আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি ছেলের গল্প (ছোট গল্প)

সত্য বলব বলে মিথ্যা বলার চেয়ে মিথ্যা বলব বলে সত্য বলা ভাল..এতে আর যাই হোক কারও মন ভাঙ্গা হয় না!
‘গল্পের প্রথম অংশ’ চিঁইইইই চিঁইইইই চিঁইইইই ... আজকের সকালটা আর দশটা সকালের মতই একঘেয়ে। প্রতিদিনের মত অ্যালার্ম ঘড়ির ঘোড়াটা ডেকে চলেছে একটানা, বিরামহীন। হাত বাড়িয়ে ঘড়িটা স্পর্শ করে সঞ্জু। জিনিসটা বিদেশী। সম্ভবত সুইজারল্যান্ডের।

সুইসরা এ জিনিসটা ভাল বানায়। এটা গিফট করেছিল লেখা, জন্মদিনে। ঘড়িটা সুন্দর কিন্তু এর অ্যালার্ম মিউজিকটা জঘন্য। ঘোড়ার ডাক, তা-ও আবার পাগলা ঘোড়া। ডাক শুনলেই মনে হয় নবাব আলীবর্দী খাঁ’র আর সেপাইরা এসে উপস্থিত হয়েছেন।

এটা তাদেরই ঘোড়ার ডাক। সঞ্জুকে হাত-পা বেঁধে রাজদরবারে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ, আজও সে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করেছে। আজ সারাদিনে সঞ্জুকে তিনটা অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং একটা অতি ফালতু কাজ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো হচ্ছে- লেখার সাথে দেখা করতে হবে, কলেজে গিয়ে ইন্টারের সার্টিফিকেট-টা তুলতে হবে এবং মহসিন ভাই এর দোকান থেকে সাহানা আপাকে তিনটা মিসকল দিতে হবে।

কিছু টাকা দরকার। চার মাসের ঘর ভাড়া বাকি পড়েছে, দুইটা বই কেনা দরকার পরীক্ষা এসে গেছে, একটা সেকেন্ডহ্যান্ড সানগ্লাস সস্তায় পাওয়া গেছে, এক বন্ধু বিক্রি করে দেবে। সেটা কেনা দরকার। সারাদিন হাটাহাটি করতে কষ্ট হয়। টিউশনির টাকা দিয়ে আর চলা যাচ্ছে না- সব আপাকে বলতে হবে আজ।

অবশ্য তিনটা কেন, ত্রিশটা মিসকল দিলেও যে আপা কলব্যাক করবেন না এবং অবশেষে ফোন করে সবকথা বললেও যে আপা সেই চিরচেনা দীর্ঘনিঃশ্বাসটা ফেলবেন এটা নিশ্চিত- ‘একটু অসুবিধায় আছিরে সঞ্জু, তোর দুলাভাইয়ের চাকরিটা আবার চলে গেছে। কি যে করি! আচ্ছা তুই এক কাজ কর, সামনের সপ্তাহে আমাকে একবার ফোন দিস ... থাক ফোন দিতে হবে না, তিনটা মিসকল দিস আমিই ফোন করব। এই নাম্বারটা থেকেই দিস, বুঝব তুই দিচ্ছিস। ঠিক আছে? অতি ফালতু কাজটা হচ্ছে- ডাঃ আসগরের চেম্বারের যেতে হবে। সাথে করে নিয়ে যেতে হবে বুকের এক্সরে এবং রক্তের চারপাঁচটা টেস্টের রিপোর্ট।

অনেকগুলো টাকা খরচ হয়েছে টেস্টগুলোতে। অবশ্য টাকাগুলো লেখা দিয়েছে। একরকম জোর করেই। যত্তসব ফালতু! আরে বাবা, অসুখ-বিসুখ হচ্ছে মানুষের ছায়ার মত। মানুষ বেঁচে থাকলেতো অসুখ হবেই।

মরা মানুষের যেমন কোন ছায়া থাকেনা, কারন সে থাকে শুয়ে, তেমনি জীবিত মানুষ হাটাঁহাটি করবে তার থাকবে ছায়া এবং থাকবে রোগবালাই। এ ব্যাপারটা কিছুতেই লেখাকে বোঝানো যায় না। আহ্হারে ইস্! এতগুলো টাকা ডাক্তারকে না দিয়ে ঘরভাড়াটা দিলে তো বাড়িওয়ালার হাত থেকে বাঁচা যেত, অন্তত রাতে একটু শান্তিতে ঘুম হতো। ইন্টারের সার্টিফিকেটটা পাওয়া গেল না। দপ্তরীকে নাকি একশ টাকা দিতে হবে।

