আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মনির হোসেনের পোস্ট ধরে কিছু আলোচনা: বিষয়- নারীর নারীত্ব ও সতীত্ব (উৎসর্গ: মনির হাসান ও সালাউদ্দীন শুভ্র)



মনির হাসানের "পুরুষতান্ত্রিকতার ধ্বজভঙ্গ সমাজতত্ত্বঃ “নারীর ইজ্জতই তার প্রধান সম্বল" (Click This Link) পোস্টের আলোচনাটা কমেন্ট আকারে দিলে অনেকের চোখে হয়তো পড়তো না। এই বিবেচনায় শুভ্র ও মনিরের অনুরোধে এই নতুন পোস্টের অবতারণা। -------------------------------- এক প্রথমে সতীত্ব-নারীত্ব-সতিপনা এসব নিয়ে কিছু কথাবার্তা কই..... শুভ্রঃ সতিত্ব বিষয়টিকে বাজার খোলামেলা করে দিয়েছে। সতীত্বের আড়ালে থাকার, সম্ভ্রমে থাকার এবং ভালোবাসায় থাকবার যে বিষয়টি ছিলো-আমাদের আধুনিক শিক্ষায় তা হবার জো রইলো না। নারীত্ব কখনোই সতীত্ব বর্জিত নয়-এর বাজারি হওয়াটা অপরাধই।

কিন্তু সমাজ সতীত্বের ধারনাকে জোরালো করেছে আবার শারীরিক ও মানসিকভাবে এমন অনেক নারী তৈরি করেছে যারা সতীত্ব বিকিয়ে চলে অথবা সতীত্বের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতে গিয়ে সমাজ বিচ্ছ্ন্নি হয়েছে। মনিরঃআমি সতীত্ব বর্জনের আহবান জানাই নি কোথাও ====>>> সেই পুরাতন রোগ! কোন বিষয়কে ভিতর থেকে দেখতে না পাওয়া- আরো দশটা বিষয়ের সাথে এক করে একরকম লেজেগুবরে অবস্থা করে ফেলা!!! বাজার এই সমস্যাটিকে প্রকট করেছে ঠিকই- কিন্তু একে বাজার দিয়ে ব্যাখ্যা দিতে যাওয়া নেহাত বোকামি। বাজারের আগে থেকেই এই সমস্যার শুরু- যেদিন থেকে নারীর উপর পুরুষের কর্তৃত্ব স্থাপিত হলো- সেদিন থেকেই পুরুষ নারীর উপর নানারকম টাবুর সাথে এরকম কিছু নারীত্ব/সতীত্বের ধারণাও তৈরি করে নিয়েছে। এটার মূল জায়গাই হলো- এর মাধ্যমে নারীকে পুরুষের আয়ত্তে রাখা, নারীকে পুরুষের সম্পদ হিসাবে তৈরি করা। নারীর সতীত্ব কার জন্য? পুরুষের জন্য।

নারীর একগামিতা কার জন্য ? পুরুষের জন্য। নারীর নারীত্ব কার জন্য? পুরুষের জন্য। এটাই হলো মূল কথা। যদিও এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এসমস্ত প্রশ্নের জবাব পাবেন অন্যভাবে- নারীর সতীত্ব কার জন্য? এই সমাজের জন্য। নারীর একগামিতা কার জন্য ? এই সমাজের জন্য।

নারীর নারীত্ব কার জন্য? এই সমাজের জন্য। কারণ, পুরুষ মানেই তো আজকের এই সমাজ, আজকের এই সমাজ মানেই পুরুষ। ফলে, পুরুষেরা সমস্বরে আওয়াজ তুলবে: নারীত্ব কখনো সতীত্ব বর্জিত নয়!!! সমাজও সমস্বরে চিৎকার করবে: নারীত্ব কখনো সতীত্ব বর্জিত নয়!!! আর এই সমাজের প্রোডাক্ট শুভ্ররা তো করবেই। এমনকি এমন পোস্টের লেখক পর্যন্ত বলবে: আমি সতীত্ব বর্জনের আহবান জানাই নি কোথাও!!!! লাইনটি কিন্তু ভীষণ!!! নারীত্ব কখনো সতীত্ব বর্জিত নয়!! এখানে সতীত্বকে তো বটেই- নারীত্বকেও মহিমান্বিত করে তোলা হলো! এবং খুব চমৎকারভাবে- এক ঢিলে দুই পাখি- যেন নারীত্ব জিনিসটা খুবই মহার্ঘ্য একটা জিনিস এবং সেই মহার্ঘ্য "নারীত্ব" পরিপূর্ণ হতে পারে "সতীত্ব" আরেক মহার্ঘ্যের সংযোগে!! এই না হলে, এই না বললে- আমাদের পুরুষতান্ত্রিকতা! এই না হলে আমাদের এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ!!! অন্য কেউঃ সতীত্ব বর্জনের আহবান জানাইবেন্না ক্যান? পুরুষগো লিগা যদি 'সতত্ব' চালুঅয়, তৈলে 'সতীত্ব' মানতে রাজি আসি। নয়তো দ্রব্যটা হিপোক্রাইসি।

