আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শোনা কথা-১



ছোটবেলার কিছু ঘটনা যা বাবা-মা আর বড়বোনদের কাছে শুনেছি তারই কিছু লেখার চেষ্টা করছি। একটু এদিক ওদিক হয়ে যেতে পারে কিছু কথা, সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী, তবে সুবিধা হল কেউতো ধরতে পারছে না সেগুলো। আমার জন্ম হয়েছে সৌদি আরবে, আব্বা-আম্মা দুজনেই ওখানে চাকরী করতেন। বড় দুই বোনের পর স্বভাবতই সবাই আশা করেছিল যে এবার ছেলে হবে, কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি দিয়ে আমার জন্ম হল। আমার চামড়া নাকি এতই পাতলা ছিল যে সব শিরা উপশিরা দেখা যেত।

ওখানকার সবাই পরামর্শ দিল এ্যারারুট মেখে রাখতে শরীরে, তাতে নাকি চামড়া মোটা হবে। (আমাকে গন্ডার বানানোর বুদ্ধি আর কি)। কিন্তু আম্মার ঐ বুদ্ধি পছন্দ হয়নি। আম্মা আমাকে নিয়মিত অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে রাখতেন, (মানে বেশী করে তেল মাখতেন)। কিছুদিনের মধ্যেই আমার চামড়া স্বাভাবিক হয়ে গেল।

এই তালে বলে রাখি এখনও আমাদের ভাইবোনদের মধ্যে আমার ত্বক সবচেয়ে ভালো, তারা সবাই আম্মাকে বলে, আমাদেরও কেন ছোটবেলায় অলিভ অয়েলে ডুবিয়ে রাখলেন না। যা হোক, জন্মের পর হাসপাতালের একটা ঘটনা, আম্মা আমাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে একটু বাইরে গেছেন, এর মধ্যে এক পরিচিত সৌদী ভদ্রলোক আমাকে দেখতে এসেছেন। উনি এসেই আমাকে কোলে তুলে বসে আছেন, আম্মা এসে এই দৃশ্য দেখে তাকে বকা-ঝকা শুরু করলেন, আমার মেয়েটাকে মাত্র ঘুম পাড়িয়েছি এর মধ্যে আপনি কেন কোলে নিলেন, এখন আবার ঘুম ভাঙলে তখন কি আপনি ঘুম পাড়াবেন? ভদ্রলোক কিছু না বলে মিটিমিটি হাসছেন শুধু। পরে উনি চলে গেলে আশেপাশের লোকজন এসে আম্মাকে বলল, আপনি এটা কী করলেন, উনার সাথে এভাবে কথা বলা কি ঠিক হল? আম্মা বললেন, কেন কী হয়েছে, উনি তো আমাদের পরিচিত। তখন তারা জানাল, কিন্তু উনি এখন 'আমীর' হয়েছেন, সেটা শোনেন নি? আম্মা ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলেন।

সৌদিতে 'আমীর'দের সাথে বিশেষ সম্মান করে কথা বলতে হয়। আমরা যেখানে থাকতাম সেটা ছিল একটু মফস্বল এলাকা, অনেক কুসংস্কার ছিল ওখানকার লোকজনের মধ্যে। তার মধ্যে একটা হল, বাচ্চাদের জন্মের পর বাচ্চার হাত পা সোজা করে কাপড় দিয়ে শক্ত করে পেঁচিয়ে বেঁধে রাখতে হয় (অনেকটা মমির মত)। এটা না করলে নাকি বাচ্চাদের হাত পা চিরদিনের জন্য বাঁকা হয়ে যায়। আমার জন্মের পরও তারা এই কাজ করতে উদ্যত হল, কিন্তু আম্মাতো কিছুতেই অমন কাজ করতে দেবেন না, তারা বারবার আম্মাকে ভয় দেখাতে থাকল আপনার মেয়ের হাত পা বাঁকা হয়ে যাবে কিন্তু।

আম্মা যতই বলেন, আমার তো আরও দুইটা মেয়ে আছে, ওদের কি হাত পা বাঁকা হয়েছে নাকি? কিন্তু তারা কিছুতেই আম্মার কথায় কান দেয় না। শেষে আম্মা বিরক্ত হয়ে বললেন, আচ্ছা আমার বাচ্চার হাত পা বাঁকাই হোক, আমার অসুবিধা নাই, তবু আমি আমার বাচ্চাকে ওভাবে বেঁধে রাখতে পারব না। সৌদিতে একটা খুব কমন জোকস হল ছোট বাচ্চাদের জন্য বিয়ের প্রস্তাব দেয়া। একবার আম্মা আমাকে নিয়ে একটা অফিসে গেছেন এক কাজে। (কি কাজে মনে নেই, সম্ভবত প্লেনের টিকেট বা ভিসা সংক্রান্ত কিছু)।

যে ভদ্রলোকের কাছে গেছেন তিনি ছিলেন সুদানী। উনি আম্মার কোলে আমাকে দেখে বললেন, আপনার মেয়ে? আম্মা হ্যাঁ বলতে উনি বললেন, আমার সাথে বিয়ে দেবেন? আম্মাতো জানেন তাদের এই স্বভাবের কথা। বললেন, না দিব না। ভদ্রলোক বললেন, কেন, আমি কালো বলে? আম্মা বললেন, না, আপনি বাংলাদেশী না, এইজন্য। আমার জন্মের সময় আমি খুবই দুর্বল ছোটখাট ছিলাম, কিন্তু আম্মার যত্নে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমি একটা মোটা-সোটা গাবলু-গুবলু বাবুতে পরিণত হলাম।

মাত্র চার-পাঁচ মাস বয়সেই আমি এত মোটা হয়ে গেলাম যে কেউ আমাকে এক হাতে কোলে ধরে রাখতে পারত না। মোটার কারণে আমার থুতনী আমার বুকের সাথে লেগে থাকত, গলা বলে আর আলাদা করে কিছু দেখা যেত না। বড় দুই বোন ভয় পেত হয়ত আমার কোনদিনই গলা দেখা যাবে না। পরে অবশ্য তাদের এই আশংকা ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। বেশী বড় হয়ে যাচ্ছে, এখনও অনেক কথা বাকী।

পরে লিখব বাকীটা।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।