকি পাহাড়ের সাধারণ পাহাড়িদের কোন সম্পর্কই নেই ( পাহাড়ে তাহলে অসাধারণ পাহাড়িও আছে , পাঠক , লক্ষ্য করুন) । পাহাড়ের সাধারণ পাহাড়িরা মরে গেলে যাদের নাকি কিছুই যায় আসে না । সেই সাথে উনি এই আশংকাও প্রকাশ করলেন, হাজারে হাজারে বাঙ্গালী যদি পাহাড় দখল করে নেয় ( গরীব ও সরল পাহাড়িদের কাছ থেকে জমি কিনে কিংবা দখল করে নিয়ে) তাহলে এই ধনীক শ্রেনীর আগ্রাসনে বিচ্যুত পাহাড়িরা যাবে কোথায়? গল্পটা কষ্টের । কিন্তু আমি খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, গল্পটা আমার চেনা ।

এই ভূমি আগ্রাসনের গল্প আমি বহুবার শুনেছি এই সমতলের বিভিন্ন মানুষের মুখে । কি ভাবে বন্যা , ক্ষরা কিংবা দারিদ্র আক্রান্ত মানুষের চাষের জমি, ভিটা মাটি এমন কি খোদ ঢাকা শহরের প্লট ধনীক ও আগ্রাসী শ্রেনীর হাতে বেদখল হয়ে গেছে । কখনো টাকার জোরে , কখনো পেশী বলে । পার্থক্য শুধু এই যে নিজের জমি থেকে বিচ্যুত এই মানুষ গুলো সংগঠিত হয়ে অস্ত্র তুলে নেয় নি, অস্ত্র ও রসদ জোগাড়ের জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র পায়নি । অথবা অস্ত্র ধরলেও তার নাম হয়েছে - সন্ত্রাসী , হাইজ্যাকার, চোর, ডাকাত ; আর না ধরলে গার্মেন্টস কর্মী , কাজের বুয়া , রিকশাওয়ালা , ফকির।

পাহাড়ে যার নাম গুচ্ছগ্রাম, ঢাকাতে তার নাম বস্তি। কেউ কোন দিন বস্তির ওই ভূমিবিচ্যুত অস্ত্রধারী মানুষ গুলোকে " মুক্তিকামী জনগণ" নামে সম্মান করে নাই , বরং অপরাধী বলে জেলে পুরেছে । এদের জমি জিরাত রক্ষার জন্য ওরা কেউই কিংবা আমরা , এমন কি কুঙ্গ থান নিজেও কোন " শান্তি চুক্তি" কিংবা " গরীব ল্যান্ড " দাবী করেন নাই। নইলে আর কি পার্থক্য আছে 'একজন বসুন্ধরা বিতাড়িত সমতলী' আর 'আবাদি বিতাড়িত পাহাড়ির' মধ্যে? পার্থক্য একটা আছে অবশ্য । পার্থক্যটা শত্রু মিত্র নির্বাচনে।

পার্থক্যটা নিছক আগ্রাসনের , দখলের , অত্যাচারের গল্পটিকে একটি " জাতিগত দাঙ্গা " হিসেবে পরিবেশনের। এতে দুই পক্ষই পার পেয়ে যায়। আগ্রাসী পক্ষ বলে ওরা দেশের শত্রু আর বিপরীত পক্ষ বলে " এ তো আমার দেশ নয়" , নইলে আমার সাথে এমন করবে কেন? দুঃখজনক সত্য হলো সরকার পক্ষের এই আগ্রাসী ভূমিকা আমরা সকলেই দেখে দেখে অভ্যস্ত। এই সমতলে , প্রতি ভোরে , রাস্তায় , আড্ডায় , মিছিলে , কান্নায় , পিল খানায় , আমরা কি একই আক্রোশ , একই দুঃখে ফেটে পড়ি না? আমরা সকলেই কি একবার করে হলেও কেঁদে উঠিনি , " এ তো আমার দেশ নয়, নইলে আমার সাথে এমন করবে কেন?" এত মিল সত্ত্বেও আমরা আলাদা হচ্ছি কেন? কারণ আমাদের ভাবতে বাধ্য করা হচ্ছে আমরা খুব আলাদা । একজন সাদা ধর্ষক আর একজন কালো ধর্ষকের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ।

