আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অধরা

সবার ওপর মানুষ সত্য... তার ওপর ....

এক. মোবাইল অন করার পর দেখি ক্রমাগত কয়েকটি টেক্সট মেসেজ এসে গেল। কেন মোবাইল অফ সেটির কৈফিয়ত চেয়ে সবগুলো মেসেজ। একটি একটু আলাদা, তাতে লিখা, আমি আগামী মঙ্গলবার যাচ্ছি, তুমি যদি চাও তাহলে আমার সাথে যেতে পার। স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে, যাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন আমার ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। কিন্তু আসলে ঘটনা সেরকম না, এই মেসেজ এর মানে হলো, আমি আগামী মঙ্গলবার যাচ্ছি, তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।

আমি ফিরতি মেসেজ পাঠালাম, মঙ্গলবারে তো আমার অফিস অাছে। দুই মিনিটের মাথায় যে রিপ্লাই এলো, তাতে আমার রাজি না হয়ে আর কোন উপায় থাকলো না। সম্পর্কের দোহাই দিলে তখন কি আর কিছু করার থাকে? অধরার সাথে আমার পরিচয় অনেক আগের, কিন্তু ভালোভাবে মেশা কিছুদিন আগে থেকে। ওর কথাবার্তার মধ্যে সবসময় একটা কর্তৃত্বের সুর থাকে। বিশেষকরে আমাকে যখন কিছু করতে বলে।

ভাবখানা এমন যে, তুমি চাইলে করতে পার অথবা নাও করতে পার, কিন্তু আমি যখন বলেছি তখন তোমাকে করতেই হবে। তাড়াহুড়ো করে আমি অফিসে চলে এলাম। অফিসে এসে কল দিলাম, - তুমি কিসে যেতে চাও, বাস নাকি ট্রেন? - ট্রেন। সকালের দিকে একটা ট্রেন আছে। - ঠিক আছে।

তাহলে তুমি টিকেট কেটে ফেল। ট্রেন স্টেশন তো তোমার বাসা থেকে কাছেই। - আচ্ছা ঠিক আছে, টিকেট কাটা হয়ে গেলে আমি তোমাকে জানাচ্ছি। - একটু আগেভাগেই জানিও। আমাকে আবার ছুটি নিতে হবে।

- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি একরকম নিশ্চিত যে, সে টিকেট কাটতে যাবে না। সোমবার এ আমাকে ফোন করে বলবে, 'তুমি টিকেট কাট। কিভাবে কাটবে আমি জানি না, আমি খুব ব্যস্ত, তোমার সাথে পরে কথা হবে'। এরপর আমাকে গিয়েই টিকেট কেটে দিতে হবে।

হাতে এখনও তিন দিন সময় আছে। আমি ভাবলাম টিকেট কেটে ফেলি। বিকেলে অফিস থেকে বের হয়ে গিয়ে আমি টিকেট কেটে ফেললাম। সোমবার সকালে ঘটনা যা ঘটার তাই ঘটলো। অধরার ফোন।

আমি বললাম, আমার কাছে টিকেট আছে, তুমি এসে নিয়ে যাও। সে বলে, কেন, তুমি যাচ্ছ না। আমি বললাম, যাচ্ছি, তবে সকালের দিকে তো প্রচন্ড জ্যাম থাকে রাস্তায়, তাই আমি এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবো। সে বলে, আমি যেতে পারবো না, তুমি আমার বাসায় এসে দিয়ে যাও। আমি বললাম, অফিসে বেশ কিছু কাজ জমে গেছে, আজ তো মনে হয় বের হতে পারবো না, আর এগুলো শেষ করতে না পারলে আগামীকাল ছুটি পাওয়া যাবে না।

মনে হয় চাপাবাজিতে কিছু কাজ হলো। অধরা বলল, টিকেট লাগবে না, তুমি সিট নাম্বার বল। আমি সিট নাম্বার বললাম। আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরে গোসল, খাওয়া শেষ করে ব্যাগ গুছালাম। আজকে একটু অাগেভাগেই ঘুমাতে যাবো ঠিক করলাম।

কিন্তু বারোটা বাজতে না বাজতেই আবার ফোন। - আচ্ছা, তুমি কি একটু সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবেনা? - কেন? - আমি একা একা ট্রেনে বসে থাকতে পারবো না। তুমি সকালে আমার বাসায় এসে আমাকে নিয়ে যাও। - দেখ, ট্রেন এর সময়টা একদম অফিস টাইমে। আমার কমপক্ষে দুই ঘন্টা আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে।

- আমি তোমাকে ডেকে দিব। - (মহা ফ্যাসাদে পড়লাম মনে হচ্ছে। ) আচ্ছা আমি তো এয়ারপোর্ট থেকে উঠছিই, নাকি? মাত্র ৩০ মিনিট সময়। - আমি কিছু বললেই তুমি এটা সেটা বলে পাশ কাটিয়ে যাও। আমার জন্য একদিন একটু আগেভাগে ঘুম থেকে উঠতে পারবে না? - (ভাল মুশকিল এ পড়া গেল) আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোমাকে তোমার বাসা থেকেই নিয়ে আসবো, কিন্তু আমাকে সকাল বেলা ঘুম থেকে ডেকে দিতে হবে।

