আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কর্মক্ষেত্রে আমি যা দেখেছি (প্রথম পর্ব)

ক্ষেপাইতে চাইলে akayes@yahoo.com মেইল করেন :)

আমার কর্ম জীবন শুরু হয়েছে প্রায় আট বছর হয়ে গেছে। এই আট বছরে বেশ কয়েকটি সেক্টরে কাজ করার সৌভাগ্য(!) হয়েছে যদিও তার প্রায় সবগুলুই আইটি বিলেটেড। এর মধ্যে প্রায় পাঁচটি বছরই আমার মেডিকেল বা স্বাস্থ্য সেবায় সার্ভিস করেছি। আমার লাইফের প্রথম চাকুরী ছিল এলিফ্যান্ট রোডস্থ একটি স্বনামধন্য কম্পিউটার ফার্ম এ। এটাকে আসলে চাকুরী না বলে প্রেকটিস বলাই যুক্তিযুক্ত কারণ আমি তখন সবেমাত্র কোর্স কমপ্লিট করে এক বন্ধুর রিকোয়েস্টে সেখানে পার্টটাইম সময় দিতাম।

ইচ্ছা হলে যেতাম না হলে যেতামনা। আমার প্রকৃত অর্থে চাকুরী জীবন শুরু হয় ঢাকার একটি স্বনামধন্য প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরীর মধ্য দিয়ে। ইন্টারভিউ দিয়ে যখন চাকুরিটা হয়েই গেল ভাবলাম বেশ হয়েছে। আর কিছু না হোক কিছু লোককেতো সেবা দেয়া যাবে। মানুষকে সেবা করার চেয়ে বেশী আনন্দের আর কি আছে? কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই টের পেলাম আমার চিন্তাধারা এক অথচ বাস্তবতা ভিন্ন।

কোথায় সেবা? এতো রুগী ধরে ধরে এনে জবাই করার সমতূল্য। যে কাজকে সেবা ভেবেছিলাম তাই এখন কাঁটার মতো মনের কোথায় যেন খুঁচাতে থাকে। ডাক্তারদের সেবার নামের মুখূশের আড়ালে যে বিভতস রূপ আমি দেখেছি তা মনে হলে চাকুরী ছাড়ার কয়েক বছর পরও শিউরে উঠি। নিজের ঘনিষ্টকিছু আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু এ পেশায় থাকার পরও তাদেরকে কেন জানি মন থেকে মেনে নিতে পারিনা। বাবা-মা বিরাট আশা করে সন্তানকে ডাক্তার বানান, সরকারীতে না পারলে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রাইভেট মেডিকেলে পড়ান।

সেই সন্তান দিনে দিনে মানুষ থেকে কসাই এ পরিণত হয়। মাঝে-মধ্যে ভাবি বাজারের কসাই আর ডাক্তার এর মধ্যে কি আসেলেই কোন পার্থক্য আছে? এই ইনভেস্ট কি মানুষের সেবা করার জন্য নাকি নিরুপায় কিছু লোকের গলা কাটার জন্য? বেশ কয়েকদিনই রোগীর সাথে ডাক্তার কিংবা কর্তৃপক্ষের ব্যাবহার দেখে আড়ালে চোখের পানি ফেলেছি। প্রতিবাদ করার ভাষা খুঁজে পাইনি কারণ আমিওতো সেই কর্তৃপক্ষেরই (!) একজন। এই সময়ের কয়েক ডজন ঘটনার মধ্যে যে ঘটনাগুলো দেথে আমি আমার বিবেকের দংশনে জ্বলেছি তার কয়েকটি নীচে উল্লেখ করছি। ১।

আমি যখন যোগদান করি প্রতিষ্টানটি তখন বড় ধরনের এক্সটেনশন খরচ সহ নানা কারণে ধার-দেনায় জর্জরীত। সারা দিনের কালেকশন যদি হয় ৫ লাখ পাওনাদার এসে বসে থাকে ২০ লাখের। স্বভাবিক কারণেই নানা অপ্রিতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়। যেদিন এই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে সেদিনগুলিতে আরেকটি জটিল ট্রিক্স করা হয়। যে সকল ডাক্তাররা চেম্বারে বসেন তাদের মেসেজ দিয়ে দেয়া হয় যে, আজ ক্যাশ সর্টেজ আছে রোগীর প্যাথলজি পরীক্ষা একটু বেশী দেবেন।

ব্যাস কাজ হয়ে গেল, কয়েকঘন্টার মধ্যে ক্যাশে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা জমা হয়ে যায়। আর ডাক্তাররা লেখবেই বা না কেন? তাদের তো যত বেশী পরীক্ষা ততবেশী পার্সেন্টেজ। আর রোগীর কাছেতো ডাক্তার মানে দেবতা, তিনি যা বলবেন তাই সই। প্রয়োজনে গরু, ছাগল, গহণা, ঘটি-বাটি বিক্রি করে ধার দেনা করে সেই ডাক্তারের রাক্ষুসে ক্ষুধা মেটাতে হয়। ২।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হওয়ার কারণে সরকারী বিধি মোতাবেক সম্ভবত ৫% বেড সম্পূর্ণ ফ্রি থাকার কথা কিন্তু কোন রোগীকে সেই ৫% এর আওতায় ফ্রি চিকিতসা দেয়া হয়েছে বলে মনে পড়েনা। তবে এমডি, চেয়ারম্যান, ডিরেক্টরদের আত্বীয়-স্বজন কেউ ভর্তি হলে অবশ্য সেটা সেই ৫% এ দেখানো হয়। (উল্যেখিত লেখাটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও মতামত, কারো কারো ক্ষেত্রে দ্বিমত থাকাটাই স্বাভাবিক) চলবে............

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.