স্রেফ অকারণে। এই আকালের বাজারে সার্টিফিকেটের চেয়ে একশ টাকার মূল্য অনেক বেশী। সঞ্জু কলেজ থেকে বের হয়ে গেল। শরীরটা অনেক দূর্বল লাগছে। হাটঁতে একটুও ইচ্ছে করছেনা।

অথচ জীবনের অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময় সে পার করেছে হেঁটে। কোনদিন নিজেকে দূর্বল মনে হয়নি, ক্লান্তিও লাগেনি। সবসময়ই মনে হয়েছে তার জন্ম হয়েছে হাঁটার জন্য। রক্তজল করা টিউশনির হিসেব করা পয়সাগুলো রিকসাওয়ালাকে দিয়ে একটু আয়েশ করার জন্য তার জন্ম হয়নি। সবার জন্ম সব কাজের জন্য হয়না।

লেখার কলেজে গিয়ে জানা গেল সে এখন বেরুতে পারবেনা। প্রাকটিকেল ক্লাস হবে। তার সাথে দেখা হবে বিকেলে। অতএব এখন ডাক্তার শালার কাছে যাওয়া যায়। অন্তত বিকেলে লেখার কাছে কৈফিয়তের হাত থেকে বাঁচা যাবে।

ডাঃ আসগর লোক ভাল। মোটাসোটা বেঁটে ধরণের মানুষ। সুন্দর ব্যবহার। সাধারণত প্রাইভেট ক্লিনিক বা ফার্মেসীর ডাক্তারদের ব্যবহার ভাল হয়। তারা যতটা পারেন কথার সাথে মিষ্টি জাতীয় পদার্থ মেখে নেন।

যাতে রোগী আকৃষ্ট হয়। আর সরকারী হাসপাতালগুলোর ডাক্তাররা কথার সাথে তিক্ত জাতীয় পদার্থ, পারেন তো বিষ মিশিয়ে দেন। যাতে ঘটনা ফাইনাল হয়ে যায়, সময় এবং হাসপাতালের বেড দুই-ই বাঁচে। । ডাঃ আসগরের অবশ্য সরকারী হাসপাতালে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।

তবু তার ব্যবহার ভাল। সমস্যা হচ্ছে গিয়ে তার হাসিতে। লোকটা হাসলেই সঞ্জুর ইচ্ছে করে ঠাস্ করে একটা চড় মারে। তারপর বলে-“এক্সকিউজ মি স্যার, দয়া করে আপনি মুখের এক্স-রে টা করে আসুন। দাঁত কয়টা নড়ল জানা দরকার।

‘সোলায়মান ডায়গনষ্টিক সেন্টার’ থেকে করবেন। ওরা মুখের এক্স-রেটা ভাল করে। রিপোর্ট নিয়ে কালই আসবেন। এই বয়সে দাঁত নড়া খুব কাজের কথা না। আর হ্যা, আপাতত একবছর শুধু তরল খাবার খাবেন।

একবছর পর খাবেন স্বাভাবিক খাবার। অবশ্য যদি ততদিন বেঁচে থাকেন। ঠিক আছে?” আধঘন্টা ধরে ডাঃ আসগর রিপোর্টগুলো টেস্ট করলেন। তিনি কি এগুলো মুখস্থ করছেন? এগুলো মুখস্থ করে তার কি ফায়দা? নাকি তিনি ডাক্তারী ভুলে গেছেন? তার কাছে রিপোর্ট দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে। আল্লাহই মালুম, যদি সব দেখে শুনে তিনি বলে ওঠেন- “টেষ্ট ঠিক মত হয়নি।

আবার করতে হবে। এবার অন্য ডায়াগনষ্টিক সেন্টার থেকে করতে হবে। এবার করতে হবে ‘মাক্ষীগিরা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার’ থেকে”- তাহলে বুদ্ধি একটাই, সালাম দিয়ে বিদেয় হওয়া। “আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। আসি আংকেল টা টা।

” এ ধরনের সালাম শুনে নিশ্চয়ই আসগর সহেব ভড়কে যাবেন। ডাক্তারেরা সাধারণত অল্পতেই ভড়কে যান। - ‘এ্যই ছেলে শোন’ ডাক্তার সাহেব প্রথম মুখ খুললেন। - ‘আজ্ঞে জনাব, বলেন’ ছোট্ট করে উত্তর দেয় সঞ্জু। - “আজ্ঞে জনাব’ মানে কি? ঠিক ভাবে কথা বল।

