আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হোক।

কতো কী করার আছে বাকি..................

১. সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদে ছিলো ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সংগত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সম্পন্ন বা লক্ষ্যানুসারী কোন সাম্প্রদায়িক সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার বা তাহার সদস্য হইবার বা অন্য কোন প্রকারে তাহার তৎপরতায় অংশগ্রহণ করিবার অধিকার কোন ব্যক্তির থাকিবে না। ’ তবে ১৯৭৭ সালে আনা সংশোধনীতে বলা হয়, ‘ জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যোক নাগরিকের থাকিবে। ’ এছাড়া, ৭২ এর সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদে বলা ছিলো ‘ ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বাস্তবায়নের জন্য (ক) সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, (খ) রাষ্ট্র কতৃক কোন ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, (গ) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার, (ঘ) কোন বিশেষ ধর্মপালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তাহার উপর নিপীড়ন বিলোপ করা হইবে। পঞ্চম সংশোধনীতে এ অনুচ্ছেদটি বাতিল ঘোষণা করা হয়।

১৯৭২ সালের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে আমাদের জাতীয় পরিচিতির ব্যাপারে বলা ছিল ‘বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে; বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাঙালি বলিয়া পরিচিত হইবেন। ’ তবে পঞ্চম সংশোধনীতে এ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধনীতে বলা হয় ‘(১) বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আইনের দ্বারা নির্ধারিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। (২) বাংলাদেশের নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবে। ’ ২. সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ‌'র লালসালু উপন্যাসের একটা লাইন আছে- ধর্মের চাইতে আগাছা বেশি, শস্যের চাইতে টুপি বেশি।

এখানে ধর্মের সাথে আগাছার তুলনা আর ফসলের চাইতে টুপির প্রসঙ্গ উপস্থাপনের একটা তাৎপর্য আছে। আমাদের ধর্মকে এখানে লেখক ধানগাছে প্রোথিত করেছেন। ধানগাছ অথবা যে কোন শস্যই তার বীজ অবস্থা থেকে বিকশিত হবার একটা নির্দিষ্ট নিয়ম এবং পদ্ধতি মেনে চলে। তার বিকাশের বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন পারিবেশের প্রয়োজন হয়। ধর্মও তাই।

আমাদের ভূখন্ড ধু ধু মরুভূমি অথবা হু হু ঠান্ডার দেশ নয়। ফলে এখানকার ধর্ম তার বৈশিষ্ট্যে আলাদা হবে। সেই ধর্মকে বাদ দিয়ে আগাছার চাষ করবার চেষ্টার সমালোচনা-নিন্দা করেছেন লেখক। কারণ ধর্ম মানুষের জন্যই এবং তা মানুষের জীবন যাপনের একটা অংশ। সবার আলাদা এবং নিজস্ব ধর্ম থাকবে।

সেই ধর্মকে আগ্রাসী করে তোলার আয়োজন চলছে-যা আসলে ধর্মের মূলভাবকেই ধ্বংস করে ফেলছে। আর ফসল হচ্ছে অন্ন। সেই অন্নের সংস্থান-সবার জন্য অন্নের নিশ্চয়তা-সেই অন্নের যথাযথ বন্টনই ধর্ম। কিন্তু তার চাইতে টুপি বেশি। যার অন্ন নাই-ফসল নাই তার মাথায়ও টুপি আছে।

আমাদের সমাজের চিত্রটা তা-ই। এর শুরু কবে থেকে সেই আলোচনা অনেক লম্বা হবে, কিন্তি বাস্তবতা হচ্ছে ধর্ম এখন কেবল পোশাকে আর হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। ধর্ম যে কেবলই আচার অথবা জীবন দর্শন তা আর রইলো না। ধর্ম প্রতিপক্ষ তৈরির মাধ্যমেই নিজেকে জাহির করতে শুরু করলো। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির শেকড় বাকড় এখন বহুদূর বিস্তৃত।

জনগণের একটা বিশাল অংশ এই রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত এবং নিয়ন্ত্রিত। ৩. আমাদের ভূখন্ডের ইতিহাসে ধর্ম আছেই। ধর্মীয় পরিচয় শাসকদের প্রধাণ হাতিয়ার এবং স্ব স্ব ধর্মের বিস্তার প্রধাণ উদ্দেশ্য ছিল। দীর্ঘ একটা সময় ধরে ইংরেজ শাসন এই বিষয়টিকে বুঝতে পারে এবং তাকে উস্কে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ ছিল এই ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করবার সংগঠিত প্রয়াস।

সে জন্যই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ছিল ধর্ম নিরপেক্ষতা। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ম নিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠিত করাবর পরবর্তী সময়ের আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ মনন গড়ে তুলবার পরিপূরক সাংস্কৃতিক আন্দোলন-আয়োজন না থাকায় গোকূলে আবার সেই ধর্ম নয় আগাছাই বেড়ে উঠতে থাকে। সেই আগাছা এখন মহিরুহু আর তার বিষ বাতাস অথবা গন্ধম ফল খেয়ে অসংখ্য মানুষ দ্বিধাগ্রস্ত-অসহায় এবং হিংস্র হয়ে উঠছে। আইন করে এই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।

এর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন-বাতাবরণ না থাকলে সমূলে এই আগাছা উৎপাটন করা সম্ভব হবে না। টুপি নয় অন্নের নিশ্চয়তা হোক আগে-এটাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কোন মসজিদ বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কেবলমাত্র প্রার্থণার জন্য নয়, তা সামাজিক কল্যাণেও ব্রত হোক। সিডরের মতো, অথবা ক্ষুৎপিড়ীত শিশুর অন্নের সংস্থানও করুক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার আমাদের ইতিহাসে কেবলই রক্ত, হিংসা আর কান্না বয়ে এনেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.