দুই. সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে বাইরে গিয়ে আমার তো মাথায় হাত। বাসের লাইনে শত শত লোক। কোন বাস নেই। ট্যাক্সি, সিএনজি অটোরিক্সা কিছুই নেই। আধঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পর অনেক কায়দা কসরত করে একটা বাস এ উঠে পড়লাম।

এখনও হাতে ঘন্টা দেড়েক এর মত সময় আছে, স্বাভাবিক অবস্হায় থাকলে গিয়ে আবার ফেরত আসা যাবে। দশ মিনিট যেতে না যেতেই দেখি অবস্হা খারাপ। সামনে পেছনে জ্যাম। এদিকে সময় চলে যাচ্ছে। আমি এমন এক জায়গায় আছি, এখন বাস থেকে নামলে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

সবকিছু ছবির মত স্হবির হয়ে আছে। দশ মিনিট পর পর বাস একটু একটু করে সামনে আগায়। এইভাবে চলতে থাকলে সারাদিনেও স্টেশনে পৌঁছানো যাবে না। এরই মাঝে অধরার ফোন, 'কোথায় তুমি?' 'আমি বাসে, রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম, আমি মনে হয় তোমার বাসা পর্যন্ত যেতে পারব না। তুমি স্টেশনে চলে আস, আমি সরাসরি স্টেশনে চলে যাচ্ছি।

' ট্রেন ছাড়ার যখন আধঘন্টার মত বাকি, আমি তখনও চারভাগের একভাগ রাস্তাও যেতে পারিনি। এবার আমি ফোন দিলাম, 'রাস্তার যে অবস্হা, তাতে আমি কোনভাবেই স্টেশনে যেতে পারব না, তুমি ট্রেনে ওঠে পড়, আমি এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকে উঠবো। ' অধরাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম। বাস থেকে নামার পর দেখি আরো বিপদ। এতক্ষণ তো বাসে ছিলাম, এখন তো দেখি কিছুই পাওয়া যায় না।

আমার হাতে সময় আছে আর একঘন্টার মত। কি করবো ভেবে উঠতে পারছি না। এমন সময় আর একটা বাসে ওঠে পড়লাম। সেই একই অবস্হা। আমি বাসের ভেতর থেকে উঁকি-ঝুকি দিয়ে আশে পাশে ট্যাক্সি অথবা সিএনজি খুঁজছি।

বাসের লোকজন মনে হয়, আমার কান্ড-কারখানায় বিরক্ত। এমনিতেই বাস এ ভিড়ের জন্য নড়াচড়া করার উপায় নেই তার উপর আবার একজন একবার ডানে আর একবার বামে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অধরা ফোন করে জানালো যে, সে ট্রেনে এবং তার ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। এমনিতে ট্রেন পাঁচ থেকে দশ মিনিট দেরীতে ছাড়ে, আজকে একেবারে ঘড়ির কাটা ধরে ছেড়েছে। এরই নাম কপাল।

আমি যখন মোটামোটি একটু ফাঁকা রাস্তায় এসে পড়েছি তখন দেখি বাস গড়িমসি করা শুরু করেছে, একবার থামে, লোক নামায়, আবার লোক ওঠানোর জন্য এদিক সেদিক দাঁড়ায়। ঘড়িতে দেখি আর দশ বারো মিনিট সময় হাতে আছে। আমি ফোন দিলাম, 'আমি মনে হয় সময়মত স্টেশনে চলে যেতে পারবো। স্টেশনে পৌঁছা মাত্র আমি তোমাকে ফোন দিব। আমি যদি ফোন না দিই তাহলে তুমি ট্রেন থেকে নেমে যাবে।

' 'এই অবস্হা? আচ্ছা। ' এতক্ষণে একটা খালি সিএনজি পাওয়া গেল। ভাই আমি ট্রেন ধরব, আর পাঁচ-সাত মিনিট আছে, আপনি তাড়াতাড়ি যাবেন। পাঁচ মিনিটের মাথায় অধরার ফোন, 'ট্রেন স্টেশনে চলে এসেছে, কোথায় তুমি?' আমি তখন স্টেশনের কাছাকাছি, 'আমি প্রায় চলে এসেছি, তুমি ফোন রাখ, আমি আসছি। ' আমি যখন স্টেশনের ভেতর ঢুকছি, তখন ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।

আমার ফোন বাজছে। আমার হাতে ফোন ধরার মত সময় নেই। আমি কোন দিকে না তাকিয়ে জোরেশোরে একটা দৌড় দিলাম। তিন. কোনমতে ট্রেনে উঠতে পেরেছি। এদিকে ফোন বেজেই চলেছে।

হাঁপাতে হাঁপাতে আমি ফোন ধরলাম, - আমি ট্রেনে উঠেছি, একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি। - ট্রেনে উঠেছ মানে, তুমি আসছনা দেখে তো আমি ট্রেন থেকে নেমে পড়লাম। তোমার তো স্টেশনে এসে ফোন দেওয়ার কথা। - ফাজলামি করবে না। আমি সিটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি।

এই কথা বলামাত্র সে ওপাশ থেকে লাইন কেটে দিল। আমি সিটে পৌঁছে দেখি, সিটে কেউ নেই, ট্রেন তখন জোরে চলা শুরু করেছে। অধরাকে ফোন দিলাম। তার ফোনটি বন্ধ। -- এই লিখার সমস্ত চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক।

বাস্তবের সাথে বা অন্য কারোর মগজ-প্রসুত কল্পনার সাথে মিলে গেলে লেখককে দায়ী করা যাবে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।