” সঞ্জুর এতক্ষনের বিচার বিবেচনা ভুল প্রমাণিত হল। ভদ্রলোক অতি অল্পতেই রেগে যান। এটা আগে বোঝা যায়নি। অথবা হতে পারে আজ তার মুড অফ। ডাক্তারদের মুড অন-অফের সুইচটা বরাবরই স্ল্যাগ থাকে।

অল্পতেই অন আবার অল্পতেই অফ। - ‘তোমার অভিভাবক কেউ নেই, গার্জিয়ান?’ আবার জিজ্ঞেস করেন ডাক্তার। - ‘জ্বি না, আসলে আমি নিজেই নিজের অভিভাবক। একটা সৎবোন আছে। নাম সাহানা।

টাঙ্গাইল থাকে। আমি তিনটার জায়গায় ত্রিশটা মিসকল দিলেও তার জবাব পাইনা। আমার এই তিনকুলে আর কেউ নেই। ’ হরহর করে বলে ফেলে সঞ্জু। - ‘সেদিন যে তোমার সাথে একটা মেয়ে এসেছিল সে কে?’ - ‘জ্বি আমার বন্ধু।

’ - ‘কেমন বন্ধু?’ - ‘ঠিক গলায় গলায় না, বলতে পারেন চোখে চোখে বন্ধু। দূর থেকে বন্ধু আরকি। ’ যাকে নিয়ে ভবিষ্যতের একটা মানচিত্র বুকের মধ্যে একে রেখেছে সঞ্জু, তাকে দুরের বন্ধু বলতে মুখে বাঁধল না ঠিকই কিন্তু চোখ চিকচিক করতে লাগল। কিছু করার নেই, এতটুকু মিথ্যে বলতেই হবে। ডাক্তার ব্যাটার মতিগতি ভাল ঠেকছে না।

নাটক-সিনেমার ডাক্তাররা রোগীদের সথে এধরনের কথা বলেন। রোগীর গার্জিয়ানকে আসতে বলেন। গোপনে তার সাথে ফিসফাস করেন। দূর্ভাগ্যজনক ভাবে রোগী সবই শুনে ফেলে। তারপরই শুরু হয় ট্রাজেডী।

- ‘শোন, তুমি ছোট্ট খোকা নও,ইউ আর এ্য ম্যাচিউরড ইয়ং বয়..তোমাকে সরাসরিই বলি। আমি আশংকা করছি তোমার একটা খুব খারাপ ধরনের ক্যান্সার হয়েছে। ’ - ‘খারাপটা কি ধরনের জানতে পারি?’ - ‘স্টমাক ক্যান্সার। ’ - ‘ও, আচ্ছা। ’ - ‘শোন, আমি চাচ্ছি রক্তের পরীক্ষাগুলো তুমি অন্য একটা সেন্টার থেকে আবার কর।

আমি পুরোপুরি শিওর হতে চাচ্ছি। তবে আমার বিশ্বাস ...’ - ‘আংকেল আজ আমি উঠি। আমার একটা খুবই জরুরী কাজ আছে। টেস্টের নাম গুলো আমাকে আবার লিখে দেন। কবে নাগাদ আসতে হবে বলেন।

’ - ‘পড়শু আস। একটা কথা মনে রেখ, তুমি এমনিতেই বড্ড দেরী করে ফেলেছ। এতে তুমি চিন্তা কোর না,ব্যবস্থা একটা হবেই। ’ - ‘আসি আংকেল, আস্সালামু আলাইকুম। ’ উত্তরে ডাক্তার আসগর একটা মিষ্টি হাসি দিলেন।

সঞ্জুর হঠাৎ বাবার কথা মনে পড়ে গেল। বাবা সঞ্জুকে খুবই আদর করতেন। আজ বাবা থাকলে নিশ্চয়ই খুব নার্ভাস হয়ে পড়তেন। তিনি ছিলেন নার্ভাস ধরনের মানুষ। একবার রাতে ঘুমের মধ্যে একটা পিপঁড়া সঞ্জুর চোখের পাঁপড়িতে কামড় দিল।