আমার পরাণপাখি জান্তে চাইতারেনা আমার 'সতত্ব' আসে কিনা। টার্মটাই তো নাই। আমার কি অধিকার তারে জিগানের যে হ্যার 'সতীত্ব' আসে কিনা? আজিব। 'সতীত্ব' টার্মটা পুংবাদীগো চালু করা সবচাইতে অশ্লীল টার্মগুলার একটা। ==========>>>>> জটিল কমেন্ট।

পুরোটাই একমত। মনিরঃ "সতীত্ব বর্জনের ডাকে" কাদের সব থেকে বেশি বলি দিতে হবে ? অবশ্যই নারীদের ... মনির/অন্যকেউ/শুভ্র এরা যতই সতত্ব বিসর্জন দেক না ক্যান ... তারা প্লেবয় খ্যাতি পাবে ... এই আন্দোলনের শহিদ বলে তাদের কেউ দেখবেনা । অপর দিকে একজন নারী যদি সতীত্ব বিসর্জন দেয় তো তার ট্যাগ হবে "বেশ্যা" ... ... নারীরা জগতের অনেক কারণেই বলি হতে হতে শেষ ... আর আমি তাদের বলি দেখতে চাই না ... তাই আপাতত "সতীত্ব বর্জনের ডাক" দিচ্ছিনা । ===>> কি অদ্ভুদ কিসিমের বৈপরীত্য! এমন আগুন পোস্টের লেখকের মুখে এরকম পুরুষের গন্ধ ছোটা কমেন্ট!!! সতীত্ব বা নারীত্ব বর্জন করা মানে সামাজিকভাবে বিবাহ বহির্ভূত সেক্সে লিপ্ত থাকা? এটাই বুঝলেন? যে কথা নিজের পোস্টে বললেন- সেই গলদ নিজে করে বসলেন! সতীত্ব বর্জন মানে হলো "সতীত্ব" নামক অশ্লীল ও আধিপত্যমূলক পোষাকটি ত্যাগ করা- সেটা মানে নারীদের জনে জনে সেক্স করা না। সেই নোংরা পোষাক- যার মাধ্যমে নারীর সেক্সের একাধিপত্য পুরুষের হাতে থাকে- সেই নোংরা পোষাককে ছুড়ে ফেলা দেয়া।

যে পোষাকের কারণে বেশ্যা ও অন্যান্য "চ" বর্গীয় সেক্স কেন্দ্রিক ও জন্মকেন্দ্রিক গালিগালাজের কেন্দ্রমুখ নারী- সেই পোষাক বর্জনের ডাকে যদি "বেশ্যা" গালি খাওয়ার ভয় দেখেন- তবে করার কিছু নেই। এই পোষাক তো কেবল নারীর ত্যাগ করার বা বর্জন করার নয়- এটাকে তো পুরা সমাজ থেকেই ঝেটিয়ে বিদায় করতে হবে। ফলে- সতীত্ব/নারীত্ব বর্জনের ডাক তো সমাজ থেকে পুরুষতান্ত্রিকতাকেই নির্মূল করার ডাক- তা কেমন করে নারীর বিবাহ বহির্ভূত সেক্স করার নাম হতে পারে?? শুভ্রঃ ১. নারীর সতীত্ব বলতে শুধু তার জননাঙ্গকেই বুঝলে ভুল হবে-এটা তার নিজস্বতাও বটে। প্রত্যেক নারী তার শরীর নিয়ে কি করবে এটা তার বিষয়। মনিরঃ ১. ঠিকাছে ====>>>> নারীর নিজস্বতা আবার কি? এবং সতীত্ব ধারণাটির মধ্যে জনন অঙ্গ তো আছেই- পুরুষেরা সেই ধারণা তৈরি করেছে- আপনি আমি অস্বীকার করতে চাইলেও কি অস্বীকার করতে পারবো? এখন, সতীত্ব'র সাথে তথাকথিত অবৈধ সেক্সকে বাদ দিলে আর কি কি বিষয় থাকতে পারে- যেটাকে নারীর নিজস্ব বলে সতীত্বের ধারণাকে সম্মান করা যায়? "প্রত্যেক নারী তার শরীর নিয়ে কি করবে এটা তার বিষয়"- এটার স্বীকৃতি কি আপনার সমাজ দেয়? একজন নারীও কি সতীত্বের প্রতি মোহ থাকা অবস্থায় এমনটা ভাবতে পারে- পুরুষরা এমন ভাবতে পারে? এবং শেষ পর্যন্ত সতীত্বের রুট সেক্সই।

