আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যিশু, আপনার জন্মদিনের কেক আমি সেদিন পাইনি



খুব ছোটবেলা থেকে জানতাম খ্রিষ্টানরা খুব বড়লোক শ্রেনীর। কার কাছে শুনে বা কীভাবে এ ধারণা হয়েছিল মনে নেই, তবে খ্রিষ্টানদের সম্পর্কে এই ধারণা আর পাল্টায়নি। আমার এক ছোট ভাই জয়, মোটামুটি দারিদ্রতায় বড় হওয়া সে নাকি ছোটবলোয় একবার খ্রিষ্টান হতে চেয়েছিল। সে জেনেছিল, খ্রিষ্টান হলে এক লাখ টাকা পাওয়া যায়। যাই হোক, জয় এখন অনেক টাকা পয়সার মালিক এবং সে মুসলমান-ই আছে।

খ্রিষ্টান হতে হয়নি। এইসব বিভ্রান্তি আর কৌতুহল নিয়েই ছিল খ্রিষ্টান আর তাদের খ্রিষ্টধর্মের সাথে আমার পরিচয়। আজ যাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। তাদের প্রভু যিশুর জন্মদিন। মুসলমানদের নবী ঈসার জন্মদিন।

ইঞ্জিল বলে, ঈসা মসীহের জন্ম এইভাবে হয়েছিল- ইউসুফের সংগে ঈসার মা মরয়িমের বিবাহের ঠিক হইয়াছিল। কিন্তু তাহার একসংগে বাস করিবার আগেই পাক-রূহের শক্তিতে মরিয়মের গর্ভ হইয়াছিল। মরিয়মের স্বামী ইউসুফ সৎ লোক ছিলেন। তিনি লোকের সামনে মরিয়মকে লজ্জায় ফেলিতে চাহিলেন না। এইজন্য তিনি তাহাকে গোপনে ছাড়িয়া দিবেন বলিয়া ঠিক করিলেন।

যখন ইউসুফ এই সমস্ত ভাবিতেছিলেন তখন প্রভুর এক ফেরেস্তা স্বপ্নে দেখা দিয়া তাহাকে বলিলেন, " দাউদের বংশধর ইউসুফ! মরিয়মকে বিবাহ করিতে ভয় করিও না, কারণ তাহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে তাহা পাক রূহের শক্তিতে জন্মিয়াছে। তাহার একটি ছেলে হইবে। তুমি তাহার নাম ঈসা রাখিবে, কারণ তিনি লোকদের তাহাদের পাপ হইতে উদ্ধার করিবেন"। ( ইঞ্জিল/১ম খন্ড/ মথী ১৮-২১) এই ঈসা অথবা যিশুর জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই বড়দিন। ছোটবেলা থেকেই এই বড়দিন আমার কাছে ছিল এক বড় বিস্ময়ের নাম।

মুসলমানরা ঈদে নামায় পড়ে, হিন্দুরা পুজার সময় পুজা করে কিন্তু এই শ্রেনী কী করে? দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর একবার বড়দিনে এক লোকাল পত্রিকার রির্পোটিংয়ের ছুতোয় আমরা কয়েকজন চলে গেলাম এক গীর্জায়। আমাদের শহরে কম সংখ্যক খ্রিষ্টান থাকায় আমাদের দিকে সেই সম্প্রদায়ের লোকদের সেকি বিস্ময় মাখানো দৃষ্টি। আমরাও ব্যাপক ভাব নিয়ে চলে গেলাম গির্জার ভেতরে। ভাবখানা এমন, আমরা প্রভু যিশুর লোক। গিয়ে দেখি এলাহী কান্ড।

কেক, বিস্কিট, পুডিন, চানাচুর, কোকসহ অন্যরকম এক ধর্মীয় আয়োজন। দেখে অবাক হলাম। ভালোও লাগলো। যদিও নতুন চেহারা দেখে আমাদের খুব একটা পাত্তা দেয়নি, দুঃখের বিষয় কেক না খাইয়েই বিদায় করে দিয়েছিল। ভীষন রাগ নিয়ে চলে এসেছিলাম।

মনে মনে বলেছিলাম আমাদের জন্মদিনে এসো। রাগ আর অভিমান করে সেদিন প্রভু যিশুর জন্মদিনের প্রার্থনা না করেই চলে এসেছিলাম। আসার সময় সান্তাক্লজ আবার বুড়োকে খুজছিলাম। ভাগ্যিস সে সামনে পড়েনি না হয় তার দাড়ি ধরে টান মেরে আসার প্ল্যান ছিল। যাই হোক, সেদিন কেক খেতে পারি আর না পারি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে বড়দিনের আনন্দ অল্প হলেও শেয়ার করতে পেরেছিলাম।

এটাই ছিল এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা। আর যিশুর জন্য নিয়ে এসেছিলাম এক বুক অভিমান। যিশু, আপনার জন্মদিনের কেক আমি সেদিন পাইনি। শোনা যায়, এই ধূলার ধরনীতে আপনার আবার আবির্ভাব ঘটবে। আমি বাঁচি আর না বাঁচি সেদিনের অপেক্ষায় থেকে গেলাম।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.