পাঁপড়ি ফুলে উঠল। সে কি ভয়ংকর অবস্থা। বাবা গভীর রাতে হইচই শুরু করে দিলেন। সামান্য কারণেই তিনি পুরো বাড়ির ঘুম কেড়ে নিলেন। আজ বাবা থাকলে নিশ্চয়ই ভীষন কাদঁতেন।

তার কাদাঁর বদঅভ্যাস ছিল। সামান্য কষ্টতেই তিনি ছেলেমানুষের মত হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দিতেন। সে বার বাবার পোষা কুকুরটা হঠাৎ করেই মরে গেল। সম্ভবত সাপে কেটেছিল। বাবা একটা দুপুর বসে বসে কাঁদলেন।

তার মত নরম মন নিয়ে পৃথিবীতে আসাও মনে হয় একটা পাপ। কারণ এই পৃথিবী কষ্ট আর কান্না ছাড়া তাকে কিছুই দিতে পারেনি। ভালই হয়েছে, আজ বাবা নেই। একজন মৃত্যুপথযাত্রী পুত্রকে সামনে নিয়ে বৃদ্ধ পিতা বসে বসে কাঁদছে দৃশ্যটা খুবই বিভৎস হবার কথা। আজ কপাল ভাল।

তিন মিসকল দিতেই সাহানা আপা ফোন করলেন। - ‘কে সঞ্জু?’ - হ্যা আপা, কেমন আছ?’ - ‘আমি ভাল নেইরে। তোর দুলাভাইয়ের লবণের ট্রাক পাহাড় থেকে সাগরে পড়েছে। আমাদের তো মাথায় হাত। ’ - ‘লবণের ট্রাক মানে?’ - ‘তোর দুলাভাইয়ের লবণের ব্যবসা শুরু করেছিল, তোকে না সেদিন বললাম।

’ - ‘ও মনে নেই, ভুলে গেছি। ’ - ‘আমাকে আপাতত কিছু টাকা-পয়সা দিতে পারিস ভাই? পরে দিয়ে দেব। ’ - ‘কত টাকা?’ - ‘হাজার পাঁচ-দশ যা পারিস। ’ - ‘চেষ্টা করব। ’ - ‘একটু দেখিস ভাই, কেমন? আর কিছু বলবি? - ‘আপা, আমার স্টমাক ক্যান্সার ধরা পড়েছে।

- ‘তাই নাকি? তাহলেতো সমস্যা। ও আরেকটা কথা শোন, পরে ভুলে যাব। তুই যদি টাকাটা যোগাড় করতে পারিস তাহলে ডাকে পাঠাস না, তুই নিজে এসে দিয়ে যাস। কেমন। ’ - ‘আচ্ছা আপা।

’ - ‘ভালকথা, তুই আজ কি মনে করে আমাকে মিসকল দিতে এলি বলতো?’ - ‘না এমনি। তোমরা কেমন আছ, এসব জানার জন্য। ’ - ‘আচ্ছা রাখি, কেমন?’ - ‘আরেকটা কথা আপা, দুলাভাই যে লবণের ব্যবসা করছে এটা তুমি আমায় বলনি। আজ আড়াইমাস পর আমি তোমার সাথে কথা বলছি। ’ - ‘হবে হয় তো, অন্য কাউকে বলেছি।

আচ্ছা রাখি। বায়। ’ - ‘খোদা হাফেজ। ’ গল্পের শেষ অংশ চিঁইইইই চিঁইইইই চিঁইইইই.... এ্যালার্ম ঘড়ির ঘোড়ার ডাকটা আগের মত এখন আর কর্কশ নেই। ব্যাটারি ডাউন হয়ে গেছে।

তাই আওয়াজটা ক্ষীন ও অস্পষ্ট। তবু এ ডাকেই সঞ্জুর ঘুম ভেঙ্গে যায়। আজকের সকালটা আর দশটা সকালের মতই একঘেয়ে। আজও সঞ্জুর কোন ব্যস্ততা নেই। দু সপ্তার বেশি হবে সে বিছানা থেকে উঠতে পারে না।

আজ শ্বাসকষ্টটা একটু বেশিই হচ্ছে। মনে হচ্ছে বাবার কাছে যাওয়ার সময় এসে গেছে। ডাক্তার আসগরের কথা খুব মনে পড়ছে আজ। লোকটার কথাটা রাখা হয়নি। টেষ্টগুলো দ্বিতীয়বার করা হয়নি।

