আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভক্তের ভালবাসা বনাম মিডিয়ার বানিজ্য

রুপা

গতকাল হঠাৎ হাঁচি শুরু হল। সাথে কাশি। মুহুর্মুহুঃ হাঁচি-কাশির যন্ত্রণা তার সাথে নাক দিয়ে অঝর ধারায় পানি নামতে লাগল। আয়নায় নিজেকে দেখে ভড়্‌কে গেলাম। নাকটা টানতে টানতে আর ডলতে ডলতে লাল এবং লম্বা বানিয়ে ফেলেছি।

কোন কিছুতেই মনযোগ দিতে পারি না। টিভির রিমোট হাতে পেয়ে এই মাথা থেকে ঐ মাথা আসা-যাওয়া করলাম কয়েকবার। হঠাৎ ইটিভিতে (একুশে) “বিন্দু” (মডেল-অভিনেত্রী) কে দেখে একটু থামলাম। উপস্থাপক দেবাশীষ। বিন্দু অতিথি।

আর উপস্থিত আছে বিন্দুর ভক্তকুলের মধ্যে চারজন। অনুষ্ঠানের নাম বোধহয় “তোমার জন্য মরতে পারি”। উপস্থাপক প্রথম ভক্তকে আহ্বান জানাল। সে বিন্দুর জন্য কিছু একটা করে দেখাক যাতে বিন্দু অভিভূত হয়। এই মুহূর্তে মরে না দেখালেও চলবে।

সব কিছু হাতের কাছেই ছিল। ভক্ত জানাল, সে মরিচের গুড়ার সরবৎ খেয়ে দেখাবে। মরিচের গুড়া গ্লাসে নিয়ে প্রথম প্রতিযোগী সুন্দর করে গুলিয়ে নিয়ে ঢক্‌ঢক্‌ করে খেয়ে ফেলল। প্রতিযোগী বিকারহীন। বিন্দু হতভম্ব।

দ্বিতীয় প্রতিযোগী এলো। সে জানাল সে তার মাথার চুল কেটে ফেলবে। উপস্থাপক জানতে চাইল কী দিয়ে কাটবে? প্রতিযোগী প্যান্টের পকেট থেকে টেনে কাঁচি বেড় করল। সে প্রস্তুত হয়েই এসেছে। কচকচ করে মাথার ঘন কালো চুল কেটে ফেলল নির্দ্বিধায়।

যখন মাথার তেলতেলে চামড়া দেখা গেল তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় বিন্দু দৌড়ে এলো, প্লিজ থামুন। অনেক হয়েছে। আর লাগবে না। তৃতীয় প্রতিযোগী হাতের চামড়ায় কাপড় শুকানো ক্লিপ লাগাবে। একে একে সে যখন ১ ডজন থেকে ২ ডজন ছাড়িয়ে যেতে লাগল বিন্দু তখন শিহরে উঠল।

দৌড়ে গিয়ে তাকেও থামিয়ে দিল। আর লাগবে না। প্লিজ, থামুন। চতুর্থ প্রতিযোগী এগিয়ে এলো। সে মোম জ্বালিয়ে হাত পুড়িয়ে বিন্দু লিখবে।

এভাবে সে প্রমাণ করবে বিন্দুর প্রতি তার ভালবাসা। দক্ষ হাতে মোম জ্বালাল সে। লেখাও শুরু করল। এই ভয়ংকর দৃশ্য বিন্দুর সহ্য করতে পারার কথা নয়। তাই লেখার শুরুতেই বিন্দুর হস্তক্ষেপ।

আর দরকার নেই। থামুন প্লিজ। পাগলামি অনেক হয়েছে। প্রতিযোগিতা ছিল এটা। যে মরিচের গুড়ার সরবৎ খেল আর যে কাপড় শুকানোর ক্লিপ হাতে লাগিয়ে বিন্দুকে ইমপ্রেস করতে চেয়েছিল তারা প্রতিযোগিতায় হেরে গেল।

তারকাদের ভক্ত থাকে। শুনেছি বা পত্রিকায় পড়েছি অনেক ভক্তের পাগলামি কথা। এই মুহূর্তে সেসব মনে পড়ছে না। তবে এই ধ্বংসাত্মক ভক্তি বিভিন্ন কারণে ক্ষতিকর। টিভি প্রোগ্রাম করে এসব করতে একটা প্রজন্মকে উস্‌কে দেওয়া আরও ক্ষতিকর।

অনেকে হয়তো বলবেন, এসব দেখে তারা শিক্ষা নেবে। নিজেকে ধ্বংস করার খেলায় মত্ত হওয়া থেকে বিরত থাকবে। তা হলে অবশ্য ভাল। তবে এসব থেকে ভাল দিক গ্রহণ করার প্রবনতা এবং হার কম। তাই কর্তৃপক্ষের অনুষ্ঠান তৈরি এবং সম্প্রচারের ক্ষেত্রে আরো দ্বায়িত্বশীল ও মননশীল হওয়া দরকার।



এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.