আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জিরো মানুষ

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে

জিরো থেকে আটমাস - এর চেয়ে বয়স্ক মনুষ্যসাবক দিয়ে কি হয়! কেরামতের সবক'টা বাচ্চারই সাত মাসের বেশী বয়স। ব্যবসা সামনে কিভাবে চলবে - এই নিয়ে সে ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় জর্জরিত। গত এক বৎসর ধরে কেন সে সন্তান উৎপাদনে যেতে পারলো না সে বিষয়ে কারো সাথে আলাপে যাবার অবস্থা নয় এটা। নারীর যৌনাঙ্গে ঠেসে ঢুকিয়ে বীর্য খালাস করার মত অবস্থা তার নেই। কোন এক দূরারোগ্য ব্যাধিতে তার অনিরোধিত দন্ডের কারিশমা ক্ষয়ে গেছে।

কেরামতের এই গোপন উৎপাদন ও সন্তান বিপণন বাণিজ্যের অংশীদারেরা প্রায়শই অভিযোগ নিয়ে আসে। কারো কোলের ছেমরী এখন আর কোল মানছে না। গড়িয়ে নামতে চায় সড়কে। লম্ফঝম্ফ করে। দুধের বোটায় বশ মানে না।

অবশ্য দুগ্ধহীন দুধের সৌন্দর্য্য এই পরমানুসম বাণিজ্যিক-আদমদের পক্ষে অনুধাবন করাও অনুচিত। কেউ হয়তো মা-ই বটে কিন্তু ট্রাফিক সিগনালে ভিক্ষের মূলধন হিসাবে এই আন্ডাবাচ্চারা হারিয়ে দেয় তাদের। নিজেকে প্রতিস্থাপন করে চতুর দৈবসাবক হিসাবে, গাড়ির গ্লাসে কেউ ঘুরিয়ে দেখে ক্রমবর্ধমান অঙ্গের স্ফীতি। একজন ময়লা ও ভগ্ন-যৌবনাবতীর কোল জুড়ে সপ্তাহখানেক আগের নাড়ী কেঁটে বিচ্ছিন্ন হওয়া শিশুর গায়ের ঔজ্জ্বলতা চোখ ধাধিয়ে দেয় যাত্রীদের। অপেক্ষমান, গল্পরত, বিচিত্র শ্রেণী ও বয়সের মানুষের অভিযোচিত দর্শনের উপযাজক হতে রেহাই পাবার জন্য কড়কড়ে টাকার ওজন টের পেয়ে যায়, ভাড়াকৃত মা-এর সাথে এই শিশুদের সদ্ভাব রাখার দরকার হয় না।

বেয়াড়া, মর্জিবাজ হয়ে ওঠে সাত/আটমাসের মধ্যে। এমনতরো হাজারো অভিযোগে কেরামত নিস্তার দিয়ে দেয় বয়স্কবাজ বাচ্চাদের। আগে নতুন চালান তার তৈরী থাকতো। প্রতিমাসেই নতুন কোন সাতদিন বয়সী শিশু আগন্তুক জায়গা করে নিতো সাত মাসের বৃদ্ধ শিশুদের হটিয়ে দিয়ে। যারা কেরামতের হাত থেকে চলে যেতো অধিকতর কম গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক মোড়ে।

অথবা অন্য কোথাও, কে জানে কোথায়। বয়স্ক হতে থাকলে এই শিশুদের দর্শনী ফি কমে যায়, দুই বৎসরের মাথায় নিজের খাবার নিজেকেই যেন সংগ্রহে নেমে যেতে হয়। কিন্তু এখন কি হবে? কেরামতের সাথে শুইতে চায় না আন্ধা রাশিদাও। হাত দিয়ে টের পেয়ে যায় কেরামতের অন্ডকোষের সাথে ঝুলতে থাকা পুঁজের থলিটা। ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে - মুন্ডু ফালায়া দিমু আবার হাতাইলে! খোড়া শরীফাও বেঁকে বসেছে।

