আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিরিয়ার আসন্ন বহুজাতিক আক্রমণে ইতিহাস ভয়ংকর বাঁক নিতে যাচ্ছে!



আরব বসন্তের যে ঢেউ আফ্রিকা হয়ে মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে তা সিরিয়ায় আছড়ে পড়েছে প্রায় বছর দূয়েক হয়ে গেল। দুই বছরে প্রাণ হারালো প্রায় লক্ষাধিক মানূষ। সিরিয়া ইস্যুতে পৃথিবীর বড়-বড় শক্তি গুলো দুই ভাগ এবং কুটনীতিক শিষ্ঠাচারের মধ্যে থেকে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে প্রধান শক্তিগুলুর মধ্যে। সবচাইতে ভয়ংকর বিষয় হলো মুসলিম রাস্ট্র গুলু শিয়া-সূন্নীতে বিভক্ত এবং রণ হুংকার ছাড়ছে একে অন্যের বিরুদ্ধে সিরিয়ায় আমেরিকার নেতৃত্বে সামরিক হামলা প্রায় নিশ্চিত। মুসলমানদের এতে আনন্দিত হবার কিছু আছে বলি আমি মনে করিনা যদি ও বাসার আল আসাদ একজন জঘণ্য শাষক এবং নির্বিচারে বিরুদ্ধমতের মানূষদের হত্যা করে চলেছে।

বৃহত শক্তি গুলু চাচ্ছে প্রচন্ড ঈসরায়েল বিদ্বেষী বাসার কে সরিয়ে দিতে আর ইসলাম পন্হী গ্রুপগুলু (আল-কায়েদা, আন-নুসরাহ্‌ )চাচ্ছে স্বৈরশাষক বাসার কে সরিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে। যে আল-কায়েদা আফগান রণাঙ্গণে আমেরিকার শত্রু সে আল-কায়েদা সমর্থীত গ্রুপগুলু সিরিয়াতে আমেরিকার মিত্র! দু-পক্ষের চাওয়া এক হলে ও দীর্ঘমেয়াদী উদ্দেশ্য ভিন্ন। বিদ্রোহী গ্রুপগুলাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করে ও যখন বাশার কে সরানো যাচ্ছেনা তখন সামরিক হামলা জরুরী হয়ে পড়লো। কিন্তু অজুহাত দরকার! গত ২১ আগষ্ট চালানো হলো বিষাক্ত গ্যাস হামলা। মারা গেল ১৩০০ বেসামরিক মানূষ।

আমেরিকা শুরু করলো মানবতার জন্য মায়া কান্না এবং সরারসরি দোষ চাপালো আসাদের ঘাড়ে। সিরিয় যুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গণে সরকারি বাহিনী একের পর এক জয় পাচ্ছিল এবং রাসায়নিক অস্ত্র তল্লাসিতে জাতিসংঘের পরিদর্ষক যখন সিরিয়া সফর করছে ঠিক তখন আসাদ সরকার রাসায়ণিক অস্ত্র প্রয়োগ বিপুল সংখ্যক করে নারী-শিশু হত্যা করবে তা অবিশ্বাস্য এবং সুইসাইডা। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে যে রাসায়নিক অস্ত্র আছে তা প্রমাণিত। ল্যাবরেটরিতে সারিণ গ্যাস দিয়ে খরগোশ হত্যার টেষ্ট আমরা ইউটিউবে দেখেছি। বিদ্রিহীদের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ও ক্লোরিণ এবং সায়ানাইডের মত ক্যামকেল এজেন্ট পাওয়া গেছে এবং সরকারি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার ও হয়েছে।

যাই হোক আবারো জনপ্রিয় ফলস্‌ ফ্ল্যাগ আক্রমণে বলি হচ্ছে আরেকটি মুসলিম দেশ। আক্রমণের ধরণ নাকি হবে নিয়ন্ত্রিত। ভূ-মধ্য সাগরে অবস্হানরত আমেরিকান ডেষ্ট্রয়ার আর ফ্রিগেট থেকে ছোঁড়া হবে ৬ লক্ষ পন্চাশ হাজার ডলার দামের টোমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। টার্গেট বাশারের এ্যলিট ফোর্সের কৌশলগত স্হাপনা। মিশণে যোগ দেবে বৃটিশ রণতরী গুলু এবং তুরস্ক - সৌদি - জর্ডান বা কাতার থেকে বি-৫২ দুরপাল্লার বোমারু বিমান গুলু।

