আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রমশ উজ্জ্বল জীবনানন্দ



জীবনানন্দ দাশজীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯, বরিশাল - অক্টোবর ২২, ১৯৫৪, বাংলা ৬ই ফাল্গুন, ১৩০৫) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাংলা কবি। তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অগ্রগণ্য। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ পাদে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খৃস্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয়তম কবিতে পরিণত হয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের বাবার নাম সত্যানন্দ দাশ এবং মায়ের নাম কুসুমকুমারী দাশ। সত্যানন্দ দাশ (১৮৬৩-১৯৪২) ছিলেন স্কুল শিক্ষক, পত্রিকা সম্পাদক এবং প্রবন্ধকার।

একান্নবর্তী পরিবারের ব্যস্ত গৃহিনী কুসুমকুমারী দাশ (১৮৮২-১৯৪৮) কবিতা লিখতেন। জীবনানন্দ ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে, তাঁর ছোট ভাই অশোকানন্দ এবং বোন সুচরিতা। বাড়ীতে মা-বাবার কাছে তার শিক্ষার হাতে-খড়ি। বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হলে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবনের সূত্রপাত হয়। এ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর তিনি ব্রজমোহন কলেজে থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।

পরে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়াশুনা করেন এবং বি,এ, পাস করেন। । ১৯২১ খৃস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে এম. এ. ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৩০ সালে শ্রীমতী লাবণ্য গুহকে বিবাহ করেন। তাঁদের দুটি সন্তান।

১৯৩১ সালে কন্যা শ্রীমতী মঞ্জুশ্রী এবং ১৯৩৮ সালে পুত্র শ্রী সমরানন্দের জন্ম হয়। জীবদ্দশায় অসাধারণ কবি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করে উঠতে পারেন নি। এর জন্য তার প্রচারবিমুখতাও দায়ী। তিনি বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতার পথিকৃতদের একজন। জীবনানন্দ দাশ এর জীবন এবং কবিতার উপর প্রচুর গ্রন্থ লেখা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, বাংলা ভাষায়।

এর বাইরে ইংরেজিতে তার উপর লিখেছেন ক্লিনটন বি সিলি, আ পোয়েট আর্পাট‌‌ নামের একটি গ্রন্থে। ইংরেজি ছাড়াও ফরাসিসহ কয়েকটি ইউরোপীয় ভাষায় তাঁর কবিতা অনূদিত হয়েছে। তিনি যদিও কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত কিন্তু মৃত্যুর পর থেকে ২০০৬ খৃস্টাব্দ অবধি তাঁর যে বিপুল পাণ্ডুলিপিরাশি উদ্ঘাটিত হয়েছে তার মধ্যে উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ এবং গল্পের সংখ্যা শতাধিক। নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন ১৯৫২ খৃস্টাব্দে পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণ বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থটি বাংলা ১৩৫৯-এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বিবেচনায় পুরস্কৃত করা হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ খৃস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) সাহিত্য অকাদেমী পুরস্কার লাভ করে।

১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে গিয়েছিল। ভেঙ্গে গিয়েছিল কণ্ঠা, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যান্যরা তাকে উদ্ধার করে। তাকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে।

এ সময় ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ সহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাশ এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধেই পশ্চিম বঙ্গ-এর মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয় নি। এ সময় স্ত্রী লাবণ্য দাশকে ক্বদাচিৎ কাছে দেখা যায়। তিনি টালিগঞ্জে সিনেমার কাজে ব্যস্ত ছিলেন।

জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশঃ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১ টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয় আত্মহত্যাস্পৃহা ছিল দুর্ঘটনার মূল কারণ। জীবনানন্দ গবেষক ডাঃ ভূমেন্দ্র গুহ মনে করেন জাগতিক নিঃসহায়তা কবিকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তাঁর জীবনস্পৃহা শূন্য করে দিয়েছিল।

মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন। গত এক শত বৎসরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কোলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ। গ্রন্থতালিকা কাব্যগ্রন্থ জীবনানন্দের কাব্যগ্রন্থসমূহের প্রকাশকাল সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের একাধিক পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল।

নিচে কেবল প্রথম প্রকাশনার বৎসর উল্লিখিত। মৃত্যু পরবর্তী প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থসমূহ তারকা চিহ্নিত। ঝরা পালক (১৯২৮) ধুসর পাণ্ডুলিপি (১৯৩৬) বনলতা সেন (১৯৪২) মহাপৃথিবী (১৯৪৪) সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮) শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) রূপসী বাংলা (১৯৫৭)* বেলা অবেলা কালবেলা (১৯৬১) * সুদর্শনা * আলো পৃথিবী (১৩৮৯ বাংলা) * মনোবিহঙ্গম* অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯) * প্রবন্ধগ্রন্থ কবিতার কথা (১৯৫৫) জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ সমগ্র (১৯৯০, সম্পাদকঃ ফয়জুল লতিফ চৌধুরী)* উপন্যাস সুতীর্থ * মাল্যবান (১৯৭৩)* চারজন (২০০৪: সম্পাদকঃ ভূমেন্দ্র গুহ ও ফয়সাল শাহরিয়ার)* গল্পগ্রন্থ জীবনানন্দ দাশের গল্প (১৩৭৯ বাংলা সন)* পত্রসংকলন জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী (বাংলা ১৩৮৫, সম্পাদকঃ দীপেনকুমার রায়) জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী (১৯৮৬, সম্পাদকঃ আবদুল মান্নান সৈয়দ) ) তথ্যসুত্র: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।