তাই সীতাকে সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয়- আয়েশাকেও আয়াত দিয়ে সতীত্ব হানির হাত থেকে রক্ষা পেতে হয়। কিন্তু কোন পুরুষকে কোনদিন সতত্বের পরীক্ষের দিতে হয়না- কৃষ্ণের বহুগামীতা লীলাখেলা হিসাব শ্রদ্ধার পাত্র হয়- মুহম্মদ সা এর বহুগামিতা (বিয়ে করে বা না করেই) হয় নানাকারণেই গুরুত্বপূর্ণ ও মহৎ!! শুভ্রঃ ২.ব্যাক্তি স্বাধীনতা জরুরি-কিন্তু এটাকে রুচি এবং সংস্কৃতির আধারেই তৈরি করতে হয়। ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠাটা মোটেই ঠিক নয়। মনিরঃ ২. ঠিকাছে ====>>> যেখানে নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার চাপে পিষ্ঠ এবং ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধটাই রহিত- সেখানে নারীর ব্যক্তিস্বাধনীতার কথাটাই মুখ্য। সেটা শুনে যখন কেউ স্বেচ্ছাচারী হওয়ার ভয় দেখে ও দেখায়- তাদের উদ্দেশ্য বলতে পারি- এমন ক্ষেত্রে কখনো কখনো স্বেচ্ছাচারী হলেও ভালো।

বৃষ্টির জন্য যেখানে হাহাকার- সবাই বৃষ্টির কামনাই করে। কিন্তু এমন সময় কেউ কেউ ঝড়ের আশংকা করলেও নিশ্চয়ই আমরা বৃষ্টির জন্য কামনা ও প্রার্থনা বন্ধ করবো না। শুভ্রঃ ৩.বাজার নারীকে অনেক বেশি করে বাইরে আসতে বলে। এটা খেয়াল রাখতে হবে। বাজারের ছলনা থেকে নারীকে মুক্ত না করলে নারী কখনোই মুক্ত হবে না।

মনিরঃ ৩. বাজার করুক আর নাই করুক, নারীর বাইরে যেতে সমস্যা কি? তারা কি শুধু ঘরে সেক্স ডল হয়ে পরে থাকার জন্য ? আমার উপলব্ধি হচ্ছে "বাজার যদি নারীকে বাইরে বের করে আনে না , শুধু বিছানায় পাঠায়। " ====>>>> বাজার নারীকে বাইরে আসতে বলে- এটার মাধ্যমে আসলে কি খেয়াল করতে বলেন? এই অংশটুকু আর সমস্ত কিছু থেকে আলাদা করে দেখলে বাজারকে অনেক পজিটিভ মনে হয় যে!! আসলে কিন্তু বাজার পজিটিভ নয়। একটা সময় নারীর উপর পুরুষের আধিপত্য বজায় রাখতে তথাকথিত ডিভিশন অব লেবার তৈরি করে নেয় ও তৈরি করে দেয় পুরুষেরা (আজ আমরা বলি এমন ডিভিশন তৈরি করেছে এই সমাজ): নারীদের জন্য নরম সরম কাজ- নারীরা থাকবে ঘরে, সে হবে গৃহিনী, ঘর-গৃহস্থালী সামলাবে আর সন্তান-উৎপাদন-লালনপালন করবে, আর পুরুষেরা করবে যাবতীয় শক্ত কাজ- আসলে এটা নামেই শক্ত কাজ, সন্তান উৎপাদন বলি আর ঘরের কাজ করা বলি কোনটাই তো অশক্ত কাজ নয়- আসলে পুরুষেরা বাইরের সেই তথাকথিত শক্ত কাজ বলতে যেটা করে সেটা হলো আয়-উপার্জন করে। আর এটার মাধ্যমেই নারীর উপর তার কর্তৃত্ব নিশ্চিত করে। কিন্তু, আজকের যুগটা একটু অন্যরকম- আজ হলো বাজারের যুগ, মুনাফার যুগ।

