আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন কৃষকের খোলা চিঠি- (২) উত্তরাঞ্চল পুড়ছে দারুণ খরায়

কেউ কেউ একা

আষাঢ় মাস। তারপরও বৃষ্টি নেই কোনখানে। আমার মত বিভিন্ন এলাকার আরও অনেক কৃষক জমিতে চাষ দিয়ে বসে আছে বৃষ্টির আশায়। জমিতে জো আসবে। ফসল বুনব আমরা।

কিন্তু কিছুতেই বৃষ্টি নামছে না। ফসল বুনতেও পারছি না। খরায় পুড়ছে আমাদের উত্তরাঞ্চল। আমরা বোরো মৌসুমের চেয়ে আমন মৌসুমেই ধান আবাদ করা লাভজনক মনে করি। কেননা, এই সময় জমিতে কোন পানি দেয়া লাগে না।

আমাদের বেঁচে যায় পানি খরচ। অথচ এবার মাঠের দিকে তাকালে মাঠের মতই বুকটা খা খা করে ওঠে। মাঠ ফেটে হাঁ করে আছে। বৃষ্টি না হলে এবার আমরা আমন ধান বুনতে পারব না। এই এলাকার অনেক কৃষক জমি চাষ করে সেচ দিয়ে আমন ধান বুনছে।

কিন্তু তার সংখ্যা খুবই কম। আমরা গরিব কৃষক। আমার মত এই এলাকার অনেকেই গরিব। তারা ধনীলোকদের কাছ থেকে ধার করে পরের জমি চাষ করে (বর্গা জমি) ধান বুনে। এরপর সার, ওষুধ দিয়ে এবং নিজে খেটে-খুটে ফসল ফলায়।

ফসল উঠলে তা বিক্রি করে অথবা ধার করা টাকার সমান মূল্যে ধান দিয়ে দেয়। এতে দেখা যায় বর্গাচাষিদের ভাগে অনেক সময় শূন্য থাকে। এত পরিশ্রমের পর কৃষকের ভাগে যদি শূন্য থাকে তাহলে আমরা কি করে বউ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাব? এখন গরমের সময়। বিদ্যুৎ অধিকাংশ সময়তেই থাকে না। জমিতে পানি দিতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।

তার উপর সেচ দিলে পানির জন্য ঘন্টায় ৪০ টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। আমাদের ঘন্টায় ৪০ টাকা দেবার মত সামর্থ নেই। তাই আমাদের আল্লাহর দিকে তাকিয়ে বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। আষাঢ় মাসেও আমাদের আকাশের দিকে তাকিয়ে আল্লাহর কাছে কানতে কানতে বলতে হয়, 'আল্লা মেঘ দে, পানি দে, ছায়া দেরে তুই' আগের দিনের মত প্রকৃতি এখন আর নেই। এক এক সময় এক এক আচরণ করে।

আগে বন্যার সময় বন্যা হত। এখন বন্যা হয় অসময়। আর বন্যার সময় বন্যা হয় না। মাঠ-ঘাট থাকে শুকনো। চৈত্র-বৈশাখে ঝড় হয় না, ঝড় হয় মাঘ মাসে।

শীতের সময় শীত আসে না। অসময়ে শীত আসে। যেমন এখন আষাঢ় মাস। বৃষ্টিতে কুয়ো-খান্দা ভরে থাকার কথা। অথচ বৃষ্টির জন্যে আমাদের হাহাকার করতে হচ্ছে।

পৃথিবীর এই ওলোট-পালোট কাণ্ড দেখে সবাই তাজ্জাব। এ অঞ্চলের পাট চাষিরা পাট কাটার পর 'জাগ' (পাট পচানো) দিতে পারছে না পানির অভাবে। প্রচণ্ড খরার কারণে খাল-বিল, কুয়ো-খান্দার সব পানি শুকিয়ে গেছে। যারা আমন ধান রোপণ করেছে তাদের একদিন ক্ষেতে পানি না দিলে মাঠ ফেটে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানি দিতে খরচ হচ্ছে অনেক টাকা।

যার কারণে সেচ দিয়ে আমন আবাদ করলে তার দাম হবে দ্বিগুণ। এমনিতেই গত বোরো মৌসুমে আমরা ধান উৎপাদন করে বিক্রি করতে গিয়ে আসল দামও পাইনি। এবার আবার বেশি টাকা খরচ করে আমন ধান উৎপাদন করতে যাই, তাহলে আবার আমাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্য নিয়ে বারবার ক্ষতি সন্মুখীন হচ্ছে। এভাবে কৃষকের আর কত লোকসান গুনতে হবে! গতবারও আমাদের দেশে আমনের ভাল ফলন হয়েছিল।

ঠিক সময় বৃষ্টি পেয়ে লকলকিয়ে উঠেছিল আমনের চারাগুলো। কিছুদিনের ভেতরেই সবুজে ভরে গিয়েছিল আমাদের ক্ষেত। কৃষকের মুখে হাসি ছিল। এবার ঠিক তারা বিপরিত। পানির অভাবে এখন চাষবাস বন্ধ হয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের মানুষের।

অথচ এই সময় বৃষ্টির পানিতে ভরা থাকে চারদিক। এই সমস্যার সন্মুখীন শুধু আমরা নয়, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারি, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়ের কৃষকরা। আমাদের শুধু একটাই চিন্তা বৃষ্টি না হলে, পানি না পেলে আমরা ধান বুনব কেমন করে? আমরা বাঁচব কি খেয়ে? যে কৃষকের ৭ বিঘা জমি আছে সে কেবল ১ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে ধান লাগিয়েছে। ৬ বিঘা জমি ফেলে রেখেছে চাষ দিয়ে। কৃষকের মুখে হাঁড়ির মত কালো।

কী হবে তাদের! কি আছে তাদের কপালে!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.