আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পদত্যাগের হুমকি আকবর আলি খানের

আমি কিছুই লিখব না।

আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে রেগুলেটরি রিফর্মস কমিশনের (আরআরসি) ব্যাপারে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত না নিলে কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন আকবর আলি খান। রোববার বিকেলে গুলশানের নিজ বাসায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এখন অফিস প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এ পরিস্থিতিতে কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। " বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর আকবর আলি খানকে প্রধান করে ১৭ সদস্যের এই কমিশন গঠন করে।

উদ্দেশ্য ছিলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল করা। আর এ জন্য এ সংক্রান্ত পুরাতন, অপ্রয়োজনীয় ও জটিল বিধি-বিধানসমূহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংস্কার করা। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন নয় মাসের মহাজোট সরকারের কর্মকাণ্ড, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনীতির চলমান মন্দা নিয়েও খোলামেলা অভিমত ব্যক্ত করেন আকবর আলি খান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, "বর্তমান সরকার কমিশনের কাজে কোনও ধরনের সহায়তা করছে না। উল্টো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

" কমিশনের লোকবল প্রত্যাহার করে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, "গত ফেব্রুয়ারির পর কমিশনের আর কোনো মিটিং হয়নি। কমিশনের পক্ষ থেকে এতোদিন যে সব সুপারিশ করা হয়েছিল- তা সমন্বিত করে একটি বই আকারে প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটাও সরকার করেনি। বাধ্য হয়ে কমিশন নিজেই বইটি প্রকাশ করেছে। " ক্ষোভ প্রকাশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, "সরকারের সামনে এখন তিনটি পথ খোলা আছে।

হয় বর্তমান আরআরসিকে সব ধরনের সহায়তা করে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। না হয় কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। অথবা আরআরসি'র কার্যক্রম একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। " "সরকার যদি আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে এ তিনটির মধ্যে কোনো একটি সিদ্ধান্ত গ্রহন না করে, তাহলে কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। " বলেন আকবর আলি খান।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পদত্যাগ কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "এছাড়া তো আর কিছু করার নেই। কাজ করতে না পারলে অযথা বসে থেকে লাভ কী। " আরআরসি'র কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক এটা জানিয়ে তিনি বলেন, "পদত্যাগ আমি এখনও করতে পারি। কিন্তু আমার পদত্যাগই তো সমাধান নয়। আমি চাই আরআরসি'র কার্যক্রম অব্যাহত থাকুক।

আমার জায়গায় অন্য কেউ চেয়ারম্যান হয়ে এলে আমার কোনো আপত্তি বা আক্ষেপ নেই। আমি চাই কমিশনটা থাকুক। " সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা বাস্তবায়নের জন্য আরআরসি'র খুবই প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "পুরনো জরাজীর্ণ আইন-কানুন; বিধি-বিধান দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। " আকবর আলি খান জানান, কমিশন এ পর্যন্ত ১১টি সভা করে একশ'৩৫টি সুপারিশ সরকারের কাছে পেশ করেছে। এর মধ্যে ৪৬টি (৩৪ শতাংশ) বাস্তবায়িত হয়েছে।

আংশিক বাস্তবায়িত হয়েছে নয়টি (৭ শতাংশ), ৫২টি (৩৮ শতাংশ) সুপারিশ বাস্তবায়নাধীন আছে। বিবেচনাধীন আছে ২০টি (১৫ শতাংশ) এবং অবাস্তবায়িত অবস্থায় আছে আটটি (৬ শতাংশ) সুপারিশ। আর এ সব সুপারিশ ও বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়েই 'রেগুলেটরি রিফমর্স কমিশন প্রথম প্রতিবেদন, ফেব্রুয়ারি ২০০৯' নামের ১৩১ পৃষ্ঠার একটি বই প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কমিশনের সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিলো। এর পর আর কোনো বৈঠক হয়নি।

অর্থাৎ বর্তমান সরকারের সময় ওই একটি বৈঠকই হয়েছে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ ও অর্থসচিব বলেন, "আরআরসি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ কারণে কমিশনের কাজে সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে ও টেলিফোনে বার বার অনুরোধ জানোনো হয়েছে। কিন্তু কোনো ইতিবাচক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। " তিনি বলেন, "কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সরকারের কাছ থেকে আমি মাসিক কোনো সম্মানী পাই না।

কমিশনের মিটিং হলে তাতে যোগ দেওয়ার জন্য একটা সম্মানী পাওয়া যায়। দেশের জন্য ভালো কিছু করার জন্যই আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে দায়িত্ব নেইনি। " আরআরসি'র কর্মকাণ্ডের অর্থের যোগান কোত্থেকে আসতো- এ প্রশ্নের উত্তরে আকবর আলি খান বলেন, "তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশ্বব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টান্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি)-এর সঙ্গে সরকারের একটি চুক্তি হয়েছিল। ওই চুক্তি মোতাবেক আইএফসি আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে।

" তাদের অর্থ সহায়তাতেই কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারের সব মন্ত্রণালয় এবং সব জাতীয় দৈনিক পত্রিকা অফিসে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। নয় মাসের মহাজোট সরকারের কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আকবর আলি খান বলেন, "প্রথম দিকে সরকারের কর্মকাণ্ড বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছিল। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনায় সবার প্রশংসা পেয়েছিল নতুন সরকার। মন্ত্রিসভাতেও নতুন মুখ; নতুন ধ্যান-ধারনা নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল সরকার। শুরুতেই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।

কমিটিগুলো ভালোই কাজ করছে। বেশকিছু মূল্যবান সুপারিশ করেছে। " "তবে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতের সমস্যা সমাধানে যেসব প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছিল এখন পর্যন্ত তার কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে সরকার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরন করতে পারবে বলে মনে হয় না। " বলেন আকবর আলি।

তিনি সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের টেন্ডার-চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, "এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হচ্ছে। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। সরকারি দলের ওয়ার্কিং কমিটির সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। " শুধু আলোচনা না করে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তিনি সরকারকে পরামর্শ দেন। 'দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি উদ্বেগজনক' মন্তব্য উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলেন, "দ্রব্যমূল্য কমে আসায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি ফিরে এসেছিল।

কিন্তু চাল, চিনিসহ বিভিন্ন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। খরার কারণে ভারতে চালসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদন কম হয়েছে। "বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এখন পর্যন্ত যা মনে হচ্ছে, তা হলো- সামনের দিনগুলোতে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। " তিনি এজন্য সরকারকে এখনই প্রস্ততি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, "ইতিমধ্যে ভারত চাল, ডাল, চিনি ও ভোজ্যতেল রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। সে কারণে বিশ্ববাজারে এ সব পণ্যের দাম বাড়বে বলে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। আমাদের এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে হবে। " গত দু'বার আমাদের ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, "এবার আমনের ফলন কেমন হবে-তা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় দেরিতে আমনের চাষ শুরু হয়েছে। " এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করারও পরামর্শ দেন তিনি।

বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আকবর আলি খান বলেন, "অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মন্দা আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এ মন্দায় আমাদের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বিশ্ব পরিস্থিতি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.