তাই নারীকে পুরুষের অধীনস্ত রাখার প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকার পরেও- নারীকে আর কেবল ঘরে বন্দী রাখলে মুনাফা কম হয়। কারণ মুনাফা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন সস্তা শ্রম- সবচেয়ে সস্তা, নির্ঝঞ্ঝাট ও নিরাপদ (নিরাপদ এই অর্থে যে এটা দুর্বল দাবিহীন) শ্রম হচ্ছে নারী ও শিশুর শ্রম। সেকারণেই নারীদেরকেও বাইরে বের হওয়ার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। বাধ্য হয়েই হোক আর যেকারণেই হোক- এর ফল এট লিস্ট আগের জামানার তুলনায় ভালো। কারণ, নারী যতখানি উপার্জনক্ষম হতে পারছে- ততখানি তো সে পুরুষের কর্তৃত্ব অস্বীকার করার মত একটা ভিত্তি পাচ্ছে।

তারপরেও বলবো এই বাজারই আবার আরেকভাবে নারীর পুরুষের কর্তৃত্বকে নিশ্চিত করছে। সেটা কিভাবে? তাহলে সেটাই বলছি। বাজার দেখে মুনাফা। মুনাফার জন্য যা করা দরকার- সে সেটাই করে। সে যখন দেখলো- সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক এবং বাজারে আধিপত্য পুরুষদেরই, পুরুষরাই এখন পর্যন্ত মূল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূলে- সুতরাং মুনাফার মাধ্যম হিসাবে এই পুরুষতান্ত্রিকতাকেই সে আকড়ে ধরলো।

নারীকে বানিয়ে ফেললো পণ্য, স্রেফ বাজারি পণ্য। নারী আগে থেকেই ছিল- পুরুষের ভোগ্য সামগ্রী, কিন্তু একটা পর্যন্ত সেটা ছিল অনেকটা ঘরে তোলা সামগ্রী বা সম্পদের মতো। কিন্তু আজকে এসে বাজারের বদৌলতে নারী হয়ে গেল সম্পূর্ণটাই পণ্য। নারীর সেক্স, সেক্সাল অর্গান সবই রমরমা পণ্য। একটা লোকের দৈনন্দিন জীবনে সাবান- পেপার- টুথপেস্ট- থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন, অ্যাপার্টমেন্ট কত কি লাগে- বাজারের কল্যানে এই চাহিদার শেষ নেই; এবং সেই সাথে লাগে নারী।

ভদ্র ফর্মে নারীর ভালোবাসা থেকে শুরু করে নারীর মনভোলানো হাসি- রাঙানো ঠোট- অনাবৃত উরু- বুক - পাছা সবই দরকার। সবই লোভনীয়। সবই পণ্য। এমনকি পুরুষের শেভিং রেজর, বা জাঙ্গিয়ার প্রয়োজনও নারীকে ভিন্ন সম্ভব নয়। এই হলো আজকের বাজার।

