আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিথ্যাচারের শিষ্টাচার



শিষ্টাচার দেখিয়ে মিথ্যাচারকে বিশেষ লক্ষ্যে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবিত করতে জনগণের অনুভূতি, ইচ্ছা, মতামত এবং কার্যক্রমকে পক্ষে রাখার কৌশলে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই দায়িত্বটুকু গ্রহণ করার সনাতনী ভাষায় স্বৈরশাসনের প্রপাগান্ডা হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক বক্তব্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থেকে আশার কুপি জ্বালিয়ে রাখার বিশেষ জ্বালানি হিসেবে সুকৌশলে মিথ্যাচার অপরিমেয়ভাবে ব্যবহার হয়েছে। দলীয় লোকদের সমর্থনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণ কখনো সর্বোপরি জনগণের জন্য এ দেশে কার্যকর হয়নি হয়েছে নিজেদের দলের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মোড়কে পরবর্তী ভোট গ্রহণের শিষ্টাচারের প্রলেপ হিসেবে। বিশেষ কিছু ছাতা ব্যবহার হচ্ছে মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ০.০৩ শতাংশ মানুষ দ্বারা, যারা সক্রিয় রাজনীতিবিদ, ভোট দেন সাধারণ জনগণ জীবন পরিবর্তনের অঙ্গীকার শুনে মার্কায় ছাপ দেয়। ছাতাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণা, জাতীয়তাবাদ, যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার, আল্লাহর আইন এবং বিচ্ছিন্ন বোমা বিস্ফোরণ সম্পর্কিত জঙ্গি আবিষ্কার।

আদর্শগত ও ব্যবহারিক কার্যক্রমে বড় দলের কোথাও কোনো অমিল নেই। মাঝখানে দেশাত্মবোধ উধাও, যা বেশি পরিমাণ জায়গা করে নিয়েছে গানে ও কবিতায়। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৭ মার্চ ১৯৯৯ যশোরে বোমা বিস্ফোরণ থেকে ২০০৭ সালে জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের হাতে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা সব মিলিয়ে নিহত হয়েছে ২৬৬ জন। এর মধ্যে ৭ আগস্ট ২০০৫ সালে জেএমবি দ্বারা ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা বিস্ফোরিত হয় ৪৫৯টি, নিহত হয় ২ জন, আহত ১০০ জন। জাতীয়তাবাদী শক্তিজোট ক্ষমতায় থাকাকালে এদের নেতৃবর্গরা গ্রেপ্তার হয়, পরবর্তী সময়ে মৃত্যুদ- দেয়া হয়।

খুঁজে পাওয়া যায়নি বা প্রকাশ পায়নি, কাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বোমা আতশবাজির মতো ফাটিয়ে সারাদেশে তাদের উপস্থিতি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের মাদ্রাসায় যে ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো প্রচলিত রয়েছে, কোথাও এ ধরনের জিহাদের বিন্দু পরিমাণ অনুপ্রেরণা নেই। কেননা কোরআন ও ইসলাম ধর্মে জিহাদের বিষয়টি বোমা বিস্ফোরণ করে উৎসাহিত করে না। তবে এর বিশেষ স্বার্থে প্রায়োগিক বাস্তবায়ন কারো দ্বারা আদেশকৃত ও নির্দেশিত। গোটা বিশ্বে ইসলামকে ধ্বংস করার আনুষ্ঠানিকভাবে সুবিশাল অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সিআইএ, এফবিআই, মোসাদ এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র (দিলসে, বোম্বে, কোরবান ইত্যাদি) একসঙ্গে কাজ করছে।

আমেরিকান বাজেটে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের ইসলাম বিষয়ক এক্সপার্ট তৈরির মতো প্রকাশ্য ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে গৃহের অভ্যন্তরে সৃষ্টি হওয়া একটি মতবাদ নিয়ে গঠিত সুবিশাল আত্মসমৃদ্ধ মুসলমানদের ইসলাম নিষ্ক্রিয় করার বিষয়ে ভূমিকা রয়েছে। আল-জাজিরা টিভি চ্যানেল ৯৯ ভাগ সত্যের সঙ্গে মিশিয়ে দেয় এক ভাগ বিষ। গত কয়েকশ’ বছরের ইতিহাসে ইহুদি খ্রিস্টানরা যদি মুসলমানদের ওপর প্রতিশোধের বিষয়ে কৃতকার্য হয়ে থাকে তবে মুসলমানদের জিহাদকে বিকৃত করে বিশ্বজনের কাজে ঘৃণার সর্বশেষ স্তরে পৌঁছে দিতে পেরেছে। পশ্চাৎ এই ‘মিডিয়া জিহাদ’ বিষ বৃক্ষরোপণ করেছে।

