আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হুমায়ুন আহমেদের অপ্রকাশিত রচনা '' নবীজী ''


তখন মধ্যাহ্ন । আকাশে গনগনে সূর্য । নিচের বালি তেতে আছে । ঘাসের তৈরি ভারী স্যান্ডেল ভেদ করে উত্তাপ পায়ে লাগছে । তাঁবুর ভিতর বের হওয়ার জন্য সময় টা ভাল না ।

আয়ুজ তাঁবু থেকে বের হয়েছে । তাকে অস্থির লাগছে । তার ডান হাতে চারটা খেজুর । সে খেজুর হাত বদল করছে । কখনো ডান হাতে কখনো বাম হাতে ।

আয়ুজ মনের অস্থিরতা কমানোর জন্য দেবতা হাবল্ কে স্মরণ করল । হাবল কা'বা শরিফে রাখা এক দেবতা জার চেহারা মানুষের মত । একটা হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল বলে কা'বা ঘরের রক্ষক কোরাইশ রা সেই হাত সোনা দিয়ে বানিয়ে দিয়েছে । দেবতা হাবলের কথা মনে হলেই সোনার তৈরি হাত চোখে চকমক করে । দেবতা হাবল কে স্মরণ করায় তার লাভ হল ।

মনের অস্থিরতা কিছুটা কমলো । সে ডাকল , শামা শামা । তাঁবুর ভিতর থেকে শামা বের হয়ে এলো । শামা আউজের একমাত্র কন্যা । বয়স ছয় ।

তার মুখ গোলাকার । চুল তামাটে । মেয়েটি তার বাবাকে অসম্ভব পছন্দ করে । বাবা একবার তার নাম ধরে ডাকলেই সে ঝাঁপ দিয়ে এসে তার বাবার গায়ে পড়বে । শামার মা অনেক বকা ঝকা করেও মেয়ের এই অভ্যাস দূর করতে পারেন নি ।

আজও নিয়মের ব্যাতিক্রম হল না । শামা ঝাঁপ দিয়ে তার বাবার গায়ে এসে পড়ল । সে হাঁটতে পারছেনা । তার বাঁ পায়ে খেজুরের কাঁটা ফুটেছে । পা ফুলে আছে ।

রাতে সামান্য জ্বর ও এসেছে । বাবা তার এক হাত বাড়িয়ে তাকে ধরল । এক হাতে বিচিত্র ভঙ্গিতে তাকে শুন্যে ঝুলিয়ে কোলে তুলে নিল । শামা খিল খিল করে হাসছে । তার বাবা যেভাবে তাকে কোলে তুলেন অন্য কোন বাবা তা পারেন না ।

আউজ বলল ,মা খেজুর খাও । শামা একটি খেজুর মুখে নিল । সাধারন খেজুর এটা না । যেমন মিষ্টি স্বাদ তেমনই গন্ধ । এই খেজুরের নাম মরিয়ম খেজুর ।

আউজ মেয়েকে ঘাড়ে তুলে নিয়েছে । রওয়ানা হয়েছে উত্তর দিকে । শামার খুব মজা লাগছে । কাজকর্ম না থাকলে বাবা তাকে ঘাড়ে নিয়ে বেড়াতে বের হন । তবে এমন কড়া রোদে কখনো না ।

রোদে কষ্ট হচ্ছে মা ? শামা বলল , না । আসলে তার কষ্ট হচ্ছিল । সে না বলল শুধু বাবাকে খুশি করার জন্য । বাবা ! হু ! আমরা কোথায় যাচ্ছি ? তোমাকে অদ্ভুত একটা জিনিস দেখাবো । সেটা কি ? আগে বললে তো মজা থাকবেনা ।

তাও ঠিক । বাবা , অদ্ভুত জিনিস টা শুধু আমি একলা দেখবো ? আমার মা দেখবেনা ? বড়রা এই জিনিস দেখে মজা পায় না । আউজ মেয়েকে ঘাড় থেকে নামালো । সে সামান্য ক্লান্ত । তার কাছে আজ শামাকে অন্য দিনের ছেয়েও ভারি লাগছে ।