আর এ কারণে- নারীকে বাইরে এনেও একই সাথে এই বাজার ব্যবস্থা নারীকে পণ্য করে ছেড়েছে এবং এরই মাধ্যমে পুরুষদের আধিপত্য ঠিকই বজায় রেখেছে। শুভ্রঃ ৪. সতীত্ব পরীক্ষা করাটা অন্যায় কিন্তু সতীত্ব রক্ষা করাটা দায়িত্ব। মনিরঃ ৪. "সতীত্ব নিয়ে সুচিবায়ুতা ! ! " হা হা হা ... পোস্টটা আপনার কোন উপকার করতে পারেনি । ====>> আসলেই পোস্ট শুভ্রের কোন উপকারে আসেনি! সতীত্ব রক্ষা মানে আসলে কি? কে রক্ষা করবে, কেন করবে, কার জন্য করবে? সতীত্ব রক্ষার এই মহোত্তম দায়িত্ব কে নারীর উপর অর্পন করলো? সতীত্ব রক্ষার এই দায় কেন নারীরা বহন করবে? শুভ্রঃ ৫. রাষ্ট্র এবং তার রাজনীতিকে বুঝতে হবে-বুঝতে হবে পুঁজিবাদী রাজনীতির কৌশলকেও-এভাবেই আলোচনা করতে হবে নারীকে। মনিরঃ ৫. ব্যাপক আলোচনার দাবী রাখে ===>>> এটাতে একমত।

অবশ্যই রাষ্ট্র ও রাজনীতিতকে বুঝতে হবে, আজকের পুঁজিবাদী বাজার রাজনীতির কৌশলকে নিয়েও আলোচনা করতে হবে। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদকে উচ্ছেদের সংগ্রাম আর পুরুষতান্ত্রিকতা উচ্ছেদের সংগ্রাম আসলে অভিন্ন। শুভ্রঃ ৬.নির্দিষ্ট করতে হবে আমাদের নারীকে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ইতিহাসের নারীদের খুঁজে-খুঁড়ে বের করতে হবে।

তারপর এখনকার সময়ের নারীদের সতীত্ব নিয়ে আলোচনা করতে হবে। মনিরঃ ৬. এইটা কি কইলেন ? নির্দষ্টকরণ মানে কোন দিক দিয়া ? নারীরাতো নির্দিষ্টই ( গন্ডিবদ্ধ ) হয়াই আছে । আর কত করতে চান ? ===>> ইতিহাসের নারীদের খুজে বের করা যেতে পারে। কিন্তু সেটাই মুখ্য নয়। মুখ্য হলো- যাবতীয় অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে, শোষণ-নীপীড়নের বিরুদ্ধে নারীদের নিরন্তর লড়াই সংগ্রাম, এবং পুরুষরাও এই সংগ্রামে সামিল হলে- নারী-পুরুষের মিলিত সংগ্রামই নারী ও পুরুষের ভেদ ঘুচিয়ে উভয়কেই সত্যিকারের মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

শুভ্রঃ সতীপনা বিষয়টি আসলেই আপত্তিকর। আমাদের সমাজে অসংখ্য নারী আছেন যারা নিজের সতীত্ব বজায় রাখতে চান। এটা সমাজ সংস্কার তাকে শিখিয়েছে। আবার অসংখ্য নারী পোশাকি সতিপনা বজায় রাখে। আমি পষ্ট করেই বলেছি সতীপনা কেবলমাত্র জননাঙ্গ কেন্দ্রিক কোন বিষয় নয়।

সমস্ত অর্থেই নারী। কোন নারী-যে নারী ঘরের, পাড়াগাঁয়ে থাকে। তাদের অধিকাংশই সতীত্ব মানে এবং মেনেও তা ভাঙ্গে। সবাই না কেউ কেউ। নারীকে বুঝতে হবে।

কেবল প্রগতিকে বুঝলে চলবে না। কারণ বেশিরভাগ নারী-ই এই সমস্ত প্রগতির ধারণায় উপেক্ষিত। তাদের কোন মতামতই সেখানে প্রতিভাত হয় না। তাই আমি বলছি সতীত্বকে সম্মান করার কথা। ===>> "সতীপনা আসলেই আপত্তিকর" - "সতীপনা কেবলমাত্র জননাঙ্গ বিষয় নয়"- "সমস্ত অর্থেই নারী"- এ কথাগুলো পরষ্পরবিরোধী মনে হচ্ছে।

