আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বোহেমিয়ান জীবনের একটা রাত।

...যেন এলিভেটরটা অনন্তকালের জন্যে বন্ধ হয়ে গেছে, আমি দাড়িয়ে আছি নিঃসঙ্গ ছাদের রেলিং ধরে।

বসেছিলাম গ্লাসগোর একটা পুরনো বারে। রাত বেশী হয়নি। একটু পড়েই আমার বাস ছাড়বে লন্ডনের পথে। লম্বা জার্নি।

তাই একটু গলা ভেজানো। অবশ্য স্কটল্যান্ডে এসে স্কটিশ হুইস্কি না টেস্ট করলে কি আর চলে? ট্যাক্সি ড্রাইভার অ্যালান বারবার করে বলে দিয়েছে বেশী ড্রিংক না করতে। স্কটিশ ইংরেজিটা অনেকটাই আলাদা। তারপরেও এটুকু বোঝা গেল যে ওর ডিউটি না থাকলে আমাকে সঙ্গ দিত। নিঃসঙ্গ মানুষগুলোর সাথে অচেনা মানুষের মাঝে মাঝেই জমে যায়।

এই ব্যাটা কি তাইলে নিঃসঙ্গ? বারের এক কোনে বিগ স্ক্রিনে প্রিমিয়ার লিগ চলছে। আমি শেষ হুইস্কিটাতে চুমুক দিতে দিতে স্কোরটা দেখার চেষ্টা করছিলাম। আমার পকেটে আর আছে সর্বসাকুল্যে পাঁচ পাউন্ড। দিল্লী থেকে আসার সময় বেঁচে যাওয়া একটা ডলারও আছে। কয়েকটা কয়েন হাতড়ে আরেক পাইন্ট বিয়ার নিলাম।

এইটা শেষ করেই উঠতে হবে। নইলে আসার সময়কার মতো আবার বাস মিস করলে সমস্যা হয়ে যাবে। ভাবছিলাম, এই ভ্যাগাবন্ড জীবনটার অর্থ কি? উদ্দেশ্য কি? এই যে বিদেশ বিঁভূই এ একা পড়ে থাকা, পরিবারের সাথে যোগাযোগ না থাকা, এই সবের আদৌ কি কোন মানে আছে? ধুর... বাস চলতে শুরু করেছে। রাতের বাসের জানালায় দেখছিলাম স্তব্ধ আকাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাহাড়গুলো। কোথাও আবার আদিগন্ত বিস্তীর্ণ মাঠ।

উইন্ডমিল গুলো ঘুরছে। অদ্ভূত সুন্দর সেই দৃশ্য। ইয়ারফোনে চলছে জন ডেনভারের পয়েমস,প্রেয়ারস এন্ড প্রমিসেস। পাশের সিটের ভদ্রলোক খুবই ফিসফিস করে ফোনে কথা বলছে। মায়া হচ্ছে অপরপ্রান্তের মানুষটার কথা ভেবে।

আহা,বেচারী কি কিছু শুনতে পাচ্ছে? বাস থামল নিউক্যাসল আন্ডার লাইমের একটা গ্রামে। হাইওয়ে ব্রেকগুলো আমার খুবই পছন্দের। মনে পড়ছে নুরজাহান হোটেলের পরোটা আর গরুর মাংশ। নেমে একটা সিগারেট ধরালাম। এরপর বাসে এসে বসার পর দেখি পাশের ভদ্রলোক ফোন নিয়ে ব্যাস্ত।

উনাকে দেখে আমারও কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছিল। কিন্তু আমি কাকে ফোন করবো? যাকে ফোন করবো সেতো আমার ফোনের জন্যে বসে নেই। সেকি জানে যে আজ প্রায় পাঁচটা বছর আমি তার নাম্বারটা প্রেস করে মোবাইল স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকি? আমার আর ডায়াল করা হয়না। ইয়ারফোনে বেজে উঠলো, মৌসুমী ভৌমিকের,'এখন নাকি শব্দগুলো এক মূহুর্তে সাগর পেড়োয়, এখন নাকি যন্ত্রগুলো এপার থেকে আমার কথা তোমার পারে পৌছিয়ে দেয়...!! দারুন কোইন্সিডেন্টতো! সেদিন দেখেছিলাম স্কটল্যান্ডের ভোর। অচেনা এবং অপূর্ব।

আজ আবার সেই চেনা ভোর। লন্ডন। সেই চেনা শহর। সেই চেনা ভিক্টোরিয়া স্টেশন। হঠাৎ কোন এক মানবীকে ভালোবেসে ফেলা সেই চেনা রাস্তা।

শুধু সেই খুব চেনা কাছের মানুষটা আর নেই। কি করছে ও? ধুলো আর তীব্র গরমের প্রিয় শহরটাতে কি করছে মানুষটা? মুখে হাসি নিয়ে কার কাছে লুকাচ্ছে ওর একান্ত মন খারাপের বিকালগুলো। ধানমন্ডি লেকের আধো অন্ধকার ভোরে আজো কি মর্নিং ওয়াক করছে? আমার পাশে না থাকা কি একটুও ওকে ভাবায়? আসলে এসবে এখন কিছুই যায় আসেনা। গত দুইদিনে একবারের জন্যেও বেজে ওঠেনি আমার মোবাইলটা। মনেহয় ছা-পোষা এই কেরানিটাকে আজ আর কারো প্রয়োজন নেই।

আসলে আমারো হয়তো আর কাউকে প্রয়োজন নেই। যাক তাইলে কাটাকাটি। অপ্রয়োজন ব্যাপারটাই আসলে দিন দিন অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।