আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বর

...ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাচিয়া,সদাই ভাবনা, যা কিছু পায়, হারায়ে যায়, না মানে স্বান্তনা...
এক. ফায়ারিং স্কোয়াডের দিকে রোভান যখন এগুচ্ছিলো তখন তাকে বেশ শান্ত দেখাচ্ছিলো। আর অল্প কিছুক্ষন পরই তাকে চ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে হবে লেজার লেজার রশ্মিতে। একজন মানুষ হিসেবে একজন মানুষের হাতে সে মরতে চেয়েছিলো তার সৈনিক জীবনের শুরুতে। কিন্ত আফসোস তাকে জীবন দিতে হচ্ছে একদল বিদ্রোহী রোবটের হাতে। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে হয়ে চলা সাম্প্রতিক রোবট বিদ্রোহের অংশ এটা।

অতন্ত্য দুঃখের কথা এতো হাজার বছরের মানব সভ্যতাকে হেরে যেতে হচ্ছে তাদেরই তৈরী রোবটদের হাতে। কারন তারা রোবটদের স্বাধীনতা দিতে চায়নি। পঞ্চবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রোবটদের মাঝে মানবিক অনুভুতির প্রকাশ দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও তাদেরকে ব্যাবহার করা হতো মানুষের সেবায় আর নানা রকম বিপদজনক কাজে। এক পর্যায়ে রোবটদের মাঝে এই নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয় এবং তারাও মানুষের সাথে একই মর্যাদায় বাঁচার দাবি তুলে।

যেটা মেনে নেয়া ছিলো খুবই কঠিন মানব সভ্যতার ধারকদের কাছে। তখন শুরু হয় গণহারে মানবিক বোধ সম্পন্ন রোবট নিধন। এক পর্যায়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় মানবিক বোধ সম্পন্ন রোবটরা বিদ্রোহ করে বসে সব যায়গায়। পৃথিবীর নানা অংশ হতে রোবটদের জয়ের খবর আসছে। এক এক করে শহরগুলোর পতন হচ্ছে রোবট বাহিনীর হাতে।

মানুষ যারা বেঁচে থাকতে পারছে, তারা পালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলে আর দুর্গম পার্বত্য এলাকায়। এই কমিউনিটিতেও যখন বিদ্রোহী রোবটরা এসে আঘাত হানে প্রথমে শহরের সৈনিক দল রোভানের নেতৃত্বে মোটামুটি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলো। সেই সাথে খবর দেয় পাশের শহরে থাকা তাদের সাহায্যকারী ব্যাক আপ ফোর্সকে। ধীরে ধীরে রোবটরা শহরের দখল নিতে শুরু করে। এক পর্যায়ে রোভানদের পরাজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে পরে।

কিন্তু ব্যাকআপ ফোর্সের তখনো কোন খবর নেই। রোভান শান্ত মুখে দাড়িয়ে ছিলো ফায়ারিং স্কোয়াডে। তার সামনে লেজার গান হাতে দাড়িয়ে আছে তিনটি রোবট। নেতা গোছের রোবট টা মনে হয় একটু উন্নত প্রজাতির। তার মুখে স্পষ্ট বিদ্রুপের হাসি।

এই কমিউনিটিটাকে ধ্বংস করতে তাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। তার রোবট বাহিনীর অত্যন্ত চৌকশ আটটি রোবটকে ধ্বংস হারাতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রোভানকে ধরতে গিয়ে সে হারিয়েছে তার সবচেয়ে ভালো সৈনিক রোবটটিকে। তাই নিজের চোখে রোভানকে মরতে দেখতে চায় সে। এই মানুষটার মাঝে আর কিছু না থাকুক সাহস জিনিসটা ভালোই আছে।

ধ্বংস প্রাপ্ত ,যেটাকে তারা মৃত্যু বলে সেটা হবার আগেও মানুষটা কেমন শান্ত। এর আগেও সে ফায়ারিং স্কোয়াডে অনেক মানুষকে মরতে দেখেছে। মৃত্যুর আগে এক একজন এক এক রকম করে। কিন্তু এই মানুষটার ব্যাপারটা সে বুঝতে পারছে না। মৃত্যুর আগে রোভানের প্রতিটা পদক্ষেপ সে লক্ষ করছে তীক্ষ্ণভাবে।

