আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ওয়ান ইলেভেন (চতুর্থ পর্ব)

যে জানেনা এবং জানে যে সে জানেনা সে সরল, তাকে শেখাও। যে জানেনা এবং জানেনা যে সে জানে না, সে বোকা-তাকে পরিত্যাগ কর।
আগের গুলো পড়তে চাইলে- ওয়ান ইলেভেন (তৃতীয় পর্ব) ওয়ান ইলেভেন (দ্বিতীয় পর্ব) ওয়ান ইলেভেন (প্রথম পর্ব) কে! কে যায়! আমি প্রায় চীৎকার করে উঠি। ভাগ্যিস আমার অর্গান অব স্পীচ সক্রিয় না থাকায় আওয়াজ বের হয়নি। শায়েস্তা খাঁর এই তোরণের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে কেমন যেন একটা ঝিমুনি এসে গিয়েছিল।

অথবা বলা যায় আমার মস্তিষ্কের দুই ধরনের নিউরনের মধ্যে একটা বিশ্রাম বিশ্রাম ভাব চলে এসেছিল। অতি সন্তর্পনে চোরের মতো করে কে একজন শায়েস্তা খাঁর এই তোরণের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। গেটের ওপাশে প্রহরীকে দেখা যাচ্ছে না। গণতন্ত্রের হালুয়া রুটি খেতে তোরণ ফাঁকা রেখে কোথাও গিয়েছে মনে হয়। আমার ঝিমুনি কেটে যায়।

দশ মাত্রার দৃষ্টি ফেলি আগন্তুকের উপর। আরে! এ যে দেখছি সেই পাপেট! ওয়ান ইলেভেনের দিনগুলোতে বসের ল্যাবরুমে গবেষণার জন্য পাপেটটি আমেরিকা থেকে আমদানি করা হয়েছিল। একটি রোডম্যাপ ধরে ধরে পাপেটটি কৌশলে বসের ল্যাবরুমে ঢুকে পড়ে। তারপর সে কী হম্বিতম্বি! ল্যাবরুমের সংস্কার করতে হবে, রোডম্যাপ ধরে চলতে হবে, দুর্নীতিকে না বলতে হবে, লাইনচ্যুত ট্রেনকে লাইনে উঠিয়ে দিতে হবে। তখন আমি মনে মনে হেসেছি।

আমি জোরে হাসতে পারি না। কারণ নিষ্ঠুর ওয়ান ইলেভেনে আমি যখন রাজপথে মৃত গণতন্ত্রের নমুনা হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম- তখনই শেষ হাসি হেসে নিয়েছিলাম। আমার ঠোঁটের দু প্রান্ত ছুঁয়ে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠেছিল মানুষের এই নৃশংসতা দেখে। এটিই আমার স্মৃতিতে ভেসে উঠা শেষ হাসি ছিল। সাইবর্গ ম্যান হয়ে জন্মাবার পর থেকে বস আমার প্রোগ্রামিংয়ে হাসি নামক সফটওয়্যারটি দেন নি।

পাপেটটি চোরের মতো পা টিপে টিপে তোরণের দিকে এগুচ্ছে। একবার ভিতরে উঁকি মেরে দেখে নিল ওপাশে কে আছে। আচ্ছা পাপেটটির তো বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড নেই। তাহলে সেওতো এই তোরণ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে পারবে না। কারণ এই ডিজিটাল আইডি কার্ড না থাকায় আমাকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।

সুতরাং পাপেটটিও যেতে পারবে না। আমি মনে মনে পুলকিত হই। যাক বাবা! তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে একটি কাজের কাজ হয়েছে। ডিজিটাল আইডি কার্ড। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী খুবই অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় আট কোটি লোককে ডিজিটাল হিসাবের আওতায় নিয়ে এসেছে।

ওয়ান ইলেভেনের আগে এ কার্ড করার বিধান ছিল না। তাই আমার বায়োমেট্রিক আইডি কার্ড নেই। আর পাপেটের তো থাকার প্রশ্নই আসে না। তাই এই তোরণ দিয়ে পাপেটের প্রবেশের প্রশ্নই আসে না। স্বাগতম! স্বাগতম!! তোরণের ওপাশ থেকে একগাল হাসি নিয়ে প্রহরী এগিয়ে আসে।

আরে ব্বাহ! কী অদ্ভূত!! ভোজবাজির মতো কোত্থেকে পাপেটের হাতে একটি আইডি কার্ড এসে হাজির হয়। শুধু কি আইডি কার্ড! আমি দেখতে পাই পাসপোর্ট, ভিসা, ডলার, নাগরিকত্বের সনদ, চারিত্রিক সার্টিফিকেট সহ আরও অনেক কিছু। প্রহরী পাপেটের হাতে সেগুলো গুঁজে দেয়। আর পাপেটটি কেমন রহস্যময়ী হাসি হেসে বাম হাতে একটি বড়সড় প্যাকেট ধরিয়ে দেয় প্রহরীর হাতে। তারপর বিজয়ীর ভঙ্গিতে গেটের ওপাশে পা বাড়ায়।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে তা দেখি। আমার সাইবর্গ আই দুটোতে দেয়াল ভেদ করে স্ক্যান করার প্রযুক্তি সংযুক্ত আছে। আমি প্যাকেটের ভেতরের জিনিসগুলো দেখি। আর্জেস গ্রেনেড, দশ ট্রাক অস্ত্র, একে ফর্টি সেভেন রাইফেল, পিস্তল...আরও আরও অনেক কিছু। এগুলো দেখে আমার মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর মধ্যে আবারও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।

ওয়ান ইলেভেনে মৃত গণতন্ত্রের নমুনা হয়ে রাজপথে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আমার ভাবনাগুলো সব এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। জটিল সব ভাবনাগুলো থেকে বের হয়ে আমি আবারও সরলভাবে সবকিছু ভাবতে বসি। ছয় জন ঘোড় সওয়ার শায়েস্তা খাঁর এই গেট পার হয়ে চলে গেছে সে কবে। ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে গণতন্ত্রের লাইনচ্যুত ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে একদল স্বপ্নদ্রষ্টা ঠিকই ট্রেনের যাত্রা শুরু করে দিয়েছিলেন।

সেদিনই ছয় ঘোড় সওয়ার এই গেট দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। প্রায় দুই বৎসর ঘোড় সওয়াররা সারা বাংলাদেশ দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন। তোরণ দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় তখনও আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম। ওয়ান ইলেভেনের প্রথম অধ্যায়ের করুণ পরিণতি দেখছিলাম আর ভাবছিলাম সেই পাপেট সরকারের কথা...। চলবে...
 



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.