ইসলামের শত্রুরা এর ফসল শেষ অবধি বসে খেতে পারবে। যে মিডিয়া থেকে আজ সর্বনাশের রক্ত-বৃষ্টি ঝরছে প্রতিদিন, সে মিডিয়া মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে থাকার তাগিদ ছিল তার জন্য দেয়া হয়েছিল সামর্থ্য ও যোগ্যতা। এই মিডিয়া যে সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে, তাও সাবধান করে দেয়া হয়েছিল। ‘হে তোমরা যারা ইমান এনেছে বলে বিশ্বাস করো, যদি পৃথিবীতে সংগঠিত অশান্তি সৃষ্টিকারী মিথ্যাবাদীরা তথ্য পরিবেশন করে তবে তোমরা তাদের পরিবেশিত তথ্য ও সংবাদের সত্যতার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক তার গ্রহণযোগ্যতায় মান যাচাইয়ে সক্ষম হও। নির্দেশটি এই জন্য যে, এই তথ্য জাতির পর জাতিকে সর্বনাশে নিক্ষেপ করবে।

কারণ তারা অজ্ঞতায় রয়েছে। এই সাবধান বাণীটি পরে তোমাদের আক্ষেপের বস্তু হয়ে না দাঁড়িয়ে যায়। ’ (সূরা হুজুরাত, আয়াত ৬-৭) তথ্যের বুদ্ধিদীপ্ত ও ধূর্ত ব্যবহারের ইসলাম ও মুসলমানদের যে ক্ষতি সাধন করে ফেলেছে, তা খুব সহজে কাটিয়ে ওঠার আর কোনো উপায় নেই। মুসলমানরা বিশ্বাস করে, তারা দোয়া করবে এবং ফেরেশতারা আল্লাহর পক্ষ থেকে উদ্ধারের উপায় নিয়ে আসবে। অথচ আল্লাহ পরিষ্কারভাবে এ সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে আয়াত নাজিল করেছেন, জাতি হিসেবে মুসলমানকে তেমনিভাবে উঠে আসতে হবে, যা অন্যান্য জাতি অধ্যবসায়ের দ্বারা নিশ্চিত করে, নিশ্চয় আল্লাহ কোনো জাতিকে উন্নতি একটি বোনাস হিসেবে দান করেন না যে কোনো জাতিকেই তা উপযুক্ত মূল্য দিয়েই ক্রয় করে নিতে হয়।

(সূরা: রা আ-দ্, আয়াত : ১১)। প্রকৃত পক্ষে কোরআনই একমাত্র গ্রন্থ যেখানে তার অনুসারীদের জাতিগত পরিচয়টি সুস্পষ্টতায় পেশ করতে পেরেছে। পৃথিবীতে আর কোনো ধর্মগ্রন্থ তার অনুসারী জাতির পরিচয় কী তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। সূরা : মু-মিনুল, আয়াত : ৭৮ দ্বারা মুসলমান জাতিকে জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আ.) অনুসারী একটি নির্বাচিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং তার নাম করেছে মুসলিম এই ভিত্তিতে, যে ভিত্তিতে হজরত ইব্রাহিম (আ.) প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। ওয়াশিংটন সাদ্দামকে ১৯৯০ সালে ইরাকে কুয়েত আক্রমণের খানিকপূর্বকালে আশ্বস্ত করেছিল যে, পুরো বিষয়টি সম্পর্কে তাদের জানার আগ্রহ অনীহা পর্যায়ে, এপ্রিল গ্লাসপাই আমেরিকান অ্যাম্বসেডর সুনির্দিষ্টভাবে আক্রমণের আগে সাদ্দামকে এই বলে উৎসাহিত করেছিলেন, আরব-আরব মতবিরোধে আমেরিকার কোনো মতামত নেই, বিশেষভাবে ইরাক-কুয়েত সীমান্ত প্রশ্নে।

পরে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যাম্বাসেডরের এ বক্তব্যকে আরো জোরালো করে তোলে এই মতামত দ্বারা কুয়েতের প্রতি আমাদের কোনোরূপ প্রতিরক্ষা বা নিরাপত্তা দায়িত্ব নেই। অর্থাৎ তুমি চাইলে কুয়েত আক্রমণ করতে পারো। আমরা দেখেছি, সাদ্দামের সঙ্গে আমেরিকা ইঁদুর ও ফাঁদ খেলা খেলেছিল এবং এ ফাঁদে পা ফেলে সাদ্দাম তার নিজ জীবন ও জাতিকে রসাতলে নেয়ার রাস্তা তৈরি করে দেন। সাদ্দাম যখন কুয়েত দখলের ফাঁদে পা দেন তখন একমাত্র কুয়েতের যে পরিমাণ ডলার আমেরিকান ব্যাংকে জমা ছিল, তাকে যদি বাংলাদেশের ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে জমা রাখা হতো এবং প্রচলিত হারে লাভ পাওয়া যেতো, তবে কুয়েতের এতো অর্থ ছিল যে, ওই বিশাল আয়ের শুধু এক বছরের লাভ দিয়ে বাংলাদেশের তৎকালীন বাজেটের মতো ১১০০ বছরের বাজেটের অর্থ জোগান হয়ে যেতো। উপসাগরীয় যুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা সৌদি আরব থেকে মাসিক ৪০০ মিলিয়ন ডলার যুদ্ধের খরচ বাবদ পেয়ে চলেছে বছরের পর বছর।