সেখানে কোন ভীতির ছাপ সে পাচ্ছে না। -নির্বোধ মানুষ, মৃত্যুর জন্য তৈরী হও। মানুষটার মাঝে ভয় তৈরীর জন্য অতিরিক্ত কর্কশ ভাবে দলপতি রোবটটা বললো। তারপর তার সৈনিকদের লেজার গান তুলে ধরতে বললো। ফায়ার করতে বলার আগের মুহুর্তে সে লক্ষ করলো রোভান বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।

-তুমি কি বলছো? দলপতি রোবটটা কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলো। -আমি সাহায্য চাইছি। রোভানের কন্ঠস্বর ঠিক আগের মতোই শান্ত। -কার কাছে সাহায্য চাইছো? এখানে তো কেউ নেই তোমাকে সাহায্য করার মতো। -আমি ঈশ্বরের কাছে সাহায্য চাইছি।

দলপতি রোবট টা ঠিক মানুষের মতো হেসে উঠলো। -হা হা তোমাদের সেই ঈশ্বর, যাকে তোমরা তোমাদের সৃষ্টিকর্তা মনে করো? সে তোমাকে এখন সাহায্য করতে আসবে না। কারন ঈশ্বর বলতে কিছু নেই। সুতরাং মৃত্যু জন্য তৈরী হও। দলপতি রোবটটা আবারো তার সৈনিকদের লেজার গান তুলে ধরতে বললো।

সে যখন ঠিক ফায়ার করতে অনুমতি দিতে যাবে তখনই আসে পাশে কোথাও এসে একটা মিসাইল সেল পড়লো। রোবট বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। বিশাল বিশৃঙ্খলার মাঝে পালাতে পালাতে রোভান দলপতি রোবটটির দিকে তাকিয়ে বললো, দেখলে, আমার ঈশ্বর আমাকে রক্ষা করলো। আমাদের সাহায্য করতে ব্যাকআপ ফোর্স চলে এসেছে। এখন তোমরা একটা একটা করে মারা পড়বে।

দুই. চারিদিকে রোবটদের দেহের নানা অংশ পড়ে আছে। ব্যাকআপ ফোর্সের সাথে রোবট বাহিনীর বেশ ভালো লড়াই হয়েছে। অবশেষে যদিও মানুষেরই জয় হয়েছে। বেঁচে যাওয়া কিছু রোবটকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ফায়ারিং স্কোয়াডে। দলপতি রোবটটিকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

বেশ কয়েকজন সৈনিক তাদের সামনে লেজার গান নিয়ে দাড়িয়ে আছে। রোভান দাড়িয়ে আছে ফায়ার করতে অনুমতি দেবার জন্য। ভাবতেও অবাক লাগে, ঘন্টাখানেক আগে সে ঐ ফায়ারিং স্কোয়াডে দাড়িয়ে ছিলো। আর এখানে ছিলো ঐ দলপতি রোবটটা। দলপতি রোবটটা বিড়বিড় করে কিছু একটা বলছে।

রোভান এগিয়ে গেলো। -তুমি কি বলছো। -তুমি কিছুক্ষন আগে যখন এখানে দাড়িয়ে ছিলে তখন তুমি তোমার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করেছিলে। যে কোন ভাবেই হোক সে তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমি দেখেছি।

তাই আমি আমার সৃষ্টিকর্তাকে স্মরন করছি। -তোমার সৃষ্টিকর্তা? কে সে? -তুমি, তোমরা, মানুষ। রোভানের মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি খেলে গেলো। আস্তে করে সরে গিয়ে সে তার সৈনিকদের ফায়ার করতে অনুমতি দিলো। গুলির প্রথম ধাক্কাতেই দলপতি রোবট টা পড়ে গেলো।

নিস্প্রভ হয়ে যাওয়া তার ফটোসেলের চোখে তখনো বিস্ময়। কারন তার সৃষ্টিকর্তা তাকে রক্ষা করে নি।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।