দুটোই আগ্রাসন । অপরাধ। কিন্তু তারপরেও আমেরিকায় কেউ কেউ আদালতে চিৎকার করে , " আমি কালো তাই তোমরা সাদারা আমাকে অপরাধী সাজাচ্ছো। " কথাটা মিথ্যে নয় মোটেও । সাদারা কালোদের উপর কম তো অত্যাচার করেনি।

কিন্তু , সেই ধর্ষকের দাবী এই অত্যাচারের ইতিহাস এর অংশ না ইতিহাসের সুযোগ সন্ধানী শঠতা ? আমরা এই রকম চিৎকারে যদি ভ্রান্তই না হবো তাহলে সমতলে যখন কেউ কারো জমি দখল করে নেয় তখন সেইটাকে " দখলের অপরাধ " বলি কেন? কেন বলি না জাতিতে জাতিতে মারামারি? কেন বলি না লাউয়াছড়ায় সিলটিদের জমি পুড়িয়ে দিচ্ছে অক্সিডেন্টাল কিংবা ফুল্বাড়িয়ায় দিনাজপুরীদের জমি দখল করে নিচ্ছে এশিয়া এনার্জি? কেন বলি না , " আগে বলুন ধিক বাঙালী নইলে আপনার সাথে কথা শুরুই করবো না? " লাউয়াছড়া , ফুলবাড়িয়া কিংবা পিলখানা তো আমাদের , মানে এই " ধিক বাঙালীদের " সামনেই ঘটলো , নাকি? " দখলকারীর কোন জাত থাকে না" একটু লক্ষ্য করুন, কল্পনা চাকমাও পাহাড়ি । সন্তু লারমাও পাহাড়ি। শান্তিবাহিনীকে ঘৃণা করা আমার ডাক্তার চাকমা বন্ধুটিও পাহাড়ি। আমার বাড়ির পাশের বাড়িতে থাকা সেনা অফিসার , যার দুই পুত্রই কোটা ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়াতে স্কলারশীপ ও মাইগ্রেশন করেছে, তারাও পাহাড়ি। নিজ ভূমি থেকে উৎখাত হওয়ার পরে যেই যুবকের দল পাহাড়ে শান্তিবাহিনীর নামে লড়ছে সেও পাহাড়ি।

