আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিশু শ্রমের ওপর ফিচার



শিশুশ্রম বন্ধ করুন, শিশুদের জীবন বাঁচান আজমাল হোসেন মামুন ১৪ থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন করা হয়ে থাকে। এবারও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে উদ্যাপিত হচ্ছে। শিশুরা পবিত্র। সব ধর্মেই শিশুর প্রতি আদর, যত্ন ও স্নেহকে পরম ধর্ম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ‘ইউনিসেফ’-এর গৃহীত সনদের আলোকে ১৮ বছরের নিচে সকল মানুষ হচ্ছে শিশু।

সেখানে শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প-কারখানায় কর্মী হিসেবে কাজ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ৫০ হাজার। সে সময় ৩১ লাখ ৮০ হাজার শিশু শ্রমে নিয়োজিত ছিল। এর মধ্যে ১৩ লাখ শিশু অতি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ২১ কোটি ৭০ লাখ শিশুশ্রমিক রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রম নিরসনেওর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে মার্চ মাসে ঝুঁকিপূর্ণ ও নিকৃষ্ট শিশুশ্রম নির্মূল এবং প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কনভেনশনে অনুসমর্থন দেয়। তারপরেও নিজ দেশের আলোকে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। এর চেয়ে আর দুঃখের বিষয় কী হতে পারে? আমাদের দেশে প্রায় ৬ কোটি ৫০ হাজার শিশু রয়েছে। শিশুরা সর্বদিক থেকে বৈষম্যের শিকার।

বিশেষ করে, পথ শিশু ও প্রতিবন্ধী শিশুরা পিছিয়ে রয়েছে। দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও পরিবারের অসচেতনার কারণে সকল ধরনের শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এসব শিশুরা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার ও অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। ১৯৮৯ সালের নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয় শিশুদের অধিকার নিয়ে একটি সনদ বা নীতিমালা। ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই সনদটি আন্তর্জাতিক আইনের একটি অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।

জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ১৯১টি দেশ এই সনদে স্বাক্ষর করে। শিশু সনদে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে ৫৪ টি ধারা। গত ১৭ সেপ্টেম্ব ২০০৮ ইং তারিখে দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘শিগগিরই ঘোষণা হচ্ছে না শিশুশ্রম নিরসন নীতি, খসড়ায় অনেক কিছু পরিষ্কার নয়’ শীরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি পড়ে মন চমকে উঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৭ আগষ্ট এক সেমিনারে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.মাহফুজুল হক বলেছিলেন, তাদের মন্ত্রণালয়ের তৈরি শিশুশ্রম নিরসন নীতি এক সপ্তাহের মধ্যে ঘোষণা করবে সরকার।

কিন্তু অনেকদিন সময় অতিবাহিত হলেও প্রকাশিত হয়নি শিশুশ্রম নিরসন নীতিমালা। এছাড়াও আরো জানা গেছে, নীতিমালালা ঘোষণায় সরকারের বিরুদ্ধে কালক্ষেপনের অভিযোগ এনে বলা হয়েছে অনেক কিছু স্পষ্ট করা হয়নি নীতিমালায়। আমাদের দেশে এখনও অনেক শিশু শিক্ষা অধিকার থেকে বঞ্চিত। রাস্তা ঘাটে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব শিশুরা ইট-ভাঙ্গা, রাজমিস্ত্রীর হেলপার, বিভিন্ন দোকান ও মিল-কল-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে।

এসব শিশুরা দুঘর্টনার শিকার হয়ে প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়। অনেকে মাত্রারিক্ত পরিশ্রম করার দরুণ অপুষ্টিতে ভোগে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের অনেকের বাবা-মা নেই, অনেকের বাবা-মা সংসারের অভাবে শিশুকে বাঁসা বাড়িতেও কাজ করতে পাঠায়। তাদের আবার অনেক সময় পেটভাতা হিসেবে কাজ করতে হয়। অথচ শিশুদের রয়েছে সেবা লাভের অধিকার, স্বাস্থ্য সুরক্ষার অধিকার, খেলা-ধূলা ও বিনোদনের অধিকার।

প্রতিবন্ধী শিশুদের অবস্থা আরো আশাংকাজনক। তারা পরিবারে ঠিকমত পায় না পরিচর্যা। শিক্ষার অধিকার। শিশুদের কাজের পারিশ্রমিক কম ও অবুঝ হওয়ায় অনেক কল-কারখানা, ও বাঁসা বাড়িতে কাজের জন্য গ্রাম-গঞ্জ থেকে আনা হয়। গৃহকর্তা-গৃহকর্তী দ্বারা নির্যাতিত হয় শিশুরা।

কন্যা শিশুদের প্রতি যৌন নির্যাতন করে থাকে অনেক গৃহকর্তা। সারা বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে ৫ বছরের কম বয়স্ক ২৬ হাজার শিশু প্রতিরোধযোগ্য রোগে মারা যায়। যার প্রায় ৯৮ শতাংশ ঘটে থাকে উন্নয়নশীল দেশে। উন্নয়নশীল দেশে হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ৬৫ জন শিশু মারা যায় (২০০৬) যা ১৯৯৯০ সালে ছিল প্রহি হাজারে ১৫১ জন। ২৬.৪ শতাংশ শিশু অপুষ্টিতে ভোগে।

দেশের শতকরা ২২ শতাংশ শিশু প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। জন্মের ছয়মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হয় ৩৭ শতাংশ শিশুকে। ১লা সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সেভ দ্য চিলড্রেন এবং এমিনেন্সের যৌথভাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য প্রদান করেন। পরিশেষে বলতে চাই, আজকের শিশু আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যত। এরা জাতির কর্ণধার হিসেবে দেশকে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াবার প্রত্যয়ে কাজ করবে এই কথা ভেবে দেশে শিশুশ্রম বন্ধ করবে এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

লেখক- আজমাল হোসেন মামুন উন্নয়নকর্মী, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (বিপিকেএস) বিপিকেএস কমপ্লেক্স, দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০। মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫ (প্রয়োজনে মিস কল)।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.