বেচারা নিশ্চয়ই অপেক্ষা করে ছিল সঞ্জুর জন্য। তাকে সরি বলা উচিত ছিল। ঘরের আসবাবপত্রগুলো বাড়ির দাড়োয়ান ইলিয়াসের কাছে বিক্রি করে নগত সতেরশ পঁচাত্তর টাকা পাওয়া গেছে। টাকাটা মানি অর্ডার করে সাহানা আপার ঠিকানায় পাঠানো হয়েছে। পেল কিনা কে জানে।

ইলিয়াস অতি বদটাইপ লোক। সে অপেক্ষা করে আছে কখন সঞ্জু বিদেয় হবে। কারণ তার মৃত্যুর আগে এই আসবাবপত্র সে নিতে পারবে না। এমন শর্তেই এগুলো বিক্রি করা হয়েছে। নয়ত দাম আরও বেশি উঠত।

গত সপ্তাহে লেখা এসেছিল। আর তার কোন দেখা নেই। একমাস হল তার বিয়ে হয়েছে। গত সপ্তাহে এসেছিল চুরি করে। অবশ্য আর আসবে না এমন কথা আদায় করে রেখেছে সঞ্জু।

মেয়েটা অতিশয় ভাল। সঞ্জুকে অসম্ভব ভালবাসত সে। স্পষ্ট মনে আছে সঞ্জুর। চারমাস আগে টেষ্টের দুর্বোধ্য রিপোর্টগুলো হাতে নিয়ে সীমাহীন কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিল লেখা। এত কান্না এই পৃথিবী অনেকদিন দেখেনি।

খারাপ মানুষের চেয়ে ভালমানুষের কান্না পৃথিবী বেশি পছন্দ করে। এজন্যই ভাল মানুষগুলোর কপালে এত কান্না লেখা থাকে। হঠাৎ ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে সঞ্জুর। কান্না আসছে না। প্রচন্ড পানি পিপাসা পেয়েছে।

উঠে গিয়ে পানি খাওয়ার মত শক্তিটুকু সে অর্জন করতে পারলো না। একটা ভারী কিছু মনে হচ্ছে বুকে চেপে বসেছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। হঠাৎ করেই যেন এ্যার্লাম ঘড়ির ঘোড়াটা আবার আর্তনাদ করে উঠল। চিঁইইইই চিঁইইইই চিঁইইইই।

এ্যার্লাম তো এখন বাজার কথা না। ব্যাপার কি, সব কিছু কি ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে! তা কি করে হয়, ঐতো ইলিয়সের কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। ইলিয়াস অপেক্ষা করছে। দরজার দিকে তাকায় সঞ্জু। কোথায় ইলিয়াস, দরজায় বাবার মুখ দেখা গেল।

বাবা এসে ঢুকলেন ঘরে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে সে। বাবার দু’চোখ লাল। বোঝা যাচ্ছে অনেক কেঁদেছেন তিনি। সঞ্জু মাথাটা সামান্য কাত করে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠে-‘বাবা, তুমি কাঁদছ কেন?’ বাবা দুরে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্নভাবে তাকিয়ে থাকেন-‘তোর চোখের ফোলাটা এখন কেমন রে ব্যাটা?’ সঞ্জু চোখ বন্ধ করে ফেলল।

বাবাকে কেন জানি আর দেখতে ইচ্ছে করছে না। তার ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে, লেখার কলেজের সামনে বসে লেখার জন্য অপেক্ষা করতে। প্রাকটিকেল ক্লাস শেষে লেখা বেড়িয়ে আসবে। এসেই বলবে-‘এ্যাই বান্দর, তুমি এতক্ষন ধরে রোদে বসে আছ কেন? ডাক্তারের কাছে যেতে বলেছিলাম গিয়েছিলে? দয়া করে মিথ্যে বলবেনা...’ একফোটা পানি সঞ্জুর বন্ধ চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পরে।

অস্ফুট স্বরে বলে উঠে- ‘লেখা তোমাকে ভালবাসি ভীষণ..’ এমন সময় বাইরের গেটে ট্যাক্সি থেকে নামল লেখা। তার সাথে একগাদা ব্যাগ-ব্যাগেজ। সে উঠে আসছে সঞ্জুর ঘরের দিকে। বাবা বললেন-‘সঞ্জুরে, ব্যাটা চল’। সঞ্জু বলল,‘বাবা, যেতে ইচ্ছে করছে না’।

এমন সময় ঘোড়াটা আরেকবার ডেকে উঠল..চিঁইইইই চিঁইইইই চিঁইইইই।
 


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.