আবার যে ঐ বাহিনীর ভিতরে থেকেই চাঁদাবাজি করছে, অপহরণ করছে, সেনা খুন করছে অথবা ভারতের সাথে এজেন্ডা মিলিয়ে স্বাধীন জুম্ম ল্যান্ডের পক্ষে যুদ্ধ করছে , সেও পাহাড়ি। ঠিক একই রকম ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঙ্গালীদের ভিতরেও ভালো , খারাপ, কুচক্রী , উপকারী , অপকারী , ধনী, গরীব ,দালাল, দেশপ্রেমিক ইত্যাদি পাওয়া যাবে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন জুম্ম ল্যান্ড বানিয়ে দিলেই কি এই শ্রেনী বিভাজন নাই হয়ে যাবে? এক উপজাতি আরেক উপজাতির জায়গা দখল করে তাড়িয়ে দেবে না এই নিশ্চয়তা কে কখন দিলো? এই বর্তমানেও চাকমা ছাড়া অন্য কোন উপজাতিকে কেন ক্ষমতায়, শিক্ষায় , রাজনৈতিক কর্মকান্ডে লাস্ট বেঞ্চে বসে থাকতে হয়? এই সব বিবেচনা আমাদের , মানে ঢাকাইয়া ব্লগারদের মনে হতেই পারে , কিন্তু পাঠক, কথা তো সেইটা নয় । কথা হলো , যার জমি সে কি চায়? এবং, পাহাড়ের জমি আসলে কার জমি? এই জন্যই সমস্যা শুধু , সরকারের ভূমিকায় । যেই অভিযোগ করা হচ্ছে , সরকার সত্যি সত্যি সব সময় অপাহাড়িদের পক্ষ নেয় নাকি এইটা অপপ্রচার? সরকার কি "পাহাড়ি" বলে জমি বেদখল করে নিচ্ছে নাকি "দুর্বল" বলে , ক্ষমতাহীন বলে দখল করে নিচ্ছে যেমনটা সমতলেও করে ? আমরা যদি শুধু সেনাবাহিনীর গল্প শুনি , তাহলে কি পুরোটা জানতে পারবো? আমরা যদি শুধু পাহাড়িদের গল্প শুনি তাহলেও কি পুরোটা জানতে পারবো? আমরা যদি শুধু পাহাড়ের বাঙ্গালীদের গল্প শুনি তাহলে কি পুরোটা জানতে পারবো? এই যে তিন দলে ভাগ করলাম , তার ভিতরে ধনী, গরীব, ক্ষমতাশালী , ক্ষমতাহীন, রাজনৈতিক , অরাজনৈতিক , পক্ষীয় , নিরপেক্ষ ইত্যাদি উপদল সবার গল্প যদি নাই জানি, আমরা কি কোন দিনও বুঝবো আসলেই কোনটা সত্যি হতে পারে? " সবচেয়ে বড় কথা হলো , এই গল্পের ভিত্তিতে শায়ত্ব শাসন কিংবা স্বাধীন জুম্ম ল্যান্ডের দাবী যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কি না? " এই ভিন্ন ভিন্ন গল্প, ভিন্ন ভিন্ন চাওয়া , ভিন্ন ভিন্ন দর্শনকে এক জায়গায় করে সকলকেই একে অপরের দৃষ্টিভঙ্গী দেখা, শুনা, বুঝা ও বুঝাবার সুযোগ দিতেই আমি চেষ্টা চালিয়ে গেছি পি মুন্সীর পোস্টে।

পাহাড় থেকে দূরে বা কাছে থেকে যারা ব্লগিং করছে তারা সকলেই যেন নিজের কথাটা বলার সুযোগ নিয়ে বলতে পারে কেন তারা কোন পদক্ষেপ সমর্থন করছে কিংবা করছে না । পাহাড়ে বসবাসকারী সকল বাংলাদেশের নাগরিক নিজেদের ইচ্ছায় এবং নিজেদের ডেকে আনা বন্ধু বান্ধবের সাহায্য নিয়ে নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা বাংলাদেশ চায় নাকি জুম্ম ল্যান্ড চায় । আমি বাংলাদেশ চাইতে পারি। আমি জুম্ম ল্যান্ড ও চাইতে পারি । কে কেন কি চাইছি , কোন পদ্ধতিতে চাইছি , সরকারের কোন পদক্ষেপকে কেন স্বাগত বা নিন্দা জানাচ্ছি - এই ডায়লগ চালু করা ও চালু রাখার জন্যই তো ব্লগ ! আমি যে উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করেছিলাম , সকল মানুষের সকল ধরনের গল্পকে এক জায়গায় করা , আশা করছি , আমার কিংবা অন্য ব্লগারদের এক পেশে মনভাবের অভিযোগ তুলেই আপনারা ক্ষান্ত দেবেন না , নিজের এক পেশে মনভাবটিকেও আরেকটু উদার ও পূর্ণতা দিতে বাকি পাশ গুলো দেখার চেষ্টা করবেন ।

শেখ ফজলে এলাহীর পোস্টে আমার মন্তব্য গুলো করার উদ্দেশ্য ছিলো তাই। তার গল্পের বাইরেও অন্য গল্প আছে , এইটাই তাকে বুঝানো, সেই গল্প আমার নিজের গল্প না হলেও । আশা করি নিচের ভিডিওটি আপনাদের সবাইকেই সেই " মাল্টি স্টোরি " কেন শুনা উচিত ও " সিঙ্গেল স্টোরী " শুনা ও বলার বিপদ বুঝতে সাহায্য করবে। Chimamanda Adichie: The danger of a single story

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।