আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

......ও আমার নন্দিনী......


পরীর বিয়ে। ভাবতেই মনটা কেমন যেনো ক’রে ওঠে আকাশের। দীর্ঘ দেড়টা বছর কোনো যোগাযোগ নেই পরীর সাথে। শুধু অভিমান নয়, তার চেয়েও অনেক বেশী কিছু ধীরে ধীরে বিষিয়ে দেয় ওদের মন। ভীষণ আবেগী আর গভীর একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে শত টুকরো হয়ে ছড়িয়ে যায়, মিলিয়ে যায়।

পড়ে থাকে একরাশ শূন্যতা আর বুক ভরা হাহাকার। সম্পর্ক হয়তো ভাঙ্গে, ভালোবাসাও কি তাই? তাই যদি হবে তবে পোড়ে কেনো ওরা? কেনো প্রতিটা দিন আকাশ ভাবে পরীর কথা? কেনো বিশেষ দিন, ক্ষণগুলোতে হাতড়ে বেড়ায় স্মৃতির ভান্ডার, হানা দেয় মনের বদ্ধ দুয়ারগুলোতে? কেনো অলস নিঃসঙ্গ প্রহরে চুপটি করে বসে থাকে ওদের কল্পনার মাচাটায়? একাকী পরীর জীবনে নিজের উপস্থিতি নিয়ে বরাবরই সংকোচ ছিলো আকাশের। শুরু থেকেই মনে প্রানে চেয়েছে সুন্দর একটা সংসার হোক পরীর, বিবাহিত জীবনের সবটুকু সুখের নির্যাস মেখে পরিপূর্ণ হোক পরী সোনাটা। সেই ভাবনাটা বাস্তব হওয়ার অকারণ বিলম্বে ধৈর্যহারা হয়ে উঠছিলো আকাশ। পরীর সাথে যোগাযোগ রক্ষায় ওর বিবাহিত জীবনের প্রতিবন্ধকতাগুলো দিনদিনই যেনো গৌন হয়ে উঠছিলো পরীর কাছে, বাড়ছিলো অভিযোগ।

পরীর নিজের সেই অভিজ্ঞতা হোক, সেটাও জুড়ে বসেছিলো আকাশের সেই ভাবনার সাথে। সুদীর্ঘ দেড় বছরের বিরতির পর হঠাৎ পরীর মেইল... ‘কিছু জিনিস দেবার ছিলো। ঠিকানা জানানো যাবে? এটাই শেষ’। আকাশের জবাব... ‘শেষ ই যদি হবে তবে সাক্ষাতেই হোক’। কতোদিন পর দেখা।

পুরনো পটভূমিতে পুরনো মুখ, অনুভূতি আর পরিস্থিতি কিছু ভিন্ন। ফাঁকা স্টেশনটার প্ল্যাটফর্ম ধরে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে আকাশ শোনে পরীর বিয়ের আয়োজনের বৃত্তান্ত। কিছুটা শঙ্কা আর অনিশ্চয়তার ছাপ পরীর আচরনে, খুশীও একইসাথে। আকাশের মিশ্র অনুভূতি। দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার যেনো অবসান আর সেই সাথে পরীকে হারিয়ে ফেলার অন্যরকম এক শূন্যতা।

মন বড় অদ্ভুত এক কারাগার। কিছু অনুভূতির সেখানে জাবজ্জীবন দন্ড, আবার কিছু অনুভূতি থানার খাতায় নাম লেখানো মৌসুমী আসামীর মত, আসে আর যায়। অনুষ্ঠান জুড়ে সাজপোষাক পরা সব মানুষ। বেশ কিছু চেনা মুখ। আগে কখনো ছবি দেখেছে তাদের আকাশ।

বিয়ের সাজে মঞ্চ আলো করে বসে আছে পরী আর তার বর। কেমন অচেনা লাগে পরীকে। কল্পলোকের পরীরাও কি এমন সুন্দর হয়? আড়াল থেকে দ্যাখে আকাশ। ইচ্ছে করে একটু ছুঁয়ে দিয়ে আসে পরীকে। সচেতন মন বাধ সাধে, পরী এখন তোমার নয়।

ছিলো না কখনোই। তবুও আকাশ জানে আছে পরী, থাকবে সারাজীবন। এ এক অন্যরকম থাকা, পার্থিব সব হিসেবের বাইরে। অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে বাড়ীর পথ ধরে আকাশ। প্রফুল্ল মনটা আস্তে আস্তে বিষাদে ছেয়ে যায়।

কারণ বোঝে না আকাশ। গাড়ীর উইন্ডশীল্ডে মৃদু ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি, তবুও কেনো যেনো অনেক বেশী ঝাপসা দেখায় চারদিক। পরী, ভালো আছো তো? তোমার সেই দিনটার কথা মনে আছে? তুমি আর আমি ট্রেনে যাচ্ছিলাম অজানা গন্তব্যে। শুরুতে ফাঁকা থাকলেও আস্তে আস্তে ভরে উঠেছিলো ট্রেন টা। চারপাশে অচেনা সব মানুষ।