অনেক নারী সতীত্ব বজায় রাখতে চায়- এটা সমাজ সংস্কার তাকে শিখিয়েছে- তার মানে কি ঐ নারীর এই সংস্কারকে আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে? কেবল পোশাকী সতীপনাকে অপছন্দ করবো- এমন? পাড়া-গাঁয়ের নারীকে বুঝা মানে কি সমাজের নাম করে পুরুষেরা দীর্ঘদিন যে পুরুষতান্ত্রিকতার ভূত তাদের উপর চাপিয়েছে, সংস্কার হিসাবে যেটা নারীর সংস্কারে গভভিরে প্রবেশ করেছে- তাকে সেভাবেই অবস্থান করতে দেয়া? মানতে পারলাম না। বেশিরভাগ নারী-ই সমস্ত প্রগতির ধারণায় উপেক্ষিত, এটার মানে কি? চরম বিভ্রান্তিমূলক কথা। প্রগতি মানে আপনি কি বুঝেন- সেটাই জানতে চাইছি। মনিরঃ আপনার দৃষ্টি ভঙ্গিটা মোটেও সুবিধার মনে হইতেছেনা । সতীত্বকে সম্মান করতে করতেই তো আমরা এই সতীত্ব পুজায় অভ্যস্ত হয়া গেছি।

পোস্টের আবেদনের সাথে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিটার দুরত্ব অনেক । অনেক ... ... ===>> এবার ঠিক আছে। ধন্যবাদ। দুই মনিরঃ "... খুব সম্ভব, নির্মল কুমারী যোনির প্রতি অমোঘ আকর্ষন আর তার স্বাদ নেয়ার লোভ থেকেই এই তত্ত্বের উদ্ভব। আর নিজের দুর্বল যৌনক্ষমতায় নারী যেন পরমুখি না হয়, সেই ভয় তো আছেই" মনজুরুল হকের চমৎকার আলোচনার পরেও মনিরের প্রশ্ন: "অনুমান করি, আপনার ঊল্লেখিত ভরকেন্দ্র পরিবর্তনের ইতিহাসের মোড়ে এসে নারীর অবদান তুলনামূলক পেশিনির্ভর বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার কাছে হার মেনে যায় ... এবং নির্বাহী পুরুষ কর্তা ব্যাক্তিদের তত্ত্ব দিয়ে সমাজ কাঠামো নির্মিত হতে থাকে ... যার অভিসপ্ত ফলাফল আজকের ...... তাই ঠিক এই টার্নিং পয়েন্টে ... ঠিক কোন কারণে পুরুষ কর্তারা এই বিকৃত তত্ত্বটি আরোপ করতে চেয়েছিল ... তার একটা সম্ভাবনা যাচাই ছিল ......" ==========>>> টার্নিং পয়েন্ট টুকু পর্যন্ত যেহেতু স্বীকার করেছেন- তাহলে তারপরের অংশতেই আলোকপাত করি।

একবার যখন আধিপত্য অর্জিত হলো- তারপরে সেই আধিপত্য বজায় রাখার চেস্টা করলো। দুর্বলের উপর সবলের, শোষিতের উপর শোষকের, প্রজার উপর রাজা/পুরোহিতের, নারীর উপর উপর পুরুষের। এই আধিপত্য বজায় রাখতে গিয়ে সবলেরা, রাজা/পুরোহিতেরা, পুরুষেরা নানা রকম নিয়ম কানুন, রীতিনীতি, সংস্কার, টাবু চালু করে নিল। এই সময়ে ধর্মের আবির্ভাব, তখনকার ধর্মগুলো সরাসরি যেমন রাজা/পুরোহিতদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে (রাজারা সরাসরি ঈশ্বরের প্রতিনিধি), তেমনি পৃষ্ঠপোষকতা করেছে পুরুষদের। সমস্ত ধর্মই পুরুষদের জয়গান করেছে, যদিও আদিম লোকাচারে পুরুষ-নারীর ভেদাভেদ চোখে পড়ে না।

এর মানেই হলো- এই আধিপত্য বিস্তারের গল্পগুলো সবই কাছাকাছি সময়ের গল্প এবং ধর্ম তার অনেক বড় হাতিয়ার। যাহোক, আমরা গল্পটিকে নারীর উপর পুরুষের আধপত্য বিস্তারে সীমাবদ্ধ রাখি। আধিপত্য বিস্তারের চেস্টা যেহেতু সম্পদকে নিয়ে, সম্পদের মালিকানা ও ভোগ নিয়ে- সেহেতু এতে পুরুষেরা জয়ী হয়েছে মানেই- যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভরকেন্দ্র পুরুষদের হাতে। এখন এটাকে সুনিশ্চিত করার লক্ষে নর ও নারীর শ্রম বিভাজন। অর্থাৎ নারীকে যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া।

