আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রথম রান্না

ইতপউস .....
বাসায় আম্মু রান্না করেন। ছোট বেলা থেকে আম্মুর রান্না দেখেই বড় হয়েছি! কিন্তু রান্না ঘরের টুক টাক কাজ ছাড়া কোন রান্না করার অনুমতি পাই নাই আম্মুর কাছে। কারন আমরা সামান্য এক কাপ চা বানাতে রান্না ঘরের বারটা বাজিয়ে ফেলি, দেখে মনে হবে ঝড় বয়ে গেছে! তাই আম্মু বিরক্ত হয়ে রান্না ঘরের ডিপার্টমেন্টে আমাদের প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছে! আমাদের এক্সপেরিমেন্ট চলে তাই যখন আম্মু বাসায় থাকেনা! সেই সুযোগ আমরা খুব কম পাই! প্রায় বার বছর আগের কথা। আম্মু নানু বাড়ি গিয়েছিল। সব রান্না করা আছে।

আমাদের কাজ শুধু গরম করে খাব। একদিন মাথায় চিন্তা আসল কিছু একটা বানাই! বই ঘেটে ঘুটে একটা রেসিপি বের করলাম। রেসিপির নাম - সব্জির সুপ! বের হলাম বাজারে সবজি কিনতে! কি কি সবজি লাগবে বললাম দোকানে। কিন্তু কতটূকু লাগবে তা আর বলতে পারিনা! হিসাব টাও ঠিক বুঝিনা! মহা চিন্তায় পরে গেলাম! কি বলব চিন্তা করে করে শেষ! এক সময় অনেক বাজার করেছি যখন ছোট ছিলাম। কিন্তু বড় হবার পর সেটা করতে হয়নি।

আর তার সাথে সাথে সব ভুলে গেছি! শেষ মেস লোকটা বলল, ঠিক আছে আফা... আমি সব মিলাইয়া দেই! আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম! বাজারের ঝামেলা থেকে বাসায় এসে রেসিপি নিয়ে বসলাম! এখন রেসিপিতে দেখি এমন কিছু আইটেম আছে যা আমি জানি না! আমি অনেক ভেবে টেবে সে সব আইটেম পরিবর্তন করে তার কাছা কাছি আইটেম খুজে বের করলাম! যেমনঃ লেখা আছে, কর্ণফ্লাওয়ার! আমি তখন চিনতাম না এটা কি! যেহেতু জানি না, ঐ আইটেম বাদ দিলাম রেসিপি থেকে। আবার ছিল টেষ্টিং সল্ট... এইটাও বাদ দিলাম, কারন জানিনা এটা কি! ভাবলাম লবন দিলেই হবে! আর ছিল সয়া সস... সেটা বাদ দিয়ে টমেটো সস! ছিল ভিনেগার... আমি বাদ দিলাম ... গোলাপ জলের বদলে দিলাম কেওরা জল! তারপর বসলাম সবজি কাটতে! কিন্তু রেসিপিতে কিছু বলা নাই কিভাবে কাটতে হবে! অনেক চিন্তা ভাবনা করে কুচি কুচি কিউব করে কাটলাম! সেখানে আবার আইটেম ছিল লাল শাক! লালশাক সিদ্ধ করে দিতে হবে। সেটা সিদ্ধ করতে গিয়ে গেল পাতিলের নিচে লেগে! আমি কখনই লবন আন্দাজ করতে পারিনা... তাই লবন দিয়ে দিলাম বেশী! এর পর পানি তে কাটা সবজি দিয়ে সিদ্ধ করলাম! তার সাথে লাল শাক দিয়ে দিলাম... যেভাবে যা করতে বলা আছে, করলাম... শুধু মাঝে মাঝে কিছু আইটেম চেঞ্জ হল! এই যা! আর সব ঠিক! এরপর চামচ দিয়ে নাড়াচ্ছি আর নাড়াচ্ছি! আমি সুপ খেয়েছি! তাই আমি অপেক্ষা করছিলাম কখন ঠিক তেমনটাই হবে সুপ! কিন্তু জাল দিতে দিতে পানি শুকায় গেল কিন্তু সেটা কিছুতেই আর সুপের মত দেখতে মনে হলো না! উলটা লাল শাকের রঙ দিয়ে সব সবজি লাল হয়ে গেছে! শেষে মেজাজ খারাপ করে পাতিল নামালাম! আব্বুকে দিলাম খেতে! আব্বু ১ চামচ খেয়ে আর খেতে পারে না এবার নিজে একটু বাটিতে নিলাম! নিজে খেতে গিয়ে বুঝলাম……. থাক আর বললাম না! আমার ৪ ঘন্টার পরিশ্রম জলে গেল! আমি নিশ্চিত ঐ রান্না টা যদি কাউকে খাওয়াতে পারতাম সে জীবনে আমার রান্না খেতে সাহস পাবেনা! খিক খিক! এই আমার প্রথম রান্না। এর পর আমি নিজেই ভয় পেয়ে গেছি! আন্টিকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছিলাম আমার কি কি ভুল হয়েছিল সেদিন! কিন্তু ভয়ে আর রান্না করার সাহস পাই নাই অনেক দিন! আর বইয়ের রেসিপি দিয়ে রান্না করার ইচ্ছাটা একে বারেই চলে গিয়েছিল!
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।