পোড়ামুখী নিপার পিঠে বিশাল টিউমার, তারপরেও দুই দুইটা বাচ্চা জন্মিয়েছিলো আগে, কিন্তু এবার কেরামতের সাথে ভীষণ দুর্ব্যবহার করেছে। কেরামত সবগুলোকেই পিটিয়েছে মনের সুখে। 'ছিনাল মাগী! কুত্তায় তো তোদের ধারে আসে না? আমার সাথে ভাব লস? দাড়া তোদের জন্য নতুন বাড়া জোগার করতেছি!' কিন্তু এইবার ওদের কোনভাবেই বশে আনা গেল না। কেরামতকে বাদ দিয়ে বরঞ্চ গোপনে অন্য গর্ভধারকের খোঁজে আছে। এই সন্দেহটা কেরামতেরও হয়।

পুলিশগুলা চলে গেলে পুলিশবক্সের ভেতরে লেংড়া কামালকে দেখেছিলো আন্ধা রশিদের দুধে হাত দিতে। অবশ্য এজন্য কামালের কপালে জুটেছিলো একটা ইটের টুকরার নিখুঁত ঘাই। কেরামতের সাম্রাজ্য সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। উপায় নাই দেখে একবার এনজিওদের ক্লিনিকে গিয়েছিলো। পরীক্ষা করে একটা রেজিস্ট্রি বইয়ে নাম-ঠিকানা উঠিয়ে নিতে চেয়েছিলো।

বলেছিলো, প্রতি সপ্তাহে একদিন হাজিরা দিতে হবে। বলতে হবে কোথায় কোথায় সে যৌনকর্ম করে বেড়ায় সেই বৃত্তান্ত। মানে তার বিশাল বাণিজ্যের নাড়ী নক্ষত্র যেনে যাবার গোয়েন্দাগিরি। দলের যেই ছোকরাটা চোদ্দ বছরে হিরোইন ধরেছে - সেই নিয়ে গেছিলো ক্লিনিকে। ফিরেই জলিলকে ধোলাই দিলো।

'বেশ্যার ছাওয়াল! আমার ব্যবসা হাতাইতে চাস?' নিত্য নতুন নানা মতলবে তার মগজ পয়মন্ত। কিন্তু যে শিশ্ন উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারে না - তার ঘুরে দাড়ানো মুশকিল। একটা তরতাজা গোলাপী আভার বাচ্চার শরীর প্রখর রোদ্রে লাল হয়ে উঠছে - এই দৃশ্যের বাণিজ্য সম্ভবনা অচিন্তনীয়। যাত্রীদের হৃদয় গলিত-মথিত হয়ে মানিব্যাগ নিঃস্ব করে ছাড়ে। মাঝেমাঝে কেরামত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে - এক মাস বয়সী একটা শিশুর উপার্জন দেখে।

আশি টাকা পালিত মায়ের মজুরী চুকিয়ে সে কেরামতের হাতে তুলে দেয় হাজার বারোশো টাকা। কিনে নিতে পারে পনেরটা পালিত মা। কেরামতেরই বা মূল্য কত। ছ'টা শিশুর উপার্জন থেকে পাঁচটাই নাই হয়ে যায় খরচ সামলাতে। ট্রাফিকের বড় বাবু, ডিগ্রী কলেজের মহসিন গ্রুপকে দিতে হয় বড় থোকাটা।

মাঝে মাঝে মনে হয় সে তার রক্ষকদের গিয়ে হাত-পা ধরে বসে। বড়বাবুকে বলতে ইচ্ছে করে খোড়া শরীফার জরায়ুতে দুফোটা বীর্য ফেলতে। মহসিন ভাই, লেংড়া কামাল আর ট্রাফিক সিগনালে আটকে পড়া সকল পুরুষের পেটের নীচে সে বাণিজ্যের ফোসফাস দেখে। এদের যে কারো মনুষ্য জন্মানোর বীজানু হলেই তার ব্যবসাটা বেঁচে যায়। নানা সময়ে সে দেখছে এইসব ভিখেরীদের স্তনের দিকে তাদের লোভাতুর দৃষ্টি।

