আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চিঠি কোথায় যেন হারিয়ে গেল, কেবল শুধু তাকে খুজে ফিরি

সীমানার প্রাচীর টপকাতে হবে
আমি হয়ত একটু সেকেলে। তাই বর্তমান প্রযুক্তির এস.এম.এস বা ইমেইল ছাড়িয়ে চিঠি আমার বেশি পছন্দ। এর মাঝে একটা আলাদা আবেদন আছে, যা অন্য কিছুর মধ্যে এখন পর্যন্ত পাইনি। চিঠির আবেদনটা আমার কাছে এই কারনেই খুব বেশি যে, এতে কোন রকম যান্ত্রিক ব্যাপার নেই। মনের অনুভূতি কলমের ভাষায় ফুটে উঠে।

এস.এম.এস খুব ফাস্ট মাধ্যম। কিন্তু পুরোপুরি প্রযুক্তি নির্ভর। এস.এম.এস সাথে সাথে অপর প্রান্তে পৌছে যাচ্ছে। চিঠির জন্য যে প্রতীক্ষার ব্যাপার সেটা এখানে নেই। ঐ প্রতীক্ষাটাই কিন্তু অন্য রকমের একটা আবেদন।

আর এস.এম.এস এর সংক্ষিপ্ত ভাষায় কখনো চিঠির সৌন্দর্য ফুটে উঠেনা। ইমেইল একটু ইলাবোরেট। কিন্তু এটাও কিন্তু সাথে সাথে অপর প্রান্তে পৌছে যাচ্ছে। কিন্তু চিঠি পৌছে অনেক ধাপ পেড়িয়ে অনেক অনিশ্চয়ত পেড়িয়ে। তাই একটা চিঠি লেখার পিছনে যে যত্ন থাকে সেটা অন্য মাধ্যমে কখনো থাকে না।

এখন অফিসিয়াল চিঠি ছাড়া অন্য কোন চিঠির চল আছে বলে তো মনে হয় না। চিঠির মত এত সুন্দর এবং এত শৈল্পিক একটা যোগাযোগ মাধ্যম এভাবে নতুন প্রযুক্তির কাছে হারিয়ে যাবে এটা আমার মত সেকেলের পক্ষে মেনে নেয়া সত্যি বেশ কষ্টের। আমি নিজে যে খুব চিঠি লিখি, তা কিন্তু না। সর্বশেষ চিঠি কবে কাকে লিখেছি সেটাই এখন মনে করতে পারছি না। ছোটবেলায় কাজিনদের মধ্যে চিঠি আদান প্রদানের চল ছিল।

আমার কাজিনরা সবাই বলতে গেলে অন্য জেলায় থাকে। আমাদের বাসায় তখন টেলিফোন ছিল না। টেলিফোন ব্যবহার করাটাও খুব সহজসাধ্য ছিল না। এখন মোবাইলের আগমনে আমরা হয়ত ভুলে গিয়েছি যে এক সময় ঢাকার বাইরে কল করাটা কতটা কষ্টকর আর ব্যয় বহুল ছিল। কিন্তু দুই টাকায় তখন চিঠি পাঠানো যেত।

আজও দুই টাকায় চিঠি পাঠানো যায়। কিন্তু সেটা কয়জন ব্যবহার করে? আমার এক মামা তখন কাতারে থাকতেন। ওনাকে মাঝে মাঝে চিঠি লিখতাম। উনিও উত্তর দিতেন। একটা চিঠি পাওয়া মানে খুব আনন্দের ব্যাপার ছিল।

সেটা অনেক যত্নের সাথে দীর্ঘ সময় ধরে পড়তাম। আমার এক কাজিন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে তখন। সে থাকে চট্টগ্রামে। যে মেয়েকে পছন্দ করে তাকে মনের কথা কোনভাবেই খুলে বলতে পারছে না। সে পরিচয় গোপন রেখে তার সাথে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে।

চিঠি লিখতেও সাহস হচ্ছে না। তার হাতের লেখা নাকি ঐ মেয়ে চিনে। আবার চিঠির উপরে ডাকঘরের সীল দেখে যদি তাকে বের করে ফেলে এই ভয় পাচ্ছে। আমি তখন তার সাহায্যে এগিয়ে এলাম। সে আমাকে চিঠি পাঠাত।

সরাসরি আমার নাম দিয়ে পাঠানো আবার আমার জন্য বিপদ ছিল। কারন ঐ চিঠি বাসার অন্য কেউ খুলে পড়লে বিপদ আছে। তাই আমার নাম পরিবর্তন করে “মোহাম্মদ রফিক” রাখা হল। তখন অবশ্য ক্রিকেটার মোহাম্মদ রফিকের আবির্ভাব ঘটেনি। আমার বাসার পোস্ট বক্সে চিঠি আসত।

“মোহাম্মদ রফিক” নাম দেখলেই ছো মেরে চিঠি নিয়ে আসতাম। আমার কাজ ছিল ঐ চিঠিটাই লেখা এবং ঐ মেয়ের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়া। ঐ মেয়েকে চিঠি পাঠানোর সময় আমার ঠিকানায় ব্যবহার করতাম। অবশ্যই আমার নাম গোপন রেখে। “মোহাম্মদ রফিক” নামটা ওখানেও ব্যবহার হত।

চিঠি পাঠাতে আমার অবশ্য দুই টাকা খরচ হত। কিন্তু এই কাজটা করতে যে মজা পাচ্ছিলাম তার মূল্য দুই টাকার চেয়ে অনেক বেশি। আমাকে এবং আমার কাজিনকে আশ্চর্য করে দিয়ে ঐ মেয়ের কাছ থেকে জবার আসল। ঐ মেয়ে জানতে চেয়েছে, আমি কে? কি করি? তাকে কেন চিঠি লিখেছি? আমি সেটা আমার কাজিনকে পাঠিয়ে দিলাম। আমার কাজিন নিজের সম্পর্কে কিছু বানিয়ে কিছু বাড়িয়ে জবাব লিখে আমার কাছে পাঠালো।

আমি বরাবরের মতই সেটা আমার হাতে লিখে আবার পাঠিয়ে দিলাম। এভাবে দুই জনের মধ্যে দারুন একটা রিলেশন তৈরী হয়ে গেল। মাঝে আমি কাবাবমে হাড্ডি মিডিয়া হিসেবে কাজ করছি। তখন নিজেকে রানার মনে হত। রানার যেমন চিঠি পৌছে দেয়, আমিও তেমনি একজনের চিঠি আরেকজনকে পৌছে দিচ্ছি।

আমার কাজিন একদিন চিঠি লিখল যে, সে ঐ মেয়ের সাথে দেখা করতে চায়। ঐ মেয়ে আবার দেখা করতে রাজী হল না। কিন্তু আমার কাজিন দমে যাবার পাত্র না। কয়েক বারের চেষ্টায় ঐ মেয়ে অবশেষে রাজী হল। তারপর শুনেছি তাদের মধ্যে দেখা হয়েছে এবং ভালবাসাও হয়ে গেছে।

এরপর থেকে মাধ্যম হিসেবে আমার আর প্রয়োজন পড়েনি। চিঠি নিয়ে আরো কিছু মজার মজার কাহিনি আছে। সেগুলো ধীরে ধীরে এই ব্লগে শেয়ার করব।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.