কোন সৈন্য আপাতত সিরিয়ার মাটিতে নামবেনা এমন কি এফ - ১৬ এর মত চতুর বিমান গুলু ও সিরিয়ার আকাশে ঢুকবেনা, যে ভাবে অবলীলায় হামলে পড়েছিল বাগদাদের উপর। সিরিয়ার রয়েছে নিজস্ব অত্যাধূনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যাবস্হা। তার উপর যোগ হয়েছে রাশিয়ান এস- ৩০০। এই এস - ৩০০ যে খেল দেখাবে সন্দেহ নাই। তার উপর সিরিয়ার রয়েছে তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা চালাবার মত বহু সংখ্যক মাঝারি পাল্লার ব্যালাষ্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

ঈসরাঈল সহ মধ্যপ্রাচ্যের সব মার্কিন ঘাঁটি সিরিয় ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে। ইস্কান্দর এক্ষেত্রে তুরুপের তাশ হয়ে উঠবে। রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম সলিড জ্বালানীর এ মারণাস্ত্র বিশেষ করে ঈসরাঈলের জন্য ত্রাশ হিসেবে দেখা দেবে। সিরিয়ায় হামলা হলে সিরিয়ান বাহিনী যে ঈসরাঈলে কে টার্গেট করবে তারা এটা প্রকাশ্যেই বলেছে। কেনই বা করবেনা? এই জারজ রাষ্ট্রটির নিরপত্তা নিশ্চিত করতেই তো এত আয়োজন।

ইসরাঈল ইতোমধ্যেই রিসার্ভ সেনা তলব করেছে এবং সিমান্তে প্যট্রিয়ট এবং এ্যারো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্হা মোতায়েন করেছে। বিলিয়ন ডলার মূল্যের এ ব্যবস্হা গাজা থেকে ধেয়ে আসা হোম মেড রকেট কাসাম, গ্রাদ বা কাতিউসার পেছনে ধাওয়া করতে গিয়ে অনেক বার নাকাল হয়েছে। দেখা যাক ইস্কান্দর এর মত ইন্টিলিজেন্ট রকেট গুলুর বিরুদ্ধে কেমন পারফর্ম করে। আমেরিকা যুদ্ধ শুরু করতে পারবে। কিন্তু কখন শেষ হবে তা হয়তো নির্ধারণ করতে পারবেনা।

কারন রাশিয়া বেকড্‌ আসাদ যখন দেখবে তার পতন নিশ্চিত তখন সে বেপোরোয়া হয়ে উঠবে এবং তার তূণে থাকা সবগুলু তীর ছুঁড়বে। তা ছাড়া এ অন্চলের প্রধাণ খেলোয়াড় ইরানের সাথে রয়েছে সিরিয়ার নিরাপত্তা চূক্তি। চূক্তি অনূযায়ী সিরিয়ার উপর যে কোন আক্রমণ ইরানের উপর আক্রমণ বলে বিবেচিত হবে। তা ছাড়ে ইরান ভাল করেই জানে সিরিয়ার পতনের ইরান ঐ অন্চলে বন্ধুহীণ হয়ে পড়বে এবং ইরান পরবর্তী টার্গেট। তাই ইরান কি আচরণ করে বলা মুস্কিল।

তবে ইরান নিয়ন্ত্রিত লেবাননের হিযবুল্লাহ্‌ এবং গাজা থেকে হামাসের মত গ্রুপ গুলু সরাসরি ইসরাঈলের উপর আক্রমণ চালাবে। তাই সিরিয়ার উপর সামরিক আক্রমণ পিকনিক হবেনা। অলরেডি তেলে এবং স্বর্ণের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ইরান যদি কোন কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে আর সৌদিআরবের তেল ক্ষেত্র সিরিয়ার আক্রমনের টার্গেট হয় তবে ভয়ংকর বিপদের মুখিমুখি হবে গোটা সভ্যতা। সিরিয়ায় রয়েছে রাশিয়ান তারতুশ বন্দরে রয়েছে রাশিয়া নৌ-ঘাঁটি।

রাশিয়ান সাবমেরিন আর ফ্রিগেট গুলু ভূ-মধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক পানি-সীমায় চষে বেড়াচ্ছে। এমন অবস্হায় কোন পক্ষের সামান্য ভুল বা কোন ফলস্‌ ফ্ল্যাগ আ্যাটাকে রাশিয়া যদি জড়িয়ে পড়ে পাল্টে যাবে ইতিহাসের বাঁক।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.