আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রান্না আর বান্না

রান্না: ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে!’ প্রবাদটা কতটা সত্যি, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। তবে যিনি রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন, তিনি কেমন রাঁধেন? কখনো কি রাঁধতে গিয়ে তাঁরাও ভুল করেন? আমরা জানতে চেয়েছি রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানের তিন উপস্থাপকের কাছে

আসল ঘটনা বুঝলাম রোস্ট নামানোর পর

শারমিন লাকী

যেহেতু রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করি, তাই সবার ধারণা, আমি অনেক ভালো রান্না করি। সে আশা নিয়েই সবাই খেতে বসে। কিন্তু আমি ভালো রান্না করি কি না, বলতে পারছি না। তবে আমার রান্না খেয়ে আত্মীয়স্বজন বেশ প্রশংসা করে।

এমনও হয়েছে, আত্মীয়স্বজন রান্না খেয়ে শুধু প্রশংসাই করেনি, প্যাকেট করে বাসায় নিয়ে গেছে। কিন্তু আমি রান্না করতে গিয়ে প্রায়ই যে সমস্যায় পড়ি, সেটি হলো, উপকরণের নাম ভুলে যাই। দেখা গেল, টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠানে আমি নিজেই দর্শকদের নতুন একটা রান্নার সঙ্গে পরিচয় করে দিয়েছি। যখন আমি সেটা রাঁধতে যাই, তখন উপকরণগুলোর নাম মনে করতে পারি না। বাধ্য হয়ে পরিচিত যারা অনুষ্ঠানটি দেখেছে, তাদের ফোন করতে হয়।

এ রকম অসংখ্যবার ঘটেছে। মাস তিনেক আগের একটি ঘটনায় আমি বিব্রত হয়েছিলাম। আমার ছেলে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে আত্মীয়স্বজন সবাইকে নিয়ে একটা গেট-টুগেদার পার্টির আয়োজন করেছি। সেখানে প্রায় ৫০ জনের মতো অতিথি আসবে। তারা আসার আগে রান্না শেষ করার চিন্তা করলাম।

শুধু তা-ই নয়, সব রান্নার দায়িত্ব আমি কাঁধে নিয়ে নিয়েছি বিজ্ঞ রন্ধনশিল্পীর মতো। কিন্তু টের পেলাম রান্না করতে গিয়ে। আমি ২০ জন অতিথির রান্না খুব ভালোমতো চালিয়ে নিতে পারি, কিন্তু ৫০ জনের বেলায় আমার অবস্থা হয়ে যায় অকূল সাগরে তীরহারা নাবিকের মতো। তবু সবকিছু ঠিকমতোই হচ্ছিল। গোল বাধল চিকেন রোস্ট নিয়ে।

দেশি মুরগির ৫০টি রোস্ট করতে হবে। সাহস করে উঠিয়ে দিলাম। সবকিছুই পরিমাণমতো দিলাম মনে হলো। আসল ঘটনা বুঝলাম রোস্ট নামানোর পর। কোনোভাবেই রোস্টের আসল রং আসেনি।

এমনকি স্বাদের দিক থেকেও আমার আগের পারফরম্যান্সের চেয়ে খারাপ। অনেক সময় ব্যাটসম্যানদের সাধারণ পারফরম্যান্স হারিয়ে গেলে যে রকম হয়, সে রকম ঘটনা ঘটেছে। রহস্য অনুসন্ধানে নামলাম। উদ্ঘাটন হলো এই, এতগুলো রোস্টের জন্য যে পরিমাণ পেঁয়াজ ও মসলা দরকার ছিল, সেই পরিমাণ দিইনি। পরিমাণের চেয়ে অনেক কম দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু তখন আর মসলা দেওয়ার উপায় নেই। বাধ্য হয়ে এই রোস্টই পরিবেশন করলাম অতিথিদের। ভাগ্য ভালো, তারা খেয়ে কিছুই বলেনি। উল্টো প্রশংসা করেছে। এটা আমাকে খুশি করার জন্য বলেছে কি না, বলতে পারব না।

 

মুখে দিয়েই বুঝলাম একটা গন্ডগোল আছে

অপি করিম

রান্না বিষয়ে আমি খুবই অজ্ঞ। কাজ চালানোর মতো রান্না ছাড়া বিশেষ কিছু করতে পারি না। তাই রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে গিয়ে ভালোই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। আগে থেকেই উপকরণের নাম ও খাবারের নাম মুখস্থ করেছি। এমন হয়েছে, বাচ্চাদের মতো মুখস্থ করে শেফ ও অনুষ্ঠানের প্রযোজকের কাছে পড়া দিয়েছি।

কিন্তু শুটিংয়ের সময় ওই সব নাম আবার ভুলে গেছি। আর বাস্তব জীবনে রান্না নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো নয়। প্রায় তিন বছর আগে জার্মানিতে আমার এক তুর্কি বন্ধু বিশেষভাবে ডিম রান্না করা শিখিয়েছিল। ডিমটা দুধসহ অন্যান্য উপাদান দিয়ে গুলে নিয়ে রান্না করতে হয়। খাবারটার নাম মনে নেই, তবে রান্নার পরে ওটা পিৎজার মতো ফুলে ওঠে এবং খুবই সুন্দর দেখায়।