গন্তব্যের নিশানা অজানা। তার মঝেও তুমি আর আমি মগ্ন হয়ে ছিলাম আমাদের ছোট্ট জগতটাকে নিয়ে। সময় এর সাথে আশেপাশের মুখগুলো আর ততোটা অপরিচিত লাগছিলো না। পাশের দম্পতির ছোট্ট মেয়েটার ঠোঁটেও মাঝে মাঝে ছুঁয়ে যাচ্ছিলো পরিচিতের হাসি। সহযাত্রীর কথায় গন্তব্যের নিশানাও এক সময় জানা হলো।

দাম্পত্য জীবনটাও এমনই এক যাত্রা। প্রথমে শুধুই দু’টো মানুষ। তারপর ধীরে ধীরে প্রাকাশ পায় একটা পরিপূর্ণ জগত, একই সুতোয় গাঁথা কতগুলো পরিবার। নতুন এই জীবনটাকে শুরুতে মনে হয় যেনো এক দুর্যোগ, এক অযাচিত শৃঙ্খল। ধীরে ধীরে সেটাই হয়ে ওঠে পরিচিত আর সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য অবলম্বন।

মানুষের বাকীটা জীবনের সম্পর্ক আর সামাজিকতারও সেটা এক স্থায়ী ভিত্তি। পরী, আমাদের সেই দুর্নিবার উচ্ছল ভালোবাসা, গভীর আকর্ষণ, এই দীর্ঘ পথচলার উত্থান পতন, ভাঙ্গন, বিদ্বেষ, অবিশ্বাস, সবই একটু একটু করে শিক্ষা রেখে গ্যাছে। ঠেকেই আমরা শিখেছি, কষ্টে পুড়েছি, বিষাদে লীন হয়েছি। আমার মনে হয় আমাদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরী করতেই নিয়তির এই আয়োজন। আমার হিসেবে যেকোন সম্পর্কের স্থায়ীত্বের চাবিকাঠি বিশ্বস্ততা, সীমিত ও বাস্তব প্রত্যাশা এবং পারষ্পরিক আপোস ও সমঝোতার মনোভাব।

আমি নিশ্চিত, তোমার উপলব্ধি দিয়ে তুমি গুছিয়ে নেবে তোমার এই নতুন জীবন ও সম্পর্ক। বিবাহিত জীবনের ভালোবাসা আর অন্য একজনকে ভালোবাসার স্বরূপ নিয়ে অনেকবার প্রশ্ন তুলেছো তুমি। বরাবরের মতোই বলবো... প্রতিটা ভালোবাসার ধরণ ই আলাদা। দাম্পত্যের ভালোবাসায় মিশে থাকে আস্থা, নির্ভরতা, পারষ্পরিক বোঝাপড়া, সন্তান ধারণ ও লালন, প্রাত্যহিক জীবন যাপনের আরও অন্যান্য সব নিয়ামক। সেখান থেকে ভালোবাসাটাকে বিচ্ছিন্ন করা যায় না যেমন, তেমনি জোর করে চাপিয়ে দেওয়াও যায়না।

ওই ভালোবাসাটা ধীরে ধীরে নিঃসরিত হয়ে গড়ে তোলে এক স্থায়ী বন্ধন। সেটা চর্চায় বাড়ে, আস্থায় বিকশিত হয়, প্রকাশে রঙিন হয়। তোমার আমার ভালোবাসা সে এক ভিন্ন নিষিদ্ধ জগত, না পাওয়ার মাঝে সব খুঁজে পাওয়ার এক আকুতি যেনো। এ ভালোবাসায় দায়বদ্ধতার চেয়ে আবেগের প্রাধান্য, চাওয়া পাওয়ার হিসেবের চেয়ে উদারতাই কাম্য। পরিণতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার মাঝেই এই ভালোবাসার গাঁথুনি।

দীর্ঘ এই ভালোবাসার পথ পরিক্রমায় সময়ে অসময়ে কত কষ্ট এসে হানা দিয়েছে। সবশেষে আমরা বোধহয় সমকক্ষ হলাম। সেটা একদিকে যেমন স্বস্তির, অন্যদিকে শঙ্কার। স্বস্তির এইজন্য যে আমরা পরষ্পরের অবস্থানটাকে হয়তো আরো ভালোভাবে বুঝবো, আর শঙ্কার এইজন্য যে আমাদের যোগাযোগের গন্ডী আরও সীমাবদ্ধ হয়ে গ্যালো। সীমাবদ্ধতার এই বেড়াজালে আড়াল আর না পাওয়ার প্রকোপে হারিয়ে না ফেলি আমার পরীটাকে।

পরী, এতো ভাবনা, শঙ্কার মাঝেও আমার শেষ চাওয়া তোমার জীবনের পরিপূর্ণতা। না পাওয়ার কষ্টগুলো ছাপিয়ে সুখে ভরে উঠুক তোমার জীবন। পুরনো সব অবহেলা, অভিমান ভেসে গিয়ে উদ্ভাসিত হোক বাকী দিনগুলো। তোমার অসীম ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে জড়িয়ে রাখো তোমার ছোট্ট সংসার আর প্রিয় মুখগুলো। সুখে থাকো জীবনের শেষ দিনটা পর্যন্ত।

সুখস্মৃতি আর ভালোবাসায় কানায় কানায় ভরে উঠুক তোমার মনের বাড়ী। আমার জন্য চেয়ে নিলাম ছোট্ট ঝুলবারান্দাটা আর আমাদের কল্পনার মাচাটা। মাঝে মাঝে এসো। প্রতীক্ষায় থাকবো আমি, সারাজীবন। The Introduction All about Pori & Akash
 


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।