উপসাগরীয় যুদ্ধ ১৯৯১-এ আমেরিকার স্বরূপ ব্যক্ত হয়েছে। মহাজোট সরকারের শুরুতেই মার্কিন-ভারতের আধিপত্যধর্মী সরকার পরিচালনার কৌশলগত কারণ থাকতে পারে, তবে জেএমবি কর্মকা- স্তব্ধ হয়ে গেলেও থেমে থাকেনি ইসলামিক জঙ্গিবাদের সম্ভাব্য আক্রমণের নামে গ্রেপ্তার, এ যাবৎ বর্তমান সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হয়েছে ১৯৮ জন, যারা বিভিন্নভাবে ইসলামিক শিক্ষায় দীক্ষিত বা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। হঠাৎ করে বিশেষ প্রয়োজনেই জঙ্গিবাদ (ইসলামিক) আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হয় সারাদেশে স্কুল-কলেজে। এতোই শক্তিশালী গোয়েন্দা নজরদারি একের পর এক গ্রেপ্তার হলো অনেক নতুন নতুন ইসলামিক জঙ্গি সংগঠনের শিক্ষিত যুবকরা, যাদের কর্মকা-ও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয় অথচ এ নজরদারি ফাঁকি দিয়েই ঘটে গেল পিলখানায় স্মরণকালের ভয়ানক নারকীয় হত্যাকা-। নিহত হলো ৫৭ জন ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা।

তদন্তের শুরুতেই বলা হলো, জঙ্গি সংযুত আর জঙ্গি মানেই ইসলামিক, যারা মুসলমান কোরআন মেনে চলার চেষ্টা করে। মহাজোট সরকারের ১১ মাসে উল্লেখযোগ্য খুন হয় ৬৭৮ জন, গুরুতর জখম হয় ৬ হাজার ৫৭৮ জন। এই নির্মম সহিংসতার তদন্ত কোন পথে, তা না জানা থাকলেও ১০ ট্রাক, ২১ আগস্ট লক্ষণীয়ভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে প্রকাশ্যে। হত্যার পরও দীর্ঘ আট মাসে চার্জশিট পেশ করা হয়নি পিলখানার হত্যাকা-। সাংসদ তাপস হামলার সন্দেহ থেকে সেনা কর্মকর্তা পর্যন্ত তদন্ত প্রবহমান।

গ্রেপ্তার হয়েছে দুই শতাধিক এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামিদের পরিবার-পরিজন। ইসলাম ও মুসলমানদের মিডিয়া ট্রায়ালে যুক্ত হয়েছে ভারত মার্কিন/ইসরাইলের প্রভাব। বন্দিবিনিময় চুক্তি ছাড়াই বাউন্টি হান্টারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে তুলে দেয়া হচ্ছে স্বাধীনতাকামীদের ভারতের কাছে। সর্বোপরি ৭২-এর সংবিধানে ফিরে যাওয়ার আকুলতায় বিভোর মহাজোট সরকারের ঊর্ধ্বতন নেতারা সেখানে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখাটা খুবই অযৌক্তিক মনে হচ্ছে এই ৯০ শতাংশ ইসলাম ধর্মাবলম্বীর দেশে। এই মিথ্যাচারে শিষ্টাচার প্রচারণায় হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) ডকুমেন্টারির মতো বর্ণনা করে গেছেন।

শিগগিরই তোমাদের ওপর পতিত হবে অপরাপর জাতি দলবদ্ধভাবে, যেভাবে ক্ষুধার্থ জনতা খুলে দেয়া খাবারের ওপর পতিত হয়। সাহাবারা আর্জি করেন কেন এমন হবে সংখ্যায় কি আমরা এতোটা কমে যাবো? রাসূল (সাঃ) বলেন, কখনো নয় বরং সংখ্যায় তোমরা হবে অনেক। তবে যেন সমুদ্রের বিশাল বুকজুড়ে ভাসমান ফেনার মতো অন্তঃসারশূন্য পরস্পর বিচ্ছিন্ন। সাহাবারা জানতে চান, ‘কেন এ শোচনীয় পরিণতি হবে হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)? রাসূল (সাঃ) বলেন, কারণ তোমরা আক্রান্ত হবে একটি ব্যাধি দ্বারা। সাহাবারা পুনরায় জানতে চান, কী সেই সর্বনাশা ব্যাধি? রাসূল (সাঃ) বলেন, দুনিয়ার ভোগের প্রতি আকর্ষণ আর মৃত্যু ও আখিরাতের প্রতি উদাসীনতা।

ক্যাপ্টেন (অব.) সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ সেলু: রাজনীতিক ও কলাম লেখক। আজকের যায়যায় দিন থেকে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.