এটা হলো প্রথম স্টেপ। নারীদের কাজ হলো ঘর গৃহস্ঠালি দেখা, ঘরে থাকা, সন্তান উৎপাদন, সন্তান পালন ইত্যাদি। যেভাবেই হোক নারীকে উপার্জনক্ষম হতে দেয়া চলবে না। এরপরে আসে- বংশের প্রশ্ন। আগে মাতৃতান্ত্রিক সমাজে বংশ পরিচয় নির্নী্ত হতো মায়ের পরিচয়ে।

সেটা ছিল অনকে বড় বড় পরিবার, যৌথ পরিবার- দলবদ্ধতা বা যুথবদ্ধতাই ছিল মুখ্য, সাম্য ছিল ভিত্তি। কিন্তু পুরুষের হাতে আধিপত্য আসার পরে- সেগুলোও ভেঙে পড়ে। পুরুষের হাতে জমলো অর্থ কড়ি- সম্পদ, কিন্তু সারাজীবন ভোগ করার পরেও যে সম্পদ থেকে যাবে- সেটার কি গতি হবে? এই প্রশ্নে চলে আসলো বংশ রক্ষা- পুরুষই ঠিক করলো রক্ত সম্পর্কের কথা, রক্তের বিশুদ্ধতার প্রয়োজনীয়তা তখনই খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো। এর আগে পর্যন্ত রক্তের বিশুদ্ধতার কোন প্রয়োজন কেউ কখনো অনুভব করেনি। এখান থেকেই আরম্ভ পিতৃতান্ত্রিকতার ও নারীর একগামিতার।

বংশ রক্ষা পুরুষের একটা অপরিহার্য কাজের আওতায় পড়লো। এখানে বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য: নারীর একগামিতা- সেটা কোনমতেই পুরুষের নয়। পুরুষ কিন্তু বহুগামি হলেও তার বংশরক্ষার সমস্যা হচ্ছে না। রক্তের বিশুদ্ধতাও রক্ষা করতে সমস্যা হচ্ছে না। আর এটা করতে গিয়েই অর্থাৎ এই বিশুদ্ধতার উপর বিশেষ জোর দিতে গিয়েই সতীত্বের একটা টাবু তৈরি করে নিতে হলো।

এটাই হলো ইতিহাস। সেখানে কুমারির যোনির লোভ, আর পুরুষের অক্ষমতার কথাগুলো কেবলই গালগল্প। মজার ব্যাপার হলো- বংশরক্ষাটাই কিন্তু মূল ছিল। ফলে- কোথাও কোথাও কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত রক্তের বিশুদ্ধতা বা সতীত্বও ছিল অনেক গৌন। মন সংহিতায় পাবেন- জমি কিভাবে চাষ হচ্ছে বা কে চাষ করছে সেটা মুখ্য নয়- জমির মালিকই ফসলের মালিক হবে।

অর্থাৎ, পত্নীর মালিক হচ্ছে তার পতি- ফলে সেই পত্নীর গর্ভে পতি সন্তান উৎপাদনে ব্যর্থ হলে- অন্যের (এর একটা তালিকা আছে- যদিও পরবর্তীতে এটা অনেকদিন কেবল পুরোহিত-ঠাকুরদের জন্য বরাদ্দ) বীজে পত্নীর গর্ভে সন্তান উৎপাদন করা যাবে- এবং মনু সংহিতা অনুযায়ি ঐ সন্তানের মালিক হবে জমির মালিক অর্থাৎ পতি। এখান থেকেও আমরা একটা ধারণা পেতে পারি বৈকি। তাহলে মোটামুটি স্টেপগুলো হচ্ছেঃ সম্পদ নিয়ে লড়ালড়িতে নারীর উপর পুরুষের জয় ==>> অর্থনৈতিক কর্মাকাণ্ডে পুরুষের আধিপত্য ==>> নর-নারীর শ্রম বিভাজন এবং অর্থনৈতিক কর্মাকাণ্ড থেকে নারীর প্রস্থান ==>> পুরুষের হাতে সম্পদ সঞ্চিত হওয়া ==>> বংশরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা ==>> রক্ত সম্পর্কের বিশুদ্ধতা ==>> সতীত্বের ধারণা সবাইকে ধন্যবাদ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.