পিতা এবং কন্যা একটি গর্তের পাশে এসে দাঁড়াল । কুয়ার মত গর্ত ,তবে তত গভীর না । আউজ বলল , অদ্ভুত জিনিসটা এই গর্তের ভিতর আছে । দেখো ভাল করে । শামা আগ্রহ এবং উত্তেজিত হয়ে দেখছে ।

আউজ মেয়ের পিঠে হাত রাখল । তার ইচ্ছা করছেনা মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলতে । কিন্তু তাকে ফেলতে হবে । তাদের গোত্র বনি হাকসা আরবের অতি উচ্চ গোত্রের একটি । এই গোত্র মেয়ে শিশু রাখে না ।

তাদের গোত্রের মেয়েদের অন্য গোত্রের পুরুষ বিবাহ করবে ? এত অসন্মান ? ছোট্ট শামা বলল বাবা , কিছুই তো দেখিনা । আউজ চোখ বন্ধ করে দেবতা হাবলের কাছে মানসিক শক্তির প্রার্থনা করে শামার পিঠে ধাক্কা দিল । মেয়েটি 'বাবা' 'বাবা' করে চিৎকার করছে । তার চিৎকারের শব্দ মাথায় ঢুকে যাচ্ছে । আউজকে দ্রুত কাজ সারতে হবে ।

গর্তে বালি ফেলতে হবে । দেরি করা যাবেনা । এক মুহূর্ত দেরি করা যাবেনা । শামা ছোট্ট হাত বাড়িয়ে ভীত গলায় বলছে , বাবা ভয় পাচ্ছি । আমি ভয় পাচ্ছি ।

আউজ পা দিয়ে বালির একটা স্তূপ ফেললো । শামা আতংকিত গলায় ডাকল , মা! মা গো ! আউজ তখন মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল , উঠে আস । আউজ মাথা নিচু করে তাঁবুর দিকে ফিরে চলছে । তার কাঁধে পা ঝুলিয়ে আতংকিত মুখে শামা বসে আছে । আউজ জানে সে মস্ত বর ভুল করেছে ।

গোত্রের নিয়ম ভঙ্গ করেছে । তাকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে । তাকে অবশ্যই গোত্র থেকে বেরিয়ে যেতে হবে । আজ থেকে সতেরশ বছর আগে আরব পেনিন্সুলার এটি অতি সাধারন একটি চিত্র। --------------- ------------ '' তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে ।

' বিখ্যাত এই গানের কলি শুনলেই অতি আনন্দ ময় একটি ছবি ভেসে উঠে । মা মুগ্ধ চোখে নবজাত শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে আচেন,তার চোখ আনন্দে ঝলমল করছে । ঘটনা কি সে রকম ? সে রকম হওয়ার কথা না । শিশুটির বাবা নেই । বাবা আব্দুল্লাহ তার সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেন নি ।

মা আমিনার হৃদয় সেই দুঃখেই কাতর থাকার কথা । আরবের শুষ্ক কঠিন মরুভুমিতে পিতৃ হীন একটি ছেলের বড় উঠার কঠিন সময়ের কথা মনে করে তার শংকিত হয়ে উঠার কথা । শিশুর জন্মলগ্নে মা আমিনার দুঃখ কষ্ট যে মানুষটি হঠাৎ দূর করে দেন , তিনি ছেলের দাদাজান । আব্দুল মোতালেব । তিনি ছেলেকে দু হাতে তুলে নিলেন ।

ছুটে গেলেন কা'বা শরিফের দিকে । কা'বার সামনে দুহাতে উপরে তুলে উচ্চ কণ্ঠে বললেন , আমি এই নবজাত শিশুর নাম রাখলাম , মোহাম্মদ ! সবাই মুখ চাওয়া চাওয়ি করল । নতুন ধরনের নাম । আরবে এই নাম রাখা হয় না । একজন বলল এই নাম কেন ? উত্তরে মোতালেব বললেন , ---------------------------- ------------- -------------- ------------ ।

---------------- , ------------ , ------------------ । ( হাত ব্যথা হয়ে গেছে , লিঙ্ক দিচ্ছি নিজেই পড়ে নিন । ) Click This Link
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.