কিন্তু অনুরোধ করার মত দুঃসাহস তার আর হয় না। দুঃখী দুঃখী চেহারা নিয়ে কেরামত বাচ্চাগুলোকে দেখে। 'তোরা কেন বড় হয়ে যাস?' নীপার কোলের বাচ্চাটাকে দেখে মনে মনে আওড়ায়। কেমন তাগড়া হয়ে উঠেছে। পোড়ামুখী নিপা টানতে কষ্ট হয়।

কি খায় ওরা? কেরামতের কাছে এইসব শিশুরা মূল্যবান কিন্তু যাত্রীদের কাছে মনে হয় বিনোদনের পাপেট। অসহায় বাচ্চারা তাদের আবেগ-মিটারের সুস্থ্যতা উচিয়ে দেখায়। যত বেশী নোট যে দান করে সে হয়ে ওঠে নিজের বিবেকের কাছে সবচেয়ে নিপাট দরদী। কেরামতের এই দগ্ধ পুরুষাঙ্গের ঘা শুকাবে না - এমন ভয়াল ইঙ্গিত দিয়েছিল হিরোইনচি জলিল। কি সেয়ানা ছেলেটা, ক্লিনিকের এনজিওদের কাছ থেকে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য টাকা পেয়েও পুড়িয়া কিনেছে।

কিন্তু কেরামতের দরকার নিপা, শরীফা, রাশিদা, আকলিমাদের পেট বানিয়ে দেয়া। এক একটা পোয়াতি হবে আর কেরামতের ঈদের চাঁদ উঠবে। দরকার হবে নির্ভরযোগ্য একজন বীর্য বিনিয়োগ দাতার যিনি কেরামতের বাণিজ্যে লাথি মারবে না। এমন বিশ্বাসযোগ্য উদার মানুষ এই যাত্রীদের মধ্যে নেই - এটা কেরামতের বিশ্বাস হয় না। প্রতিটা যাত্রীকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে।

বাচ্চাকে নিয়ে পালিত/আসল মায়েদের যাত্রীদের সম্মুখে কাকুতি মিনতি দেখে। কেউ বলে, বুকে দুধ হয় না, খাওয়ামু কি! কেরামত আরো মনোযোগ দিয়ে দেখে। কোন যাত্রী মায়ের স্তন খেয়াল করে কিনা। সুযোগ বুঝে শিশুবাহিতারও স্তনের পাশটা উন্মুক্ত করে। কেউ একটু দীর্ঘ সময় নিয়ে তাকালে কেরামত আনন্দিত হয়ে ওঠে।

খোড়া শরীফা নতুন একটা গাড়ীর পাশে দাড়ানো। কেরামত জানে তার বাণিজ্যিক মাতাদের মধ্যে শরীফাই একমাত্র উন্নত বক্ষধারী। কিন্তু শরীফা গাড়ীর জানালায় হাত রাখার আগেই সেটি খুলে যায়। ফুটপথ থেকে উঠে দাড়ায় কেরামত। গাড়ীর লোকটি ক্ষুধার্ত চোখে দেখছে শরীফার স্তন।

বলে, ঐ মাগী, তোর বুকে দুধ হয় না? হয় না আবার? খাইবেন? হিহি করে হেসে ওঠে শরীফা। গাড়ী স্টার্ট নিতে দেরী আছে। এই মোড়ের সিগন্যাল পনের মিনিটের আগে ছাড়বে না। কেরামত শব্দহীন গাড়ীর পেছনে এসে দাড়ায়। গাড়ীর জানালায় একজন বয়স্ক দাড়িহীন মুর্তি কথা বলে ওঠে।

'খামু, ওঠ আমার গাড়ীতে!' শোনামাত্র শরীফা ছুটে আসে কেরামতের কাছে। কোলের বাচ্চাটা তার হাতে তুলে দিয়ে বলে, 'এইটারে ধরেন! আপনার বাড়া কাম না করলে কি হইবে, ভদ্দরনোকদের আছে না? হেরাই আমাদের ব্যবসা লস মারতে দিতো না! যাই, ঘুইরা আহি!'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.