জার্মানিতে আমার নিজের জন্য এ রান্না অনেকবার করেছি। দেশে এসে এই বিশেষ রান্নাটা পরিবারের সবাইকে খাওয়ানোর আয়োজন করলাম। দিনটা তিন বছর আগের শ্রাবণ মাসের প্রথম দিন। পরিবারের সবাই আমার সেই বিশেষ রান্না খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আমিও যথারীতি পাকা রাঁধুনির মতো রান্নাঘরে প্রস্তুতি নিচ্ছি।

কষ্টেসৃষ্টে রান্না শেষ করলাম। সময় এল পরিবেশনের। খাবারটা দেখে সবাই চমকিত হলো। আমিও খুশি হলাম। দেখতে কোনো হেরফের হয়নি।

অবিকল আমার ওই বন্ধুর রান্নার মতো হয়েছে। সবাইকে খেতে দিলাম। খেয়ে সবাই ঘাড় নাড়ছে। খুশিই বোঝা গেল। কিন্তু আমি মুখে দিয়েই বুঝলাম একটা গন্ডগোল আছে।

রান্নাঘরে গিয়ে মনে পড়ল ঘটনাটা। একটা বানানোর জন্য যে পরিমাণ লবণ দিতাম, সবার জন্য রান্না করতে গিয়ে সে পরিমাণ লবণই দিয়েছি। ফলে মোটামুটি লবণবিহীন রান্না হয়েছে এটা। কিন্তু যেহেতু নতুন খাবার, তাই সবার ধারণা, স্বাদটা বুঝি এমনই। আমিও নিজে থেকে তেমন কিছুই বললাম না।

কিন্তু তারা যখন প্রশংসা করছিল, তখন আর হাসি চেপে রাখতে পারিনি।

 

আমার চোখে পানি চলে এল

বাঁধন

রান্নার অনুষ্ঠান করা নিয়ে আমি একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। কারণ রান্না বিষয়ে আমার অগাধ জ্ঞান নেই। তবে অনুষ্ঠান-সংশ্লিষ্টরা অভয় দিয়ে বলেছিলেন, রান্না বিষয়ে কম জানে এমন উপস্থাপকই তাঁদের দরকার। তাহলে বিভিন্ন প্রশ্ন করে করে জানতে চাইবে।

তবে রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার আগে থেকেই টুকটাক রান্নাবান্না জানি। বিশেষ করে আমার হাতের পায়েস ও কাস্টার্ড যে খেয়েছে, সে কখনও ভুলবে না। এর কারণ হলো, আমি যে কাজটাই করি, খুব মনোযোগ দিয়ে করি। রান্নার বেলায়ও তা-ই ঘটে।

কিন্তু কিছুদিন আগে রান্না-সম্পর্কিত একটা ঘটনার জন্য আমি অনেক কেঁদেছিলাম।

মাস দেড়েক আগের ঘটনা, কিন্তু এখনো মনে হলে খারাপ লাগে। ঘটনার কদিন আগে আমার খালাতো দেবরের বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরে তার শ্বশুরবাড়ি থেকে মেহমান আসবে তাদের বাড়িতে। আমাদেরও দাওয়াত করেছে খালাম্মা। তো আমি আমার খালাশাশুড়িকে আগ্রহ নিয়ে বলে রাখলাম, ‘আমি বাড়ি থেকে মেহমানদের জন্য ডিমের কোর্মা করে নিয়ে যাব।

’ নির্দিষ্ট দিনে আমি ডিম সেদ্ধ উঠিয়েছি। ৩৫টার মতো ডিম। সেদ্ধ হওয়ার পর ডিমের খোসা ছাড়াতে গিয়ে বিপত্তিতে পড়ে গেলাম। যে ডিমই খোসা ছাড়াতে যাই, সে ডিমেরই খোসাসহ সাদা অংশ উঠে আসে। কোনোভাবেই আমি সাদা অংশ রেখে ডিমের খোসা ছাড়াতে পারছি না।

বেশ কয়েকটা ডিমে এমন হওয়ার পর আমার চোখে পানি চলে এল। আমার অবস্থা দেখে আমার স্বামী এল সহযোগিতা করতে। সে এসেও খোসা ছাড়াতে গিয়ে একই সমস্যায় পড়ল। আমার স্বামী একেকটা ডিমের সাদা অংশসহ খোসা ছাড়ায় আর দেখে আমার কান্নার বেগ আরও বাড়ে। পরে সে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল, এটা ডিমের কোনো একটা সমস্যা।

আমার এ ক্ষেত্রে কোনো দোষ নেই। অনেক কষ্টে কান্না থামালাম। নতুন করে ডিম সেদ্ধ করারও চিন্তা করলাম। কিন্তু হাতে একদম সময় নেই। মেহমানদের আসার সময় হয়ে গেছে, আমাদেরও দ্রুত বেরোতে হবে।

বাধ্য হয়ে এবড়োখেবড়ো ডিমের কোর্মা করলাম। দেখতে যেমনই হোক, খেয়ে সবাই মোটামুটি ভালোই প্রশংসা করেছে। প্রশংসা শুনে মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল সেদিন।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।