আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শতবর্ষ আগে এলিফ্যান্ট রোড ছিল হাতির চারণভূমি

সব কিছুর মধ্যেই সুন্দর খুঁজে পেতে চেষ্টা করি............

শতবর্ষ আগে এলিফ্যান্ট রোড ছিল হাতির চারণভূমি যুগ-যুগান্তের ইতিহাস ঐতিহ্যের ভাণ্ডার আমাদের এই প্রিয় ঢাকা নগরী। ঢাকার প্রতিটি এলাকায় লুকিয়ে আছে ঐতিহ্যমণ্ডিত নানা স্মৃতি। প্রতিটি গলি থেকে রাজপথের রয়েছে একেক ইতিহাস। এমনিভাবে একেক এলাকা একেক স্মৃতি ধারণ করে অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় জেগে আছে ঢাকা শত শত বছর ধরে। তেমনি এক বিখ্যাত এলাকা ঢাকার এলিফ্যান্ট রোড।

অনেকের কাছে যা হাতিরপুল এলাকা নামে পরিচিত। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পীল অর্থ হাতি আর পীলখানার পুরো শব্দের অর্থ হাতিশালা। বর্তমান পিলখানা বি ডি আর হেডকোয়ার্টার মোঘল পুর্ব আমল থেকেই হাতিশালা ছিল। পিলখানা থেকে মোগল সম্রাটরা বর্তমান হাতিরপুল এরাকায় হাতি চলাচলের জন্য ইস্টার্ন প্লাজা ও পরিবাগের বরাবর একটি বিশাল সেতু বা পাকা পুল নির্মাণ করেন হাতি পারাপারের জন্য, যা পরবর্তীতে হাতিরপুল নামে পরিচিতি লাভ করে। তৎকালীন বৃটিশ সরকারের শেষ সময়ে ঐ স্থানে রেললাইন নির্মাণকালে হাতিরপুলটি ভেঙ্গে ফেলা হয়।

এক সময় এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে শত শত হাতির পাল চড়িয়ে বেড়াতেন মাহুতরা। হাতিগুলোকে চারণভূমিতে নিয়ে যাবার জন্য যে রাস্তা ব্যবহার করা হতো, পরবর্তীতে এই রাস্তার নামকরণ করা হয় এলিফ্যান্ট রোড। মূলত ঢাকার পশ্চিমাঞ্চল পীলখানার অঞ্চল জুড়ে হাতির আবাসভূমি গড়ে তোলা হয়। এক সময় ঢাকায় হাতির আধিক্য ছিল খুবই। সরকারি পীলখানা ঢাকায় থাকার এটাও একটা অন্যতম কারণ।

এখানে মোগল পুর্ব আমল থেকেই হাতি লালন-পালন শুরু হয়। এককালে নদীতে হাতি গোসল কিংবা চড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। প্রখ্যাত লেখক এস এম তাইফুরের লেখা "প্রাচীন ঢাকার ইতিহাস" বই থেকে জানা যায়, ১৮৬৪ সালে লেফটেন্যান্ট গভর্নর চার্লস এলিয়ট ঢাকায় এলে ঢাকা কমিটির সদস্যরা তার নিকট হাতির উৎপাত সম্পর্কে জানান এবং এর প্রতিকার দাবি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গভর্নর ঢাকার বিস্তীর্ণ রমনা এলাকাকে হাতি চরানোর জন্য নির্দিষ্ট করেন। রমনার আশপাশের কয়েকটি ক্যানেলও সৃষ্টি করা হয় হাতির গোসলের জন্য।

এছাড়াও ঢাকার লালবাগের নবাবগঞ্জ এলাকায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে আরেকটি ঘাট তৈরি করা হয় হাতির গোসলের জন্য। যা আজও এই অঞ্চলের মানুষের কাছে হাতিরঘাট বলে সুপরিচিত। মূলত পীলখানায় বন্য হাতিকে পোষ মানানোর জন্য পাঠানো হতো। পোষ মানার জন্য নির্ধারিত ফিসও জমা দিতে হতো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। মুঘল আমলে শহরের দক্ষিণাংশে ছিল আরো একটি সুবিশাল পীলখানা।

সরকারি হাতির পাশাপাশি এখানে বহু জমিদার ভাড়া দিয়ে তাদের হাতি পুষতেন। কিংবদন্তীর লেখক নাজির হোসেনের ঢাকার ইতিহাস গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৮০০ সালের ঢাকা ছিল মূলত সবুজ বৃক্ষরাজিতে ঘেরা সুশীতল ছায়ানিবিড় অঞ্চল। আজকের জনবহুল এলিফ্যান্ট রোড এলাকাটি ছিল জনমানবশূন্য বিশাল আকৃতির গাছ-গাছালিতে ঘেরা ছোটখাট বনাঞ্চল। পরবর্তীতে গাছ-পালা কেটে হাতি চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করা হয়। এরও বহু পরে এখানে বিচ্ছিন্নভাবে বসতি গড়ে উঠতে থাকে।

আজকের চাকচিক্যপূর্ণ যানজটে রুদ্ধ এলিফ্যান্ট রোড দেখলে বিশ্বাস করাই কঠিন যে, আজ থেকে এক-দেড়শশ' বছর আগেও এখানে বনজঙ্গল ছিল। ছিল শত শত হাতির বিচরণ ক্ষেত্র। (তথ্য সূত্রঃ ঢাকার ইতিহাস, লেখকঃ নাজির হোসেন)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.