আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দুঃসাহসী এক অভিযান



মাত্রই ঘন্টা খানেক আগে এক দুঃসাহসী অভিযান শেষ করে বাসায় ফিরলাম। বড় ভাইয়ার স্টাফ রোডের বাসা থেকে খাওয়া-দাওয়া সেরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে রেল ক্রসিং-এর কাছে দাড়ালাম যাত্রাবাড়ীর বাসের জন্য। বেশ কয়েকটা বলাকা সার্ভিস চলে গেলেও উঠলাম না যে সায়েদাবাদ নামতে হবে। ভরসা ৩/বি সার্ভিস। এরই মধ্যে খেয়াল করলাম একটা সিএনজি বাস-বে এর কাছে এসে থেমে গেল।

রাস্তায় সিটি সার্ভিস একেবারেই কম। দুরপাল্লার বাসগুলো হুশ হুশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে। আরও দু’টি বাস ’গুলিস্তান গুলিস্তান’ বলে ডেকে চলে গেল। এদিকে দু’দিনের কোরবানির খাওয়া হঠাৎ করে পেটের মধ্যে জানান দেয়া শুরু করলো, মহাবিপদ। বাসের দেখা নেই।

গেল আরও কিছুক্ষণ। এবার থেমে থাকা সিএনজিটা স্টার্ট নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়াল। ড্রাইভারের জিজ্ঞাসার জবাবে জানালাম যাত্রাবাড়ী যাব। চাইলো ২০০ টাকা। আমি না করে দিলাম।

ড্রাইভার চাপাচাপি শুরু করলো ভাড়া বলার জন্য। ১০০ টাকা বললাম। সে রাজী। চড়েও বসলাম সময় কম লাগবে এই আশায়। বনানী সিগন্যালে আসার পর ড্রাইভার বলে স্যার এইটা নারায়নগঞ্জের গাড়ী, ভাড়া নিয়ে জিয়া কলোনীতে গিয়েছিলাম এখন যাত্রাবাড়ীর দিকেই যাব তাই আপনার ভাড়াতেই রাজী হয়ে গেছি।

আমি একটা প্রশ্রয়ের হাসি হাসলাম। ফ্লাইওভারের কাছে এসে বলল ফার্মগেট দিয়ে যাই। আমি ভাবলাম মগবাজার এভয়েড করতে চাচ্ছে হয়ত, বললাম যাও। শাহবাগ পর্যন্ত এসে সে বামে মোড় না নিয়ে সোজা ভার্সিটি এলাকায় ঢুকলো। আমি তো রেগে গেলাম।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশের পুরো রাস্তাটাই নির্জন। ঘড়িতে বাজে দশটা। ড্রাইভারের এক কথা নারায়নগঞ্জের গাড়ী পুলিশ ধরলে ১০০০ টাকা ফাইন করবে, তাই ভার্সিটির ভিতর দিয়ে গুলিস্তান হয়ে যাত্রাবাড়ী যাবে। আমি ভাবলাম দোয়েল চত্বর থেকে হাইকোর্টের পাশ দিয়ে সচিবালয়ের সামনে দিয়ে গুলিস্তান গেলে তো কোন সমস্যা নাই। আমার কাছে দুইটা মোবাইল, হাজার দুয়েক টাকা আর পৈত্রিক প্রাণটা সঙ্গে।

টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত স্পীড ব্রেকারগুলো আমার হার্টের স্পীড বাড়িয়ে দিচ্ছিল। ঠিকমতো দোয়েল চত্বর পর্যন্ত আসার পর পুলিশের একটা টহল ভ্যান চোখে পড়ল, মনে সাহস পেলাম। তবে বিপদ এখানেই শেষ হলো না কারণ হাইকোর্টের পাশদিয়ে এসে সোজা সচিবালয়ের রাস্তায় না গিয়ে সে সিএনজি ঘোরালো ডানদিকে বঙ্গবাজারের দিকে। আমি রীতিমতো আঁতকে উঠলাম। ঐ রাস্তায় গাড়ী তো দূরের কথা কুকুর-বিড়ালও নাই।

মনে মনে নিজেকে গালিগালাজ করলাম গাড়ীতে না উঠার জন্য। ছিনতাই হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম। ছিনতাইকারীর সাথে কি কি কথোপকথন হতে পারে তার একটা রিহার্সেলও দিয়ে ফেললাম। বাসার চাবি আর মোবাইলের সিমগুলি ফেরত চাইব ভেবে রাখলাম। সিএনজি এরইমধ্যে বঙ্গবাজারের মোড় ঘুরে নগর ভবনের সামনের রাস্তায় উঠল।

আমি মোটামুটি উত্তেজনায় ভিতরে ভিতরে কাঁপছি। পুলিশের হেডকোয়ার্টার থাকলে কি হবে পার্কের ভাসমান মানুষগুলো সব ফুটপাথের উপর জায়গায় জায়গায় জটলা কলে দাড়িয়ে। নগর ভবনের সামনে এসে সিএনজির গতি কমা শুরু হলো ! আমি তো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি এতদিনের পেপারে পড়া, অন্যের মুখে শোনা ছিনতাইয়ের ঘটনার হবহু প্রতিফলন। এই সময় শেষ চেষ্টা হিসেবে গলায় মোটামুটি জোর নিয়ে এসে ধমক দিলাম সিএনজি যদি রাস্তার মধ্যে থামাস তো খবর আছে। ড্রাইভার জবাব দিল সামনে স্পীড ব্রেকার।

দেখলাম সত্যিই তাই। গুলিস্তান পৌঁছলাম। ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে পুলিশ বক্সের সামনে ড্রাইভার সিএনজি পুরোপুরি থামিয়ে দিল। আশেপাশে অনেক লোকজন, তাও থামার সাথে সাথে সিএনজি থেকে নেমে দাড়ালাম। কি ব্যাপার।

চাকার স্ক্রু টাইট দিতে হবে। কিছুক্ষণ খুটখাট করার পর আবার যাত্রা শুরু হলো। বঙ্গভবনের কোনাটায় এসে আবার সিএনজি থামলো। আমি আবার দিলাম ধমক। আবার চলা শুরু হলো।

সায়েদাবাদ পার হয়ে জনপথের মোড়ের ঠিক আগে আবার সিএনজি থামিয়ে রাস্তার পাশে দাড়ালো। নির্জন জায়গা। আবার কি হলো? ড্রাইভারের পাশের দরজা আপনা-আপনি খুলে গেছে, সেটা লাগানো হলো। এরপর একটানে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা। ভাড়া মিটানোর পর খেয়াল হলো এই শীতেও ঘামে ভিজে গেছি।

নামার সময় ড্রাইভারের স্বগোক্তি ‘আল্লাহ, সহি-সালামতে আসলাম। ’ রাতে আর কখনো একা সিএনজিতে উঠছি না। টেনশনে আয়ু অর্ধেক শেষ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।